কীর্তিমানের মৃত্যু নাই – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “কীর্তিমানের মৃত্যু নাই ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

কীর্তিমানের মৃত্যু নাই - ভাবসম্প্রসারণ

কীর্তিমানের মৃত্যু নাই ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব: কাজই মানুষকে পৃথিবীর বুকে বাঁচিয়ে রাখে, কীর্তিমান এবং চিরস্মরণীয় করে। অধিক বয়স কখনাে। মানুষকে চিরস্মরণীয় করার মাপকাঠি নয়। মহৎ মানুষ পৃথিবী থেকে দৈহিকভাবে মৃত্যুবরণ করলেও পেছনে থেকে যায় তার। মহৎ কর্ম। আর এ মহৎ কমই সাক্ষ্য দেয় মানুষের কীর্তি ও গৌরবের।

সম্প্রসারিত ভাব: মানুষের জীবনকে বয়সের সীমারেখা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। দীর্ঘজীবী হয়েও মানুষ যদি জীবনে কোনাে ভালাে কাজ না করে তবে সে জীবন অর্থহীন। এ অর্থহীন জীবন নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার পর বেশিদিন তাকে মানুষ স্মরণ করে না। এ জীবন নীরবে ঝরে যায় । কিন্তু যে মানুষ তার ছােট্ট জীবনকে দেশ, জাতি ও সমগ্র পৃথিবীর কল্যাণে কাজে লাগায় তার জীবন হয় সার্থক। এ সার্থক জীবন অনেক সময় তার মহৎ কর্মের জন্যে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়। তাকে মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। এ অবদান বা গৌরব বয়সের সীমারেখা দ্বারা পরিমাপ করা যায় না। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও কবি সুকান্ত বয়স নয় বরং কর্মের মহৎ গুণেই অমরত্ব লাভ করেছেন। কাজী নজরুল ইসলাম অনেক বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। কিন্তু তার ৪০ বছর বয়সের পর বাকশক্তি ছিল না। কিন্তু তিনি তাঁর কর্মময় জীবনে যে সময়টুকু মহৎ সাহিত্য সাধনায় ব্যয় করেছেন, সেই মহৎ কাজের জন্যে তিনি গৌরবান্বিত হয়েছেন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে নজরুল শুকতারার মতাে উজ্জ্বল হয়ে আছেন বয়সের জন্যে নয়, তার অসাধারণ সাহিত্যকর্মের জন্যে। অপরদিকে, কবি সুকান্ত মাত্র একুশ বছর বয়সে মারা যান। কিন্তু এত অল্পসময়ে তিনি বাংলা সাহিত্যে যে অবদান রেখে গেছেন তাতে তার কখনাে মৃত্যু হবে না। তিনি চিরস্মরণীয় । এমনই অনেক জ্ঞানী-গুণী দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক অসংখ্য অবদান রেখে গেছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে। তারা কখনাে হারিয়ে যাবেন না। পৃথিবীর বুকে তাঁরা তাঁদের মহৎ কর্মের জন্যে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবেন।

মানুষ বেশি বয়স পর্যন্ত বাঁচলেও সেই সময়টুকু যদি কোনাে মহৎ কাজে না লাগায় তবে তার কোনাে স্থায়ী মূল্য নেই। কাজেই বয়স নয়, মহৎ কর্ম মানুষকে কীর্তিমান করে। বয়স মানুষকে তাড়িয়ে বেড়ায়। আর কর্ম মানুষকে দেয় অনুপ্রেরণা। কর্ম মানুষকে তার মৃত্যুর পরও অন্যদের কাছে বাঁচিয়ে রাখে।

বিকল্প ১

মূলভাবঃ সময় অনন্ত জীবন সংক্ষিপ্ত। সংক্ষিপ্ত এ জীবনে মানুষ তার মহৎ কর্মের মধ্য দিয়ে এ পৃথিবীতে স্মরণীয় বরণীয় হয়ে থাকে ।

সম্প্রসারিত-ভাবঃ মানুষ মাত্রই জন্ম ও মৃত্যুর অধীন । পৃথিবীতে জন্ম গ্রহন করলে অনিবার্যভাবেই এক দিন তাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে আর সেই মৃত্যুর মধ্য দিয়েই সে পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেয় । কিন্তুূ পেছনে থাকে তার মহৎ কর্মের ফসল । যে কর্মের জন্যে সে মরে যাওয়ার পরও পৃথিবীতে যুগ যুগ বেঁচৈ থাকে। মানুষের জীবনকে দীর্ঘ বয়সের সীমারেখা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না । জীবনে যদি কেউ ভাল কাজ না করে থাকে তবে সে জীবন অর্থহীন, নিষ্ফল । সেই নিষ্ফল জীবনের অধিকারী মানুষটিকে কেউ মনে রাখে না। নিরব জীবন নিরবেই ঝরে যায় । পক্ষান্তরে যে মানুষ জীবনকে কর্মমুখর করে রাখে এবং যার কাজের মাধ্যমে জগৎ ও জীবনের উপকার সাধিত হয় তাকে বিশ্বে মানুষ শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে । সেই স্বার্থক মানুষের কাজের অবদান বিশ্বের বুকে কীর্তিত হয়ে কৃতী লোকের গৌরব প্রচারিত হতে থাকে । কীর্তিমান লোকের যেমন মৃত্যু নেই, তেমনি শেষও নেই, কারন এই পৃথিবীতে সে নিজেস্ব কীর্তির মহিমায় লাভ করে অমরত্ব। কীর্তিমানের মৃত্যু হলে তার দেহের ধ্বংস সাধন হয় বটে, কিন্তুূ তার সৎ কাজ এবং অম্লান-কীর্তি পৃথিবীর মানুষের কাছে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখে । তাঁর মৃত্যুর শত শত বছর পরেও মানুষ তাকে স্মরণ করে। তাই সন্দেহাতীত ভাবে বলা যায় যে, মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতা , কর্ম-সাফল্যের উপর নির্ভরশীল ।একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মানুষ পৃথিবীতে আসে এবং সে সময়সীমা পার হওয়ার সাথে সাথে সে বিদায় নেয় পৃথিবী থেকে । এ নির্দিষ্ট সময়সীমা সে যদি গৌরবজনক কীর্তির স্বাক্ষরে জীবনকে মহিমান্বিত করে তুলতে সক্ষম হয়, মানব কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করে, তবে তার নশ্বর দেহের মৃত্যু হলেও তাঁর স্বকীয় সত্তা থাকে মৃত্যুহীন গৌরবোজ্জ্বল কৃতকর্মই তাঁকে বাঁচিয়ে রাখে যুগ থেকে যুগান্তরে । মানুষ বেঁচে থাকে তার কর্মের মধ্য দিয়ে । যে যত ভাল কর্ম মানুষকে উপহার দেয় অথবা যে কর্মের ফলে মানুষের অনেক উপকার হয় এবং পরবর্তীতে তাকে সব সময় স্মরণ করে তাকেই কীর্তিমান বলে । এমন সব কীর্তিমান ব্যক্তিকে সবাই ভালবাসে দুনিয়াতে এবং মৃত্যুর পরেও তাকে স্মরণ করে বার বার । তার কীর্তিতের কথা সব সময় সবাই শেয়ার করে সবাইর মাঝে যত ‍দিন এই দুনিয়া থাকবে তত দিন তার কথা তার সুকর্মের কথা মানুষ স্মরণ করবে । আর এই জন্যেই বলে কীর্তিমানের মৃত্যু নাই কথাটি আসলে বাস্তব ধর্মী কথা ।

মন্তব্যঃ মানুষের দেহ নশ্বর কিন্তুূ কীর্তি অনিবশ্বর । কেউ যদি মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করে , তবে মৃত্যুর পরেও তাঁর এ কীর্তির মধ্য দিয়ে মানুষের হৃদয়ের মণি কোঠায় চিরকাল বেঁচে থাকে।

বিকল্প ২

মূলভাব :  বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের অনন্ত সময়ে সংক্ষিপ্ত জীবন নিয়ে মানুষ তার মহৎকর্মের মধ্যদিয়ে এ পৃথিবীতে স্মরণীয় বরণীয় হয়ে থাকে। আবার এই সংক্ষিপ্ত জীবনেই অসৎকর্মের জন্য মানুষ বেঁচে থেকেও মরার মত অজ্ঞাত থেকে যায়। কেননা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ তাকে ভালবাসে না, দেশ ও জাতি তাকে শ্রদ্ধা করে না, স্মরণ করে না, এমনকি মরলেও কারও তাতে আসে-যায় না কিছু।

সম্প্রসারিত ভাবঃ জন্ম-মৃত্যুর অমোঘ বিধানে মানুষ বাঁধা। কারণ জন্ম নিলে মানুষ কেন, যেকোনো প্রাণীরই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়। চিরন্তন এই সত্য মেনে নিয়েই পৃথিবীতে প্রাণীকূলের বিচরণ। মানুষও এর থেকে ব্যতিক্রম নয়। মৃত্যুর মধ্যদিয়েই আমাদেরকে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিতে হয়। বিদায় নিলেও পেছনে পড়ে থাকে আমাদের কর্মফল সে কর্মফল মহৎ হতে পারে আবার অপকর্মও হতে পারে। তবে যাদের কর্মফল মহৎ তারা সেই কর্মের জন্য মরে যাওয়ার পরও পৃথিবীতে যুগ যুগ বেঁচে থাকে । মানুষের জীবনকে দীর্ঘ সময়ের সীমারেখা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। তবে জীবনে কেউ যদি কোন প্রকার ভালো কাজ না করে তবে সে জীবন অর্থহীন, নিষ্ফল ছাড়া আর কিছু না। এই নিষ্ফল জীবনের অধিকারী মানুষটিকে কেউ মনেও রাখে না বা রাখার প্রয়োজন হয় না। নীরব জীবন নীরবেই ঝরে যায় । অর্থাৎ জ্যান্ত মরা থেকে প্রকৃতপক্ষে মৃত্যু ঘটে তার জীবনে।

পক্ষান্তরে, যে মানুষ জীবনকে কর্মমুখর করে রাখে এবং যার কাজের মাধ্যমে জগত ও জীবনের উপকার সাধিতহয় তাকে বিশ্বের মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। সার্থক মানুষের কাজের অবদান বিশ্বের বুকে কীর্তিত হয়েকীর্তিলোকের গৌরব প্রচারিত হতে থাকে। কীর্তিমানের যেমন মৃত্যু নেই তেমনি শেষও নেই। কারণ পৃথিবীতেনিজস্ব কীর্তির মহিমায় সে রাভ করে অমরত্ব। কীর্তিমানের মৃত্যু হলে তাঁর দেহের ধ্বংসসাধন হয় বটে, কিন্তুতাঁর সৎ কাজ এবং অম্লান কীর্তি পৃথিবীর মানুষের কাছে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখে তাঁর মৃত্যুর শত বছর পরেও মানুষ তাঁকে স্মরণ করে এবং মানব সমাজে বাঁচিয়ে রাখে। অতএব, সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় যে, মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতা কৰ্ম-সাফল্যের ওপর নির্ভরশীল। কারণ সাধারণ মানুষের মৃত্যু ঘটে দুইবার। মরার মত বেঁচে থাকা এবং সত্যিকার মারা যাওয়া। আর যাঁরা অসাধারণ কীর্তিমান তাঁদের মৃত্যু কোনোদিনও ঘটে না, শুধু দেহগত লোকান্তর ঘটে।

মন্তব্য:মানুষের দেহ নশ্বর কিন্তু কীর্তি অবিনশ্বর। কেউ যদি মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করে, তবে মৃত্যুর পরেও তাঁর এ নিবেদিত কল্যাণের মধ্যদিয়ে মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় চিরকাল বেঁচে থাকে। আর মানুষও প্রচারের মাধ্যমে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখে যুগের পর যুগ।

বিকল্প ৩

মূলভাবঃ  মানবজীবন সংক্ষিপ্ত কিন্তু এ সংক্ষিপ্ত জীবনে কিছু মানুষ এমন কিছু কীর্তি করে যায় যার জন্য সে সারাজীবন মানুষের মনে বেচে থাকে। যে কারণে দৈহিক বিনাশ ঘটলেও কীর্তিমান ব্যক্তি মানুষের মনে অমরত্ব লাভ করে।

ভাব-সম্প্রসারণ : মানবজীবন ক্ষণস্থায়ী কিন্তু কর্মময়। জীবনে প্রকৃত সুখ ও সব কার্যাবলি,এ কর্মের মধ্যেই নিহিত। ধরিত্রীর অবারিত আলাে বাতাসের সাথে মিলে যথাসাধ্য কাজ করে চলাই তার কাজ। এ সুন্দর পৃথিবীতে মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি কখনাে মানুষকে বিপথগামী করেন নি, মানুষকে এ সুন্দর সুশৃঙ্খল ও মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। মানুষ কর্মের মাধ্যমেই তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অতিবাহিত করবে। কিন্ত এ কর্ম হবে সত্য ও সুন্দরের পথে। কীর্তিমান মানুষ জগতের জ্যোতি হয়ে বেঁচে থাকেন যুগ-যুগান্তর ধরে। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে বহু জ্ঞানের অধিকারী করেছেন। তারা যদি এ জ্ঞানকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে তবে অমরত্ব লাভ করবে। যেসব লােক সুপথে কর্মের মধ্য দিয়ে জীবনকে পরিচালিত করে তারা জীবনে অনেক সুখী সমৃদ্ধশালী হতে পারে; ফলে কর্মময় ক্ষণস্থায়ী জীবন হয় সার্থক ও সত্য। কর্মবিমুখ ব্যক্তিকে সাধারণত সবাই অলস বলে আখ্যায়িত করে। অলস মানুষ ঘুণে ধরা কাঠ ও মরিচা ধরা লােহার মতাে। তারা সমাজে অপাংক্তেয় হিসেবেই চিহ্নিত। হাদিসে রয়েছে, “অলস মানুষের মাথা শয়তানের আড্ডাভূমি।” কর্মবিমুখতার জন্য বর্তমান সমাজে অনেক যুবক কালােবাজারি, মদ্যপায়ী, সন্ত্রাসী হয়ে পড়েছে। তাদেরকে কর্মসাগরে উদ্বুদ্ধ করা একান্ত প্রয়ােজন। লেখকের ভাষায় “কর্মের গভীর মন্ত্রে উদ্ভাসিত হয়ে মানুষের কল্যাণার্থে জীবনকে পরিচালিত করাই জীবনের প্রকৃত সুখ।” অনেক সাধারণ ঘরের সন্তান কর্মগুণে পৃথিবীর বুকে অমর হয়ে আছেন। মানুষ তার বয়সের ওপর ভিত্তি করে বাঁচে না। কর্মের মধ্যেই তার বেঁচে থাকা সার্থক হয়। সাধনায় সফল কৃতিত্ব লাভ করা যায়। মহান আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, “তােমাদের কর্মফল তােমরা একদিন ভােগ করবেই।” এ বাণীটি কর্মকেই বড় করে, কেননা বয়সে মানুষ স্মরণীয় হয় না। বড় হওয়া এবং স্মরণীয় হওয়ার মাধ্যম হলাে কর্ম। কর্মই মানবজীবনের সুখ ও সমৃদ্ধি এনে দিতে পারে।

মন্তব্য : আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষণকে কাজে লাগানাে দরকার। পৃথিবীতে কিছু কীর্তি রাখার প্রচেষ্টা করা মানবতার সত্যিকারের প্রকাশ।কারন মানুষ বাচে তার কর্মের মধ্যে।

বিকল্প ৪

মূলভাব: মানুষের বেঁচে থাকার ইচ্ছা চিরন্তন কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে প্রতিটি মানুষকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়। মৃত্যুর পরেও মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকতে হলে কর্মই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। মানুষের জন্য কল্যাণকর কাজের মাধ্যমে মানুষ অমরত্ব পেতে পারে। 

ভাবসম্প্রসারণ : সময় কখোনও ব্যক্তি মানুষকে গ্রহণ করে না গ্রহণ করে তার কর্মকে। তাই কর্মকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। একজন ব্যক্তি শত বছর বাঁচলেও মানুষের জন্য কোনো কাজ না করলে তার জীবন একেবারেই নিরর্থক। অপরদিকে অল্পকাল বেঁচে থেকে মানুষের জন্য কিছু করতে পারলে ঐ ব্যক্তি মৃত্যুর পরেও নিজ কর্মের মধ্যে বেঁচে থাকবেন অনন্ত কাল। এই সুন্দর পৃথিবীতে সফল কর্মক্ষম ব্যক্তিকেই কীর্তিমান বলা হয়। একজন কীর্তিমান ব্যক্তি তার কর্মের মধ্য দিয়ে যুগ যুগ ধরে মানব অন্তরে জাগ্রত থাকতে পারে। কত মানুষই এ পৃথিবী হতে চলে গিয়েছে। কিন্তু কীর্তিমান ব্যক্তিগণ তাদের কৃতকর্মের জন্য আজও স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। কর্ম এবং কর্মের ফলাফলের ভিত্তিতে পৃথিবীতে মানুষকে নিম্ন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—কেউ পরের উপকার করে, কেউ নিজেদেরকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কেউ নিজের সুখের জন্য অন্যের ক্ষতি করে থাকে। প্রথমোক্ত ব্যক্তিবর্গ তাদের কর্মের জন্য সমাজ সংসারে শ্রদ্ধেয় ও বরণীয় হন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির লোক সমাজের পাত্র হতে পারে না। কারণ তারা যা কিছু করে নিজের জন্য করে। কর্মের প্রকৃতি, কর্মের গুণগত মান ও কর্মের ক্ষমতা দ্বারা মানুষের মর্যাদা নির্ণয় করা হয়ে থাকে। কর্মই মানুষের মর্যাদার মাপকাঠি। মানুষের মাঝে বেঁচে থাকার হাজী মুহাম্মদ মহসিন, মাদার তেরেসা, নেলসন ম্যান্ডেলা কর্মের দ্বারা বেঁচে আছেন মানুষের অন্তরে। মাত্র ২১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করলেও বাংলার কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য আজও বেঁচে অঅছেন তাঁর কাব্য সৃষ্টিশীলতার মাঝে। একজন হাবশী ক্রীতদাস হয়েও আপন কর্মের মহিমায় হযরত বেলাল (রা.) মুসলিম জাহানের প্রথম মুয়াজ্জিন হতে পেরেছিলেন। সামান্য কৃষকের পুত্র জর্জ ওয়াশিংটন নিজ কর্মের গুণে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে পেরেছিলেন। অতএব জগতে খেয়ে পরে চলে গেলে আমাদের কর্তব্য শেষ হবে না। পৃথিবীতে প্রতিটি জীবের ভালোর জন্য কিছু না কিছু কীর্তি রেখে যাওয়ার মধ্যে মানব জীবনের সার্থকতা নিহিত রয়েছে। পৃথিবীর বহু কীর্তিমান লোক শত শত বছর আগে পরলোকগমন করেছেন, কিন্তু পৃথিবীতে মানুষ তাদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে থাকে। মনীষীদের কথা বলতে হয়, Honour and shame from no condition rise, Act well your part and there all the honour lies’.

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment