কে লইবে মাের কার্য, কহে সন্ধ্যা রবি শুনিয়া জগৎ রহে নিরুত্তর ছবি মাটির প্রদীপ ছিল, সে কহিল, স্বামী আমার যেটুকু সাধ্য তা করিব – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “কে লইবে মাের কার্য, কহে সন্ধ্যা রবি। শুনিয়া জগৎ রহে নিরুত্তর ছবি। মাটির প্রদীপ ছিল, সে কহিল, স্বামী। আমার যেটুকু সাধ্য তা করিব ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

কে লইবে মাের কার্য, কহে সন্ধ্যা রবি শুনিয়া জগৎ রহে নিরুত্তর ছবি মাটির প্রদীপ ছিল, সে কহিল, স্বামী আমার যেটুকু সাধ্য তা করিব - ভাবসম্প্রসারণ

কে লইবে মাের কার্য, কহে সন্ধ্যা রবি শুনিয়া জগৎ রহে নিরুত্তর ছবি মাটির প্রদীপ ছিল, সে কহিল, স্বামী আমার যেটুকু সাধ্য তা করিব ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : পৃথিবীতে ছোট হোক অথবা বড় হোক যে কোন কর্তব্যই নিষ্ঠা এবং আন্তরিকতার সাথে সম্পাদন করা প্রয়োজন।

সম্প্রসারিত-ভাব : পৃথিবী হতে বিদায় নেয়ার প্রাক্কালে অস্তগামী সূর্য পৃথিবীতে আলো দান করার কার্যভার গ্রহণে আহ্বান জানায়। কিন্তু জগতের অন্ধকার দূর করার গুরু দায়িত্ব গ্রহণ করার সাহস কারো নেই বলে সকলেই নিশ্চুপ থাকে। কিন্তু ক্ষীণ শিখা বিশিষ্ট মাটির প্রদীপ তার সাধ্যমত চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতিতে অগ্রসর হয়। পৃথিবীতে সকল মানুষের ক্ষমতা সমান নয়। কারো বেশি, আবার কারো মাটির প্রদীপের মতই সামান্য। কিন্তু কর্মের আহ্বানে আসলে ছোট-বড় সবাই লাভ-ক্ষতির চিন্তা করে। অর্থাৎ নিষ্ঠার সাথে কর্তব্য পালন করে না। কিন্তু প্রয়োজন কালে সকলেই যদি নিজ নিজ সাধ্য অনুসারে কর্তব্য কাজে অগ্রসর হয়, তা হলে পৃথিবীর কল্যাণ সাধিত হতে পারে। মাটির প্রদীপের মত স্বল্প ক্ষমতা নিয়েও যে ব্যক্তি নিজের ক্ষমতা অনুসারে পরোপকার করে, তার জীবনই সার্থক। ক্ষীণ আলোর শিখা হাতে নিয়ে যে ব্যক্তি পরোপকারে এগিয়ে আসে তার জীবনই সার্থক জীবন।

বিকল্প ১

ভাব-সম্প্রসারণ : অসাধারণ ব্যক্তিদের তুলনায় সাধারণ মানুষের কর্মক্ষমতা সীমাবদ্ধ। অসংখ্য প্রদীপ যেমন সূর্যের অভাবকে বিদূরিত করে, তেমনি অগণিত মানুষ সীমিত কর্মক্ষমতা নিয়েও মহামনীষীদের শূন্যস্থানকে পূর্ণ করে তুলতে পারে। 

মানব-সভ্যতার উত্থান-পতনে কখনো নেমে আসে গভীর নৈরাশ্য ও বেদনাদায়ক অবক্ষয়। সভ্যতার বিবর্তনে বহু সঙ্কটময় মুহুর্তে হযরত মুহম্মদ (স), যিশুখ্রিস্ট, গৌতম বুদ্ধের মতো মহামনীষীদের আবির্ভাব ঘটেছে। লোকসমাজে তাঁদের উপস্থিতি মহাসূর্যের মতোই আলোকোজ্জ্বল। সাধারণ মানুষ সেই আলোকের সাহায্যেই পথ খুঁজে পেয়েছে। মানুষকে তাঁরা দিয়ে গেছেন মহাজীবনের মন্ত্র। কিন্তু তাঁদের অনুপস্থিতিতে কি মানব-সভ্যতার অগ্রগতি রুদ্ধ হয়ে যাবে? নিশ্চয়ই নয়। সে দায়িত্ব আমাদের সকলের। সমাজে বিভিন্ন ধরনের লোক বাস করে। তাদের মধ্যে কেউ জ্ঞানী, কেউ মুর্খ, কেউ গুণী, কেউ সাধারণ, কেউবা অসাধারণ গুণাবলির অধিকারী। প্রত্যেককেই নিজ নিজ যোগ্যতা ও প্রতিভা অনুযায়ী সমাজের জন্যে, দেশের জন্যে কিছু না কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই যথাযথ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তা এড়াতে চান। আর এর ফলেই পৃথিবীতে যুগে যুগে ঘটে মূল্যবোধের ব্যাপক অবক্ষয়। তবুও কিছু কিছু ব্যক্তি তাদের ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়েও অকৃত্রিম কর্তব্যনিষ্ঠার বলে বলীয়ান হয়ে সমাজের গুরুদায়িত্বকে নিজ কাঁধে তুলে নেন। তাঁদের এ সদিচ্ছা এবং মহান প্রচেষ্টাই কোনো জাতির ঐতিহাসিক মূল্যবোধকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। অস্তগামী সূর্যের আলো বিতরণ করার মহান দায়িত্ব যদি ক্ষুদ্র শক্তিসম্পন্ন ছোট্ট মাটির প্রদীপ শিখাটি নিজের কাঁধে নিয়ে তা নিজ সাধ্যমত নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারে, তাহলে এটা নিশ্চিত, যে কোন মানুষও নিজের সাধ্যমত তার ঐতিহাসিক গুরুদায়িত্বটিও সঠিকভাবে পালন করতে পারবে। প্রকৃতপক্ষে দুরূহ কর্ম সম্পাদনে মানুষের সদিচ্ছাটাই সবচেয়ে বড় কথা। কর্তব্যপরায়ণ ব্যক্তি তার মেধা ও সামর্থ্য দিয়ে নিজের এবং অপরের মঙ্গল সাধন করতে পারে। কিন্তু কর্তব্যজ্ঞানহীন এবং বিবেকবর্জিত ও দায়িত্বহীন কোনো ব্যক্তি যত যোগ্যতাসম্পন্নই হোক না কেন সে কারো উপকারে আসে না। 

শক্তি ও সামর্থ্যের ক্ষুদ্রতার কথা ভেবে হীনমন্যতায় পশ্চাদপসরণ করলে সভ্যতাকে বিপন্ন করে তোলা হবে। প্রদীপের মতোই আত্মসত্তাকে আলোকিত করে তুলতে হবে।

আরো পড়ুন: কাক কোকিলের একই বর্ণ স্বরে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment