দুধ-কলায় সমৃদ্ধ সােনার খাঁচা অপেক্ষা রঞগাবিক্ষ্ধ অজানা আকাশ পাখির অনেক প্রিয় – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “দুধ-কলায় সমৃদ্ধ সােনার খাঁচা অপেক্ষা রঞগাবিক্ষ্ধ অজানা আকাশ পাখির অনেক প্রিয় ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

দুধ-কলায় সমৃদ্ধ সােনার খাঁচা অপেক্ষা রঞগাবিক্ষ্ধ অজানা আকাশ পাখির অনেক প্রিয় - ভাবসম্প্রসারণ

দুধ-কলায় সমৃদ্ধ সােনার খাঁচা অপেক্ষা রঞগাবিক্ষ্ধ অজানা আকাশ পাখির অনেক প্রিয় ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানােতেই পাখির আনন্দ। সে আকাশে কখনও আসে ঝড়াে হাওয়ার ঝাপটা, তখন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পাখি অনিশ্চিত ঠিকানায় উড়ে চলে। তবু আকাশের মায়া পাখি ছাড়তে পারে না। সােনার খাঁচায় দুধ কলা দিয়ে পােষা হলেও খাঁচার বন্ধ জীবন পাখির কাম্য নয়। সে চায় মুক্তি, চায় স্বাধীনতা।

সম্প্রসারিত-ভাব : মানুষ জন্মগতভাবে পাখির মতই স্বাধীনতাপ্রিয়। পরাধীন জীবনে প্রভুর অনুগ্রহে আশ্রয় ও খাবার হয়ত জোটে কিন্তু স্বাধীন জীবনের সুযােগ থাকে না। পরাধীন জীবন বন্দিত্বের জীবন। পরাধীনতা মানুষের জীবনের জন্য অভিশাপ। তা মানুষের জীবনে দাসত্ব শৃঙ্খলের মত । স্বাধীন ও মুক্ত জীবনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে পাখি যেমন বন্দি খাঁচা ছেড়ে মুক্ত আকাশের দিকে ডানা মেলে উড়তে চায় তেমনি স্বাধীনতার দুর্বার আকাঙক্ষায় মানুষ পরাধীনতার বন্ধন ছিন্ন করার জন্য? ব্যাকুল হয়ে উঠে। মানুষের কাছে দীর্ঘ পরাধীন জীবনের চেয়ে ক্ষণিক স্বাধীন জীবনের মূল্য অনেক বেশি। আপাত স্বাচ্ছন্দ্যময় পরাধীন জীবনের চেয়ে স্বাধীন জীবন কষ্টের হলেও তা সুখের ও আনন্দের। এ জন্যই যুগে যুগে, দেশে দেশে পরাধীনতার বিরুদ্ধে মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছে, আত্মাহতি দিয়েছে। ব্যক্তি জীবনের মত জাতীয় জীবনেও স্বাধীনতা মহান তাৎপর্যবাহী। ২০০ বছরে ব্রিটিশ শাসনে পরাধীন বাঙালি জাতি জাতি আত্মবিকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। পাকিস্তানি শাসনামলেও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে শাসিত ও শােষিত হয়েছে। তাই স্বাধীনতার মহান আকাঙ্ক্ষায় উজ্জীবিত বাঙালি জাতি ১৯৭১ -এ অনেক রক্ত ও অশুপাতের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করেছে স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য। স্বাধীনতা আমাদের দিয়েছে মুক্তির স্বাদ। দিয়েছে আত্মজাগরণের সুযােগ দিয়েছে জাতি হিসেবে নিজের পায়ে দাঁড়ানাের শক্তি ও সাহস। ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে স্বাধীনতায়ই আনন্দ, পরাধীনতা বা বন্দিতে নয়।

বিকল্প ১

ভাব-সম্প্রসারণঃ মানুষ তথা সমগ্র জীবজগতের প্রতিটি জীব জন্ম থেকেই স্বাধীন। আর এ কারণে স্বাধীনতা সবার প্রিয়। অন্যান্য জীবের ওপর সে বিভিন্ন কারণে নির্ভরশীল থাকতে পারে, তবে তা পারস্পরিক নির্ভরশীলতা, একচ্ছত্র আধিপত্য বা পরাধীনতা নয়। পরাধীন জীবনে কোনাে বিকাশ নেই, আছে কেবল স্থবিরতা, যা মৃত্যুর মতাে স্তব্ধ। 

পাখির জীবন থেকে এ বৈশিষ্ট্য সহজেই অনুধাবন করা চলে। মুক্ত আকাশে পাখি উড়ে বেড়ায়। সেখানে তার ধরাবাধা কোনাে নিয়মনীতি নেই। পাখির বাসস্থান সম্পর্কেও অনিশ্চয়তা বিরাজমান। তাই উন্মুক্ত স্বাধীন আকাশে নিরুদ্বেগে বিচরণ করে বেড়ায় যে পাখি তার কাছে দুধকলা-সমৃদ্ধ সােনার খাচা তুচ্ছ। কেননা মুক্তিতেই আনন্দ, বন্দিত্বে নয়। পাখি মুক্তজীবনের স্বাদ পেয়ে সােনার খাঁচায় আবদ্ধ থাকতে চায় না। মানবজীবনেও ওই একই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। মানুষের রয়েছে মুক্তির কামনা, ইচ্ছা, বিবেক, স্বপ্ন। তার কাছে পরাধীনতা তার হৃদয়বৃত্তি এবং ইচ্ছার মৃত্যুরই নামান্তর। পরাধীনতা মানুষের জীবনের জন্যে অভিশাপ। স্বাধীন ও মুক্ত জীবনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে পাখি যেমন বন্দি খাচা ছেড়ে মুক্ত আকাশের দিকে ডানা মেলে উড়তে চায় তেমনি স্বাধীনতার দুর্বার আকাঙ্ক্ষায় মানুষ পরাধীনতার বন্ধন ছিন্ন করার জন্যে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। মানুষের কাছে দীর্ঘ পরাধীন জীবনের চেয়ে ক্ষণিক স্বাধীন জীবনের মূল্য অনেক বেশি। যুগে যুগে তাই মানুষ পরাধীনতার কবল থেকে মুক্ত হবার জন্যে যুদ্ধ করেছে, প্রাণ দিয়েছে, কখনও-বা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। তবু মানুষ পরাধীন থেকে ঐশ্বর্যবান হওয়ার চেয়ে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন এমনকি মৃত্যুবরণ করাকেও সমীচীন মনে করেছে। কারণ স্বাধীনতাই জীবন।

সবাই চায় মুক্তি, চায় স্বাধীনতা। বন্দি জীবন কেউ চায় না বলেই পরাধীনতার বন্ধন ছিন্ন করার জন্যে তারা ব্যাকুল হয়ে ।

বিকল্প ২

পাখি মুক্ত আকাশে স্বাধীনভাবে উড়ে বেড়ায়। সকালবেলা অজানা স্থানে খাদ্যের সন্ধানে বের হয়। তার খাদ্য পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা না থাকলেও সারাদিন নানা প্রতিকূলতা, বিপদ-আপদ উপেক্ষা করে খাদ্য সংগ্রহ করে নীড়ে ফেরে। এতেই তার আনন্দ, এতেই তার স্বাধীনতা। পাখিকে সোনার খাঁচায় বন্দী করে দামী খাদ্য দেয়া হলেও এটি খাঁচায় বন্দী হয়ে থাকতে চাইবে না। বন্দী হয়ে থাকার চেয়ে স্বাধীনভাবে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা তার কাছে বেশি প্রিয়। মানব সম্প্রদায়ের মধ্যেও এ বিষয়টা পরিলক্ষিত হয়। এক শ্রেণির মানুষ স্বাধীনভাবে পরিশ্রম করে, সংগ্রাম করে জীবিকা নির্বাহ করে। তারা কারো দাসত্ব স্বীকার না করে নিজ হাতে তাদের কর্ম সম্পাদন করতে ভালোবাসে। জগতে তারাই বড় হয়েছেন যারা বাধা-বিপত্তিকে ভয় না পেয়ে তাদের লক্ষ্য অর্জনে সচেষ্ট হয়েছেন। আরেক শ্রেণির লোক আছে যারা কাজ করতে পছন্দ করে না। তারা অন্যের ওপর নির্ভরশীল। তাদের জীবন চলার পথে প্রয়োজনীয় সব জিনিসের জন্য অন্যের উপর নির্ভর করে থাকতে হয়। তারা স্বাধীন কোনো চিন্তা-ভাবনা করতে পারে না। তাদের জীবনে ধন-সম্পদের প্রাচুর্য থাকলেও তারা স্বাধীনতার স্বাদ পায় না। তাদেরকে একটা সীমাবদ্ধতার মধ্যে বাঁচতে হয়। অন্যদিকে যারা স্বাধীনচেতা মানুষ তারা মুক্ত বিহঙ্গের ন্যায় থাকতে অধিক পছন্দ করে। তাদের ধন-সম্পদের নিশ্চয়তা না থাকলেও তারা সকল প্রতিকূলতা জয় করে তাদের জীবিকা অর্জন করে। এটাই তাদের বেঁচে থাকার আনন্দ। এমন জীবনই তাদের কাছে অধিক প্রিয়।

শিক্ষা: পরিশ্রম না করে অন্যের উপর নির্ভর করে জীবন ধারণের চেয়ে সংগ্রাম করে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার আনন্দ বেশি। এমন জীবনই সবার কাম্য।

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment