এ জগতে মানুষ আপনার ঘর আপনি রচনা করে – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “এ জগতে মানুষ আপনার ঘর আপনি রচনা করে ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

এ জগতে মানুষ আপনার ঘর আপনি রচনা করে - ভাবসম্প্রসারণ

এ জগতে মানুষ আপনার ঘর আপনি রচনা করে ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : ব্যক্তিই আপন ভাগ্য নিয়ন্তা। আমরা সাহিত্যে কিংবা ইতিহাসে যেসব মহাপুরুষ বা ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের কথা পড়ি তারা সকলেই বড় হয়েছেন পরিশ্রমের দ্বারা। পরিশ্রমকে অবজ্ঞা করে ‘সৌভাগ্যের জয়টিকা’ করায়ত্ত হয় নি।

সম্প্রসারিত-ভাব : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্রাসাগর ‘বিদ্যাসাগর’ হয়েছিলেন তথা সমাজের উন্নত শিখরে সমাহীন হয়েছিলেন পরিশ্রমের দ্বারাই। জীবনের অমৃতবাণী প্রচারের উদ্দেশ্যে বিবেকানন্দকে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে ঘুরতে হয়েছে।। যথেষ্ট শ্রম স্বীকার করার জন্যই তিনি বিশ্বজয়ী বিবেকানন্দ। একথা সমান সত্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, ঋষি অরবিন্দ, মহাত্মা গান্ধী, নেপোলিয়ন, গোর্কি সকলের ক্ষেত্রেই। আত্মবিশ্বাস ও সাবলম্বন সাফল্যের মূলমন্ত্র। সংগ্রাম মুখর জীবন ভাগ্য মানে না, দৈবকে ভয় পায় না। কারণ কর্ম ও প্রচেষ্টা তার নিত্য সহচর রূপে সাহস জোগায়, পৌরুষই তার আসল শক্তি। আর এ শক্তি বলে মানুষ অসম্ভবকে সম্ভব করে, অজেয়কে জয় করে দুর্লভকে সুলভ করে। ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে, ‘Man is the architect of his own fortune.’ -মানুষ নিজের ভাগ্য নিজেই তৈরি করে। উদ্যমী পুরুষ শুধু লক্ষ্মীকেই পান না সরস্বতীকেও লাভ করেন। আর যারা উদ্যমহীন কর্মহীন পুরুষ তারা দৈবের দোহাই পেরে পড়ে পড়ে মার খায়। সংস্কৃতে আছে,

‘উদ্যোগনং পুরুষসিংহমুপৈতি লক্ষ্মীঃ

দৈবেন দিয়মিতি কাপুরুষাঃ বদন্তি।’

সুতরাং, এ জগতের সব মানুষের সৌভাগ্য ইমারতের মালমসলা হচ্ছে উদ্যম, পরিশ্রম, প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম জীবনের ভাগ্যলিপি নয়।

বিকল্প ১

মূলভাব: এ পৃথিবী মানুষের আবাসভূমি, যাকে যুগে যুগে সে নিজের মতো করে সাজিয়েছে । সংসারের মানুষ তার বিচিত্র চিন্তার প্রয়োগ ঘটিয়ে বৈচিত্র্য এনেছে। আবার নিজের হৃদয়কেও মানুষ সাজিয়েছে পৃথিবীর যাবতীয় সুকুমার বৃত্তি দ্বারা । যার যেমন বৃত্তি তার হৃদয়ের প্রকাশও ঠিক তেমন।

সম্প্রসারিত ভাব: ঘর শব্দটিকে আমরা অনেকভাবে বিশেষায়িত করতে পারি । ঘর অর্থে পৃথিবী, মানুষের আপন গৃহ বা আত্মহৃদয়কে বোঝানো যায় । এ পৃথিবী মানুষের বসবাসযোগ্য এক বিরাট ভূমিরূপ। তার কঠোর কঠিন অবয়ব সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয় হয়েছে, নতুন রূপ পেয়েছে। কিন্তু এ রূপে মানুষ সন্তুষ্ট হতে পারেনি; তাই প্রতিনিয়ত পৃথিবীকে নতুন করে সাজানোর প্রচেষ্টা করেছে মানুষ। তবে তা যে সবসময় শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে তা নয়; কখনো যুদ্ধ, প্রকৃতির তাণ্ডব, মহামারিও পৃথিবীকে নতুন রূপ দিয়েছে। তবে মানুষ যুগে যুগে পৃথিবীকে নিজের রঙে নিজের পছন্দে গড়ে তুলতে চেয়েছে। তাই ভূ-প্রকৃতির ধরন অনুসারে বিভিন্ন দেশে প্রকৃতি পেয়েছে ভিন্ন ভিন্ন রূপ। ঠিক তেমনিভাবেই পছন্দ ও রুচি অনুযায়ী নিজের বাসগৃহকেও সাজিয়েছে মানুষ। এই সাজানোর ক্ষেত্রে তার শৈল্পিক দৃষ্টি ও আভিজাত্য নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। যার সেগুলো নেই তার ঘর খুব সাধারণ ও সাদামাটা হয়ে ধরা দিয়েছে অপ্রজনের চোখে। তবে ঘরকে সুখময় করতে মানুষের প্রাণান্ত চেষ্টার কোনো অভাব নেই। মানুষের মনও তার ঘরের মতোই। সেটিকে সে সাজায় নিজের জ্ঞান অভিজ্ঞতা ও মানবীয় অনুভূতিতে। যার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা মানুষের কল্যাণের জন্য উন্মুক্ত, তার হৃদয়ের সজ্জা বা গঠনও তেমনি। অপরপক্ষে যার অভিজ্ঞতা ক্রুদ্ধতা ও হৃদয়ের সজ্জা বা গঠনও তেমনি। অপরপক্ষে যার অভিজ্ঞতা ক্রুদ্ধতা ও ধ্বংসকে দেখে বড় হয়েছে তার হৃদয়ে বিষাদ-হিংসার মতো অকল্যাণকর অনুভূতির জন্ম হয়েছে। নিজেকে সে সেভাবেই সাজিয়ে তুলেছে। সুন্দরের সাধনা করা মানুষের অন্তঃপ্রকাশ ও বহিঃপ্রকাশ যেমন মানুষের নান্দনিকতাকে উৎকর্ষ প্রদান করেছে; অসুন্দরের সাধনা তাতে ততটাই ভীতির সঞ্চার করেছে। মানুষ নিজের মর্জির মালিক; তাই নিজের মতো করেই নিজেকে সৃজিত করেছে সে। পৃথিবীর সকল পর্যালোচনাও হয়েছে সেই সৃজনের ওপর নির্ভর করেই ।

মন্তব্য: মানুষ নিজের ইচ্ছার কর্তা। নিজের পৃথিবীকে সাজানোর ক্ষেত্রে যেমন সে তার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়, তেমনি নিজের ঘরও সে নিজের | মতোই সাজায়। নিজের মনকে যেমনভাবে সে গড়ে তোলে তার প্রতিফলনও হয় ঠিক তেমন। পৃথিবী এই প্রতিফলনকেই দেখায় আর মানুষ নিজের জগৎ গড়ে আপন ইচ্ছার ঝাঁপিতে ।

আরো পড়ুন: এই খেয়া চিরদিন চলে নদী স্রোতে কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ঘর হতে

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment