জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব - ভাবসম্প্রসারণ

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব ভাবসম্প্রসারণ

ভাব-সম্প্রসারণ :জ্ঞান না থাকলে বুদ্ধি আসে না আর বুদ্ধি ছাড়া মুক্তি আসতে পারে না।

মানুষের জ্ঞান তার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। মানুষের এ সম্পদের কোন বিনাশ নেই। এ সম্পদ মানুষকে বুদ্ধির গভীরে প্রবেশের পথ খুলে দেয় এবং তখন মানুষ অতি সহজেই তার মুক্তির পথ খুঁজে নিতে পারে। বলা হয় . জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান । পশুর সাথে মানুষের পার্থক্য হল মানুষের বুদ্ধি ও বিবেক আছে আর পশুর বুদ্ধি ও বিবেক নেই। জ্ঞানহীন মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিগুলো সঠিকভাবে বিকশিত হয় না। আর হয় না বলেই সে আপনার ভালোমন্দ, ন্যায় অন্যায় সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করতে পারে না। জ্ঞান আর বুদ্ধির এ সীমাবদ্ধতাহেতু তাকে প্রতিনিয়ত প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, জ্ঞানবান ব্যক্তি তার যুক্তির নিরিখে অনেক কঠিন বিষয়কেও নিজের জন্য এবং অপরের জন্য সহজতর করে ধরে তুলতে পারেন। এ কথাটি ব্যক্তির জীবনে যেমন সত্য, তেমনি জাতির জীবনেও সত্য। কোন জাতির লোকেরা যদি জ্ঞানের চর্চা না করে তাহলে সে জাতি কোন দিন উন্নতি করতে পারে না। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। জাতীয় জীবনে জ্ঞানচর্চার উপযুক্ত পরিবেশ না পেলে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটানোর সুযোগ সীমিত হয়ে আসে। তখন অনেক মেধার অপচয় হয়। কোন জাতি যখন মেধার এ অপচয় রোধ করে জ্ঞান ও মেধার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে, তখন সে জাতির মুক্তি ও উন্নতি নিশ্চিত। অন্যথায় তাদের পিছিয়ে পড়া ছাড়া কোন পথ নেই। তাছাড়া পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালেও আমরা এর সত্যতা দেখতে পাই।

তাই জাতীয় মুক্তি ও অগ্রগতির পূর্বশর্ত জনগণের বুদ্ধিবৃত্তিকে বিকাশ। এর জন্য চাই জ্ঞানের চর্চা ও গুণীর কদর। এটা যত ব্যাপক হবে জাতীয় মুক্তি ও অগ্রগতিও ততই ত্বরান্বিত। 

বিকল্প ১

ভাব-সম্প্রসারণ : জ্ঞান-বিজ্ঞানের আসল উদ্দেশ্য মানুষকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে গুণে-মানে পরিপূর্ণ করে তোলা। আর তা সম্ভব হলেই একজন মানুষ প্রকৃত মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আর জাতি হিসেবে মানুষ উঠে যায় উন্নতির শিখরে। এর প্রভাবেই নানা ধরনের কুসংস্কার, জড়তা ও হীনতা থেকে মুক্ত হয়ে শক্তিশালী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে বিশ্বের দরবারে । আর এই জ্ঞান যদি সীমাবদ্ধ হয়ে যায় পুঁথি-পুস্তক কিংবা সংকীর্ণ চিন্তা-চেতনায়, তবে বুদ্ধি-বিবেক সেখানে আড়ষ্ট হয়ে পড়ে এবং সামগ্রিক মুক্তি সেখানে হয় সুদূর পরাহত। এ জন্যই মুক্তবুদ্ধির চর্চার মধ্য দিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানকে সীমাবদ্ধ না রেখে যারা উদারভাবে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয় তারাই সমাজের আদর্শ মানুষ হিসেবে পরিপূর্ণ মর্যাদা লাভ করেন। মুক্ত জ্ঞানের চর্চার মাধ্যমেই জাতি পেতে পারে সঠিক পথের সোনালি ভবিষ্যৎ। আজকে যে জাতি যত উন্নত, সে জাতির উন্নতির মূলে রয়েছে অসীম জ্ঞান শিক্ষার তৃষ্ণা। ফলে তারা কূপমণ্ডুক না হয়ে, বুদ্ধির আড়ষ্টতায় জড়িয়ে না গিয়ে মুক্তির সোপানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন স্বমহিমায়। আমরা জানি, জ্ঞানশক্তির বিকাশ ঘটিয়েই কোনো ব্যক্তি জাতীয় উন্নতিতে অংশগ্রহণ করতে পারে। তাই প্রকৃত জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজন উদার শিক্ষানীতি, যা বুদ্ধি ও বিবেকের আড়ষ্টতা থেকে রক্ষা করবে মানুষকে এবং জাতিকে এনে দেবে কাঙ্ক্ষিত মুক্তির সোনালি অধ্যায়। জ্ঞানের সাধনা মূলত আড়ষ্টতাহীন মুক্তিরই সাধনা। তাই সীমাবদ্ধ কিংবা লোক দেখানো জ্ঞান অর্জন না করে প্রকৃত জ্ঞান অর্জনই সকলের কাম্য হওয়া উচিত। এই লক্ষ্যে অগ্রসর হলে দেশের ভেতর আবির্ভাব ঘটবে মনীষী বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞানী, ডাক্তারসহ নামিদামি গুণী মানুষের। যাঁরা দেশ, জাতি ও বিশ্বকে দেখাতে সক্ষম হবে প্রকৃত মুক্তির পথ। আত্মপরিচয়ে বলীয়ান হয়ে উঠতে সক্ষম হবে সমগ্র মানবজাতি। আসলে প্রকৃত সম্মান ও মর্যাদা অর্জনের জন্য উদার জ্ঞানচর্চা ও মুক্ত বুদ্ধির সাধনাই একমাত্র পথ । আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে হলে, প্রকৃত মুক্তি পেতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।

বিকল্প ২

মূলভাব: মানুষের নিজের ও সমাজের কল্যাণ এবং মুক্তি সাধনে জ্ঞানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু জ্ঞানের স্বাভাবিক বিকাশ যেখানে রুদ্ধ হয়, বুদ্ধির বিকাশও সেখানে অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে সেখানে মুক্তির পথও রুদ্ধ হয়ে যায়।

সম্প্রসারিত ভাব: মানব সভ্যতার অভাবনীয় উন্নতির পেছনে রয়েছে মানুষের জ্ঞান – জিজ্ঞাসা। জগৎ ও জীবনের রহস্য অনুসন্ধান করতে গিয়েই মানুষ উত্তরোত্তর আবিষ্কার করে চলেছে নতুন নতুন জিনিস, উৎপাদন করেছে নতুন নতুন কৃষিজাত ও শিল্পজাত পণ্য। আর এসবের নতুন নতুন উপযোগিতা সৃষ্টির মধ্য দিয়ে নিজের ও সমাজের প্রভূত কল্যাণ সাধন করে যাচ্ছে। অন্যদিকে জ্ঞানকে পুঁজি করে দেশে দেশে, কালে কালে মানুষ শিল্প সংস্কৃতির চর্চা করে যাচ্ছে। আর শিল্প-সংস্কৃতির চর্চার মধ্য দিয়ে মানুষ মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, ভালোলাগা-ভালোবাসার রহস্য উদঘাটনে নিয়োজিত থাকছে। এতে করে মানুষের দুঃখ-কষ্ট প্রশমন এর মধ্য দিয়ে আত্মিক কল্যাণ সাধিত হচ্ছে। মানুষ জীবন বাস্তবতাকে সহজে মেনে নিতে পারছে। অন্যদিকে পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন কালে নানারকম অশিক্ষা, কুশিক্ষা, অন্ধ বিশ্বাস এবং নানা রকম ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কার জ্ঞানের স্বাভাবিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে। আর সেই সমাজে জ্ঞান সীমাবদ্ধ অর্থাৎ জ্ঞান বিকাশের সুযোগ নেই, সেখানে বুদ্ধিও আড়ষ্ঠ হয়ে পড়ে। ফলে সে সমাজের মানুষগুলোকে অন্ধকারে এই দিনাতিপাত করতে হয়; মুক্তির স্বাদ লাভ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এই একবিংশ শতাব্দীতে অনেক সমাজের মানুষ বিশ্বাস করে যে, ডায়রিয়া- আমাশয় হলো ওলাবিবি নামক দৈত্যের কুদৃষ্টির ফল; অনেক সমাজের মানুষ মনে করে যে শুভ দিন-ক্ষণ না দেখে কোন কাজে নামলে শত চেষ্টার পরও সে কাজে সফলতা লাভ করা যায় না। আবার অনেক রক্ষণশীল পরিবারের লোকেরা মনে করে যে, মেয়েদের স্কুল -কলেজে গিয়ে শিক্ষা লাভ করা ধর্মীয় অনুশাসনের পরিপন্থী। কিন্তু এগুলো বুদ্ধির দ্বারা সমর্থিত কিনা তা মানুষ যাচাই করে দেখে না।

মন্তব্য: প্রত্যক্ষণ ও যাচাই ছাড়া কোনো কিছুকে গ্রহণ বা বর্জন করা উচিত নয়। যে সমাজের মানুষ জ্ঞান- বুদ্ধি দিয়ে যাচাই না করে, কেবল অন্ধ বিশ্বাস ও অযৌক্তিক ধারণার ভিত্তিতে গ্রহণ কিংবা বর্জন করে, সেই সমাজের মানুষের পক্ষে বুদ্ধির বিকাশ সাধন কিংবা মুক্তির স্বাদ গ্রহণ সম্ভব নয়।

বিকল্প ৩

মূলভাব: জ্ঞান মানুষের সঞ্জিবনী শক্তি। এ শক্তির বলে বলীয়ান মানুষ নিজের এবং সমাজের কল্যাণ ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়। কিন্তু জ্ঞান চর্চা বা অর্জনের সুযোগ যেখানে নেই সেখানে বুদ্ধির বিকাশ অসম্ভব হয়ে পড়ে, ফলে রুদ্ধ হয়ে যায় মুক্তির পথ।

ভাবসম্প্রসারণ : মানুষ চায় তার জ্ঞান দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, মেধা দিয়ে বিশ্বের সব ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করতে। কিন্তু জ্ঞান অর্জন ও তার প্রয়ােগ যদি সীমাবদ্ধ পরিসরে হয়, কিংবা জ্ঞান অর্জন যদি বাধাগ্রস্ত হয়, অথবা মেধা বিকাশের সুযােগ যদি সৃষ্টি না হয় তবে মানুষ হয়ে পড়ে ভাগ্যের হাতের ক্রীড়ানক। কাজেই জ্ঞান মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। এ সম্পদের কোনাে বিনাশ নেই। এ সম্পদ মানুষকে বুদ্ধির গভীরে প্রবেশের পথ খুলে দেয় এবং তখন মানুষ অতি সহজেই তার মুক্তির পথ খুঁজে নিতে পারে। বলা হয়, জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান। পশুর সাথে মানুষের পার্থক্যহলাে মানুষের বুদ্ধি ও বিবেক আছে আর পশুর বুদ্ধি ও বিবেক নেই। জ্ঞানহীন মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিগুলাে বিকশিত হয় না আর হয় না বলেই সে আপনার ভালাে-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করতে পারে না। জ্ঞান আর বুদ্ধির এ সীমাবদ্ধতাহেতু তাকে প্রতিনিয়ত প্রতিকূল পরিস্থিতির মােকাবেলা করতে হয়। অনেক দেখা যায়, জ্ঞানবান ব্যক্তি তার যুক্তির নিরিখে অনেক কঠিন বিষয়কেও নিজের জন্য এবং অপরের জন্য সহজ ধরে তুলতে পারে। এ কথাটি ব্যক্তির জীবনে যেমন সত্য, তেমনি জাতির জীবনেও সত্য। কোনজাতির লােকেরা যদি জ্ঞানের চর্চা না করে তাহলে সে জাতি কোনাে দিন উন্নতি করতে পারে না। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত তত বেশি উন্নত। জাতীয় জীবনে জ্ঞানচর্চার উপযুক্ত পরিবেশ না পেলে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটানোত সীমিত হয়ে আসে। তখন অনেক মেধার অপচয় হয়। কোনােজাতি যখন মেধার এ অপচয় রােধ করে জ্ঞানের ঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে, তখন সে জাতির মুক্তি ও উন্নতি নিশ্চিত। অন্যথায় তাদের পিছিয়ে পা কোনাে পথ নেই। তাছাড়া পৃথিবীর উন্নত দেশগুলাের দিকে তাকালেও আমরা এর সত্যতা দেখতে পাই। তাই মুক্তি ও অগ্রগতির পূর্বশর্ত জনগণের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ। এর জন্য জ্ঞানের চর্চা ও গুণীর কদর। যত ব্যাপক হবে জাতীয় মুক্তি ও অগ্রগতিও ততই ত্বরান্বিত হবে। কেননা জ্ঞান না থাকলে বুদ্ধি আসে না আর বুদ্ধি ছাড়া মুক্তি পারে না।

মন্তব্য: নির্বোধ জাতি কখনাে স্বাধীনতার স্বাদ পায় না, পরাধীনতার অন্ধকার প্রকোষ্ঠেই কাটে তাদের এইসব দিনরাত্রি।

বিকল্প ৪

জ্ঞান যদি উদারতাপূর্ণ না হয়, বুদ্ধি তাহলে আড়ষ্ট হতে বাধ্য। আর এ ধরনের পরিস্থিতিতে জ্ঞান ও চিন্তার মুক্তি কোনােক্রমেই সম্ভব নয়। জ্ঞান মানবজীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। কথিত আছে, জ্ঞানহীন মানুষ পশুর সমান। জ্ঞান না থাকলে মানুষ আর পশুতে পার্থক্য থাকে না। মানুষ সৃষ্টির সেরা কারণ মানুষের বিবেক-গান-বুদ্ধি আছে। জ্ঞানের আলােয় মানুষের হৃদয় আলােকিত হয়। এ আলােকিত হৃদয়ে মানুষের পথ চলা সহজ হয়। বাহ্যিক দৃষ্টিতে মানুষ ও পাখির মধ্যে তেমন কোনাে পার্থক্য নেই। কেবল জ্ঞানই মানুষ ও পশু-পাখির মধ্যে পার্থক্যের সৃষ্টি করে, যা মানুষকে প্রাণপণ চেষ্টায় অর্জন করতে হয়। পশু-পাখির জ্ঞানার্জনের চেষ্টা বা আবশ্যকতা কোনােটাই নেই। এজন্য বলা হয়ে থাকে, পশু-পাখি সহজেই পশু-পাখি। কিন্তু মানুষ প্রাণপণ চেষ্টায় মানুষ। মানুষকে তার মনুষ্যত্ব অর্জন করে নিতে হয়। আর জ্ঞানের সাধনা না করলে মনুষ্যত্ব অর্জন করা যায় না। কেবল জ্ঞানই পারে মানুষের সব ধরনের মঙ্গল তথা কল্যাণসাধন করতে। একমাত্র জ্ঞানই পারে মানুষের বিবেক, বুদ্ধি ও চিন্তার বিকাশ ঘটাতে। অন্যদিকে, বুদ্ধির যদি বিকাশ না ঘটে তাহলে হৃদয় হয়ে পড়ে সংকীর্ণ তথা আবদ্ধ। জ্ঞানের প্রসারতা ছাড়া সাংস্কৃতিক অগ্রগতি, শিক্ষার বিকাশ, সভ্যতার অগ্রগতি, আত্মােন্নতি, সামাজিক চিন্তাসহ কোনাে অগ্রগতিই সম্ভব নয়। জ্ঞান মানুষকে আলােকিত করে। আর এই আলােয় আমাদের সকল সংকীর্ণতা ও সীমাবদ্ধতা দূরীভূত হয়। আমরা আপন করে নিতে পারি জগৎকে, মানুষকে। সবাই হয়ে উঠতে পারি একই পরিবারের সদস্য। বস্তুত মানুষের যা কিছু অসম্পূর্ণতা, অশিক্ষা, মূর্খতা, অজ্ঞানতা- সবই জ্ঞানের আলােয় মুক্তি লাভ করতে সক্ষম।

বিকল্প ৫

অন্যান্য প্রাণীর সাথে মানুষের প্রধান পার্থক্য কেবল চিন্তা ও বুদ্ধিতে। আদিকাল থেকে মানুষ তার চিন্তাশক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিকে কাজে লাগিয়ে নানা প্রতিকূল পরিবেশ থেকে নিজেকে রক্ষা করে এসেছে। জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে মানুষ বর্তমানে সভ্য জাতিতে পরিণত হয়েছে। নিজ বুদ্ধির মাধ্যমে মানুষ নানা যন্ত্রপাতি আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছে। এতে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা হয়েছে সহজ। যে মানুষ জ্ঞানচর্চা করে না, সমাজের নানা সংস্কার, সংকীর্ণতা ও সীমাবদ্ধতা এসে তাকে আঁকড়ে ধরে। তার জীবনে কোনো উন্নতিই হয় না। মানুষ হয়েও সে ভারবাহী জীব সাদৃশ্য জীবনযাপন করে। জ্ঞানহীন মানুষের কোনো মূল্য নেই। জ্ঞানচর্চা না করলে মানুষের বিবেক-বুদ্ধি জাগ্রত হতে পারে না। ফলে সে ঠিক বেঠিক, ন্যায়-অন্যায় অনুধাবন করতে পারে না। এরকম মানুষের দ্বারা যেকোনো অন্যায় কাজ করা স্বাভাবিক। একমাত্র জ্ঞানই মানুষকে প্রকৃত মুক্তি দিতে পারে। যে ব্যক্তি জ্ঞানতাপস সে তার বুদ্ধির পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারে। তার নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে। সে তার বুদ্ধি-বৃত্তির মাধ্যমে নিজের এবং আশপাশের মানুষের উন্নয়ন ঘটাতে পারে। জ্ঞানচর্চার গুরুত্ব ব্যক্তিজীবনে যেমন প্রয়োজন, তেমনি জাতীয় জীবনেও অত্যাবশ্যকীয়। জ্ঞানচর্চা একটি দেশ ও জাতিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে সাহায্য করে। সমাজ থেকে অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার মুছে দিয়ে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করে। মুক্তবুদ্ধি চর্চা একটি দেশ ও জাতিকে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর মতো ক্ষমতা দেয়। যে জাতির বুদ্ধির বিকাশ ঘটে না সে জাতি অন্ধকারে পড়ে থাকে। নানা অন্যায়, অবহেলা, কুসংস্কার তাদের ঘিরে ধরে। জ্ঞানহীন জাতির কোনো উন্নয়ন সম্ভব হয় না।

শিক্ষা: জ্ঞানের আলো মুক্তির পথ দেখায়। তাই অন্যায়-অবিচার, দুঃখ-দারিদ্র্য থেকে মুক্তির জন্য মানুষের জ্ঞানচর্চা করা উচিত।

আরো পড়ুন: তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment