অর্থই অনর্থের মূল – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “অর্থই অনর্থের মূল ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

অর্থই অনর্থের মূল - ভাবসম্প্রসারণ

অর্থই অনর্থের মূল ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব: এ পৃথিবীতে মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে অর্থের প্রয়ােজন। এমনই গুরুত্বপূর্ণ যে, অর্থ সঠিকভাবে সদ্ব্যবহার না করলে তা অনেক সময় অনর্থের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ভাবসম্প্রসারণঃ অর্থ মানবজীবনের জন্যে খুবই প্রয়ােজনীয়। কারণ মানবজীবনে প্রতি ক্ষেত্রের কার্যকারিতা অর্থের ওপর নির্ভরশীল । অর্থই আজীবন মানুষের সকল চাওয়া-পাওয়ার প্রয়ােজন মেটায়। অর্থ না থাকলে জীবনে দুঃখকষ্টের শেষ থাকে না। অর্থ না থাকলে অনেক সময় জীবনকে মূল্যহীন বা অর্থহীন বলে মনে হয়। এজন্যেই মানুষ অর্থের পেছনে ছুটে চলেছে নিরন্তর। কী করে অঢেল অর্থ উপার্জন করা যায় সেই চেষ্টার শেষ নেই। কিন্তু অনেক কষ্ট ও সাধনার এ অর্থই অনেক সময় অনর্থের মূল হয়ে দাঁড়ায়। কারণ বেশি অর্থ মানুষকে অন্যায়ের পথে, অপরাধের পথে ঠেলে দেয়। বেশি অর্থ অনেক সময় মানুষকে অমানুষ করে তােলে। অর্থকে কেন্দ্র করে পৃথিবীজুড়ে ঘটে চলেছে নানাবিধ ভয়ংকর, জঘন্য, অমানবিক ও অকল্যাণকর ঘটনা। অর্থের মােহ বড়ই ভয়ানক। অর্থের কারণে পিতা-পুত্র, ভাই-ভাই, রাজায়-রাজায়, দেশে-দেশে ঘটে চলেছে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা। মুক্তিপণ দাবি করে অর্থ আদায় করে, না দিলে প্রাণটা কেড়ে নেওয়া হয়। আর যাদের অর্থ আছে তারা অর্থের বিনিময়ে প্রিয়জনকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালায়। অর্থের লোভ এমনই ভয়ানক যে মানুষ বিবেক, মনুষ্যত্ব, নীতি বিসর্জন দিতে দ্বিধা করে না। আর সমাজের ভয়ানক ব্যাধি যৌতুক, যার বলি হচ্ছে অসংখ্য কন্যাসন্তান।

একথা অস্বীকার করা যায় না যে, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অন্যায়-অনাচার ও দুর্নীতি ইত্যাদির পেছনে অনেক সময় অর্থই প্রধান ভূমিকা পালন করে। তবে অর্থ সকল সময়ই অনর্থের কারণ হয় না। এর ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকলে অর্থ অনেক সময় মর্যাদা বৃদ্ধি করে। ব্যবহারকারী, ব্যবহার ও কার্যকারিতার ওপরই এর ভালাে-মন্দ ভূমিকা নির্ভর করে।

বিকল্প ১

মূলভাব: অর্থ প্রয়ােজনীয় জিনিস আবার এ অর্থই বহু অনাসৃষ্টির জন্ম দেয়। পৃথিবীতে যত লােমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে তার অধিকাংশের মূলেই রয়েছে অর্থ। অর্থের জন্য ভাই ভাইকে, স্বামী স্ত্রীকে খুন করতেও দ্বিধাবােধ করে না। 

সম্প্রসারিত ভাব: মানবজীবনে অর্থের প্রয়ােজনীয়তা অনস্বীকার্য। কারণ অর্থ ছাড়া সুষ্ঠু জীবনযাপনের কথা চিন্তাও করা যায় না। মৌলিক প্রয়ােজন মিটানাে ব্যতিরেকে মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। আর প্রতিটি মৌলিক প্রয়ােজন মিটানাের জন্য দরকার অর্থের। অধুনা বিশ্বের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, যেসব দেশ অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল সেসব দেশই বিশ্বের নেতৃত্ব দেয়। পক্ষান্তরে, যেসব দেশ অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল সেসব দেশকে সচ্ছল দেশের নির্দেশনা মতাে চলতে হয়। শুধু রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই নয় সর্বত্রই এর প্রতিফলন চোখে পড়ে। 

আসলে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের যাবতীয় কর্ম ও অর্থের দ্বারা সম্পন্ন হয়। আপাতদৃষ্টিতে অর্থ মানুষের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের নিয়ামক হলেও সেই অর্থই অনেক সময় অনর্থের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অর্থকে কেন্দ্র করে ভাইয়ে-ভাইয়ে, পিতা-পুত্রে ও স্বামী-স্ত্রীতে বিবাদ-বিসংবাদ, দ্বন্দ্ব-কলহ লেগেই আছে। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই অনেক লােমহর্ষক ঘটনা চোখে পড়ে যার অধিকাংশই অর্থের কারণে সংঘটিত হয়। অর্থের লােভে মানুষ চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই রাহাজানি এমনকি হত্যার মতাে জঘন্য পাপাচারে লিপ্ত হয়। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে দেশের চরম সর্বনাশ ডেকে আনছে কেবলই অর্থের কারণে। অর্থের লালসা মানুষের নৈতিক অধঃপতন ঘটায়। পৃথিবীতে যাবতীয় দ্বন্দ্ব, অশান্তি আর সংঘাতের মূল কারণও এ অর্থ। অর্থসম্পদের কারণেই রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে যুদ্ধের উন্মাদনা দেখা দেয়, শ্রমিকমালিকের মধ্যে মতবিরােধ এবং ভাইয়ে ভাইয়ে শত্রুতা সৃষ্টি হয়। অর্থের জন্যই মানুষ মানুষকে খুন করে। আজ থেকে দেড় হাজার বছর পূর্বে কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদের সেনাপতি সিমারের হাতে যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছিল তার মূলেও ছিল অর্থ। সুতরাং জগতে অশান্তির মূলই হচ্ছে অর্থ। 

বিকল্প ২

মন্তব্য: জীবনধারণের জন্য অর্থের আবশ্যকতা থাকলেও এর মােহে কখনই নীতি ও বিবেক বিসর্জন দেওয়া উচিত নয়। তাই অর্থের পিছনে না ছুটে কিভাবে নৈতিকতা ও মনুষ্যত্ব অর্জন করা যায় তার পিছনে আমাদের ছুটা উচিত

মূলভাব: অর্থ বা সম্পদ জীবনযাত্রা নির্বাহের জন্য অপরিহার্য হলেও অর্থের যথাযথ ব্যবহার না হলে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে নেমে আসে অকল্যাণ। সম্প্রসারিত ভাব: প্রাত্যহিক জীবনের সর্বক্ষেত্রে অর্থেও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। অর্থ বিত্ত না থাকলে স্বীয় স্ত্রী পুত্র কন্যার কাছ থেকেও সম্মান বা মূল্যয়ন পাওয়া যায় না। যার অর্থ নেই, আত্মীয় স্বজন বন্দু বান্ধবের বড় অভাব তা জীবনে। বিপদ আপদে দুঃখ দৈন্যে বড় অসহায় সে। তাই মানুষ সারা জীবন অর্থের পেছনে ছোটে । কিন্তু মানুষের অভাব অসীম। কথায় বলে, অভাবে স্বভাব নষ্ট। এই অর্থ উপার্জনের জন্য মানুষ অনেক সময় চুরি ডাকাতি হাইজ্যাক খুন খারবি ইত্যাদি নানা খারাপ কাজে লিপ্ত হয়। আবার এ অর্থই অনেক সময় অনর্থের করণ হয়ে দাঁড়ায়। পৃথিবীতে যত অকল্যান সাধিত হচ্ছে তার প্রতিটির সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত অর্থ। সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ও সীমাহীন দুর্নীতির কারণ উদগ্র অর্থ-লালসা । অর্থকে কেন্দ্র করে ভাইয়ে-ভাইয়ে রাজায়-রাজায় ও জাতিতে জাতিতে বিভেদ দেখা দেয়। অর্থের জন্য পিতা-পুত্র ও স্বামী-¯ত্রীর মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। অর্থই মানুষের জ্ঞান বিবেক বুদ্ধি নষ্ট করে। দুনিয়াতে যদি কোনো অর্থের প্রয়োজন না থাকত তবে এ সব বিবাদ বিসম্বাদ কিছুই হতো না। মন্তব্য: জীবনের সর্বক্ষেত্রে অর্থ আবশ্যক। কিন্তু এ অর্থ উপার্জন ও ব্যয় সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। এক্ষেত্রে বেকনের উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য, “ টাকা পয়সা ভৃত্য হিসেবে উত্তম হলেও মনিব হিসেবে একেবারে মন্দ ।”

বিকল্প ৩

মন্তব্য: অর্থ বা সম্পদ মানব জীবনের জন্যে অপরিহার্য হলেও অর্থের যথাযোগ্য ব্যবহার না হলে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে নেমে আসে অকল্যাণ। অর্থ উপার্জনের পন্থা যদি সৎ না হয়, কিংবা অন্যায় স্বার্থ হাসিলের জন্যে যদি অর্থের অপব্যবহার করা হয়, কিংবা হীন স্বার্থে ব্যক্তিগত বা জাতীয় সম্পদের অপচয় করা হয় তবে তা বিরাট ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

মূলভাব: জীবনের প্রয়োজনে অর্থের ভূমিকা ও প্রয়োজনীয়তা কেউ অস্বীকার করেন না। অর্থ ও সম্পদ ছাড়া জীবনে সুখ, শান্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত করা যায় না। কিন্তু অর্থ ও সম্পদ অনেক সময় সুখ ও কল্যাণের বদলে অকল্যাণ বয়ে আনে। জগতে সমস্ত অপকর্মের মূলে রয়েছে অর্থ। অন্যায় স্বার্থ হাসিলের জন্যে অর্থকে টোপ হিসেবে কাজে লাগায় হীন চরিত্রের মানুষ। অর্থলোলুপ মানুষ অর্থের লোভে জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়। তার ন্যায়-অন্যায় বিবেচনা, নীতি-আদর্শ তখন লোপ পায়। সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ও সীমাহীন দুর্নীতির কারণ উদগ্র অর্থ-লালসা। অন্যায় পথে অর্জিত অর্থ মানুষকে বিবেকহীন ও দাম্ভিক করে তোলে। অর্থের দাপটে তার বুদ্ধি-বিবেচনা লোপ পায়। ’দুনিয়াটা টাকার বশ’- এই তার অর্থ-বিত্ত ব্যবহারের মূলমন্ত্র হয়ে দাঁড়ায়। পৃথিবীতে সকল মানুষ সমান হলেও এক শ্রেণীর লোক অর্থ-বিত্ত কুক্ষিগত করে মানবসমাজকে শ্রেণীবিভক্ত করেছে। সমাজে সৃষ্টি হয়েছে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য। অর্থের স্বার্থেই রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে বেঁধেছে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ। অর্থের লোভেই মানুষ খাদ্যে ও ওষুধে ভেজাল দেয়, নকল জিনিস বাজারে ছাড়ে, নির্মাণ সামগ্রীসহ ব্যবহার্য সামগ্রীর মান নষ্ট করে। নিত্য ব্যবহার্য পণ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়। এক কথায় অর্থের লালসা মানুষকে বিবেকহীন পশুতে পরিণত করে। বেকন যে বলেছেন, ’টাকা-পয়সা ভৃত্য হিসেবে উত্তম হলেও মনিব হিসেবে একেবারে মন্দ’ তা অকারণে নয়।

আরো পড়ুন: আপনারে বড় বলে বড় সেই নয় লােকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment