ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় - ভাবসম্প্রসারণ

ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় ভাবসম্প্রসারণ

প্রতিটি কাজের পেছনেই তীব্র ইচ্ছা থাকা দরকার। ইচ্ছাশক্তি প্রবল হলে কার্যে সফলতা সুনিশ্চিত। ইচ্ছাশক্তির বলেই যে কোনাে অসাধ্য সাধন করা যায়। ইচ্ছা একটি শক্তি। এ শক্তির দ্বারা চিত্তের একাগ্রতা, ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের সৃষ্টি হয়, যা মানুষকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে ধাবিত করে। ইচ্ছাই মানবজীবনের সফলতার চাবিকাঠি। কোনাে কাজ করার জন্য ইচ্ছাই যথেষ্ট। মানবজীবন। সংগ্রামমুখর। এ পৃথিবীতে মানুষকে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। এখানে সহজলভ্য বলতে কিছু নেই। বহু বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে মানুষকে এগিয়ে যেতে হয়। কিন্তু তাই বলে কোনাে কাজ মানুষের অসাধ্য নয়। আগ্রহ, ধৈর্য ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করলে কাজে সফলতা অবশ্যই আসবে। আর একেই আমরা ইচ্ছা বলি।ইচ্ছার বলেই মানবসভ্যতার এত অগ্রগতি ও উন্নতি সাধিত হয়েছে। ইচ্ছার বলে একমাত্র জীবনদান ছাড়া পৃথিবীতে সবকিছুই সম্ভব হয়েছে। ইচ্ছার বলে মানুষ পাতাল থেকে মহাশূন্য বিজয় করেছে, বিজ্ঞানের এত উন্নতি হয়েছে। ইচ্ছা থাকলে মানুষ যে কোনাে অবস্থায় সফলতা পেতে পারে। ইচ্ছার বলেই আব্রাহাম লিংকন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, নেপােলিয়ন বােনাপার্ট ইউরােপ জয় করতে সমর্থ হয়েছিলেন। প্রবল ইচ্ছার বলেই রবার্ট ব্রুস, শিবাজী ফিরে পেয়েছিলেন দেশ। প্রবল ইচ্ছার বলেই পরাধীন জাতি সমস্ত বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে স্বাধীনতা লাভ করেছে। বাংলাদেশও স্বাধীনতা শক্তিতে বলীয়ান হয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হয়েছে। পৃথিবীতে যারা জ্ঞানবিজ্ঞান ও দিগ্বিজয়ের ক্ষেত্রে যশস্বী হয়েছেন, তারা দুর্দমনীয় ইচ্ছার দ্বারাই জয়যুক্ত হয়েছেন। যে ব্যক্তি | দুর্বল এবং যার মনে প্রবল ইচ্ছাশক্তির অভাব রয়েছে সে জীবনে সাফল্য আশা করতে পারে না। | সুতরাং মানুষের ইচ্ছাশক্তিই তাকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়। ইচ্ছা থাকলে মানুষের সফলতা লাভ সহজ হয়। এ ইচ্ছাশক্তি যার যত প্রবল হবে সফলতা লাভও তার ততাে সহজ হবে। মানুষ অপরাজেয় ইচ্ছাশক্তির ধারক বলেই বিশ্ব আজ দ্রুত উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।

বিকল্প ১

মূলভাব: ইচ্ছা এমন এক শক্তি যার দ্বারা মানুষের মনে একাগ্রতা, ধৈর্য, আগ্রহ, নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ের মতাে গুণাবলির সৃষ্টি হয়। ইচ্ছা মানুষকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে ধাবিত করে। ইচ্ছাশক্তি প্রবল হলে যেকোনাে কাজে সফলতা লাভ করা সম্ভব। ইচ্ছা থাকলে এর দ্বারা আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে অসাধ্যকে সাধন করা সম্ভব।

ভাবসম্প্রসারণঃ পৃথিবীতে মানুষকে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। জীবনে চলার পথে পদে পদে রয়েছে নানা বাধাবিঘ্ন। এসব বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে মানুষকে এগিয়ে যেতে হয়। মানুষ তার অন্তরের ইচ্ছাশক্তি দ্বারা সকল বাধাকে অতিক্রম করার চেষ্টা করে। যে মানুষের ইচ্ছাশক্তি প্রচণ্ড শক্তিশালী, সকল বাধা তার কাছে নতিস্বীকার করে। মানবজীবনে বাধা আসবেই, সেজন্যে প্রয়ােজন। আত্মশক্তিতে বলীয়ান হওয়া। মানব চরিত্রে একাগ্রতা, ধৈর্য, অধ্যবসায় ও আগ্রহ ইচ্ছাশক্তির দ্বারাই পরিপূর্ণতা লাভ করে। মানব সভ্যতার যে দুত অগ্রগতি ও উন্নয়ন সাধিত হয়েছে- এর মূলে কাজ করেছে মানুষের ইচ্ছাশক্তি। ইচ্ছার বলেই মানুষ আকাশ-পাতাল এমনকি সমগ্র পৃথিবীকে জয় করেছে। ইচ্ছা না থাকলে মানবজীবন এত সুন্দর ও সার্থক হতাে না। ইচ্ছাহীন। জীবন অর্থহীন। ইচ্ছাশক্তি প্রবল হলে জীবনে সাফল্যও তত দ্রুত হয় । ইচ্ছাশক্তিই মানুষকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছে দেয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে জনগণের প্রবল ও দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির কারণে। দেশের আপামর জনগণ দৃঢ় প্রতিজ্ঞতাবদ্ধ হয়েছিল শত্রুকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিতে। সেই জন্যে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল এবং জীবন বিসর্জন দিতে দ্বিধা করেনি। আত্মশক্তিতে বলীয়ান ইচ্ছাশক্তির কাছে সেই দিন শত্রুরা মাথা নত করেছিল। প্রবল ইচ্ছাশক্তির কারণে পরাধীন জাতি সকল
বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে দেশকে স্বাধীন করেছে । ইচ্ছা থাকলে যেকোনাে অসাধ্য কাজ সহজে করা সম্ভব। পৃথিবীতে আজ যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের জয়জয়কার তার পেছনের চালিকাশক্তি প্রবল ইচ্ছা।

ইচ্ছাশক্তিই হচ্ছে মানুষের সকল কাজের ও সাফল্যের মূল শক্তি। মানুষের প্রবল ইচ্ছাশক্তির সাহায্যেই পৃথিবী উন্নতির দিকে এগিয়ে চলেছে। তাই ইচ্ছাশক্তি যত প্রবল হবে সফলতা অর্জন তত নিশ্চিত হবে।

বিকল্প ২

মূলভাব : ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে- “Where there is a will, there is a way.” অর্থাৎ মানুষের ইচ্ছা শক্তির কাছে কোনো প্রতিকূলতাই টিকে থাকতে পারে না। ইচ্ছা এমন একটি অদৃশ্য শক্তি যা দুর্জয়কে জয় করার মনোবল বৃদ্ধি করে।

সম্প্রসারিত ভাব : পৃথিবী একটি সংগ্রামক্ষেত্র। মানুষকে এখানে নানা বিরোধী শক্তির সাথে অবিরত লড়াই করে টিকে থাকতে হয়। মানব জীবনান্তহীন সমস্যার আবর্তনে আবর্তিত। একমাত্র অদম্য ইচ্ছাশক্তির বলেই মানুষ তার সমস্ত বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌছতে পারে। ইচ্ছাশক্তি মনোবলের হাতিয়ার। ইচ্ছাশক্তির বলেই মানুষ তার জাগতিক বিবিধ সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়। কৃতকার্য হয় প্রতিটি কর্মে, পৌঁছতে পারে ইপ্সিত লক্ষ্যে। যে ব্যক্তি দুর্বল, যার ইচ্ছাশক্তি ক্ষীণ, সে কোনদিনই কোনো কাজে সফলতা আনতে পারে না। পদে পদে তাকে হোঁচট খেতে হয়, ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ইতিহাসের খ্যাতনামা বীর পুরুষেরা অদম্য ইচ্ছাশক্তির বলে বলীয়ান হয়ে নিঃশঙ্কচিত্তে রাজ্য জয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন এবং অসাধ্য সাধ্য করতে সমর্থ হয়েছেন। তাঁরা সক্ষম হয়েছেন জীবনের সোনালি দিগন্তে পৌছতে, কুক্ষিগত করেছেন সাফল্যের চাবিকাঠি। এ সাফল্যের মূলে রয়েছে তাঁদের ইচ্ছাশক্তি ও ঐকান্তিকতা। তাই প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও একাগ্র সাধনার উপর নির্ভর করে জীবনের গৌরবোজ্জ্বল সাফল্য।

মন্তব্য : জগতে যা কিছু দৃশ্যমান তা হউক বৃহৎ কিংবা দুঃসাধ্য, ইচ্ছাশক্তির কাছে সবকিছু হার মানতে বাধ্য হয় এবং এর দ্বারা অসাধ্যকে সাধন করা যায়।

বিকল্প ৩

মূলভাব: জীবনে বড় কিছু হতে হলে প্রথমেই তাকে তার কর্মপন্থা ঠিক করে নিতে হবে। জীবনের কার্যক্রম মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরই নির্ভরশীল। মানুষ যদি তার কর্মপন্থা ঠিক করে থাকে তাহলে সে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সম্ভব। কারণ কোন কিছু করার ইচ্ছা থাকলে তা বাস্তবায়ন করার উপায় সহজে বের হয়ে আসে। জীবনে সফলতা আসে ইচ্ছার যথার্থ কার্যকারিতার মাধ্যমে।

সম্প্রসারিত ভাব: পৃথিবীতে বসবাস করতে গিয়ে মানুষ নানা বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হয়। জীবনে বেঁচে থাকার প্রতি পদে পদে মানুষকে বাধা বিঘ্নের সাথে সংগ্রাম করে চলতে হয়। এজন্য মানুষ নানা ধরনের কাজ করে থাকে। কাজের সাফল্যের জন্য মানুষের ইচ্ছা শক্তির গুরুত্ব বেশি।

ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। এ কথাটি বাস্তবে তা রূপ দিয়েছেন শেরপুরের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সুরাইয়া জাহান। ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার অদম্য চেষ্টার ফলে কোন বাধাই মনে করেনি সুরাইয়া জাহান। হাত অকেজো থাকলেও পা দিয়ে লিখে গত শনিবার (২ অক্টোবর২০২১) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এরকম আরো অনেক বাস্তব ঘটনা আমরা সমাজে দেখতে পাই। এ সব কিছুই নির্ভর করে ইচ্ছাশক্তির ওপর।

মানব জীবন সংগ্রামে পরিপূর্ণ। এই সংগ্রাম করতে গিয়ে নিরাস হলে চলবে না। নিরাশ হয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। তাকে অধিক উদ্দীপনা- উৎসাহ নিয়ে কর্মক্ষেত্রে নামতে হবে। সেই কঠিন কাজ করার প্রচন্ড ইচ্ছা শক্তির প্রকাশ ঘটাতে হবে। তাহলে দেখা যাবে সেই কাজের জন্য কোন না কোন উপায় পাওয়া যাবেই যাবে। ইচ্ছাশক্তি প্রবল হলে যে কোন কাজে সফলতা লাভ সুনিশ্চিত।

পৃথিবীতে যারা জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সুনাম-সুখ্যাতি অর্জন করেছেন তাদের কাজের ব্যক্তিজীবনে ইচ্ছাশক্তি প্রবল প্রকাশ পাওয়া যায়। দুর্দমনীয় ইচ্ছার কারণে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট ইউরোপ জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন, আব্রাহাম লিংকন প্রেসিডেন্ট হতে পেরেছিলেন এবং কলম্বাস আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন আমেরিকা। ইচ্ছাশক্তির দাঁড়ায় মানুষ কর্ম জীবনের সাফল্য লাভ করে।

মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের ছোটখাট ঘটনার পিছনে যেমন ইচ্ছা কাজ করে, তেমনি বড় বড় ঘটনার পেছনে থাকে মানুষের ইচ্ছা শক্তি। মানুষের অদম্য ইচ্ছা বা আগ্রহ থাকার ফলেই আজকের বিশ্বে এত বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। মানুষের ইচ্ছার বাস্তবায়নের ফলে বর্তমান বিশ্ব সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে। কোনো কিছু করার উপায় এনে দেয় দৃঢ় ইচ্ছা। কি করতে হবে সে সম্পর্কে মনে ইচ্ছা থাকতে হবে এবং কীভাবে বা কোন উপায়ে তা বাস্তবায়ন হবে তা ইচ্ছা থেকেই তখন বের হয়ে আসে। ইচ্ছা না থাকলে জীবন অকর্মণ্য ও অর্থহীন হয়ে পড়ে।
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে,” where there is a will, there a way” অর্থাৎ ইচ্ছা থাকলেই উপায় হয়।

মন্তব্য: ইচ্ছা শক্তির দ্বারা বৃত্তের একাগ্রতা, ধৈর্য, সহনশীলতা ও অধ্যাবসায়ের সৃষ্টি হয়। এতে সফলতা সহজ হয়। মানব জীবনের সবকিছুই নির্ভর করে ইচ্ছাশক্তির উপরে। প্রবল ইচ্ছা এবং একাগ্রতা মানবজাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

আরো পড়ুন: উত্তম নিশ্চিন্তে চলে অধমের সাথে তিনিই মধ্যম, যিনি চলেন তফাতে

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment