গাহি সাম্যের গান মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “গাহি সাম্যের গান মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

গাহি সাম্যের গান মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান - ভাবসম্প্রসারণ

গাহি সাম্যের গান মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান ভাবসম্প্রসারণ

‘সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা’ এই স্লোগানকে কেন্দ্র করে সংগঠিত হয়েছিল পৃথিবীর ইতিহাসের এক মহান বিপ্লব। যা ফরাসি বিপ্লব নামে পরিচিত। মানবতা আর মানুষের অধিকার রক্ষার এই বিপ্লবের কেন্দ্র বিন্দু ছিল মানুষ। স্বাধীনতা, ঐক্যবদ্ধতা আর সমতা মানুষকে দান করেছে স্বর্গীয় মহিমা। যে মহিমায় ভাস্বর পৃথিবীর প্রতিটি জনপদ। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ সমূহে বর্ণিত তথ্য অনুযায়ী সকল সৃষ্টির মাঝে মানুষ শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন। মানুষের জ্ঞান তাকে করেছে বিকশিত, বুদ্ধির মাধ্যমে সে পেয়েছে স্বাতন্ত্র্য, আর চিন্তার ক্ষমতা মানুষকে করেছে পরিপূর্ণ। স্রষ্টার সৃষ্টি জীব হিসেবে প্রতিটি মানুষ পেয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা। কাজেই ধর্ম, বর্ণ, সম্পদায় বিবেচনায় কাউকে হেয় করার কোনো সুযোগ নেই। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রতিটি মানুষ সমান মর্যাদার অধিকারী। সুতরাং মানুষ হিসেবে মানুষকে সম্মান করা মানব জীবনের অপরিহার্য অংশ। কারণ মানুষের চেয়ে বড় কিছুই নেই। আর মানুষ অপেক্ষা মহীয়ান কিছুই হতে পারে না। স্রষ্টা যেমন বিশেষ মর্যাদা দিয়ে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তেমনি সকল সৃষ্টির মাঝে মানুষকে করেছেন মহীয়ান। সুতরাং স্রষ্টার এই সৃষ্টিকে হেয় করে দেখা স্রষ্টাকে অবমাননার শামিল। সাম্য বা সমতাই হতে পারে সুখী, সমৃদ্ধ ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার অন্যতম হাতিয়ার। যে সমাজে সাম্যের বাণী ধ্বনিত হবে সম্মিলিত কন্ঠে।

শিক্ষা: মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়ে, মহীয়ান করে পাঠানো হয়েছে পৃথিবীর বুকে। মহান সৃষ্টিকর্তার শৈল্পিক সত্ত্বার পরিচয় বহনকারী মানুষ তাই সবচেয়ে বড়। মানুষের মাঝে বৈষম্য থাকার কোনো সুযোগ নেই।

বিকল্প ১

মূলভাব : সৃষ্টি জগতে সবার উর্ধ্বে মানুষের ঠাঁই। ধর্মীয় গোঁড়ামি কিংবা সাম্প্রদায়িতকার বিষবাষ্প দ্বারা আক্রান্ত হয়ে কাউকে খাটো করে দেখার মধ্যে কোন যৌক্তিকতা নেই। সকল মানুষকে সমান চোখে দেখতে হবে। কারণ মানুষের পরিচয় সে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব।

সম্প্রসারিত-ভাব : মানুষই সভ্যতার জনক। এক সময় মানুষ ছিল প্রকৃতির দাস। আজ সে মানুষই নিয়ন্ত্রণ করছে প্রকৃতিকে। মেধা ও প্রজ্ঞার অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়ে মানুষ আজ জয় করছে পৃথিবীকে। মানুষের আছে অপরিসীম ইচ্ছাশক্তি। আর সে ইচ্ছাশক্তিকে পাতেয় করে মানুষ জল, স্থল, অন্তরীক্ষে উড়িয়েছে তার বিজয় নিশান। মানুষের শক্তি, জ্ঞান ও কাজের সীমা অফুরন্ত। এ যে আধুনিক সভ্যতা, এত মানুষেরই সৃষ্টি। বিজ্ঞানের এ যে নব নব আবিষ্কার তা মানুষেরই আবিষ্কার। মানুষ অসম্ভবকে করেছে সম্ভব। দূরকে করেছে নিকট। মহাশূন্যের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য আজ মানুষ সর্বদা ব্যাপৃত। সহজ থেকে আরও সহজতর জীবন প্রণালী খুঁজে নেয়ার জন্য সে সর্বদা তৎপর। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, মানুষ নিজেকে জাহির করার জন্য যতটা তৎপর, পরকে আপন করার জন্য ততটা তৎপর নয়। ধর্মীয় গোঁড়ামি আর নগ্ন সাম্প্রদায়িকতার দ্বারা আজ পৃথিবীর মানুষ বহু ধারায় বিভক্ত। এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের লোকদের ধ্বংস কামনা করছে। এক সম্প্রদায়ের মানুষ আরেক সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যুদ্ধ করছে। বিজ্ঞানের নতুন নতুন উদ্ভাবন প্রয়োগ করা হচ্ছে মানুষের বিপক্ষে। শক্তিশালী মরণাত্র দ্বারা ধ্বংস করা হচ্ছে মানবসভ্যতা। প্রভেদের দেয়াল গড়ে উঠছে মানুষের মধ্যে। এক শ্রেণীর মানুষ বিত্ত বৈভবের পাহাড় গড়ছে; আরেক শ্রেণীর মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে ধুকে ধুকে নিঃশেষ হচ্ছে। আর্ত পীড়িত বুভুক্ষু মানুষের রোনাজারিতে কেঁপে উঠছে পৃথিবীর আকাশ বাতাস। ধর্ম, বর্ণ, জাতি ও সম্প্রদায়, এক মানুষকে আড়াল করে রাখছে আরেক মানুষের কাছে। জাতি, ধর্ম এবং বর্ণভেদের কারণে সারা পৃথিবীতে মানুষ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অন্যায় অবিচারের স্বীকার হচ্ছে। মানবতা ও মানবিকতা আজ ভূলুণ্ঠিত। মানুষের গড়া সভ্যতা ব্যঙ্গ করছে আজ মানুষকে। সারা পৃথিবীর মানুষ বিভিন্ন ধারায় বিভক্ত থাকলেও সকলেরই একটি পরিচয়, তাহল আমরা মানুষ জাতি। ধর্মে, বর্ণে, জাতিতে বিভক্ত হলেও সকলের ধমণীতে একই লাল রক্ত প্রবাহমান। শরীরের কোন অঙ্গ অসুস্থ হলে যেমন সমস্ত শরীর ব্যথিত হয় তেমনি আমাদের উচিত জাতি ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকল মানুষের দুঃখে এগিয়ে আসা। এক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায় কোন দেয়াল হতে পারে না। মানব জাতির সকল ক্ষেত্রে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা মানুষের কর্তব্য।

মানবতা আর মনুষ্যত্বকে যদি মানুষ সবার ঊর্ধ্বে ঠাঁই দেয় ,তাহলেই পৃথিবী সুন্দর হবে। মানুষের উচিত সকল বিভেদ ভুলে যাওয়া এবং এ পৃথিবীকে সকলের এক ও অভিন্ন পৃথিবী হিসেবে গড়ে তোলা।

আরো পড়ুন: ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুদের অন্তরে

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment