এমন মানব জমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলতাে সােনা – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “এমন মানব জমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলতাে সােনা ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

এমন মানব জমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলতাে সােনা - ভাবসম্প্রসারণ

এমন মানব জমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলতাে সােনা ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : মানব জীনব অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে প্রয়ােজন তার যথার্থ চর্চা এবং সদ্ব্যবহার। সঠিক ও যথার্থ ব্যবহারের অভাবে সর্ব সম্ভাবনাই বিনষ্ট হয়ে যায়, সেখান থেকে কোন কিছু পাওয়ার আশা করা যায় না। কারণ, সেখানে কোন শ্রম সাধনা বিনিয়ােগ করা হয় নি।

সম্প্রসারিত-ভাব : মানুষের জীবন অত্যন্ত মূল্যবান। জীবনকে কাজে লাগাতে না পারলে সে মূল্যবান জীবন ব্যর্থ হয়ে যায়। বিধাতা মানুষকে শক্তি সামর্থ্য সবই দিয়েছেন জীবনকে সফল করে তােলার জন্য। কিন্তু সে শক্তিকে, মূল্যবান সামর্থ্যকে যদি কাজে লাগানাে না হয়, তাহলে সেটা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে, এটাই নিয়ম। একথা ব্যক্তি জীবনে যেমন সত্য, জাতীয় জীবনেও তেমনি সত্য। কোন জাতি যদি তার সম্পদকে কাজে লাগায়, মথার্থ ব্যবহার করে তাহলে সে সম্পদ থেকে অবশ্যই ফল লাভ করতে পারে। কিন্তু সে সম্পদ যদি অনাদরে, অযত্নে, অবহেলায় ফেলে রাখা হয় তবে তা থেকে কিছু পাওয়াতাে দূরের কথা, সেটা বরং সমাজের জন্য বােঝা হয়ে দাঁড়াবে। তাই প্রত্যেকটা সম্পদকে যথার্থ ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজ, জাতি এমনকি ব্যক্তি জীবনেও কাজে লাগাতে হবে। বর্তমান বিশ্বে যেসব জাতি উন্নতি লাভ করেছে, সৌভাগ্যের অধিকারী হয়েছে, তার মূলে রয়েছে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম। যে পরিশ্রমের বদৌলতে তারা বর্তমান সভ্য জগতে একটা উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে, যেসব জাতি তাদের সম্পদকে কাজে না লাগিয়ে আলস্যে বসে থাকে, তাদের উন্নতির সম্ভাবনাও কম। মানব জীবনের ক্ষেত্রেও এ বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে যতটা সম্ভব যত্নশীল ও শ্রমশীল হতে হবে। পরিশ্রমের কোন বিকল্প হতে পারে না। বিনা পরিশ্রমে কেউ জীবনে স্বার্থকতা লাভ করেছে এর কোন নজীর নেই। শুধুমাত্র একান্ত আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, সাধনাই মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করে তুলতে পারে। কেননা, মানবজীবন, একটা শস্যক্ষেতের মত, সেখানে যতই কর্ষণ করা হবে ততই অধিক ফলদায়ক হবে। আর ফেলে রাখলে তা জীবনকে সুন্দর ও সমৃদ্ধ করতে কোন ভূমিকাই রাখতে পারবে না। তাই মানুষকে উদ্যোগী হতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে এবং তার জীবনের অমূল্য সম্পদকে কাজে লাগাতে হবে। আর এটা করতে পারলে তার সাফল্য অবশ্যম্ভাবী। কোন কিছু পেতে হলে বিনিয়ােগ করতে হয়। আর বিনিয়ােগের ক্ষেত্রে মানবজীবন হল , সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যা সামান্য অবহেলাতেও ঝরে যেতে পারে, ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই মানবজীবনকে যথার্থভাবে গড়ে তুলতে হবে এবং জীবন সাধনায় নিজেকে নিয়ােজিত করতে হবে।

বিকল্প ১

মূলভাব: আশরাফুল মাখলুকাত মানুষ তার স্বল্পায়ু জীবন মহান স্রষ্টা আল্লাহ নির্দেশিত পথে পরিচালিত করে জীবন ও জগতের তরে সোনার চেয়ে দামি কর্মফল ফলাতে পারে।

সম্প্রসারিত ভাব: মাটির বৈশিষ্ট্য হলো যথাযথ আবাদ করে তাতে বিভিন্ন ফসল ফলানো যায়। কিন্তু পতিত রাখলে তাতে বিভিন্ন উদ্ভিদ জন্মে। এরপরও অনাবাদি রাখলে পর্যায়ক্রমে তাতে বড় বড় বৃক্ষের জন্ম হয়, বিভিন্ন ধরনের বন্য প্রাণীর আগমন ঘটে এমনকি একসময় হিংস্র বন্য প্রাণীর আগমনে ভীত হয়ে সে মাটির আশপাশ দিয়ে চলাচলও বিপজ্জনক হয়ে উঠে। অথচ এ মাটিতেই যথাসময়ে আবাদ করলে মূল্যবান ফসর ফলানো যেত। তদ্রুপ আমাদের মনবজীবনেও একটা জমিন। এ জমিনে সততা, অস্যবাদিতা, ন্যায়নিষ্ঠা, আদর্শবাদিতা ইত্যাদি সৎগুনাবলির আবাদ করতে হয়। সৎকর্মের মাধ্যমে মানব সেবার মহান ব্রত গ্রহন করতে হয়। পক্ষান্তরে, অলস ও কর্মবিমুখ জীবন ব্যর্থতারই নামান্তর। অথচ অনেকেই আলস্যে দিন কাটিয়ে অবহেলায় মূল্যবান মানজীবন ধ্বংস করে কোনো ফসল না ফলিয়েই। এদের পার্থিব ও পারলৌকিক উভয় জীবনই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। অথচ দৃশ্যমান বস্তুজগতে মানুষই একমাত্র প্রাণী যে তার চিন্তাশক্তির যথার্থ ব্যবহার করে দুটো হাতকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের বর্তমান ও অনাগত মানুষেরা কল্যাণে মূল্যবান কিছু করে যেতে পারে। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন, নিউটন, কবি হোমার, নজরুল প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ মানবকল্যাণে কৃত তাঁদের মূল্যবান কর্মের কারণে মরেও আজ অমর।

মন্তব্য: জীবন রূপ জমির একটাই। এতে একধিক ফসল ফলানো যায় । তাই জগৎ ও জীবনের প্রয়োজনে সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করার মাধ্যমে ফুলে ভরে তুলতে হবে জীবনের ডালি।

আরো পড়ুন: কর্তব্যের কাছে ভাই বন্ধু কেউ নেই

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment