অভাব অল্প হলে দুঃখও অল্প হয়ে থাকে – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “অভাব অল্প হলে দুঃখও অল্প হয়ে থাকে ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

অভাব অল্প হলে দুঃখও অল্প হয়ে থাকে - ভাবসম্প্রসারণ

অভাব অল্প হলে দুঃখও অল্প হয়ে থাকে ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব: মানবজীবনের পরিক্রমায় অভাব অত্যন্ত সুপরিচিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত অনুষঙ্গ। ব্যক্তিমনের চাহিদা তথা অভাববােধই ব্যক্তিজীবনের সুখ-দুঃখের পরিমাণ নির্ধারণ করে। চাহিদা বেশি হলে দুঃখও বেশি হয়, চাহিদা কম হলে দুঃখও কম হয়।

ভাবসম্প্রসারণ: মানুষের জীবনের অগ্রসরমাণ ধারায় অভাব বা চাহিদার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। কেননা চাহিদা থাকলেই মানুষের কর্মপ্রেরণা থাকে, অন্যথায় মানুষ অকর্মণ্য হয়ে পড়ত। কিন্তু গােলযােগ বাধে তখন, যখন এ চাহিদা অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত চাহিদা মানুষকে হতাশাগ্রস্ত করে তােলে, বাড়িয়ে দেয় দুঃখবােধ। জীবনধারণের ক্ষেত্রে ধনী-দরিদ্র সবারই অভাববােধ থাকে। বলা যায়, অভাবই জীবনকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করে। দরিদ্রের জীবনে চাহিদা সীমিত। তাই ভাত-কাপড়ের জোগান দিতে পারলেই সে খুশি হয় এবং দুঃখবােধ তার অন্তর থেকে বিদায় নেয়। কিন্তু ধনীদের চাহিদা অফুরন্ত। সে চাহিদা এক সময় মানসিক ব্যাধিতে পরিণত হয়। তিনি যত বেশি আকাঙ্ক্ষা পূরণের সুযােগ পান তার চেয়ে বেশি হারে তার চাহিদা বৃদ্ধি পায়। সে চাহিদা জীবনধারণের প্রয়ােজনীয়তা থেকে নয় বরং বিলাসিতার আধিক্য পূরণের লক্ষ্যে। তাই ধনীদের দুঃখবােধও বেশি ভােগপ্রবণ বিশ্বে মানুষের চাহিদা এখন নানামুখী পথ অবলম্বন করেছে। কিন্তু মানুষ যদি বিশ্বাস করে জীবনে সব চাহিদা পূরণের নয়, তাহলে তার হতাশার পরিমাণ বহুলাংশে কমে যাবে। প্রাপ্ত সম্পদ নিয়ে যদি সে পরিতুষ্টি লাভ করতে পারে তাহলে জীবন সুন্দর ও সার্থক হবে। অন্যথায়, চাহিদা পূরণের যে অপূর্ণতা তাকে মনের দিক থেকে বৃদ্ধি পেতে দিলে অশান্তি আর দুঃখই বাড়বে! জীবন হয়ে পড়বে ভারসাম্যহীন। তাই অতিমাত্রায় ভােগপ্রবণতা নয়, অল্পে তুষ্ট থাকার চেষ্টা করতে হবে। তবেই দুঃখ-কষ্টের গ্লানি থেকে মানুষের মুক্তি মিলবে।

বিকল্প ১

মূলভাব: অভাবের অপূর্ণতা থেকেই দুঃখের আগমন ঘটে। আমরা যদি আমাদের চাহিদা সীমিত রাখি তাহলে আমাদের দুঃখও অল্প হবে।

সম্প্রসারিত ভাব: আমাদের সম্পদ সীমিত, কিন্তু অভাব সীমিত নয়। ধনী-দরিদ্র সকলেরই অভাব আছে। তবে এ দুই শ্রেণির অভাবের ধরন এক নয়। ধনীদের অনেকেই গগনচুম্বী অট্টালিকায় বাস করে প্রয়ােজনাতিরিক্ত বিলাস সামগ্রীর মধ্যে ডুবে থেকেও আরও বেশি পাওয়ার আশায় সর্বদা চিন্তাক্লিষ্ট থাকে। সম্পদ বৃদ্ধির নেশায় তারা ক্রমাগত ছুটতে থাকে। পবিত্র কুরআনে এদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, “এমনকি প্রাচুর্য লাভের এই উন্মত্ত নেশা তাদেরকে কবর অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত ধাবিত করে।” গরিবদের অভাব কোনাে মতে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কায়িক শ্রমের দ্বারা সেটুকু অর্জন করতে পারলেই তারা সন্তুষ্ট থাকে। কিন্তু সম্পদ বৃদ্ধির উন্মাদনায় ধনীরা বৈধ-অবৈধ যেকোনাে পন্থা অবলম্বন করতে দ্বিধা করে না। দরিদ্রদের মুখের অন্ন কেড়ে নিতেও তাদের হাত কাঁপে না। তবে বিত্তহীনরা বিত্তবানদের ধরন দেখে সম্পদ আহরণের ব্যর্থ চেষ্টা করে এবং সর্বদা হাহুতাশ করে। এই দুই শ্রেণি ছাড়াও মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পর্যায়ের দুই শ্রেণির মানুষ আছে, যারা পারে না উঁচু স্তরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে, আবার পারে না দিন গরিবদের মতাে দিনযাপন করতে। ফলে ধারকর্জ করে ঐতিহ্য বজায় রাখার চেষ্টায় ধ্বংসের পথে পা বাড়ায়। আবার দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষই তাদের যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়, তারা আরও চায়। এ চাওয়ার কোনাে শেষ নেই। আর এ কারণেই তারা সুখী হতে পারে না।মানুষ যদি তার যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে, তাহলে আর দুঃখ থাকে না। জনৈক মনীষী বলেছেন, “যত কম উপকরণ দিয়ে দিনাতিপাত করা যায়, জীবনযাত্রা ততই সুখের হয়।” সুখী মানুষের গল্প থেকে আমরা জানতে পারি, তার কিছু না থাকায় সে সুখী জীবনযাপন করে। এ মানসিকতা সবার মাঝে বিরাজিত হলে পৃথিবীতে শান্তির সুবাতাস বইতে থাকবে।

মন্তব্য: জগৎ-সংসারে অভাব বাস্তবতারই অপরিহার্য অংশ। তাই মানুষের উচিত অভাবকে মেনে নেওয়া এবং অভাবের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে চাহিদাকে সীমিত রেখে অল্পে তুষ্ট থাকার মানসিকতা গড়ে তােলা।

আরো পড়ুন: অসি অপেক্ষা মসি অধিকতর শক্তিমান

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment