তৃষ্ণার জল যখন আশার অতীত হয় মরীচিকা তখন সহজে ভােলায় – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “তৃষ্ণার জল যখন আশার অতীত হয় মরীচিকা তখন সহজে ভােলায় ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

তৃষ্ণার জল যখন আশার অতীত হয় মরীচিকা তখন সহজে ভােলায় - ভাবসম্প্রসারণ

তৃষ্ণার জল যখন আশার অতীত হয় মরীচিকা তখন সহজে ভােলায় ভাবসম্প্রসারণ

ভাবসম্প্রসারণঃ মানুষ সমাজে বাস করে। এই সমাজ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিনোদন এর মতো মৌল মানবিক চাহিদাগুলো পূরণ করে থাকে। তথাপি প্রাপ্তির মাঝেও কিছু অপ্রাপ্তি থেকে যায়। অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত চাহিদা পূরণে সমাজ ব্যর্থ হয়। আর ক্রমাগত ব্যর্থতা মানুষকে হতাশায় জর্জরিত করে তোলে।

সে তার বিবেক বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে। তপ্ত মরুভূমিতে পথিক যখন তৃষ্ণার্ত হয় তখন সে চারদিকে হন্যে হয়ে জল খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু সূর্যের প্রখর তাপে মরুভূমিতে জল পাওয়া সহজ নয়। মরুভূমির বালিতে তীর্যকভাবে সূর্যকিরণ পতিত হলে তা দূর থেকে পানির মতো দেখা যায়, যাকে মরীচিকা বলে। পথিকের কাছে মনে হয় সামনে পানি দেখা যাচ্ছে, কিন্তু যখন সে সামনে এগিয়ে যায় তখন পানির মতো দেখতে মরীচিকা আরও দূরে সরে যায়।

মানুষের জীবনও এরকম মরুভূমির মরীচিকার মতো। মরীচিকার পেছনে যেমন মরুভূমির পথিক বুদ্ধি-জ্ঞানহীনের মতো ছুটতে থাকে তেমনি কাক্সিক্ষত বস্তু না পাওয়ার বেদনায় মানুষ বিবেকহীন হয়ে পড়ে। এর ফলে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়। সমাজে সৃষ্টি হয় চরম বিশৃংখলা।

শিক্ষা: অভাব মানুষকে বিভ্রান্ত করে অনিশ্চিত জীবনের পথে ছুটতে বাধ্য করে। যা তাকে চূড়ান্ত ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। অতিরিক্ত প্রাপ্তিও আবার মানুষকে বিপথের দিকে ঠেলে দেয়। তাই মানুষের জীবনে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি দুই-ই থাকা উচিত।

বিকল্প ১

ভাবসম্প্রসারণ: প্রত্যেক মানুষেরই বেঁচে থাকার জন্যে কিছু মৌলিক চাহিদা থাকে। এ সীমিত চাহিদাই যখন অসীম ও অবাধ্য হয়ে যায় তখন মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ফলে ভ্রান্তির ছলনায় মানুষ সহজেই প্রতারিত ও আশাহত হয়।

তৃষ্ণার সময় জল ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচে না, তেমনি অন্ন, বস্ত্র আর আশ্রয় ছাড়া মানুষের পক্ষে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাও অসম্ভব । তাই এ প্রয়ােজনটুকু নিবারণে মানুষ নিরন্তর সংগ্রাম করে চলে। কিন্তু তারপরও যদি সে ব্যর্থ হয়, তখন মিথ্যে মায়ায় বার বার ভুল করে । এ যেন তপ্ত মরুভূমিতে মরীচিকার পেছনে ছুটে বেড়ানাের মতাে। মরুভূমির চারদিকে শুধু বালি আর বালি। কোথাও কোনাে জলাশয় থাকে না। দু-একটা কাঁটা গুল্ম এবং কাটাজাতীয় গাছ ছাড়া জলের অভাবে কোনাে গাছপালাই সেখানে জন্মাতে পারে না। অথচ এ মরুভূমি পথিককে দেখায় জলের লােভ। তৃষ্ণার্ত পথিক যখন তপ্ত বালির বুকে দেখে আলােকরশ্মির প্রতিসরণ তখন সেটাকে জল ভেবে আকুল হয়ে ছুটে যায়। জল পানের আশায় এভাবে সে মরুভূমির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ায় মিথ্যে মরীচিকার মায়ায় । মরুর কাটায় ক্ষতবিক্ষত হয় শরীর। তারপরও সে থেমে থাকে না। প্রয়ােজনই মানুষের চিন্তাশক্তি আর কল্পনাশক্তিকে চালিত করে। বেঁচে থাকার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থেকেই মানুষ নিরন্তর অবলম্বন খোঁজে। তাই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কখনাে কখনাে মানুষ প্রহেলিকার ফাঁদে পড়ে । চাওয়া ও পাওয়ার নিদারুণ ব্যবধানের বাস্তবতা মানুষকে বােধশূন্য করে তােলে। এর ফলে মানুষ চলার সঠিক পথ থেকে পিছলে যায়। অনেক সময় এর পরিণতি হয় করুণ । তাই মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলাে প্রাপ্তির অধিকার যেমন মানুষের রয়েছে, তেমনি প্রত্যেক মানুষের চাওয়া ও পাওয়ার মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতেও সচেষ্ট থাকা উচিত।

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment