প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
ভাবসম্প্রসারণ: জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর
স্রষ্টার সৃষ্টির মধ্যে মনুষই সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। বিভিন্ন সমাজের মানুষ বিভিন্নভাবে স্রষ্টার আরাধনা করিয়া থাকে। আরাধনার পদ্ধতিতে মহাব্যবধান দেখা যায়। কিন্তু ইহার উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন এবং তাহা হইতেছে সৃষ্টিকর্তার সন্তষ্টি বিধান। পৃথিবীতে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন মনিষীর আবির্ভাব হইয়াছে। বিভিন্ন ধর্মের অবতারণা হইয়াছে এবং আরাধনার বিভিন্ন প্রকৃতি ও পদ্ধতি অনুসরণ করা হইয়াছে। স্রষ্টাকে পাওয়ার বা স্রষ্টার সন্তুষ্টি বিধানই সবার একমাত্র উদ্দেশ্য। এতদৃসত্ত্বেও সাধারণ মানুষের পক্ষে স্রষ্টার প্রকৃত অস্তিত্ব আবিষ্কার সম্ভব হয়। কারণ নিরাকার, অক্ষয়, অব্যয় সৃষ্টিকর্তা চিরদিন আমাদের সংস্পর্শের বাহিরে, তাই আমরা নানাভাবে নানা জায়গায় তাহার সন্ধানে ঘুরিয়া বেড়াই সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়া।
পৃথিবীর মধ্যযুগের সকল মনীষী ও ধর্মগুরু এই বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেন যেই, স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভের জন্য দেশ দেশান্তরে যাওয়ার প্রয়োজন নাই। স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রতিটি সৃষ্ট জীবের মধ্যেই নিহিত রহিয়াছে। সুতরাং সৃষ্টির সেবায় যিনি নিজকে সম্পূর্ণরূপে উৎসর্গ করিতে পারেন, তিনিই স্রষ্টার নৈকট্য লাভে সক্ষম হন। যে ব্যক্তি প্রতিনিয়ত আর্তক্লিষ্ট ও নিপীড়িত মানবতার সেবায় নিজেকে বিলাইয়া দিতে সক্ষম হইয়াছেন, তিনিই প্রকৃতপক্ষে স্রষ্টার সর্বশ্রেষ্ঠ উপাসক ও সাধক। সেই কারণে বলা হইয়া থাকে-
He prayeth best who loveth best,
All things both great and small.
এই ভাবসম্প্রসারণটি অন্য বই থেকেও সংগ্রহ করে উপস্থাপন করা হলো বিকল্প ১
মূলভাব: প্রতিটি জীবের মধ্যেই (God) ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিদ্যমান। তাই জীবের প্রতি প্রেম শ্রেষ্ঠতম ইবাদত।
সম্প্রসারিত ভাব: বিভিন্ন সমাজের মানুষ বিভিন্ন উপায়ে ঈশ্বরের বা স্রষ্টার উপাসনা করে। সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য এ অবিরাম প্রচেষ্টা মানুষকে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন ধর্মের উপাসনা পদ্ধতি অনুসরণ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের পক্ষে ঈশ্বরের প্রকৃত স্বরুপ বুঝতে পারা খুবই কঠিন। জগতে মনীষী ও ধর্মগুরুগণ সকলেই এ বিষয়ে একমত যে, ঈশ্বরের নৈকট্য লাভের জন্য বহু দূরে যাওয়ার প্রয়ােজন নেই।
সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব তার সৃষ্ট জীবগুলাের মধ্যেই রয়েছে বলে আমাদের তার সৃষ্ট জীবের সেবায় আত্মনিয়ােগ করতে হবে। যে লোক সব সময় আর্ত-ক্লিষ্ট ও পীড়িত মানবতা ও জীবের সেবায় রত, তিনিই ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সেবক ও ইবাদাতকারী। কেননা, অসহায়কে সাহায্য ও সহযােগিতা করলে প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরেরই সেবা করা হয়, ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্তের মুখে অন্ন ও পানীয় তুলে দিলে সৃষ্টিকর্তারই সন্তুষ্টি বিধান করা হয়। এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ উপাসনা বা ইবাদাত পদ্ধতি এ জগতে আর নেই।
মন্তব্য:সৃষ্টির ভেতর দিয়েই স্রষ্টার প্রকাশ, তাই তার সৃষ্ট জীবকে সেবা করলে প্রকারান্তরে তাকেই সেবা করা হয়।
বিকল্প ২
মূলভাব : স্রষ্টার সন্তুষ্টি বিধানের একমাত্র পথ হচ্ছে তার সৃষ্ট জীবকে ভালােবাসা।
সম্প্রসারিত ভাব : এ পৃথিবীর সব কিছুই নিরন্তর নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে যাচ্ছে। মানুষের প্রধানকর্তব্য হচ্ছে স্রষ্টার উপাসনা করা। বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন উপায়ে স্রষ্টার উপাসনা করা যায়। তন্মধ্যে স্রষ্টাকে পাওয়ার শ্রেষ্ঠপথ তার সৃষ্ট জীবকে ভালােবাসা। মানুষকে ভালােবাসার মাধ্যমে স্রষ্টাকে উপলব্ধি সহজতর হয়। প্রত্যেক সৃষ্টির মধ্যেইআল্লাহ বিরাজমান। এ সত্য প্রত্যেক মহাপ্রাণ মনীষী, ধর্মপ্রবর্তক, লােকহিতৈষী একবাক্যে স্বীকার করেছেন। বিধাতা গভীর।ভালােবাসায় এই সুবিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন। বিশ্বের সৃষ্টির মধ্যে যা কিছু রয়েছে তার প্রতি ভালােবাসা প্রকাশকরলে সৃষ্টিকর্তা মানুষের প্রতি খুশি হন। জীবের প্রতি ভালােবাসার পথ ধরেই স্রষ্টাকে খোঁজ করার নির্দেশনা রয়েছে।ধর্মীয়ভাবে। তাই মানুষের প্রথম কর্তব্য জীবে দয়া করা। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, ‘জীব সেবাই ঈশ্বর সেবা। তাই জীব সেবা বাদ দিয়ে যদি কেউ ঈশ্বরের সেবা করতে যায়, ঈশ্বর তাতে সন্তুষ্ট হতে পারে না। মহামানবদের মুখ নিঃসৃত বাণী-
মানুষকে সেবা করা, সাহচর্য দেওয়া ও ভালােবাসা হচ্ছে শ্রেষ্ঠ ধর্ম। যার শুভাশিসে সৃষ্টি ধন্য, এ জগৎ পরিব্যাপ্ত , জীব সেবা
যে তারই সেবা।
মন্তব্য : সৃষ্টির ভেতর দিয়েই স্রষ্টার প্রকাশ, তাই তাঁর সৃষ্ট জীবকে সেবা করলে প্রকারান্তরে তাকেই সেবা করা হয়।
আরো পড়ুন: সুশিক্ষিত লােকমাত্রই স্বশিক্ষিত
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।