দাও ফিরে সে অরণ্য লও এ নগর – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “দাও ফিরে সে অরণ্য লও এ নগর ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

দাও ফিরে সে অরণ্য লও এ নগর - ভাবসম্প্রসারণ

দাও ফিরে সে অরণ্য লও এ নগর ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : সৃষ্টির প্রথমে মানুষ ছিল অরণ্যচারী। তারপর মানুষ এল সভ্যতার এ যুগে। কিন্তু মানুষ সভ্যতার শীর্ষে উঠে যাওয়ার পরেও পূর্ব পুরুষের মতই কিছুটা প্রীতি অনুভব করে।

সম্প্রসারিত ভাব : প্রাচীন সভ্যতা ছিল গ্রামীণ। তাই প্রাচীন। তাই প্রাচীন সভ্যতা এবং আধুনিক নাগরিক সভ্যতার মধ্যে ব্যবধান লক্ষ্য করা যায়। মানুষের আদিম বাসস্থান ছিল অরণ্যে। এ অরণ্যের পটভূমিতে প্রকৃতির দান ছিল অফুরন্ত। উদাহরণস্বরূপ, বাতাস উন্মুক্ত প্রান্তর, ধীর স্রোতা তটিনী আর সীমাহীন নীল আকাশ। সেখানে মানুষের মনকে মোহমুক্ত করে উড়বার শক্তি দিত এবং কল্পনাকে দিত গতি। তখন মানুষের আকাঙ্খা ছিল খুবই সীমিত-বর্তমানের মত এত রেষারেষি, এত বিদ্বেষ তখন ছিলনা। বর্তমানে মানুষ উন্নতির শীর্ষদেশে উঠছে। আর এজন্য চলছে প্রতিযোগিতা। দিকে দিকে চলছে হানাহানি। কিন্তু অরণ্যে সব হানা-হানি, রেষা-রেষি নেই বলে অরণ্যে জীবন যাপন যথার্থ আনন্দ পাওয়া যায়। তাই লক্ষ-কোটি বছর পরেও মানুষ অরণ্যের প্রতি টান অনুভব করছে, চাইছে ফেলে আসা সে দিনগুলোতে ফিরে যেতে।

আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সভ্যতার যুগে মানুষ আজ শান্ত-ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তাই মানুষ আবার নির্ভেজাল জীবনের অন্বেষণ করছে।

বিকল্প ১

সভ্যতা মানুষকে যেমন অনেক কিছু দিয়েছে, তেমনি কেড়ে নিয়েছে অনেক কিছু। পরিভোগের নানা উপকরণ মানুষের জীবনে এখন ছড়ানো, কিন্তু নগর সব্যতার জঠরে বস্তুভারের বেড়াজালে মানুষ হারিয়েছে নিসর্গবেষ্টিত জীবনের শান্ত সৌন্দর্য। হারিয়েছে প্রকৃতির মুক্ত অঙ্গনে দেহ মনের অবাধ ও স্বচ্ছন্দ বিকাশের সুযোগ। মানুষের জীবনে এসেছে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা। আধুনিক সভ্যতার পাষাণ-পিঞ্জরে অবরুদ্ধ মানুষ মুক্তি প্রত্যাশায় আবার উন্মুখ হয়ে উঠেছে প্রকৃতিচালিত হৃত জীবনকে ফিরে পাওয়ার জন্যে।

আধুনিক নগর সভ্যতা মানব জীবনে অনেক অগ্রগতি এনেছে এ কথা সত্য। কিন্তু এ সভ্যতা আজ মানুষের হৃদয়বৃত্তির ওপর এমনভাবে চেপে বসেছে যে, মানুষ হয়ে পড়ছে ক্রমেই হৃদয়হীন নিষ্ঠুর। এই সভ্যতা মানুষকে করে তুলেছে পরিভোগমুখী, উচ্চাভিলাষী, আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থসর্বস্ব। মানুষের জীনব থেকে মানবিকতাবোধের অবসান ঘটছে। মানুষ হয়ে উঠছে অনেক বেশি যান্ত্রিক। সমাজ-জীবনে স্বার্থসচেতনতা হয়ে উঠছে ক্রমবর্ধমান। মানুষের পরিভোগ চাহিদা হয়ে উঠছে আকাশচুম্বী। মানুষে মানুষে বৈষম্য হচ্ছে প্রকট। মানব সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রাধান্য ঘটছে কুটিলতা ও কপটতার। সব কিছুকে বিচার করা হচ্ছে বৃক্তিগত স্বার্থের মানদণ্ডে। মানব সভ্যতার এই দুঃসহ অবরোধ থেকে মুক্তি পেতে চান হৃদয়বান মানুষ। তাঁরা জটিলতাহীন শান্ত সমাহিত হৃত জীবনের স্বপ্ন দেখেন। জীবনের সৌন্দর্য ফিরে পাওয়ার জন্যে তাঁরা ফিরে যেতে চান প্রকৃতিনির্ভর প্রসন্ন, উদার, শান্ত জীবনে। যে জীবনে নেই ভোগের পঙ্কিলতা, নেই লোভের বিকার। মাটির কাছাকাছি সে জীবনে তাঁরা ফিরে পেতে চান স্বেদের গন্ধ আর শ্রমের স্পন্দন। পণ্যবিলাসী জীবনের চেয়ে সরল, সহজ জীবন তাঁদের কাছে অনেক বেশি আকর্ষণীয়। সেই মানসিক প্রশান্তিময় হৃদয়ের সম্পর্কপ্রধান জীবনে ফেরার জন্যে হৃদয়ানুভূতিশীল মানুষ আজ ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন।

বিকল্প ২

মূলভাব: আধুনক সভ্যতার কর্মনাশা স্রােতে আজ আনণ্যিক পারবেশ ধ্বংসে মুখে পতিত হয়েছে। শহুরে সভ্যতার কৃত্রিমতায় মানব জীবন অতিষ্ঠ। তাই মানুষ আজ আরণ্যিক জীবন ফিরে পেতে চায়। সম্প্রসারিত ভাব: অরণ্যের পটভূমিতে অবস্থিত গ্রামীণ সভ্যতা অফুরন্ত প্রকৃতির দানে সমৃদ্ধ। সেখানকার উদার প্রান্তর, মুক্ত বায়ু, ধীরস্রােতা নদী আর সীমাহীন নীলাকাশ মানুষের কল্পনাকে গতি দিত, মনকে মোহমুক্ত রাখত। সেখানে ছায়া ঢাকা, পাখি ডাকা শ্যামল অরণ্যানীর অফুরন্ত শোভার মধ্যে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের গ্লানিহীন ও আনন্দমুখর দিনগুলো অনাড়ম্বর মাধুর্যে শান্তিপূর্ণভাবে অতিবাহিত হতো। কিন্তু আধুনিক সভ্যতার কর্মনাশা স্রোতে সেই আরণ্যিক পরিবেশের গ্রাম্য পটভুমিতে শান্ত সমাহিত জীবনের আদর্শ অনেকাংশে ভেস্তে গেছে। শহুরে সভ্যতার কৃত্রিম জীবন মানুষের মনের শান্তি কেড়ে নিয়েছে। ইট-পাথরে গড়া ইমারত সবুজকে গ্রাস করে ক্রমেই তা আকাশচুম্বী হয়ে উঠছে। ফলে ইটের পাঁজরে লোহার খাঁচায় আবদ্ধ মানুষের মর্মবেদনা গুমনে গুমনে কাঁদছে। মানষের মনে আজ শান্তি নেই। সুখের উগ্র বাসনা মানুষকে অশান্ত করে তুলছে। হেথা নয়, অন্য কোথা- অন্য কোনোখানে। তাই মানুষ আজ বিদগ্ধচিত্তে অস্তগামী সূর্যের শেষ রশ্মি ধরে বৃক্ষ ছায়ায় উপবিষ্ট পল্লি মায়ের কোলো ফিরে যেতে চায়। ব্যগ্র কন্ঠে উচ্চারণ করে – দাও ফিরে সে অরণ্য লও এ নগর। মন্তব্য: বৈজ্ঞানিক সভ্যতার স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করে মানুষ আজ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তাই আজ তারা কামনা করছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সুখের প্রতীক আরণ্যিক জীবনকে।

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment