প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়ােজন ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরহস্তে ধন নহে বিদ্যা নহে ধন হলে প্রয়ােজন ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব: মলাটবদ্ধ নির্জীব বিদ্যা মানুষ আত্মস্থ না করলে তা যেমন অর্থহীন, তদ্রপ সম্পদ নিজের করায়ত্তে না থাকলে তাও নিরর্থক।
সম্প্রসারিত ভাব: বিদ্যা ও ধন মানবজীবনের অতি প্রয়ােজনীয় অমূল্য সম্পদ। সাধনা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে মানুষকে এগুলাে অর্জন করতে হয়। বিদ্যা মানুষের অজ্ঞানতা দূর করে, শাশ্বত সুন্দরের পথ নির্দেশ করে, ব্যক্তিকে করে তােলে আত্মনির্ভরশীল, সংযমী ও আদর্শবান।। কিন্তু বিদ্যা যদি অর্জিত না হয়ে গ্রন্থের ভেতরেই মলাটবদ্ধ হয়ে নির্জীব পড়ে থাকে, তবে সে বিদ্যা মূলত বিদ্যাই নয়। অনুরূপভাবে নিজের অর্জিত ধন-সম্পদ যদি অন্যের কাছে রক্ষিত থাকে, তাহলে তাও সময় মতাে, প্রয়ােজন মতাে কাজে লাগানাে যায় না। গ্রন্থের মধ্যে সঞ্জিত জ্ঞানকে আয়ত্ত করে, নিজের কল্যাণে নিয়ােগ করে জীবনকে সুন্দর ও গতিশীল করার পাশাপাশি সমাজ ও দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করার কাজে ব্যবহার করতে পারাই হচ্ছে বিদ্যাচর্চার সার্থকতা। কেননা কঠিন পরিশ্রম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার দ্বারা ধন-সম্পদ অর্জন করে নিজের কল্যাণ ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কাজে না লাগাতে পারলে সে সম্পদ অর্জনের প্রয়ােজনীয়তাই বা কী? ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, “A bird in hand is worth two in the bush.” তাই গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরের হাতে ধন রেখে তার গৌরবে গৌরবান্বিত হওয়া নিরর্থক। বিদ্যাকে গ্রন্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ বলে মনে না করে বিদ্যানুশীলনের মাধ্যমে আমাদের আত্মমুক্তির পথ খুঁজতে হবে। মানুষের মঙ্গলার্থে অর্জিত বিদ্যা ও ধন-সম্পদের ব্যবহারে সমর্থ হতে হবে।
মন্তব্য: গ্রন্থগত বিদ্যা এবং পরের হাতে রক্ষিত ধন অব্যবহৃত থাকে বলেই এগুলাে বিদ্যা বা ধন নয়। এগুলােকে নিজের সম্পদ হিসেবে অর্জন করার মধ্যেই সার্থকতা ও স্বকীয়তা বিদ্যমান।
বিকল্প ১
মূলভাব : গ্রন্থগত বিদ্যা আত্মস্থ না করে জ্ঞানী ভাবা আর পরের হাতে ধন রেখে সে ধন নিজের বলে জাহির করাঅর্থহীন। কারণ সে জ্ঞান বা ধন প্রয়ােজনে কোনাে কাজে আসে না।
সম্প্রসারিত ভাব : মানবজীবনে বিদ্যা ও ধন উভয়েরই প্রয়ােজন রয়েছে। বিদ্যা ও ধন সাধনালব্ধ ফল। কিন্তু বিদ্যা গ্রন্থাশ্রয়ী এবং ধন পরিশ্রমলব্ধ, প্রয়ােজনের তাগিদে সীমাবদ্ধ। বিদ্যার প্রয়ােজন জ্ঞানচক্ষু ফুটানাের জন্য, আর জ্ঞানের বাহনহচ্ছে পুস্তক। এ পুস্তক থেকে শিক্ষার মাধ্যমেই ব্যক্তি হতে পারে আত্মনির্ভরশীল, সহ্যমী ও আদর্শবান। বিদ্যাকে গ্রন্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ বলে মনে না করে বিদ্যানুশীলনের মাধ্যমে আমাদের আত্মমুক্তির পথ খুঁজতে হবে। বিদ্যা অর্জন করে শুধু বিশ্বজোড়া খ্যাতি লাভ কিংবা পন্ডিত হিসেবে পরিচিতি লাভের মধ্যে বিদ্বানের কোনাে সার্থকতা নেই। বরং অর্জিত বিদ্যারমাধ্যমে জীবনকে সুন্দর ও গতিশীল করার পাশাপাশি সমাজ ও দেশকে উন্নত করার কাজে ব্যবহার করলেই বিদ্যা স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়। তদ্রুপ অর্জিত ধন নিজের কাছে না রেখে অন্যের কাছে রেখে সে ধনের মালিকানা নিজের বলে জাহির করা যায় না। কারণ, নিজের কোনাে জরুরি প্রয়ােজনের সময় সে ধন নাও পাওয়া যেতে পারে। তাই সার্থক ও সুন্দর জীবনেরজন্য বিদ্যাকে বুদ্ধির মাধ্যমে আত্মস্থ করে বাস্তবে প্রয়ােগ করা এবং অর্জিত সম্পদ অহেতুক গচ্ছিত না রেখে প্রয়ােজনেব্যবহার করার মধ্য দিয়েই অর্জিত বিদ্যা বা ধন প্রকৃত সার্থকতা লাভ করে। সুতরাং গ্রন্থগত বিদ্যা আর পরের হাতের ধনেরকোনাে মূল্য নেই।
মন্তব্য : জ্ঞানার্জন ছাড়া যেমন মনুষ্যত্বের বিকাশ সম্ভব নয়; তেমনি অন্যের হাতে কুক্ষিগত সম্পদ নিজের উপকারে আসে না।
বিকল্প ২
মূলভাব :পুঁথিগত বিদ্যা নিছক অসম্পূর্ণ এবং ত্রুটিপূর্ণ। এ ধরনের বিদ্যায় যেমন জ্ঞানী হওয়া যায় না,তেমনি নিজের ধন অপরের নিকট রাখলে তা প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায় না।
সম্প্রসারিত ভাব : গ্রন্থগত বিদ্যা কোনো কাজে লাগে না। শিক্ষার্থীরা সাধারণত পুঁথিগত বিদ্যা মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় উগরে দেয় এবং সার্টিফিকেট অর্জন করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের বিদ্যা অসম্পূর্ণ এবং ত্রুটিপূর্ণ। কারণ এ বিদ্যা শিক্ষার সাথে বাস্তব জীবনের মিল নেই। প্রয়োজনের মুহূর্তে এ বিদ্যা সামাজিক, ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক জীবনে কাজে লাগে না। পারিপার্শ্বিক জীবনের সাথে সঙ্গতি রেখে অর্জিত বিদ্যাই মানুষকে প্রকৃত জ্ঞানী এবং আত্মবিশ্বাসী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলে। তেমনিভাবে কঠিন পরিশ্রম করে মানুষ ধন-সম্পদ অর্জন করে এবং এতে জ্ঞানের প্রয়োগও ঘটে। কিন্তু কোনো ব্যক্তি যদি তার এ ধন অন্য কারও নিকট গচ্ছিত রাখে, তাহলে তা কোনো কাজে আসে না। কারণ সাধারণত প্রয়োজনের সময় তার নিকট হতে এ অর্থ ফেরত পাওয়া যায় না।
মন্তব্য : পারিপার্শ্বিক জীবনব্যবস্থার সাথে অসংগতিপূর্ণ বিদ্যা যেমন অর্থহীন তেমনি নিজের অর্জিত ধন অপরের নিকট রেখে তা নিজের বলে জাহির করা বোকামী । কারণ প্রয়োজনের সময় তা পাওয়া যায় না।
আরো পড়ুন: দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাদে যবে সমান আঘাতে সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।