চালুক্য সাম্রাজ্য দক্ষিণ ভারতের একটি প্রাচীন সাম্রাজ্য ছিল।আপনাদের মনে হয়তবা প্রশ্নে এসেছে যে চালুক্য বংশের শ্রেষ্ঠ শাসকের নাম কি? এই সম্রাজ্য ষষ্ঠ শতক থেকে বার শতক পর্যন্ত শাসন করেছে। চালুকয় রাজপরিবার একই সাথে দক্ষিণ ভারতের একে অপরের সাথে জড়িত অথচ ভিন্ন ভিন্ন তিনটি সম্রাজ্য শাসন করেছে। চালুক্য বংশের শ্রেষ্ঠ শাসকের নাম দ্বিতীয় পুলকেশি। এই সম্রাজ্যের উন্থানের ফলে নবম শতকে ভারতের স্থাপত্যকলা ব্যাপক উন্নতি সাধন হয় যাকে বর্তমানে চালুক্য স্থাপত্য শৈলী বলা হয়ে থাকে। এছাড়াও প্রশাসনিক দক্ষতা ও বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রসারেও এই সম্রাজ্য যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করেছিল। ১১ শতকে এসে চালুক্য সম্রাজ্যের পৃষ্ঠপোষকতায় তেলুগু সাহিত্য প্রচার ও প্রসার লাভ করে।
দ্বিতীয় পুলকেশী :
চালুক্যরাজা মঙ্গলেশকে গৃহযুদ্ধে পরাজিত ও নিহত করে তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র দ্বিতীয় পুলকেশী সিংহাসন অধিকার করেন (৬১০ খ্রিস্টাব্দে)। সিংহাসন লাভ করার পর কয়েকবছর অভ্যন্তরীণ অরাজকতা দমন করতে উদ্যোগী হন। অভ্যন্তরীণ অরাজকতা দমন করে তিনি রাজ্যবিস্তারে মনোযোগী হন। তিনি ছিলেন ঘোর সাম্রাজ্যবাদী। রবিকীর্তি রচিত ‘আইহোল প্রশস্তি’ থেকে তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তারের কথা জানা যায়। তিনি কদম্ব ও মহীশূরের গঙ্গ রাজ্যের রাজাদের পরাজিত করেন। তিনি উত্তর কঙ্কনের মৌর্যদের পরাজিত করেন এবং তাদের রাজধানী অধিকার করেন। মালব ও গুজরাটের রাজারা তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেন। পল্লব রাজা মহেন্দ্রবর্মণও দ্বিতীয় পুলকেশীর কাছে পরাজিত হন। তিনি হর্ষবর্ধন‘কে পরাজিত করে হর্ষবর্ধনের দক্ষিণ ভারত অভিযান ব্যর্থ করেন। দক্ষিণে অবস্থিত চোল, কেরল ও পাণ্ড্য রাজ্যের রাজারা দ্বিতীয় পুলকেশীর বশ্যতা স্বীকার করেন। এই ভাবে দ্বিতীয় পুলকেশী দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে নিজের আধিপত্য বিস্তার করেন।
চালুক্য বংশ এর পরিচিয় 🙂
ভৌগোলিক দিক থেকে দক্ষিণ ভারতকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় – (১) উত্তরে বিন্ধ্য পর্বত থেকে দক্ষিণে কৃষ্ণা – তুঙ্গভদ্রা নদী পর্যন্ত অঞ্চলকে বলা হয় দক্ষিণ ভারত। (২) তুঙ্গভদ্রা নদী থেকে আরও দক্ষিণে কন্যাকুমারী পর্যন্ত অঞ্চলকে সুদূর দক্ষিণ ভারত বলা হয়। খ্রিস্টীয় চতুর্থ থেকে দশম খ্রীস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে সমগ্র দক্ষিণ – ভারতে একাধিক শক্তিশালী রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছিল। এই রাজ্যগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – দক্ষিণ ভারতের বকাটক, চালুক্য, রাষ্ট্রকূট এবং সুদূর দক্ষিণ ভারতের পাণ্ড্য, চোল ও পল্লব।
চালুক্যদের পরিচয় :
চালুক্যদের আদি পরিচয় সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে নানা মতভেদ আছে। ডি. সি. সরকার, আর. এস. শর্মা প্রমুখেরা মনে করেন চালুক্যরা প্রাচীন কানাড়ী বংশোদ্ভূত। ভি. স্মিথ এর মতে চালুক্যরা ছিল গুর্জর বংশোদ্ভূত এবং কোন এক সময় এরা দাক্ষিণাত্যে এসে বসবাস করতে থাকে। বেশিরভাগ পণ্ডিতের মতে প্রথম চালুক্য রাজা বিজয়াদিত্যের পূর্বপুরুষগণ দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশে বসবাস করতেন এবং কৃষ্ণা উপত্যকায় হিরণ্যরাষ্ট্র অঞ্চলটি ছিল বিজয়াদিত্যের বাসভূমি।
বাতাপির চালুক্যবংশ :
প্রথম ষষ্ঠ শতক থেকে অষ্টম শতক এবং পরবর্তীতে দশম শতক থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত দক্ষিণ ভারতের বা দাক্ষিণাত্যের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চালুক্যরা প্রথম উত্তর কর্ণাটকের বাতাপি অঞ্চল ও তার সংলগ্ন অঞ্চলে রাজ্য গড়ে তোলে। এরপর তারা বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। চালুক্যদের চারটি শাখার উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন – (১) বাতাপির চালুক্যবংশ বা পশ্চিমী চালুক্যবংশ, (২) বেঙ্গীর চালুক্যবংশ, (৩) কল্যানের চালুক্যবংশ, (৪) গুজরাটের চালুক্যবংশ।
চালুক্য বংশের প্রথম পুলকেশী :
প্রথম পুলকেশীর রাজত্বকালে চালুক্য শক্তির বিস্তার ঘটে। তিনি ৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে বিজাপুরের অন্তর্গত বাতাপি অঞ্চলে সর্বপ্রথম স্বাধীনভাবে রাজত্ব শুরু করেন। তাঁর রাজধানী ছিল ছিল বাতাপি নগর। তিনি ৫৬৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন।
চালুক্য বংশের কীর্তিবর্মন :
প্রথম পুলকেশীর পর চালুক্য বংশের রাজা হন কীর্তিবর্মন। তিনি নল, মৌর্য ও কদম্ব শক্তিকে পরাজিত করেন। কীর্তিবর্মন ৫৬৬ থেকে ৫৯৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন।
চালুক্য বংশের মঙ্গলেশ :
কীর্তিবর্মনের পর চালুক্য সিংহাসনে বসেন মঙ্গলেশ। তিনি কলচুরি শক্তিকে পরাজিত করেন এবং রত্নগিরি দখল করেন। তিনি বাতাপির বিখ্যাত বিষ্ণুমন্দির নির্মাণ করেন।