সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ | সূরা ফালাক এর তাফসীর | সূরা ফালাকের অর্থ | সূরা ফালাক আরবি উচ্চারণ | সূরা ফালাক এর শানে নুযূল | সূরা ফালাক mp3 Download | সূরা ফালাক এর ফজিলত

সূরা আল-ফালাক: সূরা আল-ফালাক কোরআন মাজিদের ১১৩ নম্বার সূরা। এই সূরার মোট আয়াত সংখ্যা ৫ টি। সূরা আল-ফালাক এর বাংলা অর্থ- নিশিভোর। সূরা আল-ফালাক মাক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে।

এই সূরাটি মূলত একটি প্রার্থনামুলক সূরা। এই সূরার পড়ার মাধ্যমে শয়তানের অনিষ্ট থেকে মহান আল্লাহ তা’আলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়। তাই চলুন আজকে আমরা এই সূরাটি পড়ে নেয়। নিচে সূরা আল-ফালাক এর আরবী, বাংলা উচ্চারণ ও অনুবাদ দেওয়া হয়েছে।

সূরা ফালাক mp3 Download, সূরা ফালাক আরবি, সূরা ফালাক আরবি উচ্চারণ, সূরা ফালাক এর তাফসীর, সূরা ফালাক এর ফজিলত, সূরা ফালাক এর শানে নুযূল, সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ, সূরা ফালাকের অর্থ

সূরা ফালাক এর আরবী উচ্চারণ

সূরা ফালাকের ৫ টি আয়াতের আরবী উচ্চারণ এবং বাংলা উচ্চার‌ণ দেওয়া হয়েছে:

قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ ٱلْفَلَقِ 

১) কুল আ‘ঊযুবিরাব্বিল ফালাক

– বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার

مِن شَرِّ مَا خَلَقَ

২) মিন শাররি মা-খালাক।

তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে

وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ

৩) ওয়া মিন শাররি গা-ছিকিন ইযা-ওয়াকাব।

অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়

وَمِن شَرِّ ٱلنَّفَّٰثَٰتِ فِى ٱلْعُقَدِ

৪) ওয়া মিন শাররিন নাফফা-ছা-তি ফিল ‘উকাদ।

গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে

وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ

৫) ওয়া মিন শাররি হা-ছিদিন ইযা-হাছাদ।

এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।

সূরা ফালাক এর বাংলা অর্থ

১) বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার,
২) তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে,
৩) অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়,
৪) গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে
৫) এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।

সূরা ফালাক এর শানে নুযূল

মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) উপর এক ইহু্দী জাদু করেছিল। এর ফলে তিনি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর আল্লাহর হুকুমে  ফেরেশতা জিব্রাইল নবীজির কাছে এসে সংবাদ দিলেন জনৈক ইহু্দী উনার উপর জাদু করেছে এবং যে জিনিসের মাধ্যমে জাদু করেছে তা অমুক কূপে আছে।

পরে রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) লোক পাঠিয়ে কূপ থেকে তা উদ্ধার করেন। তাতে কয়েকটি গিট ছিল। রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) সূরা আন-নাস ও সূরা আল-ফালাক পরে ফুক দেওয়ার সাথে সাথেই গিটগুলো খুলে গেলো এবং নবীজি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন।

হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত – একবার রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) এর উপর জাদু করা হয় যার প্রভাবে তিনি দিশেহারা হয়ে যেতেন। যে কাজটি তিনি করেননি তাও করেছেন বলে অনুভব করতেন। এরপর আয়েশা (রাঃ) কে তিনি বললেন আল্লাহ তা’আলা আমাকে বলেছেন আমার রোগটা কি।  আমি সপ্নে দেখলেন দুজন লোক তার কাছে আসলেন এবং একজন শিয়রের কাছে ও অন্যজন পায়ের কাছে বসে গেলো।

শিয়রের কাছে থাকা ব্যক্তিটি অন্য ব্যক্তিটিকে প্রশ্ন করলো উনার রোগটা কি? অন্য ব্যক্তিটি বললেন উনি জাদুগ্রস্থ, উনার উপর জাদু করা হয়েছে। প্রথম ব্যক্তি জানতে চাইলেন কে জাদু করেছে? উত্তরে বললেন লবীদ ইবনে আ’সাম (ইহুদীদের মিত্র মুনাফিক) জাদু করেছে। আবার প্রশ্ন করা হল কি দিয়ে জাদু করা হয়েছে? উত্তরে বলা হল একটি চিরুনীতে। আবার প্রশ্ন আসলো চিরুনীটি কোথায়? উত্তরে বলা হল খেজুর ফলের আবরণীতে ‘বির যরোয়ান’ কূপে একটি পাথরের নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। এরপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) সেই কূপের কাছে গেলেন যা তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন। পরে  চিরুনীটি সেখান থেকে বের করে  আনলেন।

সূরা ফালাক mp3 Download

সূরা ফালাক mp3 Download করে নিয়মিত শূনে অতি সহজে মুখস্থ করা যাই। নীচে সূরা ফালাক mp3 Download করার লিংক দেওয়া হয়েছে। ওখান থেকে সূরা ফালাক mp3 Download করুণ।

সূরা ফালাক এর ফজিলত

➤ সহীহ মুসলিমে ওকবা ইবনে আমের (রাঃ)- এর বর্ণিত হাদীসে রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ

তোমরা লক্ষ্য করেছ কি, অদ্য রাত্রিতে আল্লাহ তা’আলা আমার প্রতি এমন আয়াত নাযিল করেছেন, যার সমতুল্য আয়াত দেখা যায় না। অর্থাত ক্বুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক এবং ক্বুল আউযু বিরাব্বিল নাস আয়াতসমূহ। অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে ইঞ্জীল,তওরাত, যাবুর এবং কোরআনেও অনুরূপ অন্য কোন সূরা নেই।

➤ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হাবীব (রাঃ) বর্ণনা করেন, এক রাত্রিতে বৃষ্টি ও ভীষণ অন্ধকার ছিল। আমরা রসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে খুঁজতে বের হলাম। যখন তাকে পেলাম, তখন প্রথমেই তিনি বললেনঃ বল। আমি আরয করলাম, কি বলব?

তিনি বললেনঃ সূরা এখলাস ও কূল আউযু সূরাদ্বয়। সকাল-সন্ধ্যায় এগুলো তিন বার পাঠ করলে তুমি প্রত্যেক কষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে। – (মাযহারী)

➤ আবু দাউদ, তিরমিযী ও নাসায়ীর এক দীর্ঘ রেওয়ায়েতে রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ

যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সূরা এখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে তা তাকে বালা-মিসীবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে যথেষ্ট হয়। – (ইবনে-কাসীর)

➤ এক সফরে রসূলুল্লাহ (সাঃ) ওকবা ইবনে আমেন (রাঃ)-কে সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পাঠ করালেন, অত:পর মাগরিবের নামাযে এ সূরাদ্বয়ই তেলাওয়াত করে বললেনঃ এই সূরাদ্বয় নিদ্রা যাওয়ার সময় এবং নিদ্রা শেষে বিছানা থেকে উঠার সময়ও পাঠ করো।

➤ অন্য হাদীসে তিনি প্রত্যেক নামাযের পর সূরাদ্বয় পাঠ করার আদেশ করেছেন। – (আবু দাউদ, নাসায়ী)

সূরা ফালাক এর তাফসীর

তাফসীরে সালাবীতে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ইয়াহূদীদের একটা ছেলে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমত করতো। ঐ ছেলেটিকে ফুসলিয়ে ইয়াহুদীরা রাসূলুল্লাহর (সঃ) কয়েকটি চুল এবং তাঁর চুল আঁচড়াবার চিরুনীর কয়েকটি দাঁত হস্তগত করে। তারপর তারা ওগুলোতে যাদু করে। এ কাজে সবচেয়ে বেশী সচেষ্ট ছিল লুবাইদ ইবনে আসাম।

এরপর যাদুর গ্রন্থি বা সুরাইক যারওয়ান নামক কূপে স্থাপন করে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তার স্ত্রীদের কাছে গমন না করেও তাঁর মনে হতো যে তিনি তাদের কাছে গমন করেছেন। এইমন ভুলো অবস্থা দূরীকরণের জন্যে রাসূলুল্লাহ (সঃ) সচেষ্ট ছিলেন, কিন্তু এরকম অবস্থা হওয়ার কারণ তাঁর জানা ছিল না। ছয় মাস পর্যন্ত ঐ একই অবস্থা চলতে থাকে

তারপর উপরোল্লিখিত ঘটনা ঘটে। দুজন ফেরেশতা এসে কথােপকথনের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে সচেতন করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন হযরত আলী (রাঃ), হযরত যুবায়ের (রাঃ) এবং হযরত আম্মার (রাঃ) কে পাঠিয়ে কূপ থেকে যাদুর গ্রন্থিগুলো বের করিয়ে আনেন। ঐ যাদুকৃত জিনিষগুলোর মধ্যে একটি ধনুকের রঞ্জু ছিল, তাতে ছিল বারোটি গ্রন্থি বা গেরো। প্রত্যেক গেরোতে একটি করে সূচ বিদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল।

তারপর আল্লাহ তা’আলা এ সূরা দু’টি অবতীর্ণ করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ সূরা দু’টির এক একটি আয়াত পাঠ করছিলেন আর ঐ গ্রন্থিসমূহ একটি একটি করে আপনা আপনি খুলে যাচ্ছিল। সূরা দু’টি পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে সমস্ত গেরোই খুলে যায় এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ) সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে ওঠেন। এদিকে হযরত জিবরাঈল (আঃ) উপরোল্লিখিত দু’আ পাঠ করেন।

সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা কি ঐ নরাধমকে ধরে হত্যা করে ফেলবো রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “না, আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলা আমাকে আরোগ্য দান করেছেন। আমি মানুষের মধ্যে অনিষ্ট ও বিবাদ ফাসাদ সৃষ্টি করতে চাই না।”এ বর্ণনায় গারাবাত ও নাকারাত রয়েছে। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

সূরা ফালাক ছবি

সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ,সূরা ফালাক এর তাফসীর,সূরা ফালাকের অর্থ,সূরা ফালাক আরবি
সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ,সূরা ফালাক এর তাফসীর,সূরা ফালাকের অর্থ,সূরা ফালাক আরবি
সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ,সূরা ফালাক এর তাফসীর,সূরা ফালাকের অর্থ,সূরা ফালাক আরবি
সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ,সূরা ফালাক এর তাফসীর,সূরা ফালাকের অর্থ,সূরা ফালাক আরবি
সূরা ফালাক mp3 Download, সূরা ফালাক আরবি, সূরা ফালাক আরবি উচ্চারণ, সূরা ফালাক এর তাফসীর, সূরা ফালাক এর ফজিলত, সূরা ফালাক এর শানে নুযূল, সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ, সূরা ফালাকের অর্থ

Leave a Comment