প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়েছে পায় তা বলে কুকুরে কামড়ানাে কি মানুষের শােভা পায় ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়েছে পায় তা বলে কুকুরে কামড়ানাে কি মানুষের শােভা পায় ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব : কুকুর নিম্নশ্রেণীর জীব। তার কাজ শত্ৰুবোধে প্রাণী নির্বিশেষে কামড়ানো। হিংসার বশে, প্রতিহিংসা চরিতার্থে কুকুর তেড়ে গিয়ে যেমন কামড়াকামড়ি করতে পারে বিবেকসম্পন্ন মানুষ তা পারে না। প্রকৃতিগত পার্থক্যেই শুধু নয় বিবেকের পার্থক্যেই নিম্নশ্রেণীর প্রাণী কুকুরের চেয়ে মানুষ শ্রেষ্ঠ, আবার স্বার্থপর মানুষের থেকে বিবেকসম্পন্ন স্বার্থশূন্য মানুষ শ্রেষ্ঠ।
সম্প্রসারিত-ভাব : এ পৃথিবীতে কুকুরের মত নিম্নশ্রেণীর এক ধরনের মানুষ আছে। যারা উপকারীর উপকার স্বীকার করে না। আপন স্বার্থ সবসময় আগলিয়ে রাখে। এমনকি আঘাত আসার আশঙ্কায় সর্বদাই অন্যকে আঘাত হেনে চলে। এরা প্রবৃত্তিতে নিম্ন, মনুষ্যত্বে খাট। প্রতিহিংসা এবং অন্যায়ের পথ ধরে চলে বলেই এদের পরিণাম ভয়াবহ। সাধককে যারা সাধনার পথ থেকে সরাতে উদ্যত, জ্ঞানী ও গুণীজনদের যারা অপমান করে তাদের বংশ গৌরব যতই থাকুক মনুষ্যত্ব নিশ্চয়ই থাকে না। পক্ষান্তরে, এ জগতে আর এক শ্রেণীর মানুষ আছেন যারা জ্ঞানী ও গুণীজনদের প্রাপ্য মর্যাদাটুকু দেন, আপন সম্পদ দেশ ও দশের কল্যাণে নিয়োজিত রাখেন, সকলের সাথে ভাগ করে খান আহার্য, এরাই প্রকৃত মানুষ। পৃথিবী এদের গর্ভে ধারণ করে গর্বিত। আঘাতে জর্জরিত হলেও এরা কখনও প্রত্যাঘাত করতে চায় না।
তাই সত্য ও সুন্দরের পূজারী এসব মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে অল্প। কিন্তু এরা যদি না থাকত তাহলে মানুষ মনুষ্যত্ব হারাত, পৃথিবী ভরে উঠত কুকুরের মত নিম্নশ্রেণীর জীবে।
বিকল্প ১
এই পৃথিবীতে বহু প্রকৃতির মানুষ বসবাস করে। কিছু মানুষ আছে যারা স্বভাব বিদ্বেষী এবং হিংসাপরায়ণ, কোন নির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই এরা অপরকে হিংসা করে। এমনকি যে সমস্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে এরা উপকৃত হয় তাদেরও ক্ষতি করতে এরা ভয় পায় না। এই সমস্ত মানুষেরা অপরের ক্ষতি করতেই বেশি আগ্রহী। কিন্তু এই সমস্ত মানুষের পাশাপাশি এই পৃথিবীতে কিছু হৃদয় বান, চরিত্রবান, বিবেকী, উদার চেতনাসম্পন্ন, স্নিগ্ধ মতি হিংসা শুন্য মানুষও আছে। এঁরা আছে তাই সমাজ-সংসার আজও বাসপযোগী।
স্বভাব বিদ্বেষী, স্বার্থান্বেষী মানুষেরা নিজের স্বার্থের জন্য অপরকে করে নির্যাতিত,নিপীড়িত, বঞ্চিত, লাঞ্ছিত। এর ফলে বহু মানুষ হয় শোষিত। কিন্তু স্বার্থত্যাগী মানুষেরা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়না। স্বভাবতই এই সমস্ত মানুষ জনেরা দুর্জনের কাছ থেকে আঘাত পেলেও সেই আঘাতের প্রত্যুত্তরে কোন প্রত্যাঘাতের প্রশ্ন তাঁদের উদার হৃদয় আসে না। এইখানেই সেই সমস্ত মানুষের মনুষ্যত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। এই সমস্ত গুণমান মানুষজন সুন্দর দৃষ্টিতে অপরাধীদের সকল অপরাধ ক্ষমা করে দেন। এই সমস্ত মানুষ মহান হয়ে থাকেন।এঁরা মানুষের অবয়বে কোন নিম্ন শ্রেণীর প্রতিহিংসাপরায়ণ জীব নন। যেদিন এই পৃথিবীর সমস্ত মানুষ হিংসা,ত্যাগ করবে সেদিন হিংসার ফলে সৃষ্ট বিভেদের প্রাচীর যা এক মানুষকে অপরের থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে তা ধ্বংস হবে। মানুষ সেদিন সমস্ত হিংসা ও বিদ্বেষ ভুলে মৈত্রীর বন্ধনে মিলিত হবে। মানুষ যদি অপরের অপরাধ ক্ষমা না করে অপরাধীকে পাল্টা আঘাত করে তাহলে মানুষের মধ্যে মানবিকতার বদলে পাশবিকতা ফুটে ওঠে। তাই প্রতিটি মানুষের উচিত প্রতিহিংসাপরায়ণ না হওয়া এবং অপরের অপরাধ মার্জনা করে দেওয়া।
আরো পড়ুন: প্রজাপতি এবং মথের মধ্যে পার্থক্য কি
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।