কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে, দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে, দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে

কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে, দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে ভাবসম্প্রসারণ

পরিশ্রম বা দুঃখকষ্টের ভয়ে কর্ম থেকে দূরে থাকা উনুচিত। পৃথিবীর সব কাজই কষ্টসাধ্য। দুঃখ ছাড়া সুখ কিছুতেই লাভ করা যায় না।

পৃথিবীতে মানুষের চলার পথ কখনোই কুসুমাস্তীর্ণ নয়, রবং কণ্টকাকীর্ণ। জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি অর্জনের পূর্বশর্ত হলো- এ কণ্টকাকীর্ণ দুঃখময় পথের সমস্ত প্রতিকূলতাকে হাসিমুখে বরণ করে অগ্রসর হওয়া। দুঃখকে বরণ করতে না শিখলে সুখ অর্জন করা সম্ভব নয়। কাঁটার আঘাতের ভয়ে কেউ পদ্মফুল সংগ্রহ করা থেকে বিরত থাকলে, কার পক্ষে কখনোই পদ্মফুল সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। ক্লান্তির ভয়ে পথিক ভীত হয়ে পড়লে তার পক্ষে কখনো গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। বরং সেখানে পৌঁছতে হলে তাকে পথের ক্লান্তি স্বীকার করতেই হবে। স্বীকার করতে হবে পথের সকল প্রতিকূলতা। জয় করতে হবে পথপ্রান্তের সব প্রতিবন্ধকতা। তাই জীবনে চলার পথের সকল প্রতিকূলতাকে তুচ্ছ জ্ঞান করে দৃপ্ত সংকল্পে মানুষকে অগ্রসর হতে হয় ইপ্সিত লক্ষ্য অর্জনের জন্যে। পৃথিবীতে যাঁরা আজ স্মরণীয় বরণীয় ব্যক্তিত্ব, তাদের প্রত্যেকেই অবিরাম দুঃখকষ্টের সাথে সংগ্রাম করতে হয়েছে। তাঁদের অতিক্রম করতে হয়েছে নানা বাধাবিপত্তি। বস্তুত মানুষের জীবনে দুঃখের ভেতর দিয়েই আসে প্রকৃত সুখ।

মহৎ সাফল্য সাধনা সাপেক্ষ। জীবনে সাফল্য লাভ করতে হলে জীবন-পথের বাধা-বিপত্তি ও দুঃখ-দুর্দশা বরণ করে অগ্রসর হতে হবে।

বিকল্প ১

মূলভাব: এ ধরার বুকে সুখ লাভ করতে হলে অবশ্যই দুঃখকে জয় করতে হয়। দুঃখকে জয় করতে না পারলে সুখ লাভ অসম্ভব।

সম্প্রসারিত ভাব: জগতে সুখ ও দুঃখ পাশাপাশি অবস্থান করে। সকল মানুষই নিরবচ্ছিন্ন সুখ লাভের প্রত্যাশী। কেউ দুঃখ চায় না। কিন্তু রাতের পরে যেমন দিন আসে, তেমনই দুঃখের পরেই সুখ আসে। সুখ পেতে হলে দুঃখকে জয় করতে হয়। দুঃখকষ্ট ছাড়া সুখের কথা কল্পনাও করা যায় না। দুঃখের দহন সহ্য করার পরেই কেবল সুখের আস্বাদ লাভ করা যায়। অতএব, সাধনা ব্যতীত সিদ্ধি লাভ করার বিকল্প নেই। পথিক যদি দীর্ঘ পথের দিকে চেয়ে নিরাশ হয়ে যায়, তাহলে তার পক্ষে সে পথ অতিক্রম করা সম্ভব হয় না। গােলাপের ডাল কাঁটায় পরিপূর্ণ। এজন্য গােলাপ তুলতে গিয়ে কাঁটার আঘাতে হাত ক্ষতবিক্ষত হওয়ার মানসিক প্রস্তূতি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। কাঁটার আঘাতে রক্তাক্ত হওয়ার আশঙ্কায় পিছিয়ে গেলে সুন্দর ফুল প্রাপ্তির আনন্দ লাভ থেকে তাকে বঞ্চিত হতে হবে। এ পৃথিবীতে বিনা ক্লেশে বা বিনা বাধায় কোনাে সৎকার্য সাধন করা যায় না। কোনাে কাজে নেমে প্রথমবারেই সফলতা আসবে এমন কোনাে নিশ্চয়তা নেই। সুতরাং একবার না পারলে শতবার চেষ্টা করতে হয়। সুখ বা আনন্দ লাভের জন্য প্রত্যেককেই অনেক দুঃখকষ্ট সহ্য করতে হয়। ঝড়-ঝঞা, দুঃখকষ্ট দেখে পিছিয়ে গেলে কোনাে কাজেই সাফল্য আসে না। দুঃখের মতাে এত বড়ো পরশপাথর পৃথিবীতে আর নেই। চেষ্টা-চরিত্রের মাধ্যমে অনেক অসাধ্য সাধন করা যায়। ধৈর্য ধরে কাজ করলে সফলতা আসবেই। কাঁটার আঘাত সহ্য করা ছাড়া যেমন ফুল সংগ্রহ করা যায় না; তেমনই দুঃখভােগ ছাড়া সুখ অর্জন করা অসম্ভব।

মন্তব্য: সাফল্য অর্জনের জন্য সকল বাধাবিঘ্ন উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে হবে। দুঃখকে সাদরে বরণ করে নিতে হবে। তবেই তাে জীবনে সুখ ও সাফল্য আসবে।

বিকল্প ২

মূলভাব : মানব জীবন কুসুমাস্তীর্ণ নয়। অনেক দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে তাকে সুখের স্বর্গ রচনা করতে হয়।

সম্প্রসারিত ভাব : Life is not a bed of roses.’ অর্থাৎ ‘জীবন পুষ্পশয্যা নয়। অনেক কণ্টকাকীর্ণ পথ অতিক্রম করে আমাদের সুখের স্বর্গ রচনা করতে হয়। জীবনের কোনাে মহৎ কর্মই ত্যাগ-তিতিক্ষা ও দুঃখ-কষ্ট ছাড়া সফল হয় না। সংগ্রামী মানুষের গলেই শােভা পায় বিজয় মাল্য। পথ দীর্ঘ দেখে পথিক যদি তার যাত্রা বন্ধ রাখে অথবা কিছুদূর গিয়ে ফিরে আসে তবে সে কোনােদিন গন্তব্য স্থানে পৌঁছতে পারবে না। সেখানে পৌছতে হলে তাকে পথের ক্লান্তি স্বীকার করতেই হবে। স্বীকার করতে হবে পথের সকল প্রতিকূলতা। জয় করতে হবে পথপ্রান্তের সব প্রতিবন্ধকতা। যেব্যক্তি পদ্ম তুলতে গিয়ে কাঁটার ভয়ে ফিরে আসে, সে ব্যক্তির পক্ষে পদ্ম আহরণ করা কখনও সম্ভব হবে না। জীবনে যারাসিদ্ধিলাভ করেছেন, তাদের প্রত্যেককেই বহু বাধা-বিঘ্ন ও দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। মহামানব হযরত মুহম্মদ (স.)ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে প্রথম জীবনে প্রতি পদক্ষেপে বাধাগ্রস্ত হয়েছেন। আঘাতে রক্তাক্ত হয়েছে তার শরীর, তবু সত্যপ্রচারে এতটুকু পিছপা হননি তিনি। অমানিশার ঘাের অন্ধকার থেকে মানবতাকে দিয়েছেন মুক্তি, ফুলের সৌরভে মাতিয়েতুলেছেন বিশ্বকে। শত লাঞ্ছনা-গঞ্জনা-বঞ্চনা সয়েও সত্যের পথে থেকেছেন অবিচল। অনুরূপ গাজি সালাউদ্দীন, শেরশাহ,নেপােলিয়ন এবং কামাল পাশার মতাে ব্যক্তিরা তাদের স্ব স্ব অবস্থানে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন। বস্তুত, মানুষের জীবনেদুঃখের ভেতর দিয়েই আসে সত্যিকার সুখ।

মন্তব্য : মহৎ সাফল্য সাধনাসাপেক্ষ। জীবনে সফলতা লাভ করতে হলে জীবন পথের সকল বাধা-বিপত্তি ও দুঃখ-দুর্দশা বরণ করে অগ্রসর হতে হবে।

Also Read: কালাে আর ধলাে বাহিরে কেবল ভিতরে সবারই সমান রাঙা

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment