প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে ভাবসম্প্রসারণ
ভাব সম্পসারণ: অন্যায়কারী এবং অন্যায়কে নতশিরে সহ্যকারী উভয়েই সমান অপরাধী ।এ সমাজ কেউ নিজে অন্যায় না করলেই তার কর্তব্য শেষ হয়ে যায় না। আপ্রাণ চেষ্টা দ্বারা অন্যায়কে প্রতিহত করাই সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য ।
প্রত্যেক মানুষেরই অন্তরে ন্যায়বোধের অস্তিত্ব বিদ্যামান ।তার বিবেকের শুভ্র বেদীতে ন্যায়ের আসন পাতা । জগতের সকল কাজেই তার বিবেক থেকে আসে অমোঘ নির্দেশ পালন করতে হয় ।কিন্তু ভীতি ও দুর্বলতার করণে অনেক সময় মানুষ ন্যায়ের সেই অমোঘ নির্দেশ পালনে পশ্চাৎপদ হয়,সেই পবিএ দায়িত্ব পালনে কুষ্ঠি হয় ।তাই মুষ্টিমেয় মানুষের অপরাধের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের রয়েছে অন্যায়কে মানিয়ে চলার মানুষিকতা ।এ মানসিকতা কতখানি ক্ষমাশীলতা আর কতখানি ভীরুতা ,কতখানি সহনশক্তি আর কতখানি পলায়নপরতা বিদ্যমান তা পরিমাপ করা দঃসাধ্য ।বস্তুত মানুষ শুধু তিতিক্ষা ও করুণাবশতই অন্যায়কারীকে ক্ষমা করে না ;তার এ মানসিকতার পেছনে রয়েছে এক আত্ন পলায়নী মনোভাব ।নিজেকে অপরাধীর স শ্রব থেকে দূরে সরিয়ে রাখাকেই সে নিরাপদ বলে মনে করে ।ন্যায়ের নির্দেশ পালনে এ অক্ষমতার অর্থ অন্যায়কে প্রশ্রয় দান ।তেমনই অন্যায়কে ক্ষমা বা উপেক্ষা করাও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া ।এর ফলে অন্যায়কারীরা আরও অন্যায় করার সাহস পায় এবং তাতে পৃথিবী থেকে ন্যায়বোধ ধীরে ধীরে লোপ পায় ।কাজেই অন্যায়কারী এবং যে অ্যায় সহ্য করে,তারা উভয়েই দোষী,উভযেই শাস্তির যোগ্য ।অন্যায় আচরনে কেউ কেউ নীরব উদাসীন দর্শকের ভূমিকা পালন করে থাকে ।তাতে প্রশ্রয় পেয়ে অন্যায়কারী হয়ে ওঠে দুর্বিনীত ও শক্তিশালী ।কিন্তু ন্যায়ের রক্ষাকারী বিধাত বেশিদিন তা সহ্য করেন না।তাঁর রুদ্রতেজে একদিন না একদিন অন্যায়কারী এবং অন্যায়ের প্রশ্রয়দাতা উভয়কে ভোগ করতে হয় কঠিন শাস্তি ।
সৃষ্টিকর্তা অন্যাকারীকে যেমন ঘৃণা করেন,তেমনই অন্যায় সহ্যকারীকেও ঘৃণা করেন।তাই আমাদের অন্যায় কাজের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
বিকল্প ১
মূলভাব : অন্যায়কারী এবং অন্যায় সহ্যকারী উভয়েই সম অপরাধে অপরাধী। সময়ের ব্যবধানে তাদের ধ্বংস অনিবার্য।
সম্প্রসারিত ভাব : ভালাে-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, মানুষের আচরণগত বিপরীতধর্মী দুটি দিক। কেউ কেউ ব্যক্তি বা সমাজ জীবনের বৃহত্তর কল্যাণ ও সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ভালাে ও ন্যায় কাজ করে, আবার কেউ কেউ বিপরীতমুখী হয়। বস্তুত আমাদের সমাজে অন্যায়প্রবণ মানুষ সংখ্যায় কম হলেও তারা বৃহত্তর সুশীল সমাজকে জিম্মি করে রাখে। তারা অন্যকে অহেতুক উৎপীড়ন করে, অন্যের অধিকারে অন্যায় হস্তক্ষেপ করে, উচ্ছঙ্খল আচরণে সামাজিক শৃঙ্খলা নস্যাৎ করে। এরা সমাজের চোখে অন্যায়কারী এবং আইনের চোখে অপরাধী। এদের অপরাধ অবশ্যই দন্ডনীয়। কিন্তু মানুষ বিবেকবান হিসেবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অধিকারী হলেও অনেক সময় নানা কারণে দিনের পর দিন অন্যায় সহ্য করে যায়। এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সৎসাহস তাদের থাকে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাদের এ প্রতিবাদহীন নির্লিপ্ততা প্রকারান্তরে অন্যায়কারীকে আরও বেপরােয়া করে তােলে। দিন দিন বাড়ে তার শক্তি-সাহস। সাধারণ মানুষ মেরুদণ্ডহীনের মতাে মুখ বুজে থাকতে বাধ্য হয়। জগতের শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ বিধাতার প্রতিনিধিরূপে ন্যায়-অন্যায় মূল্যায়নের মাধ্যমে অন্যায় কাজ ও অন্যায়। চিন্তা থেকে বিরত থাকবে। ক্ষমাশীলতা মানুষের একটি মহৎ গুণ। কিন্তু ক্ষমারও একটা বিশেষ সীমা থাকা প্রয়ােজন। অন্যায়কারীকে ক্ষমা করার মাঝে কোনাে মহত্ত্ব নেই। নেই কোনাে কৃতিত্ব। যারা এদের ক্রমাগত ক্ষমা করে প্রশ্রয় দেয় তাদের অপ্রাধও কম নয়। কেননা অন্যায়কারীর মতােই অন্যায়কে প্রশ্রয়দানকারী সমান অপরাধে অপরাধী। মনীষী গ্যাটে বলেন,
“যখন তােমার পাশে কোনাে অন্যায় অবিচার সংঘটিত হয়, তুমি যদি সেই অন্যায়ের বিরােধিতা না কর, তাহলে তুমি তােমার কর্তব্যের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে।”
মন্তব্য: অন্যায়কে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করতে হবে। ক্ষমা যেখানে দুর্বলতা সেখানে অত্যন্ত কঠিন হতে হবে।
বিকল্প ২
অন্যায়কারী এবং অন্যায়কে যে প্রশ্রয় দেয় তথা অন্যায় সহ্য করে, উভয়েই সমান অপরাধী। নিজে অন্যায় না করলেই যে তার কর্তব্য ফুরিয়ে যায় এমনটি নয়। বরং অন্যায়কে প্রতিহত করাই সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
সমাজকে যারা উৎপীড়ন করে, ব্যক্তির অধিকারকে যারা হরণ করে, মানুষের বহু অীভজ্ঞতা এবং প্রযত্নে রচিত আইন ও শৃ্খলাকে যারা বিঘ্নিত করে তারা নিঃসন্দেহে অন্যায়কারী। অন্যায়ের যেমন বহুক্ষেত্র আছে, অপরাধেরও তেমনি মাত্রার তারতম্য আছে। এই মাত্রা অনুসারেই অন্যায়কারীর অপরাধের পরিমাপ করা হয়। আইনের দৃষ্টিতে অন্যায়কারী বা অপরাধী দণ্ডযোগ্য বলে বিবেচিত। কিন্তু অন্যায়কে যারা দিনের পর দিন নিঃশব্দে সহ্য করে, তারাও কি পরোক্ষভাবে পাপের প্রশ্রয় দিয়ে সমান অপরাধী নয়? -অবশ্যই তারাও সমান অপরাধী। সমাজের মধ্যে মুষ্টিমেয় মানুষের মধ্যে যেমন রয়েছে অপরাধের প্রবণতা, তেমনি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের রয়েছে অন্যায়কে মানিয়ে চলার মানসিকতা। এই মানসিকতায় কতখানি ক্ষমাশীলতা, কতখানি ঔদার্য, কতখানি সহনশক্তি তার পরিমাণ করা দুঃসাধ্য। বস্তুত মানুষ শুধু তিতিক্ষা ও করূণাবশতই অন্যায়কারীকে ক্ষমা করে না; তার এ মনস্তত্বের নেপথ্যে রয়েছে এক আত্ম-পলায়নী মনোভাব। নিজেকে অপরাধীর সংস্রব থেকে দূরে সরিয়ে রাখাকেই সে নিরাপদ বলে মনে করে। অধিকাংশ মানুষেরই এই নির্লিপ্ত নিঃস্পৃহতা অন্যায়কারীকে পরোক্ষভাবে সাহস যুগিয়েছে। স্বার্থভীরু আত্মমগ্ন মানুষ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠতে ভয় পায়। এভাবেই সমাজে অপরাধপ্রবণতা কালক্রমে প্রবল হয়ে ওঠে; অত্যাচারীরা নির্ভয়ে মাথা উঁচু করে চলে। মানব সংসারে অন্যায়কারীরা ঘৃণিত হলেও অন্যায় সহ্যকারী কিংবা ক্ষমাকারীরা ঘৃণিত বলে বিবেচিত হয় না। মানুষের ন্যায়-অন্যায়ের এই চেতনাও ভ্রান্ত। অন্যায়কারীর মত সহ্যকারীও সম-অপরাধে অপরাধী। মানুষ্যত্বের বিচারে মানুষের এই বিকৃতিও ক্ষমার অযোগ্য। বিশ্ববিধাতার ঘৃণার রুদ্র রোযানলে অন্যায়কারীর মত অন্যায় সহ্যকারীও বিশুষ্ক তৃণের মত ভস্মীভূত হবে। আসলে বস্তুজগতের স্থূল বিচারে সে নিরাপরাধের ছাড়পত্র পেলেও নিখিল বিশ্বমানবতার দরবারে তার অপরাধের রেহাই নেই।
কারও অপরাধ ক্ষমা করার মধ্যে যে উদারতা আছে তা মনুষ্যত্বেরই পরিচয়। কিন্তু ক্ষমার মাত্রা থাকা চাই। অন্যায়কারী যদি ক্ষমা পেয়ে বার বার অন্যায় করতে থাকে তবে সে ক্ষমার যোগ্য নয়। এতে তার অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে। এই ধরনের অন্যায়কারীর অন্যায় ক্ষমা করা কোনো মহৎ ব্যক্তির কাজ হতে পারে না। বরং সেও অন্যায়কারীর মতো সমান অপরাধী হবে।
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।