প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “আলস্য এক ভয়ানক ব্যাধি ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
আলস্য এক ভয়ানক ব্যাধি ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব: মানবজীবনের একটি বাজে স্বভাব হলাে আলস্য। দেহের বিভিন্ন রােগ ব্যাধি যেমন মানুষকে পঙ্গু করে দেয় তেমনই আলস্যও মানুষকে শ্রমবিমুখ করে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়।
সম্প্রসারিত ভাব: আলস্য মানে হলাে শ্রমবিমুখতা বা কাজ করার অনীহা। আলস্য কাজ করার উদ্যমকে স্তিমিত করে মানুষকে অকর্মণ্য করে রাখে। এটি ভয়ানক ব্যাধির মতােই সংক্রামক ও ধ্বংসকারী। অলস ব্যক্তি জীবনে প্রতিষ্ঠা পায় না। বাবা-মা, ভাইবােন, স্ত্রী-পরিজন কেউই তাকে ভালােবাসে না। সবাই তাকে অবজ্ঞার চোখে দেখে। আসলে পৃথিবীতে পরিশ্রমের কোনাে বিকল্প নেই। যে ব্যক্তি পরিশ্রম করে এবং পয়সা উপার্জন করে সবাই তাকে ভালােবাসে। যে পরিশ্রম করে তার স্বাস্থ্যও ভালাে থাকে। পক্ষান্তরে, যে কাজ করে না অর্থাৎ যে অলস তার স্বাস্থ্যও দিনদিন খারাপ হয়ে যায়। যে ব্যক্তি কাজ করে সে কাজ করার পর যে অবসরটুকু পায় তার মধ্যে যে আনন্দ সে অনুভব করে অলস ব্যক্তি কখনাে সে আনন্দ অনুভব করতে পারে না। আসলে অলসতা মানুষের দেহ ও মনে জড়তা আনে। ব্যাধিগ্রস্ত মানুষ যেমন অপরের সাহায্য ছাড়া চলতে পারে না, তেমনই অলস ব্যক্তিকেও পরগাছার মতাে অপরের দয়ার ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতে হয়। দেশ ও জাতির কোনাে মঙ্গল সাধন তাে তারা করতেই পারে না বরং দেশ ও জাতির বােঝা হয়ে অবহেলিত জীবনযাপন করে। কথায় আছে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের আস্তানা অলস ও অকর্মণ্য ব্যক্তিরাই সমাজে সকল অনাচার ও কুকর্মের উদ্ভাবক। ব্যাধিগ্রস্ত মানুষ যেমন সমাজে রােগবিস্তারে সহায়তা করে, তেমনই অলস ও অকর্মণ্য ব্যক্তিমাত্রই নানা কুচিন্তা ও কুকর্ম দ্বারা সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ও অশান্তি ডেকে আনে। তবে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম অবশ্যই জরুরি। বিশ্রাম আর আলস্য এক কথা নয়। বিশ্রাম কাজেরই একটা অংশ। কর্মোদ্যম ঠিক রাখার জন্য বিশ্রাম অবশ্যই জরুরি। তবে বিশ্রামের যদি নির্দিষ্ট সময় না থাকে তা যদি হয় কাজ চলাকালীন, তবে তা অবশ্যই আলস্যের নামান্তর। আর এ আলস্য অন্য সব কঠিন রােগের মতােই ভয়ানক ও মারাত্মক।
মন্তব্য: আমাদের উচিত সবসময় আলস্য পরিহার করে কঠোর শ্রমের মাধ্যমে নিজেদেরকে দেশের যােগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তােলা।
বিকল্প ১
মূলভাব : অলসতা আমাদের জীবনে এক মারাত্মক ব্যাধি। দৈহিক রােগ যেমন আমাদের জীবনকে পঙ্গু করে ফেলে, তেমনি অলসতাও আমাদেরকে শ্রম বিমুখ করে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। অলস ব্যক্তি জীবনে কখনও উন্নতি করতে পারে। জীবনে উন্নতি ও সাফল্যের মূলে রয়েছে পরিশ্রম। পরিশ্রমের কোনাে বিকল্প নেই। যে জাতি যতাে বেশি পরিশ্রমী সে জাতি তত বেশি উন্নত।
সম্প্রসারিত ভাব : আলস্য বলতে শ্রমবিমুখতা বা কাজ করার ইচ্ছা না থাকাকে বােঝায়। আলস্য সব উদ্যমকে ধ্বংস করে, মানুষকে করে পঙ্গু। আলস্য যে কোনাে ব্যাধির মতােই সংক্রামক ও ধ্বংসকারী। অলস ব্যক্তি জীবনে প্রতিষ্ঠা পায় না; সে হয় নির্মা। কথায় বলে, ‘আলস্য দোষের আকর। অলসতা মানুষের দেহ ও মনে জড়তা আনে। ব্যাধিগ্রস্ত মানুষ যেরূপ অপরের সাহায্য ছাড়া চলতে পারে না, তেমনি অলস ব্যক্তিও অকর্মণ্য হয়ে পড়ে। সমাজে এদেরকে পরগাছার মতাে অপরের দয়ার ওপর বেঁচে থাকতে হয়। দেশ ও জাতির কোনাে মঙ্গল সাধন তাে তারা করতেই পারে না বরং তারা
অক্ষম ও পঙ্গু হয়ে পড়ে এবং দেশ ও জাতির বােঝা হয়ে এক দুঃখময় জীবনযাপন করে। কথায় আছে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের আস্তানা। অলস ও অকর্মণ্য ব্যক্তিরাই সমাজে সকল অনাচার ও কুকর্মের উদ্ভাবক। ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি যেমন সমাজের রােগ বিস্তারে সহায়তা করে, তেমনি অলস ও অকর্মণ্য লােক নানা কুচিন্তা ও কুকাজ দ্বারা সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ও অশান্তি ডেকে আনে। অলস লােকের সংস্পর্শে এসে কোনাে কর্মঠ ব্যক্তিও অলস হয়ে যেতে পারে। তবে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে হয়। কিন্তু বিশ্রাম আর
আলস্য এক কথা নয়। বিশ্রাম কাজেরই একটা অঙ্গ। শক্তি সঞ্চয়ের জন্য বিশ্রামের প্রয়ােজন অপরিহার্য। তবে বিশ্রামের যদি নির্দিষ্ট সময় না থাকে, তা যদি হয় কাজ চলাকালীন, তবে তা অবশ্যই আলস্যের নামান্তর। আর এ আলস্য অন্য সব কঠিন রােগের মতােই ভয়ানক ও মারাত্মক।
বিকল্প ২
মন্তব্য : আমাদের উচিত সবসময় অলসতা পরিহার করে কঠোর শ্রমের মাধ্যমে নিজেদেরকে দেশের যােগ্য হিসেবে গড়ে তােলা।
মূলভাব : অলসতায় যাকে পেয়ে বসেছে, সে কখনও সৃষ্টিশীল কিছু করতে পারে না। তার জীবন রোগগ্রস্ত, অকর্মণ্য, স্থবির এবং সে হয় সমাজে ঘৃণিত। সমাজে যে অকর্মক, সে কাজ না করতে করতে ভীষণ আলসে হয়ে পড়েছে। অভ্যাসগতভাবে সে মারাত্মক রোগাগ্রস্ত প্রায়। এমন অলসতা সাধারণত সমাজের জন্য, দেশ ও জাতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিও বয়ে আনে।
সম্প্রসারিত-ভাব : অলসতা আমাদের সমাজ ও দেশের জন্য মারাত্মক এক রোগ। যাকে অলসতায় পেয়ে বসেছে সে কখনও মননশীল কিছু করতে পারে না। মানুষের কাছে সে সর্বদা ঘৃণিত ও ধিকৃত। জীবন সম্পর্কে আলসে মানুষের কোন হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। তারা কেবলই ধ্বংসের পথে পা বাড়ায়। অবশেষে ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত হয়ে মনুষ্যত্ববোধ হারিয়ে ফেলে। কোন কূল কিনার না পেয়ে জীবন পরিশেষে সাঙ্গ হয়ে যায়। এমন আলস্য রোগ সমাজের বিকাশের ক্ষেত্রে অন্তরায়স্বরুপ। এতে অবনতি ছাড়া কোন কিছু পাওয়া যায় না। যারা আলস্যকে জীবনে পুষে রাখে, তারা সারা জীবন তুষের আগুণের মত জ্বলতে থাকে। কোন দিকনির্দেশনা জীবনে আসে না। লক্ষ্যহীন জীবনে পরিণত হয় তাদের জীবন। বিশেষ করে একজনের অলসতার কারণে আরও অনেকে এ রোগে সংক্রমিত হতে পারে।
তাই আমাদের জাতীয় জীবনে এ রোগ মারাত্মক ক্ষতি করে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সকল ক্ষেত্রে এর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ রোগ থেকে সংযত হওয়া দরকার। অলসতা মানুষের জীবনে শান্তি আনতে পারে না। সারাজীবন শুধু অশান্তির বীজ বপন করে। আলস্য এক অভিশপ্ত রোগ।
বিকল্প ৩
মূলভাব: অলস ব্যক্তি জীবনে কখনো উন্নতি করতে পারে না। জীবনে উন্নতি ও সাফল্যের মূলে রয়েছে পরিশ্রম। যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী সে জাতি তত বেশি উন্নত। তাইতো বলা হয়ে থাকে পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি।
সম্প্রসারিত ভাব: হাসি- কান্না, সুখ-দুঃখের ন্যায় রোগব্যাধিও মানুষের জীবনের একটা অংশ। কিছু কিছু রোগ ব্যাধি সম্পর্কে মানুষকে সদা সতর্ক থাকতে হয়। কারণ এসব ভয়ঙ্কর রোগ ব্যাধি মানুষের কর্ম ক্ষমতা নষ্ট করে। মানুষকে ফেলে দেয় দুশ্চিন্তায় আবার কখনও কখনও কখনও নিশ্চিন্ত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
অলসতা এমনই এক ভয়ানক ব্যাধি। কারণ এটি ভয়ানক ব্যাধি নয় মানুষের জীবনকে অসাড় করে তোলে। সমাজে কিছু মানুষ আছে যারা অলস ও কর্মবিমুখ। এই অলস মানুষগুলো সমাজ ও নিজের উন্নয়নের জন্য কোন ভূমিকাই পালন করতে পারে না। মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার জন্য বহুৎ জিনিসের প্রয়োজন। পরিশ্রম ব্যতীত ওইগুলো অর্জন করা যায় না। অলস মানুষ জীবনে কোনদিনই উন্নতি লাভ করে সুখের মুখ দেখতে পায় না। অলস মানুষের জীবনে ব্যর্থতা নেমে আসে এবং পরিণামে সে দুঃখপূর্ণ জীবন যাপন করে। ব্যাধিগ্রস্থ মানুষের মতো দিনদিন সে পঙ্গু হয়ে পড়ে।
অলস পঙ্গু মানুষ দেশ ও জাতির কোন মঙ্গল সাধন করতেই পারে না বরং নিত্য আত্মীয়-স্বজন ও পিতা-মাতার তিরস্কার ও গঞ্জনা তাকে সহ্য করতে হয়। কথায় আছে, “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের লীলাভূমি”। ব্যাধিগ্রস্থ ব্যক্তি যেমন সমাজে রোগ বিস্তার করে সমাজকে ব্যাধিগ্রস্থ করে তেমনি অলস নানা কুচিন্তা ও কুকাজ দ্বারা সমাজের নৈতিক অবক্ষয় ও অশান্তি ডেকে আনে।
মন্তব্য: উপরের বিস্তারিত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি যে, জীবনকে সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য শ্রম ব্যতীত অন্য কোনো সহজ পথ নেই। পরিশ্রমের মাধ্যমে এই জীবনে সফলতা আসবে। সুখ লাভের জন্য যেমন কষ্ট করতে হয় ঠিক তদ্রুপ জীবনে যত পরিশ্রম করা যাবে পরবর্তী জীবন তত উন্নত ভাবে বেঁচে থাকা যাবে। আমাদের নিজেদের স্বার্থে আলস্যে পরিহার করে কর্ম ও পরিশ্রমী হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তাহলে দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ সম্ভব।
আরো পড়ুন: ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবাই জ্ঞানীর কাজ
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।