জানাযার নামাজ ফরজ (কিফায়া)। আমরা মুসলিম হিসেবে প্রত্যেক এর জানাযার নামাজের নিয়ম জানা জরুরি। এ নামাজ মুসল্লিদের জন্য সাওয়াব বর্ধন এবং মৃত ব্যক্তির জন্য সুপারিশ। জানাযায় লোক সংখ্যা বেশি হওয়া মুস্তাহাব এবং মুসল্লি সংখ্যা যত বাড়তে ততই উত্তম। তবে কাতার বেজোড় হওয়া উত্তম। জানাযার নামাজ মূলত মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার। জানাযার নামাজ পড়ার পদ্ধতি তুলে ধরা হলো:
- ১ম মত মৃত ব্যক্তিকে ক্বিবলার দিকে সম্মুখে রেখে মুসল্লিদের ও ইমাম দাঁড়ানো।
- মুসল্লীরা নামাজের অজুর ন্যায় অজু করে ইমামের পিছনে ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো।
- মৃত ব্যক্তি পুরুষ হলে ইমাম তার মাথার পাশে দাঁড়ানো। আর মহিলা হলে কফিনের মাঝ বরাবর দাঁড়ানো। মৃত ব্যক্তির মাঝ বরাবর দাঁড়ানোতে কোনো দোষ নেই।
- জানাযার নিয়ত করে চার তাকবিরের সহিত নামাজ আদায় করা।
- কাঁধ বা কানের লতি পর্যন্ত দু’হাত উত্তোলন করে আল্লাহু আকবার বলে নিয়ত বাঁধা।
- অন্যান্য নামাজের ন্যায় ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা।
- ছানা পড়া (কেউ কেউ সুরা ফাতিহা পড়ে অন্যান্য সুরা মিলানোর কথা উল্লেখ করেছেন।)
- ২য় তাকবিরের পর দরূদে ইবরাহিম পড়া।
- ৩য় তাকবির দিয়ে ইখলাসের সঙ্গে হাদিসে বর্ণিত দোয়াসমূহের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা।
- ৪র্থ তাকবির দিয়ে যথাক্রমে ডানে ও বামে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে জানাযার নামাজ শেষ করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মৃত ব্যক্তির মাগফিরাত কামনায় এবং নিজেদের সাওয়াব বৃদ্ধিতে সুন্দরভাবে জানাযার নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন, আমিন।
আরেকভাবে জানাযার নামাজের নিয়ম বা পদ্ধতি
জানাযার নামাজেরনিয়ত নিন্মরূপঃ
نويت أن أؤذى يله تعا لي أربع تكبيرات صلوة الجنازة فرض الكفاية والثنا ء يله تعا لي والصلوة على النّبي والدعاء لهذا التيت إقتديت بهذالإمام متوجها إلى جهة الكعبة الشر يفة الله اكبر
উচ্চারণঃ নাওয়াইতুয়ান উয়াদ্দিয়া লিল্লাহি তাআ’লা আরবা’য়া তাকবীরাতি ছালাতিল জানাযাতি ফারদুল কিফায়াতি আছছানাউ লিল্লাহি তাআ’লা ওয়াছ সালাতু আলান্নাবীয়্যি ওয়াদ দুয়াউ লিহাযাল মাইয়িতি এক্তাদাইতু বিহা-যাল ইমাম মোতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।
নিয়তে তাকবীরে তাহরিমা অর্থাৎ, আল্লাহু আকবার বলার পর হাত তুলে তারপর অন্যান্য নামাজের মতো হাত বেঁধে নিতে হবে। হাত বেধে সানা পড়তে হবে।
নিয়তের পর ১ম তাকবীর বলবে, তারপর ছানা পড়বেঃ
سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك وجل ثناءك ولا اله غيرك
উচ্চারণঃ সুবহা-নাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা, ওয়া জাল্লা ছানাউকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুকা।
অর্থঃ হে আল্লাহ আমরা তোমার পবিত্রতার গুণগান করিতেছি। তোমার নাম মঙ্গলময় এবং তোমার সম্মান ও মর্যাদা অতি শ্রেষ্ঠ, তোমার জন্য প্রশংসা, তুমি ব্যতীত আর কেহই উপাস্য নাই।
ছানার পর ২য় তাকবীর বলবে, তারপর দরুদে ইব্রাহীম পড়বে:
اللهم صل على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد – اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد كما باركت علىحمید مجید
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।
অর্থঃ যে আল্লাহ! মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর ঐরূপ রহমত অবতীর্ণ কর যেইরূপ রহমত হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এবং তাহার বংশধরগণের উপর অবতীর্ণ করিয়াছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ভাজন এবং মহামহিম। হে আল্লাহ! মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাহার বংশধরগণের উপর সেইরূপ অনুগ্রহ কর যে রূপ অনুগ্রহ ইব্রাহীম (আঃ) এবং তাঁহার বংশরগণের উপর করিয়াছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ভাজন এবং মহামহিম।
দরুদে ইব্রাহীমের পর ৩য় তাকবীর বলবে, তারপর মৃত ব্যক্তির জন্য দু’আ পড়বেঃ
الهم اغفر لحينا وميتنا وشاهدنا وغائبنا وصغيرنا وكبيرنا وذكرنا وأنثانا اللهم من أحييته منا فأخيه على الإسلام ومن توفيته منا فتوفه على الإيمان برحمتك يا أرحم الراحمين
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যিনা ওয়া মায়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা ওয়া ছাগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলাম, ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ ফাহু আলাল ঈমান, বিরাহমাতিকা ইয়া আর হামার রাহিমীন।
অৰ্থঃ হে আল্লাহ্ আমাদের জীবিত ও মৃত উপস্থিত ও অনুপস্থিত বালক ও বৃদ্ধ পুরুষ ও স্ত্রীলোকদিগকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ আমাদের মধ্যে যাহাদিগকে তুমি জীবিত রাখ তাহাদিগকে ইসলামের হালতে জীবিত রাখিও। আর যাহাদিগকে মৃত্যু মুখে পতিত কর। তাহাদিগকে ঈমানের সাথে মৃত্যু বরণ করাইও। হে পরম করুণাময় ও দয়ালু!।
মাইয়্যিত যদি নাবালক ছেলে হয় তবে নিচের দু’আ পড়বেঃ
اللهم اجعله لنافرقا وجعله لنا اجرا وذخرا وجعله لنا شا فعا ومشفعا
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাজ আল হুলানা ফারতাও ওয়াজ আল হুলানা আজরাও ওয়া যুখরাও ওয়াজ আল হুলানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফফায়ান।
অর্থঃ হে আল্লাহ! উহাকে আমাদের জন্য অগ্রগামী কর ও উহাকে আমাদের পুরস্কার ও সাহায্যের উপলক্ষ কর এবং উহাকে আমাদের সুপারিশকারী ও গ্রহনীয় সুপারিশকারী বানাও।
See More: 101+ শুভ দুপুরের শুভেচ্ছা ও ছবি
মাইয়্যিত যদি নাবালেগা মেয়ে হয় তবে নিচের দু’আ পড়বে:
اللهم اجعلها لنا فرطا واجعلها لنا آجا ،ذجا الجعلها شافعة ومسقعة
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাজ আল হা-লানা ফারতাও ওয়াজ আল হা-লানা আজরাও ওয়া যুখরাও ওয়াজ আল হা-লানা শাফিআতাউ ওয়া মুশাফফায়াহ্।
অর্থঃ হে আল্লাহ! ইহাকে আমাদের জন্য অগ্রগামী কর ও ইহাকে আমাদের পুরস্কার ও সাহায্যের উপলক্ষ কর। এবং ইহাকে আমাদের সুপারিশকারী ও গ্রহনীয় সুপারিশকারী বানাও।
মৃত ব্যক্তির জন্য দু’আর পর ৪র্থ তাকবীর বলবে, তারপর সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবে। যাদের জানাযার দোয়াটি জানা নেই, তাদের জন্য রয়েছে সহজ ও ছোট্ট একটি দোয়া।
اللهم اغفر المؤمناتو للمؤمنين
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাগফিরলিল মু’মিনিনা ওয়াল মু’মিনাত।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি মুমিন নারী-পুরুষ উভয়কে ক্ষমা করে দিন।
- জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম
- জানাজার নামাজ পড়ার নিয়্যত, নিয়ম এবং দোয়া
- জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ত
আরেকটি জানাযার নামাজের পদ্ধতি বা নিয়ম
আমাদের ইসলাম ধর্মে জানাজার নামাজের গুরুত্ব অনেক অনেক বেশি। মৃতের মাগফিরাতের জন্য কাফন-দাফন ও জানাজা ইত্যাদি সম্পন্ন করা জীবিত মুসলিমদের ওপর মৃতের অধিকার। শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি অবশ্যিক পালনীয় ফরজ কেফায়া। তাই কোনো মুসলমান মারা গেলে, তার জানাজা অবশ্যই আমাদেরকে অবশ্যয় আদায় করতে হবে।
জানাজার নামাজ মূলত মৃত ব্যক্তির জন্য মাগফিরাত ও দোয়া। একসঙ্গে পড়া যায় একাধিক মৃতের জানাজা। এলাকার ইমাম জানাজা পড়ানোর ক্ষেত্রে বেশি হকদার। এরপর মৃতের ওলি বা আত্মীয়-স্বজন। তবে ওলি-আত্মীয় ইমামের চেয়ে বেশি দ্বীনদার হলে তার-ই বেশি হক।
কাউকে জানাজা পড়ানোর জন্য মৃত অসিয়ত করে গেলে, তা কার্যকর করা জরুরি নয়। একান্ত প্রয়োজনে পুরুষের অনুপস্থিতিতে নারীরাও জানাজা পড়াতে পারবেন। (খুলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/২২২, আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/২৩৮)
লাশের প্রকারভেদে করণীয়
মৃতের প্রকারভেদে শরিয়তে বিভিন্ন নিয়ম রয়েছে। মাথাহীন লাশের বেশির ভাগ পাওয়া গেলে বা মাথাসহ অর্ধেক শরীর পাওয়া গেলে তার গোসল, কাফন ও জানাজা সবই করতে হয়। আর মাথাহীন অর্ধেক বা তার চেয়ে কম অংশ পাওয়া গেলে এসব করতে হয় না। বরং কোনো কাপড়ে পেঁচিয়ে মাটির নিচে পুঁতে রাখতে হয়। আর মৃত নাস্তিক-মুরতাদের গোসল-জানাজা ছাড়াই গর্ত করে কবরস্থ করতে হয়। (ফাতাওয়া শামি, খণ্ড : ৩, পৃষ্ঠা : ৯২)
কোনো নারী যদি সতীত্ব রক্ষা করতে গিয়ে আত্মহত্যা করেন, তাহলে তাকে শহীদ হিসেবে গণ্য করা হবে না। তবে দুশ্চরিত্র ও বখাটের হাতে নিহত নারী শহীদের মর্যাদা লাভ করবেন। কেউ আত্মহত্যা করলে সাধারণ মুসলমানের নিয়মে তারও গোসল, কাফন-জানাজা ও দাফন করতে হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭২)
জানাজার ফরজ-সুন্নত
জানাজার নামাজের ফরজ দুইটি। এক. চারবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলা। দুই. দাঁড়ানো। জানাজা সহিহ হওয়ার জন্য লাশ উপস্থিত থাকা শর্ত।
জানাজার সুন্নত তিনটি। এক. আল্লাহর হামদ ও সানা পড়া। দুই. নবীজি (সা.)-এর ওপর দরুদ পড়া। তিন. মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা। (ইলাউস সুনান : ৮/১৭৪)
জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম
জানাযা নামাজ পড়ার পদ্ধতি হলো- জানাজার নামাজ আদায়ের আগে মৃতকে কিবলার দিকে জমিনে রাখতে হবে। ইমাম তার বক্ষ বরাবর দাঁড়াবেন। এরপর জানাজার নিয়ত করতে হবে। নিয়ত মনে মনে করলেই যথেষ্ট। মুখে আলাদা করে উচ্চারণ করতে হয় না; তবে কেউ করলে অসুবিধা নেই।
তাকবির বলে উভয় হাত কান পর্যন্ত ওঠাতে হয়। এরপর নাভির নিচে হাত বেঁধে সানা (নামাজের) পড়তে হয়। তবে সানার মধ্যে ‘ওয়া তাআলা জাদ্দুকা’-এর পর ‘ওয়া জাল্লা সানাউকা’ও পড়তে হয়। এরপর তাকবির বলে দরুদে ইবরাহিম পড়তে হয়। তারপর তাকবির বলে নির্দিষ্ট দোয়া পড়তে হয়। চতুর্থ তাকবির বলে ডানে-বাঁয়ে সালাম ফেরাতে হয়।
লক্ষণীয় যে, কেউ যদি ইমাম চতুর্থ তাকবির বলার পর সালাম ফেরানোর আগ মুহূর্তেও তাকবির বলতে পারেন, তাহলে সে জানাজা পেয়েছে বলে গণ্য হবে। আর কেউ দেরি করে ফেললে তখন লাশ উঠিয়ে নেওয়ার আগে সানা, দরুদ ও দোয়াসহ তাকবির বলে সালাম ফেরাতে পারলে, তা-ই করে নিতে হবে। যদি লাশ উঠিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা হয়, তাহলে শুধু তিন তাকবির বলে সালাম ফিরিয়ে নেবে। (রদ্দুল মুহতার : ৩/১১৬)
See More: অহংকার নিয়ে কোরআন ও হাদিস উক্তি
- জানাজার নামাজ পড়ার সঠিক নিয়ম
- জানাজার নামাজের দোয়া
- জানাজার নামাজ কিভাবে পড়তে হয়
- জানাজার নামাজের আরবি নিয়ত
- জানাজার নামাজের বাংলা নিয়ত
- লাশ কবরে রাখার দোয়া
জানাজার নামাজের ইমামতির নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اُؤَدِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ تَكْبِيْرَاتِ صَلَوةِ الْجَنَا زَةِ فَرْضَ الْكِفَايَةِ وَالثَّنَا ءُ لِلَّهِ تَعَا لَى وَالصَّلَوةُ عَلَى النَّبِىِّ وَالدُّعَا ءُلِهَذَا الْمَيِّتِ اِقْتِدَتُ بِهَذَا الاِْمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ
নিয়তের বাংলা উচ্চারণ: “নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহে তায়ালা আরবা আ তাকবীরাতে ছালাতিল জানাজাতে ফারজুল কেফায়াতে আচ্ছানাউ লিল্লাহি তায়ালা ওয়াচ্ছালাতু আলান্নাবীয়্যে ওয়াদ্দোয়াউ লেহাযাল মাইয়্যেতে এক্কতেদায়িতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতে আললাহু আকবার।”