প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “জাতীয় জীবনে সন্তোষ এবং আকাঙ্ক্ষা দুয়েরই মাত্রা বেড়ে গেলে বিনাশের কারণ ঘটে ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
জাতীয় জীবনে সন্তোষ এবং আকাঙ্ক্ষা দুয়েরই মাত্রা বেড়ে গেলে বিনাশের কারণ ঘটে ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব : উৎকর্ষ সাধন ও বিকাশের নেপথ্যে চাহিদার উন্মেষ হলেই তা সম্ভব হয়। এ জন্য দরকার হয় দেশের বাস্তবিক কিছু কারণ। তার মলে সমস্যা, সম্ভাবনা, চাহিদ, আকাঙ্ক্ষা থাকলেই বিকাশের ধারা উন্মোচন হয়ে থাকে।
সম্প্রসারিত-ভাব : জাতীয় জীবনে সন্তোষ ও আকঙক্ষা দুটি অপরিহার্য বিষয়। কিন্তু এ দুয়ের মাত্রা যদি অধিক হয় তাহলে বিকাশের পথ হয় উন্মুক্ত। জাতীয় জীবনে যখন কোন কাজের বাস্তবরূপের চিন্তা-ভাবনা করা হয় তার আগে সমস্যা নানান সমস্যা এসে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তখন প্রশাসনিকভাবে বোধোদয় হয় প্রয়োজনীয়তা। তারপর সুচিন্তার প্রেক্ষিতে মানসিকভাবে জাগ্রত হয় ইচ্ছা ও আকাঙক্ষা। কিভাবে কাজটি করতে হবে- এভাবে বিকাশ সাধনের বাস্তবানুগ রীতি বিষয়টি পরিদৃশ্য হয়। শুধু জাতীয় জীবনে নয়, সকল কাজের নেপথ্যে এ ব্যাপারটি লক্ষণীয়। সন্তোষ ও আকাঙক্ষা দুয়ের মিলনে বিকাশ সাধিত হয়। সন্তুষ্টির জন্য আকাঙক্ষা আর আকাঙক্ষার প্রেক্ষিতে উৎকর্ষ সাধন- এটিই বাস্তবতা ও গতানুগতিক সভ্যতার ধারা বহন করে। যেহেতু পরিকল্পিত কিছুর রুপ বাস্তবক্ষেত্রে দান করতে হলে তার পেছনে কোন কারণ নিহিত থাকে। যার ফলে সন্তুষ্টির ব্যাপারটি এসে যায়। তার পাশে আসে আকাঙক্ষা ও ইচ্ছাশক্তি। এরপর-কর্মে রূপদান করা হয়। কোন কার্যসিদ্ধির ক্ষেত্রে এমনি এমনি কিছু হয় না। তার নেপথ্যে সংগত কারণ নিহিত থাকে। তারপর এটি অন্যের সাহায্য সহযোগিতা পায়। যেমন দেশের প্রয়ােজনের তাগিদে আসে ইচ্ছা ও আকঙক্ষা। তখন সে অকাঙক্ষা সন্তুষ্টির জন্য বাস্তবরূপ লাভ করে।
জাতীয় জীবনে বিকাশ ও সমৃদ্ধি অর্জন করতে হলে সন্তোষ ও আকাঙক্ষা— এ দুয়ের মাত্রা বাড়াতে হবে। এ দুয়ের মাত্রা বাড়লেই জাতীয় বিকাশের পথ উন্মুক্ত হবে।
বিকল্প ১
ভাব-সম্প্রসারণ : জাতীয় জীবনে উন্নতি ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে সন্তোষ ও আকাঙ্ক্ষা দুয়েরই প্রয়োজন অনস্বীকার্য। জাতির প্রত্যাশা ও আকাঙ্ক্ষা থেকেই প্রণীত হয় পরিকল্পনা। সে পরিকল্পনা যথাসময়ে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হলে জাতীয় জীবনে সন্তুষ্টি আসে। মানুষ নতুন পরিকল্পনা নিয়ে নতুন কর্ম সম্পাদনে ব্রতী হয়। কিন্তু অতিরিক্ত সন্তুষ্টি যদি নতুন আকাঙ্ক্ষা জন্ম না দেয় তবে জাতীয় জীবন হয়ে পড়ে স্থবির, নিশ্চল। আবার জাতির আকাঙ্ক্ষা যদি সম্পদ ও সামর্থ্য নির্ভর না হয়ে বাস্তবতার সীমা অতিক্রম করে তবে তাও বাস্তবায়িত হয় না। ব্যর্থতা ও হতাশায় আচ্ছন্ন হয় জাতীয় জীবন।
সুপরিমিত সন্তোষ ও আকাঙ্ক্ষা জাতীয় অগ্রগতির পরিপূরক ও সহায়ক। যে কোন জাতি এগিয়ে চলে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে। সে লক্ষ্য অর্জনের জন্যে জাতিকে জীবনের নানা ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘস্থায়ী নানা পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণ করতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ে ধাপে ধাপে সে সব কাজ বাস্তবায়নের প্রয়োজন হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হলে তাতে পাওয়া যায় সন্তুষ্টি ও আনন্দ। এই সন্তুষ্টিই মানুষকে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ ও আগ্রহী করে তোলে। কিন্তু অতিরিক্ত সন্তুষ্টি এসে গেলে কাজের গতি হয়ে পড়ে মন্থর। এবং অতিরিক্ত সন্তুষ্টিবশত নতুন কাজে হাত দেওয়া না হলে, নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা না হলে অগ্রগতির ধারা ব্যাহত হয়। অর্জিত সফলতা আপাতত সন্তোষজনক প্রতীয়মান হলেও পরবর্তীকালের চাহিদা ও পরিস্থিতির প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ হয়। পরিণামে জাতি গভীর সংকটের মধ্যে পড়ে। তেমনি আকঙ্ক্ষার মাত্রা শক্তি-সামর্থে্যর তুলনায় অপরিসীম হলে লক্ষ্যে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে ওঠে। শত চেষ্টায়ও পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। ফলে জাতীয় জীবনে আসে চরম ব্যর্থতা ও হতাশাবোধ। তাতে কর্মশক্তি হয়ে পড়ে নির্জীব ও উদ্দীপনাহীন। এই অবস্থায় জাতির পক্ষে নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ সম্ভব হয় না। পরিণতিতে জাতীয় জীবন গভীর সংকটের মুখে পড়ে। তাই জাতীয় জীবনের অগ্রগতির লক্ষ্যে সন্তোষ ও আকাঙ্ক্ষা হওয়া উচিত সুপরিমিত। জাতির শক্তি-সামর্থ্য ও সম্পদ বিবেচনায় নিয়ে জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হলে সন্তোষ ও আকাঙ্ক্ষা পরিমিত পর্যায়েই থাকে। দুঃখের বিষয়, জাতীয় সামর্থ্য, শক্তি ও সম্পদকে বিবেচনায় না নিয়ে কেউ কেউ সস্তা বাহবার লোভে জাতিকে অতিরিক্ত সন্তোষ ও অতিরিক্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকা দরকার।
বিকল্প ২
ভাব-সম্প্রসারণ : সন্তোষ ও আকাক্ষা পরস্পর সাপেক্ষ। জাতীয় জীবনে দুটিরই প্রয়ােজন রয়েছে। তবে আতার শতাে কিংবা আকাঙ্ক্ষা জাতির জন্য বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রত্যেক জাতিরই জাতীয় ভিত্তিক কিছু আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে। সেই আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য প্রয়ােজনীয় উদ্যোগ ও কর্মপন্থা গ্রহণ করা হয়। তবে এ কর্মপন্থা ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় সম্পদ ও সামর্থ্যের ওপর ভিত্তি করে। সম্পদ ও সামর্থ্য কম হলে আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা সম্ভব হয় না। আবার সম্পদ ও সামর্থ্য চাহিদা অনুযায়ী থাকলে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা সহজেই পূরণ করা যায়। তখন জাতীয় জীবনে প্রাপ্তির পূর্ণতায় শান্তি ও স্বস্তি বিরাজ করে। কিন্তু আকাক্ষার তুলনায় সম্পদ কম হলে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। সম্পদ ও সামর্থ্যের তুলনায় আকাঙ্ক্ষা বেশি হলে সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য জাতি অবৈধ পথ ও পন্থা অবলম্বন করে নৈতিকতার পথ থেকে সরে দাঁড়ায়। ফলে জাতীয় জীবনে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। চাওয়া অনুযায়ী পাওয়ার অদম্য বাসনায় জাতি বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। জাতীয় জীবনে নেমে আসে মহা বিপর্যয়। অন্যদিকে, চাওয়া অনুযায়ী সব পাওয়া গেলে জাতির আকাঙ্ক্ষা কমে যায়। স্বাভাবিক কারণেই তখন জাতির মধ্যে পরম সন্তোষ বিরাজ করে। তবে সন্তোষের মাত্রা যদি বেশি হয়ে যায় তাহলে জাতির কর্মোদ্যম ও কর্মস্পৃহা হাস পেতে থাকে। কারণ অভাববােধ না থাকলে জাতি ভােগ-বিলাসে মত্ত হয়ে পড়ে। কাক্ষিত সুখ-সম্পদ পেয়ে নির্ভাবনায় বিলাসের স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়। ফলে অধিক প্রাপ্তির ক্ষমতা ও সম্ভাবনা থাকলেও জাতি নতুন উদ্যোগ ও কর্ম-প্রচেষ্টা গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। নিজের অজান্তেই জাতীয় জীবনে ঔদাসীন্য ও স্থবিরতা দেখা দেয়। জাতি কর্মবিমুখ ও কর্মবিমুখতার কারণে জাতীয় জীবনে পশ্চাৎপদতা শুরু হয় এবং একসময় জাতি গভীর সংকটে নিপতিত হয়। তাই জাতির জন্য অতিরিক্ত আকাঙ্ক্ষা যেমন ক্ষতিকর, তেমনি মাত্রাতিরিক্ত সন্তোষও কল্যাণকর নয়।
অতিরিক্ত চাওয়া কিংবা পাওয়া জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। পরিমিত চাওয়া-পাওয়ার মধ্যেই জাতীয় জীবনের কল্যাণ নিহিত।
বিকল্প ৩
মূলভাব : মানুষের জীবনে পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি ও সীমাহীন আকাঙ্ক্ষা কোনোটিই শুভ নয়। এ দুইয়ের মাত্রা বেড়ে গেলে জীবনে বিনাশ ও বিপর্যয় নেমে আসে।
সম্প্রসারিত ভাব : সীমাহীন অভাববোধ যেমন মানুষকে কখনো মানসিক শান্তি দিতে পারে না তেমনই পরিপূর্ণ সন্তুষ্টিবোধও মানুষের অধিকার সচেতন করতে পারে না। এ কথাটি ব্যক্তিজীবনের ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য তেমনই জাতীয় জীবনের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। কেননা মানুষের আকাঙ্ক্ষা বেড়ে গেলে অপ্রাপ্তি বেড়ে যায় আর অপ্রাপ্তি বেড়ে গেলে সমাজে আবির্ভাব ঘটে দুর্নীতি অন্যায় ও নানা ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপের। এ কারণে জাতীয় স্বার্থকে সবসময় ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। অনুরূপভাবে নিজেদের অবস্থান নিয়ে মানুষের মনে যদি সন্তোষবোধ বেড়ে যায় তাহলে সে আর নিজের উন্নতির চিন্তা করে না। ধীরে ধীরে সে নিজের অধিকার সম্পর্কে অসচেতন ও কর্মবিমুখ হয়ে পড়ে। আর জাতীয় ক্ষেত্রে এ সন্তুষ্টিবোধ অভিশাপস্বরূপ। কোনো জাতি যদি নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অসচেতন হয়ে পড়ে তবে সে জাতির উন্নতি সম্ভব নয় এবং অন্য কোনো জাতিগোষ্ঠী তাদের সন্তুষ্টির সুযোগ নিতে কুণ্ঠাবোধ করবে না। এ কারণে বৈশ্বিক অগ্রগতির প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গেলে কোনো বিষয়ে পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট হলে চলবে না। নিজেদের অবস্থানকে আরো বেশি সুদৃঢ় করার একটা প্রবণতা আমাদের থাকতে হবে। নিজের অধিকার, দেশের অধিকার আদায়ে সদা সচেতন থাকতে হবে। একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের ব্যক্তিজীবনের উন্নতি মানে সমাজের উন্নতি। আর সমাজের উন্নতি মানে দেশের উন্নতি। তাই পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট হয়ে আমরা নিজেদের এবং দেশের অগ্রগতিকে যেন বাধাগ্রস্ত না করি।
মন্তব্য : জীবনে অতিমাত্রায় আকাঙ্ক্ষা যেমন ভালো নয় তেমনই নিজের অধিকার সম্পর্কে অতিমাত্রায় উদাসীনতাও কাম্য নয়। কারণ এ দুটি জিনিস বেড়ে গেলে ব্যক্তিজীবনের ন্যায় জাতীয় জীবনেও বিনাশ অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়।
আরো পড়ুন: শৈবাল দিঘিরে বলে উচ্চ করি শির
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।