আমাদের সবার ইতিহাস জানা দরকার। তার মধ্যে ““কবি বঙ্কিম ও প্রাবন্ধিক বঙ্কিমের প্রতিভা একত্রে যুক্ত হইয়া কমলাকান্তের দপ্তরকে বাংলা সাহিত্যে এক অভিনব মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে।” আলোচনা করো” এই বিষয়টি অবশ্যই জানতে হবে। এটি জানলে আপনার ইতিহাস সম্বন্ধে আরো ধারণা বেড়ে যাবে। আসেন যেনে নেয়।
সাহিত্যের সংজ্ঞা সম্পর্কে বঙ্কিমের একটি বিশিষ্ট মতবাদ ছিল। সাহিত্যের সুষ্ঠু পরিণতি রসের অলৌকিক আনন্দে। কিন্তু সেই আনন্দের উৎসারণের একটি পরোক্ষ দিকও আছে। তাহা হইতেছে জ্ঞান-বিতরণ। পাঠকের শুধু চিত্ত বিনোদনই নয়, আত্মিক উন্নতির একটি পরিপূর্ণ নির্দেশ সেই জ্ঞান বিতরণের অন্যতম উদ্দেশ্য। অনেক সময় গল্পে উপন্যাসে এবং সর্বোপরি কাব্যে সেই উদ্দেশ্য সফল হয় না। লেখক সবল হস্তে ও দৃঢ় মুষ্টিতে লেখনী চালনা করিয়া কুসংস্কার দুর্নীতি হিংসা দেশের স্তূপীকৃত জঞ্জাল দূর করিয়া দেন। যে সম্মার্জনী সেই জঞ্জাল দূরীকরণের ভার লয় তাহাই প্রবন্ধ। বলিতে কি, বঙ্কিম তাঁহার সাহিত্যরচনার সামগ্রিক প্রচেষ্টার মধ্যেই বাঙালির চিত্ত-জাগরণের প্রভাত সংগীত গাহিয়াছেন। যে নবজাগরণের সূচনা সমগ্র ইউরোপে স্ফুরিত হইয়াছিল, সেই নবজাগ্রত ইউরোপের চিত্র প্রতিকরূপে ইংরেজের ভারতবর্ষ তথা বাঙালাদেশে আগমনের ফলে এক অভূতপূর্ব আলোড়নের সৃষ্টি হয়। সেই আলোড়নে বাঙালাদেশের আচার রীতিনীতি পোষাক-পরিচ্ছদ, শিক্ষা, দর্শন, সমস্তই আকস্মিকের দুর্বার প্রেরণায় পরিবর্তিত হইল। বাঙালি তখন নূতনের মোহে আত্মবিস্মৃত জাতিতে পরিণত হইবার পথে। সেই সঙ্কটকালের মুহূর্তে বঙ্কিমের আবির্ভাব। তিনি বিজয়দুন্দুভি বাজাইয়া একটি স্থায়ী পরিণতির স্থির নির্দেশের নান্দিমুখ রচনার প্রতিশ্রুতি লইয়া বাঙালিকে মোহগ্রস্থতা কাটাইয়া উঠিবার প্রেরণা দিলেন। বঙ্গদর্শন উক্ত প্রেরণার দিকভেদ করিল। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁহার কমলাকান্তের দপ্তর বঙ্গদর্শনেই প্রকাশ করিয়াছিলেন। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়।
‘কমলাকান্তের দপ্তর’ এক অভিনব ও বিচিত্র গ্রন্থ। অনেকে বলিয়া থাকেন, ইহা ডি কুইন্সির Confession of an opium eater-এর অনুসরণে রচিত। অনুসৃতি যেমনই হোক, বঙ্কিমচন্দ্র যে ইহা রচনা করিয়া এক মহান প্রতিভার পরিচয় দিয়াছেন, সে কথা অনস্বীকার্য। বাঙলা সাহিত্যেও এরকম রচনা এই প্রথম সংযোজিত হইল।
উল্লেখ করা প্রয়োজন, কমলাকান্তের দপ্তরের ঠিক পূর্বেই ১৮৭৪ খৃস্টাব্দে ‘লোকরহস্য’ প্রকাশিত হয়। কমলাকান্তের দপ্তরের প্রাক্কুরূপ লোকরহস্যেই মিলিবে। যাই হোক, লোক রহস্য কিংবা কমলাকান্তের দপ্তর—উভয় গ্রন্থেরই প্রধান রস হইতেছে কৌতুকরস। বলা বাহুল্য এই কৌতুক রস নিষ্কারণে পরিবেশিত হয় নাই। শিল্প এবং জীবনে বঙ্কিম কুশ্রীতা এবং কদর্যতা কোনও ক্রমেই সহনীয় বলিয়া মনে করেন নাই। অথচ এই কদর্যতা এবং কুশ্রীতার বিরুদ্ধে কিছু বলিতে যাওয়া এক বিভ্রান্তিকর পরিবেশ সৃষ্টির সম্ভাবনাকে ত্বরান্বিত করিতে পারে। অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হওয়াও অসম্ভব নয়। অথচ বঙ্কিমের সংস্কারকমন নীরব দর্শকের ভূমিকা গ্রহণ করিতে চাহিতেছিল না। তখন বঙ্কিম এক পরম রমণীয় উপায় অবলম্বনে বাঙালির চিত্তজাগৃতির প্রত্যুষকালের বন্দনা করিলেন!
সমাজে এমন দুই একজন ব্যক্তি থাকেন যাঁহারা পাগল বলিয়া উপেক্ষিত এবং অপাঙ্ক্তেয়। কিন্তু তাঁহারা সমাজ সংসার সম্বন্ধে এমন দুয়েকটি সঙ্গত কথা বলেন, যাহা আপাতদৃষ্টিতে শ্রবণকটু। সমাজ সংসারের অসঙ্গত ভ্রান্তিবিলাস মুহূর্তমাত্রেই দূরীভূত হয়, যদি ওই প্রলাপোক্তির যথার্থ স্বরূপ উদ্ঘাটিত হয়। কমলাকান্ত সেইরকম একজন উপেক্ষিত পাগল। তাহার দপ্তর এমন সব প্রলাপোক্তিবিধৃত যাহা বাঙালি মাত্রেরই অনুধাবনের যোগ্য। চিত্তমুক্তির চাবিকাঠি তাহার মধ্যেই নিহিত। সেই চাবিকাঠি আর কিছুই নয়, ওই কৌতুকরস। শ্রদ্ধেয় শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় কমলাকান্তের দপ্তর সম্পর্কে যথার্থই বলিয়াছেন, “নীতির তিত্ত্ব বটিকা রসিকতায় শর্করাবৃত হইয়া সুখসেব্য হইয়াছে।” ঔপনাস্যিক বঙ্কিমের আর এক সার্থক আত্মপ্রকাশ কমলাকান্তের দপ্তর-এ মেলে। স্বদেশ ও সমাজের বিভ্রান্তি এবং অসঙ্গতি দেখিয়া বঙ্কিমচন্দ্র পূর্বাবধিই বিষণ্ণ ! সেই বিষণ্ণতার এক রসরূপ তাহার উপন্যাস, অন্য রসরূপ ‘কমলাকন্তের দপ্তর’। অতএব কমলাকান্তের দপ্তরের রূপ ও রীতির একটি বিশিষ্ট ভূমিকা আছে । এই ভূমিকার সহিত মিশিয়া রহিয়াছে বঙ্কিমের মননশীলতার চরম আশ্লেষ। তৎকালীন অন্য অনেক সুশিক্ষিত বাঙালির মত বঙ্কিমও সুশিক্ষিত। পাশ্চাত্য দর্শন, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ধর্ম, রাজনীতি, সমাজনীতি এবং সাহিত্য সমস্তই তিনি অতি নিষ্ঠা-সহকারে সহৃদয়তার সঙ্গে অনুশীলন করিয়াছেন। শিক্ষকতা করিবার উপযুক্ত অবসর তিনি পাইয়াছিলেন। শিক্ষা সমাপ্ত হয় না যদি না সেই শিক্ষা সর্বত্র ছড়াইয়া দেওয়া যায়। কমলাকান্তের দপ্তরে সেই সার্থক শিক্ষা বর্তিয়াছিল— যে শিক্ষার সহিত অঙ্গাঙ্গীভাবে মিলিয়াছে পাশ্চাত্য এবং প্রাচ্য-শিক্ষা। সংস্কারক, শিক্ষক, নীতিবেত্তা বঙ্কিমের অন্য পরিচয় রসিকতায়। বঙ্কিমের এই সর্বময় পরিণত রূপ কমলাকান্তের দপ্তরে ফুটিয়া উঠিয়াছে। বলিতে দ্বিধা নাই, কমলাকান্ত স্বয়ং বঙ্কিম। ‘নয়নে নিঠুর হাসি’ লইয়া বঙ্কিম কমলাকান্তরূপে আধমরা বাঙালিদের ঘা মারিয়া বাঁচাইবার ভার লইলেন। এই ভার গ্রহণের মধ্যে লুকাইয়া আছে ব্যঙ্গ বিদ্রূপের মিশ্রণ, যাহা কৌতুকরসের বাটখারায় ওজন করিয়া পরিবেশিত হইয়াছে। উক্ত কৌতুকরসের মধ্যে উচ্চতর উন্নত মার্জিত মননশীলতায় (intellect) মিশ্রণ থাকাতে কমলাকান্তের দপ্তর একটি সার্থক রাসায়নিক পদার্থে পরিণত হইয়াছে।
নিঃসন্দেহে বলা যায় কমলাকান্তের দপ্তরের প্রকাশভঙ্গীতেই তির্যক অনুভূতি আত্মগোপন করিয়া আছে। সেই আত্মগোপনের নিহিতার্থ আমাদের লক্ষ্য করিতে হইবে।
পূর্বেই বলা হইয়াছে, কমলাকান্ত স্বয়ং বঙ্কিম। কিন্তু যে বঙ্কিমের পরিচিত রূপ আমাদের জানা আছে, সেরূপের সহিত কমলাকান্তের রূপের মিল নাই। কমলাকান্তের স্বরূপ এবং প্রকৃতি বঙ্কিমের স্বকপোলকল্পিত। সেই স্বরূপ এবং প্রকৃতিতে মিশিয়া আছে বিষয় ভোগে অনাসক্তি, তিতিক্ষা, বৈরাগ্য। জীবন যাপনের দুর্বিসহ ভার বহনে অক্ষমতা প্রকাশ পায় অহিফেন এবং দুধ না পাইলে। কোনও বন্ধনে আবদ্ধ হইবার মতো মনের গঠন কমলাকান্তের ছিল না। ভবঘুরে জীবন তাহাকে আকর্ষণ করে। ভবঘুরে বিষয়-বিরাগী অহিফেন এবং দুগ্ধ-বিলাসী কমলাকান্ত নিজের জীবনকে অস্বীকার করিয়াও দেশবাসীর জীবন ধারণের পরিপূর্ণ উপযুক্ত পন্থা বাংলাইয়া দিয়া গিয়াছে। তাহার লিখিত দপ্তরে তাহার পরিচয় পাওয়া যায়। এই পরিচয়ে বৈচিত্র্য আছে। সে বৈচিত্র্য বিষয়ের। মোট চৌদ্দটি বিষয়বস্তু লইয়া কমলাকান্তের দপ্তর রচিত। বিষয়বস্তু আপাতদৃষ্টিতে লঘু, কিন্তু এই আপাত লঘুত্বের অন্তরালে লুকাইয়া আছে গুরুগম্ভীর বক্তব্য। বিষয়বস্তুর তির্যক উপস্থাপনায় বঙ্কিমের যাবতীয় চেতনা মননশীলতার গাম্ভীর্য পরিত্যাগ করিয়া প্রাণোন্মত্তকারী উচ্ছল রসস্রোতে গা ভাসাইয়া পাঠকচিত্তে এক স্থায়ী রসরূপ লাভ করে। কমলাকান্তের দপ্তরকে তাই রসরচনা বলাই যুক্তিসঙ্গত। ইহাকে প্রবন্ধ বলা কখনই যাইবে না। প্রবন্ধ হইতে গেলে যে সব গুণের প্রয়োজন, তাহা কমলাকান্তের দপ্তরের চৌদ্দটি রচনায় মিলিবে না। তাহার কারণ, ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ এই নামকরণের মধ্যেই ধরা পড়ে যে তাহা প্রবন্ধ নয়, ব্যক্তিগত চিন্তার ডায়েরিসুলভ রসলিপি। দপ্তর বলিতে ব্যক্তিগত একটি গোপন খাতা বুঝিতে হইবে, যেখানে নিভৃত মনের দুঃখসুখ, ভালো-লাগা মন্দ লাগা, ইহজীবন-পরজীবন, দেশকাল, ধর্ম, সমাজ প্রভৃতি সম্বন্ধে আপন মনের নিরঙ্কুশ মন্তব্য গ্রথিত হয়। কমলাকান্ত তাহার দপ্তরে তাহাই করিয়াছে। করিয়াছে আবার অহিফেনের প্রবল নেশার ঝোঁকে। যেন কমলাকান্ত সেই নেশার ঝোঁকে কিছু আবোল তাবোল বকিয়া গিয়াছে। যখন বকিয়া গিয়াছে, তখন কেহই গ্রাহ্য করে নাই। পরে যখন ভাবিয়া দেখিয়াছে, তখন সকলই অবাক হইয়া গিয়াছে, কমলাকান্ত নেশার ঝোঁকে পাগালমি করে নাই, দেশবাসীকে জ্ঞান দান করিয়াছে।
জ্ঞানদান কবিবার উদ্দেশ্য প্রবন্ধেরও আছে। কিন্তু ভুলিলে চলিবে না যে প্রবন্ধ রচনার একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দায় এবং দায়িত্ব রহিয়াছে। প্রবন্ধ রচনা করিতে গেলে প্রাবন্ধিকের সচেতনভাবে জ্ঞানাভিমানী হইতে হইবে। নেশার ঝোঁকে আর যাই বলুক, প্রবন্ধ রচনা সম্ভব নয়। মোট কথা কমলাকান্তের দপ্তর যেমন প্রবন্ধ নয় তেমনি রম্যরচনার ন্যায় হালকা রচনাও নয়। কেননা কমলাকান্তের দপ্তরের রচনাবলীতে হালকা রম্যতার নামগন্ধও নাই। রম্যরচনা চটুল জনপ্রিয়তায় পরিপূর্ণ। কমলাকান্তের দপ্তরে এই জাতীর কোনও চটুলতা ও সহজ জনপ্রিয়তা লাভের ইসারা নাই। পূর্বেই উল্লেখিত হইয়াছে এই দপ্তরের রচনাবলী বিষয়বস্তু আপাত্ লঘু, কিন্তু পশ্চাতে গুরু। সেই জন্যই বলা যায়, কমলাকান্তের দপ্তর প্রবন্ধ বা রম্যরচনা জাতীয় রচনা নয়, ইহা রসরচনা। ইংরেজিতে যাহাকে Familiar essay বলে, কমলাকান্তের দপ্তর তাহাই। অথচ ইহাতে প্রবন্ধের গভীরতা এবং রম্যরচনার রসচেতনার সংমিশ্রণ রহিয়াছে। ‘কমলাকান্তের দপ্তরের প্রকাশভঙ্গীটিই অভিনব। এই প্রকাশভঙ্গীটির সহিত মিশিয়া রহিয়াছে, শুভ্র সমুজ্জল হাসির ছটা, নানা জীবন-সমস্যার স্বরূপ উদঘাটন। রসরচনার ইহাইতো মৌল নির্দেশ।
বঙ্কিমের ‘বিবিধগ্রন্থ’ প্রভৃতি প্রবন্ধ পুস্তক প্রকাশিত হয় কমলাকান্তের দপ্তরের প্রকাশের পরবর্তীকালে। সেই সমস্ত প্রবন্ধ পুস্তকে আমরা প্রাবন্ধিক বঙ্কিমকে চিনিয়া লইতে পারি। প্রাবন্ধিক বঙ্কিম আপন হৃদয়ের গুপ্ত প্রকোষ্ঠের একটি ক্ষুদ্র অলিন্দও খুলিয়া দেন নাই, যাহাতে সূর্যরক্তিম হাসির লহরী প্রবেশ করিয়া সেই হৃদয় আলোকিত করে, অন্যে সেই আলোকিত হৃদয়ের সুহৃদ সান্নিধ্যে পৌঁছাইতে পারে। কিন্তু কমলাকান্তের দপ্তরের বঙ্কিম পাঠকের একান্ত সুহূদ, যার একমাত্র চিন্তা কী করিয়া পাঠকের মঙ্গল করা যায়। সেই পাঠক সমগ্র বাঙালি জাতি। বাঙালিকে বঙ্কিম গভীরভাবে ভালোবাসেন। ভালোবাসেন বলিয়া বাঙালির কোনও অসঙ্গতি দেখিলেই ক্ষুব্ধ হন। সেই ক্ষোভ কঠোর আকার ধারণ করিয়া বাঙালিকে জাগ্রত করিবার প্রেরণা দেয়। শিশুর দূরন্তপনায় অতিষ্ট হইয়া মাতা তাহার নিদ্রাকর্ষণের নানাবিধ উপায় উদ্ভাবন করেন। সেই উপায়ের মধ্যে স্নেহসিণ্ডিত প্রহার অন্যতম। বঙ্কিমও সেই প্রহার হানিয়াছেন বাঙালির পৃষ্ঠদেশে। বাঙালিকে তিনি ঘুম পাড়াইতে চান। কিন্তু ঘুমের শেষে যখন সে জাগ্রত হইবে, তখন তাহার চেতনার নবদিগন্তলাভ হইবে। বাঙালি নিজেকে চিনিতে পারিবে।
বঙ্কিমের দুঃসাধ্য কর্মের ভার কমলাকান্তের উপর বর্তাইয়াছে। কমলাকান্তের প্রত্যেকটি দপ্তরে সেই ভারবহনের কথা লিপিবদ্ধ। তাহার সহিত বঙ্কিমের কবিসুলভ এক রঙীন কল্পনার চঞ্চলপক্ষপরিক্রমার সুধাস্পর্শ মিশিয়া আছে। যাহার জন্য কমলাকান্তের দপ্তর এতখানি চিত্তগ্রাহী হইয়া উঠিয়াছে। ‘কে গায় ওই’, ‘পতঙ্গ’, ‘আমার মন’, ‘চন্দ্রলোকে’, ‘বসন্তের কোকিল’ প্রভৃতি দপ্তরে কবি বঙ্কিমের পরিচয় মিলে।
আলোচনা করিয়া দেখা গেল, বঙ্কিমচন্দ্রের কমলাকান্তের দপ্তর রচনার একটি বিশিষ্ট উদ্দেশ্য আছে। দেশকে, জাতিকে উন্নত মার্জিত করিতে এবং কুসংস্কারমুক্ত করিবার মধ্যেই সেই উদ্দেশ্য নিহিত। নীতি শিক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায় লইয়া কমলাকান্তের দপ্তর রচিত হইলেও, বঙ্কিম প্রকাশভঙ্গীটি লইয়াছেন মনোরম। প্রবন্ধ বা রম্যরচনার দ্বারা নীতি শিক্ষা দিতে গেলে তাহা কার্যকরী হয় না। অতএব সে পথ পরিত্যক্ত হইয়াছে। বঙ্কিমকে নেশাখোর ভবঘুরে জীবনবিমুখ নিরভিমান পণ্ডিত কমলাকান্তের ভূমিকা গ্রহণ করিতে হইয়াছে। বঙ্কিমের মত কমলাকান্ত মনে মনে আবেগপ্লুত হয়। তখন কবিতার স্বাদে তাহার মন প্রাণ ভরপুর হইয়া উঠে। আবার আবেগ নিয়ন্ত্রিত হয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের কঠিন পরিমাপে। কবি ও প্রাবন্ধিক বঙ্কিমের যুগল প্রতিমূর্তি তখন কমলাকান্তের মধ্যে ধরা পড়ে!
শ্রীভীষ্মদেব খোশনবীশকে ধন্যবাদ জানাইতে ইচ্ছা করে। তিনি যদি এই দপ্তরগুলি প্রচার না করিতেন, তবে বাঙালি এক অসাধারণ বস্তু হইতে বঞ্চিত হইত। সৌভাগ্যক্রমে এই দপ্তরগুলি প্রচারিত হইয়াছে। বাঙালি বাঁচিবার প্রেরণা পাইয়াছে।
আশা করি আপনারা এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। যদি বুঝতে পারেন তাহলে আমাদের অন্যান্য পোস্ট ভিজিট করতে ভুলবেন না।