অনেক কিছু ভাবার চেয়ে অল্প কিছু করাই শ্রেয় – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “অনেক কিছু ভাবার চেয়ে অল্প কিছু করাই শ্রেয় ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

অনেক কিছু ভাবার চেয়ে অল্প কিছু করাই শ্রেয় - ভাবসম্প্রসারণ

অনেক কিছু ভাবার চেয়ে অল্প কিছু করাই শ্রেয় ভাবসম্প্রসারণ

মুলভাব : কাজের পরিকল্পনার চেয়ে কাজে লেগে যাওয়ার গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই ভাবনা বাহুল্যের প্রয়ােজন নেই, প্রয়ােজন হল কর্মবাহুল্যের। সুতরাং, যা ভাবতে হবে তা কাজে রূপদান করেই সে ভাবনাকে সার্থক করতে হবে। প্রাচীন শাত্রে আছে, ‘কর্মই সত্যমের জীবন।

সম্প্রসারিত-ভাব : কর্মের মধ্যেই জীবনের সাফল্যের বীজ নিহিত রয়েছে। সেজন্য কাজ করতে হবে। কাজের মাধ্যমেই মানবজীবন ধন্য করতে হবে। শুধু শুধু ভাবনার কোন গুরুত্ব নেই। সে ভাবনা এক ধরনের বিলাসিতা। তার ফুলও নেই, ফলও নেই। সুতরাং, তা ভাবা শুধু শুধু বেকার। কারণ, আমরা শুধু জ্বালানি কাঠকে আগুন বলি না, আর তাতে আগুন না দিলে তা জ্বলে না। ফলে তা কাঙ্ক্ষিত ফলও দেয় না। সুতরাং, অনেক ভাবনার সার্থকতা নেই। তা থেকে অন্তত কিছু কাজে রূপদান করার মধ্যেই রয়েছে সার্থকতা। অনেকে বড় বড় কাজের পরিকল্পনা আঁটে, এটা করব সেটা করব বলে বাগাড়ম্র করে, কিন্তু কাজের বেলায় তারা ঠনঠন। বড় পরিকল্পনা আঁটা ভালাে কিন্তু তা কাজে রূপান্তরিত করা যাবে কি না সেটিই প্রকৃত জিজ্ঞাসা। এক্ষেত্রে দেখা যায় বাগাড়ম্বর কোন কাজের সিদ্ধি নিয়ে আসে না। তার চেয়ে ছােট পরিকল্পনা করাই ভালাে। সামর্থ্যের বাইরে কোনাে কিছু করতে যাওয়া অনুচিত। ভাবনার চেয়ে কর্মের গুরুত্ব অনেক বেশি, সে ভাবনা যত ক্ষুদ্রই হােক কেন। তাই আমাদের সকলের উচিত। বড় কিছু করার চিন্তাভাবনা না করে ছােটখাট কিছু করা অনেক ভালোে।

বিকল্প ১

মূলভাব: যা ভাবা হয় তাকে কাজে রূপদানের ওপরই মানব জীবনের প্রচেষ্টার স্বরূপ নির্ণীত হয়। তাই পরিকল্পনার বাগাড়ম্বরতা নয়; বরং কর্মবাহুল্যের প্রতি মনােযােগী হওয়াই প্রকৃত জ্ঞানীর কাজ।

সম্প্রসারিত ভাব : প্রাচীন শাস্ত্রে আছে, “কর্মহি সত্যমেব জীবন” অর্থাৎ কর্মের মধ্যেই জীবনের সাফল্য বীজ নিহিত। তাই কাজের মাধ্যমেই মানবজীবনকে ধন্য করতে হবে। কিন্তু কাজ করার জন্য চাই সুষ্ঠু ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা। কারণ বিশৃঙ্খল চিন্তার ফসল যে কাজ তা মানব জীবনে কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণই বয়ে আনে। তাই প্রথমে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তারপর বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হতে হবে। তবে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের মধ্যে সমন্বয় থাকা আবশ্যক। কেননা, অনেক  কিছুই পরিকল্পনা করা হলাে, কিন্তু তা আদৌ বাস্তবায়িত হলাে না- এতে কোনাে লাভ নেই। বাস্তবায়নহীন পরিকল্পনা মিথ্যা মরীচিকা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই মরীচিকাসম বাগাড়ম্বর পরিকল্পনার চেয়ে যত ক্ষুদ্রই হােক না কেন কাজের মাঝে নিজকে নিয়ােজিত রাখাই জ্ঞানীর পরিচয়। কারণ যে কাঠ জ্বলেনি তাকে আমরা যেমন আগুন বলি না, তেমনি বাস্তবায়নহীন পরিকল্পনা কোনাে কিছুই নয়। তাই ক্ষুদ্র হােক তবুও কাজের মধ্যেই খুঁজে নিতে হবে জীবনের সার্থকতা। কবির কণ্ঠে ধ্বনিত হয়-

“আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে।

কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।”

মন্তব্য: কথায় নয় কাজের মধ্যেই জীবনের সার্থকতা নিহিত। তাই কাজের। পরিমাণ যাই হােক না কেন এর মাধ্যমে পরিচয় স্পষ্ট করে তােলাই আমাদের ব্রত হওয়া উচিত।

বিকল্প ২

মূলভাব : কর্মের মানুষের প্রকৃত পরিচয়। অর্থহীন ও অলস ভাবনার চেয়ে অল্প পরিমাণ কাজ করা অধিক কল্যাণকর।

সম্প্রসারিত ভাব : পৃথিবীতে একশ্রেণির মানুষ রয়েছে যারা কাজের চেয়ে ভাবনাকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। তারা অন্যের চেয়ে নিজেকে বেশি যোগ্য বলে মনে করে এবং অন্যের কাজের নেতিবাচক সমালোচনা করতে পছন্দ করে। এ শ্রেণির মানুষ সমাজের জন্যে কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। মিথ্যা আত্মপ্রচার আর অসম্ভব সব পরিকল্পনা নিয়ে তারা আত্মপ্রসাদ পেয়ে থাকে। বলাই বাহুল্য, এদের সমস্ত ভাবনা ও পরিকল্পনাই ভবিষ্যতের জন্য গচ্ছিত থাকে; কোনো সময়ই তা বাস্তবে রূপ নেয় না। একসময় তাদের অন্তঃসারশূল্য জীবনের অবসান হয়।

পক্ষান্তরে, যিনি কাজের মানুষ, তিনি কর্মকেই ধ্যান-জ্ঞান করেন। এ শ্রেণির মানুষ আত্মসচেতন ও আত্মমর্যাদাশীল হয়ে থাকেন। এঁরা কখনোই অর্থহীন বাগাড়ম্বর করে কিংবা কপট ভাবুক বা জ্ঞানী সেজে নিজেকে ক্ষুদ্র করেন না। বরং কর্ম নিষ্পন্ন- তা সে যত অল্পই হোক, করার মধ্যেই তিনি আত্মতৃপ্তি খুঁজে পান। আর একথা সত্য যে, মানুষের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজের সমষ্টিই একসময় মানবসমাজের বৃহৎ কল্যাণসাধন করে। সুতরাং এ শ্রেণির মানুষ সমাজ ও সভ্যতার সম্পদ। এ কারণে এঁরা সমাজ কর্তৃক সমাদৃত ও সম্মানিত হন।

মন্তব্য : অর্থহীন ভাবনা মানুষের কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না, তা সময়ের অপচয় করে মাত্র; অন্যদিকে পরিমাণে অল্প যেকোনো কাজ মানবজীবনের প্রবাহকে সমৃদ্ধ ও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে। সুতরাং আমাদেরকে ভাবুক হবার পথ পরিহার করে কর্মী হবার সাধনা করতে হবে।

আরো পড়ুন: অনুকরণের দ্বারা পরের ভাব আপন হয়

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment