মিথ্যা শুনিনি ভাই এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনাে মন্দির কাবা নাই – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “মিথ্যা শুনিনি ভাই এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনাে মন্দির কাবা নাই ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

মিথ্যা শুনিনি ভাই এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনাে মন্দির কাবা নাই ভাবসম্প্রসারণ

মিথ্যা শুনিনি ভাই এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনাে মন্দির কাবা নাই ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : সকল উপাসনালয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ উপাসনালয়ে মানুষের হৃদয়। কারণ, পবিত্র হৃদয়েই স্রষ্টা অবস্থান করেন।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। বুদ্ধি-বিবেচনা এবং জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় মানুষের সমকক্ষ আর কোনো প্রাণী নেই। মানুষের রয়েছে বিচার ও বিশ্লেষণের শক্তি। ন্যায়-অন্যায়, পাপ-পণ্য বিচার করে চলা মানুষের ধর্ম। পাপ-পুণ্য, ভালো-মন্দ, ধর্ম-অধর্মের পার্থক্য নির্ধারণে মানুষকে পরিচালিত করে মানুষের মন। মন দ্বারা পরিচালিত হয়ে মানুষ সৎ কাজ করে এবং স্রষ্টার সন্তুষ্টি লাভ করে। স্রষ্টা অন্তর্যামী। মানুষের হৃদয়ের খবরাখবর তিনি রাখেন। তাই তাঁকে পেতে হলে হৃদয়কে শুদ্ধ করতে হবে। যাঁরা নির্মল হৃদয়ের অধিকারী তাঁরাই আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে পারেন। মিথ্যা, কপটতা এবং হীনমন্যতায় যাদের হৃদয় পরিপূর্ণ তাদের মসজিদে/মন্দিরে গিয়ে লাভ নেই। তারা যতই সেজদা অথবা পূজা-অর্চনা করুক না কেন, তাতে কোনো কাজ হবে না। কেউ কেউ নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য মসজিদে-মন্দিরে গিয়ে আরাধনা করে। কিন্তু তার হৃদয় যদি কলুষমুক্ত না হয়, তাহলে রাতভর আরাধনা করেও কোনো লাভ হবে না। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে- “Kaba is not a kaba heart is a heart. There is thousand kaba equal to one heart.” কাবা শরীফই কাবা শরীফ নয় অন্তরই হচ্ছে আসল। এক হাজারটি কাবা শরীফ সমান একটি অন্তর। অথাৎ অন্তর শুদ্ধ না করে কাবা শরীফে গিয়ে লাভ নেই। পরিশুদ্ধ হৃদয়ের অধিকারী যাঁরা তাদেরকে কাবা শরীফ যেতে হয় না- তাঁরা সহজেই আল্লাহতালার নৈকট্য লাভ করেন।

কাবা বা মন্দিরের চেয়ে হৃদয়ই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ। নির্মল হৃদয়ের অধিকারী যাঁরা তাঁরাই সৃষ্টি কর্তাকে কাছে পেয়ে থাকেন।

বিকল্প ১

মূলভাব : চিরন্তন ও শাশ্বত বন্ধনের ক্ষেত্রে হৃদয়ের কোনো বিকল্প নেই। মন্দির কাবা অর্থাৎ উপাসনালয় থেকেও হৃদয় বা মন শ্রেষ্ঠ। কারণ পবিত্র হৃদয়ের ডাকেই স্রষ্টা সাড়া দেন।

সম্প্রসারিত ভাব : বহুকাল আগেই মানুষ হৃদয়, অন্তর বা মনের অস্তিত্ব অনুভব করেছে। পারস্পরিক মায়া-মমতা, স্নেহ-শ্রদ্ধার আকাঙ্ক্ষা ও আকর্ষণই হৃদয়ের উৎস। এই হৃদয়ের টানেই মানুষ প্রিয় জন্মভূমি ছেড়েছে, সিংহাসন ত্যাগ করেছে, স্বজনকে ভুলে গেছে, সহায়-সম্পদ বিসর্জন দিয়ে ফকির হয়েছে, জীবনের ঝুঁকি নিয়েছে, আবার কখনও সানন্দে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে। কিন্তু আপোস করে নি, হৃদয়কে অপমান করে নি, হৃদয়ের মৃত্যু হতে দেয়নি। স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের অভিপ্রায়ে পদ্ধতিগত সাধনার পবিত্র জায়গা হচ্ছে উপাসনালয়। এটি জীবন্ত হয়ে ওঠে ভক্তের আগমনে, সরব হয়ে ওঠে কৃতজ্ঞ ভক্তের প্রশংসা বাণীতে। কিন্তু হৃদয় আপনা থেকেই সরব, প্রাণস্ফূর্ত জীবন্ত। হৃদয় কথা বলে হৃদয়ের সাথে, হৃদয় অনুভব করে হৃদয়কে, হৃদয় আকর্ষিত করে হৃদয়ের প্রতি। হৃদয় দিয়ে হৃদয় জয় করা যায়। শুধু হৃদয়ের উষ্ণতা দিয়ে মত-পার্থক্য দূর করা যায়, সংঘাত বন্ধ করা যায়, এমনকী দেশও জয় করা যায়। হৃদয় কোনো উপাসনালয় তথা বিশেষ কোনো ধরনের অনুগামী নয়। হৃদয় বিশাল, বিরাট, উদার, মহৎ, সীমাহীন। স্রষ্টার সমস্ত সৃষ্টিকে ভালোবাসার জন্যে হৃদয়ের বিকল্প নেই। তাই হৃদয়ের শক্তি, হৃদয়ের বিস্তার এবং হৃদয়ের প্রভাব উপাসনালয়ের চেয়ে কার্যকর। শরীরের শক্তি প্রয়োগ করে বা জুলুম করে মানুষকে কিছু সময়ের জন্যে ধরে রাখা যায়। কিন্তু হৃদয়ের কার্যকারিতা দীর্ঘস্থায়ী চিরন্তন। মানুষের হৃদয় বিচিত্র ও রহস্যময়। মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার অসীম ক্ষমতা রয়েছে হৃদয়ের। হৃদয়ের মাধ্যমে সীমা থেকে অসীমের সাথে যোগসূত্র স্থপন করা সম্ভব হয়। আবার কোনো কারণে কারো কাছ থেকে হৃদয় কষ্ট পেলে তা আমৃত্যু মরে রাখে। মানুষের হৃদয়ে কেউ কষ্ট দিলে স্রষ্টাও কষ্ট পান। তাই মহামানব তথা সন্ত-সন্ন্যাসী, সুখী-দরবেশ ও মরমি সাধকেরা মানুষের হৃদয়কেই মূল্য দেন। তাঁদের কাছে মন্দির কাবার চেয়ে বড় ও পবিত্র হল মানুষের হৃদয়-মন। কেননা কেবল হৃদয় দিয়েই সৎ কাজ করা যায়, মহত্তম কল্যাণ সাধন করা যায়। সুন্দর ও পবিত্র হৃদয়ের আরাধনাই স্রষ্টা গ্রহণ করেন। হৃদয় কলুষিত হলে রাত-দিন ইবাদত করেও কোনো ফললাভ হয় না, আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা যায় না।

মন্তব্য : কাজেই হৃদয়ের চেয়ে বড় কিছু নাই। হৃদয়গত সৌন্দর্যের ভিত্তিতেই মানুষের মূল্যায়ন হওয়া উচিত। নির্মল হৃদয়ই মানুষকে সত্যের পথে, ন্যায়ের পথে, কল্যাণের পথে পরিচালিত করে মন্দির কাবার উপাসনাকে সার্থক করে তোলে। তাই নিষ্পলুষ বা নির্মল হৃদয়ের স্থান অনেক উপরে।

বিকল্প ২

মূলভাব:সকল উপাসনালয় থেকে শ্রেষ্ঠ মানুষের হৃদয় বা মন। কেননা পবিত্র হৃদয়েই অবস্থান করেন স্রষ্টা।

সম্প্রসারিত ভাব:মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত। কারণ মানুষকে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ বিবেক-বিবেচনা ও বুদ্ধিসহকারে অপর সব জীব অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ করে সৃষ্টি করেছেন। তাই মানুষ অন্য প্রাণী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আর সেজন্য মানুষকে ন্যায়-অন্যায়, পাপ- পুণ্য বিচার করে জীবন পরিচালনা করতে হয়। সকল পাপ-পুণ্য, ভালো-মন্দ, ধর্ম-অধর্মের পার্থক্য নির্ধারণে মানুষকে পরিচালিত করে তার এমন। এ মন বা হৃদয় দ্বারা পরিচালিত হয়ে মানুষ সৎ কাজ করে এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে। মানুষ সততা, সত্যবাদিতা, ন্যায়নিষ্ঠা, দয়া প্রভৃতি সৎ গুণাবলির মাধ্যমেই কল্যাণের পথে বা মঙ্গলের পথে পরিচালিত হয়। অপরের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করার যে প্রবণতা মানুষের মধ্যে জাগ্রত হয় তার উৎসস্থল হচ্ছে মন বা হৃদয়। স্রষ্টার আরাধনা করার পবিত্র ও উৎকৃষ্ট স্থান মসজিদে-মন্দিরে দিনরাত অবস্থান করে প্রার্থনা করার তাৎপর্য এই যে, সুন্দর মোহমুক্ত পবিত্র পরিবেশে হৃদয়কে ষড়রিপুর প্রভাব থেকে যুক্ত রাখা এবং আল্লাহর নির্ধারিত পথে চলে তার গুণ-কীর্তন করা। সুতরাং, এই হৃদয়ই সমস্ত উপাসনালয়ের সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান। হৃদয় কলুষিত করে দিন-রাতভর উপাসনা করলেও কোনো ফল হবে না। কাজেই সব উপাসনালয় থেকেই শ্রেষ্ঠ হলো মানুষের হৃদয়। মানুষের নির্মল হৃদয়ই শ্রেষ্ঠ এবাদতখানা। কলুষমুক্ত হৃদয় মানুষকে ন্যায়ের পথে, সত্যের পথে, ধর্মের পথে পরিচালিত করে মসজিদ-মন্দিরের উপাসনাকে সার্থক করে তোলে।

মন্তব্য : বহু অর্থ ব্যয়ে সুশোভিত অট্টালিকায় নির্মিত মন্দির বা মসজিদ অপেক্ষা নিষ্কলুষ হৃদয় বা নির্মল হৃদয়ের স্থান অনেক ঊর্ধ্বে।

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment