ধৈর্য ধর ধৈর্য ধর বাঁধ বাঁধ বুক – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “ধৈর্য ধর ধৈর্য ধর বাঁধ বাঁধ বুক ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

ধৈর্য ধর ধৈর্য ধর বাঁধ বাঁধ বুক - ভাবসম্প্রসারণ

ধৈর্য ধর ধৈর্য ধর বাঁধ বাঁধ বুক ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব: ধৈর্য ধারণ মানুষের মহৎ গুণ। ধৈর্য ধারণ করে সম্মুখে অগ্রসর হলে এবং নিজের উদ্দেশ্য ও প্রচেষ্টায় অবিচল থাকলে উদ্দেশ্য পূরণ এবং কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভ করা সম্ভব। কেননা ধৈর্যই সাফল্যের পূর্ব শর্ত। সাফল্য পেতে হলে তাকে অবশ্যই ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

সম্প্রসারিত ভাব: সবুর আরবী শব্দ এর অর্থ ধৈর্য। আর মেওয়া ফারসি শব্দ এর অর্থ পুষ্টিকর শুষ্ক ফল। প্রবাদ আছে সবুরে মেওয়া ফলে। ধৈর্য ধারণ করতে পারলে একদিন না একদিন সুফল লাভ করা যায়। জগত সংসারে সুখ-দুঃখ মিলিয়েই মানবজীবন। মানবজীবনের প্রতি ক্ষেত্রেই নানারকম দুঃখ-কষ্ট রোগ-শোক হতাশা ব্যর্থতা প্রভৃতির সম্মুখীন হতে হয়। আর ধৈর্যের সঙ্গে এসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করার নামই সবুর। এসব প্রতিকূলতাকে জয় করে টিকে থাকতে হলে মানুষকে ধৈর্য ও সহ্যশক্তি প্রদর্শন করতে হয়। দুঃখ আর ব্যর্থতাকে জয় করতে পারলেই জীবনে সুখ ও সাফল্য লাভ সম্ভব। জীবনে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভ কিংবা অভিষ্ট লক্ষ্য হাসিলে ব্যর্থ হলে হতাশায় উচিত নয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সঃ এর বানী প্রচার করতে গিয়ে নানা রকম বাধা বিপত্তির শিকার হন। এমনকি শত্রুর পাথরের আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু মুহূর্তের জন্যেও তিনি ধৈর্য হারা হননি বরং অপূর্ব ও ধৈর্য সহকারে তিনি তার লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। দুঃখ দারিদ্র্য, অন্যায়-অত্যাচার, বিপদ আপদ কখনো কখনো মানব জীবনকে থামিয়ে দেয়। মানুষকে এসব প্রতিরোধ করে ধৈর্য নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হয়। সাফল্য আর ব্যর্থতায় ভরা কর্মক্ষেত্রে মানুষ যদি ব্যর্থতাকে গ্রহণ করে পরবর্তীকালে সাফল্য অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়, তাহলে সে শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়। সহনশীল ও ধৈর্যশীল লোক জীবন সংগ্রামে পরাজয়ের মধ্যেও শক্তি সঞ্চয় করে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়। পরাজয়, ব্যর্থতার কাছে সে নতি স্বীকার করে না। তাই ধৈর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে প্রতিকূল অবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে নিজের অধিকার আদায়সহ যেকোনো কঠিন কাজ করা সম্ভব। এ জগত সংসারে দুর্বল আর অসহায়কে সবলের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে জীবনে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। কেননা যার সহ্য ক্ষমতা নেই তার জীবন ব্যর্থতা আর হতাশায় পর্যবসিত হয়। কোনো কাজেই সে সাফল্য লাভ করতে পারে না। ধৈর্যের অভাবে তার জীবন নিয়ন্ত্রণহীন ও দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। তার পারিবারিক জীবনে দুঃখ-কষ্ট, লাঞ্ছনা-গঞ্জনার মতো তিক্ততা নেমে আসে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ), ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কাজী নজরুল ইসলাম, রবার্ট ব্রুস প্রমুখ মহান ব্যক্তিত্ব জীবনে কখনো পরাজয়ের কাছে নতি স্বীকার করেননি।

ধৈর্য সহকারে সকল প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই সামনে এগিয়ে গেছেন এবং শেষ পর্যন্ত বিজয়মাল্য পরেছেন। তাঁরা যুগ যুগ ধরে মানুষের মনে বেঁচে আছেন ও বেঁচে থাকবেন। কাজেই ধৈর্যসহকারে স্থির মস্তিষ্কে জীবনের সকল কঠিন কাজের সমাধান করতে হবে। মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে এসেও সুন্দর জীবনের স্বপ্নে বুক বাঁধতে হবে। তবেই মানুষ সকল কঠিন কাজে সফল হবে। জগতসংসারে সম্মান ও খ্যাতি নিয়ে বেঁচে থাকবে।

পৃথিবীর বিভিন্ন মহামানবদের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই বহু ধৈর্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে সাফল্য লাভ করতে হয়েছে। ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ও মানুষকে অন্যের হিংসা-বিদ্বেষ লোভ-লালসা কুৎসা প্রভৃতির শিকার হতে হয়। এক্ষেত্রে যারা ধৈর্য্য সাহস আর সততার দ্বারা পরিস্থিতি মোকাবেলা করে তারা একসময় অন্যের আস্থাভাজন এ পরিণত হয়।

মন্তব্য: জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। কোন কাজে ধৈর্য হারা হলে চলবে না। ধৈর্যহীন মানুষ সহজেই প্রতিকূলতার নিকট পরাজিত হয়। সুতরাং ধৈর্যশীলদের সাফল্য সুনিশ্চিত।

বিকল্প ১

ভাব-সম্প্রসারণ : সহিষ্ণুতা একটি মহৎ গুণ। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে সহনশীলতার কোনো বিকল্প নেই। জীবনের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে ধৈর্য ধরতে হয় না। ধৈর্যসহকারে জাগতিক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে থাকতে পারলে শেষ পর্যন্ত জয়মাল্য তাদেরই ললাটে জোটে।

জীবন পুষ্পশয্যা নয়। পৃথিবীতে জীবনের চলার পথ কণ্টকাকীর্ণ। এখানে প্রতি পদেই রয়েছে বাধা-বিপত্তি ও সংঘাত। নৈরাশ্যের বেদনা আছে, পরাজয়ের দুঃসহ গ্লানি আছে এবং শোক ও দুঃখের হৃদয়বিদায়ক আঘাত আছে। এ-সব বিরুদ্ধশক্তির সাথে সহনশীলতার মাধ্যমেই যুদ্ধ করে জয়ী হতে হবে। জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে মানুষকে ধীরস্থিরভাবে ও ধৈর্য ধরে সুচিন্তিত পদক্ষেপ না নিলে বিপদ-বাধা মোকাবেলায় মারাত্মক ভুল হয়ে যেতে পারে এবং তার জন্যে যথেষ্ট খেসারত দিতে হয়। পক্ষাপন্তরে ধৈর্য ও সহনশীলতার সঙ্গে সমস্যা মোকাবেলা করলে তাতে কোনো বিপদের সম্ভাবনা তো থাকেই না, বরং সাফল্য আসে। বিপদের বাধা জয় করার মধ্যেই আছে পৌরুষের সার্থকতা, আছে মনুষ্যত্বের বিজয়গৌরব। দুঃখ-শোকের আঘাতে মানুষের সুপ্ত মনুষ্যত্ব অম্লান গৌরব জেগে ওঠে। আগুনে পুড়ে সোনা যেমন খাঁটি হয়- দুঃখ-দুর্দশার আঘাতে আমাদের মনও মালিন্যমুক্ত হয়। বিশ্বনন্দিত বৈজ্ঞানিক ডারউইন প্রাণি-জগতের মধ্যে প্রত্যক্ষ করেন যে, এই সংগ্রামময় পৃথিবীতে যোগ্যতম জীবেরাই শষ পর্যন্ত টিকে থাকে। মানুষের জীবনযাত্রাও এক নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের ইতিহাস। সভ্যতার আদিম প্রভাতের অসহায়, দুর্বল মানুষ আজ দুর্জয় সহিষ্ণুতার শক্তিতেই পৃথিবীর কর্ণধার হতে পেরেছে।

আমাদের জীবনের প্রতি পদক্ষেপেই ধৈর্য ও সহনশীলতার প্রয়োজন। সহনশীলতা না থাকলে সংসার বন্য-প্রবৃত্তিতে পরিণত হতো। তাই জাতি হিসেবে টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন সহিষ্ণুতার।

বিকল্প ২

মূলভাব : সহনশীলতা বা ধৈর্য মানব চরিত্রের একটি মহৎ গুণ।

সম্প্রসারিত-ভাব : জীবন গঠনকে সফল করার জন্য এ সৎগুণের প্রয়োগ একান্তই অপরিহার্য। নানা প্রতিকূল অবস্থায় পড়ে মানুষকে সংসার জীবন অতিবাহিত করতে হয়। প্রতিকূল অবস্থার সাথে সংগ্রাম করে জীবনকে সফল করে তুলতে হয়। ধৈর্যের দ্বারা সমস্ত বাধা বিপত্তি মোকাবিলা করতে পারলেই জীবনে বিজয়ী হওয়া যায়। তাই ধৈর্যই শক্তি; ধৈর্যই সফলতার উৎস। এ পৃথিবীতে মানুষের জীবন ফুলশয্যা নয়। জীবন সংগ্রামমুখর। চারদিকের প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে অবস্থান করে জীবন চালাতে হয়। প্রতিকূলতা মোকাবিলার প্রধান সহায়ক শক্তি হল সহ্য গুণ বা ধৈর্য। জীবনের কোন ক্ষেত্রেই ধৈর্যহারা হলে চলে না। জীবনের সকল সমস্যা দূর করার জন্য কঠোর সংগ্রাম করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ধৈর্যহারা হলে চলে না। জীবনের সকল সমস্যা দূর করার জন্য কঠোর সংগ্রাম করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ধৈর্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা আবশ্যক। সহনশীলতা না থাকলে সমস্যার জটিলতার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। ধৈর্য না থাকলে অনর্থক অনর্থ বাঁধে এবং গোলযোগের সৃষ্টি হয়। অন্যের রাগের সামনে নিজে রাগান্বিত না হয়ে ধৈর্য ধারণ করলে সমস্যার সমাধান ঘটে এবং অপ্রীতিকর অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ধৈর্যই হল টিকে থাকার বড় যোগ্যতা।

জীবনে সহ্য গুণ দিয়েই অপরের উগ্রতার সামনে নিজে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়।

বিকল্প ৩

জগত সংসারে সুখ-দুঃখ মিলিয়েই মানবজীবন। জীবনের প্রতি ক্ষেত্রেই আছে বিপদ-আপদ, বাধা-বিঘ্নে, দুঃখ কষ্ট। এসব প্রতিকূলতাকে জয় করে টিকে থাকতে হলে মানুষকে ধৈর্য ও সহ্যশক্তি প্রদর্শন করতে হয়। দুঃখ আর ব্যর্থতাকে জয় করতে পারলেই জীবনে সুখ ও সাফল্য লাভ সম্ভব। দুঃখ দারিদ্র্য, অন্যায়-অত্যাচার, বিপদ আপদ কখনো কখনো মানব জীবনকে থামিয়ে দেয়। মানুষকে এসব প্রতিরোধ করে ধৈর্য নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে হয়। সাফল্য আর ব্যর্থতায় ভরা কর্মক্ষেত্রে মানুষ যদি ব্যর্থতাকে গ্রহণ করে পরবর্তীকালে সাফল্য অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়, তাহলে সে শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়। সহনশীল ও ধৈর্যশীল লোক জীবন সংগ্রামে পরাজয়ের মধ্যেও শক্তি সঞ্চয় করে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়। পরাজয়, ব্যর্থতার কাছে সে নতি স্বীকার করে না। তাই ধৈর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে প্রতিকূল অবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে নিজের অধিকার আদায়সহ যেকোনো কঠিন কাজ করা সম্ভব। এ জগত সংসারে দুর্বল আর অসহায়কে সবলের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে জীবনে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। কেননা যার সহ্য ক্ষমতা নেই তার জীবন ব্যর্থতা আর হতাশায় পর্যবসিত হয়। কোনো কাজেই সে সাফল্য লাভ করতে পারে না। ধৈর্যের অভাবে তার জীবন নিয়ন্ত্রণহীন ও দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। তার পারিবারিক জীবনে দুঃখ-কষ্ট, লাঞ্ছনা-গঞ্জনার মতো তিক্ততা নেমে আসে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ), ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কাজী নজরুল ইসলাম, রবার্ট ব্রুস প্রমুখ মহান ব্যক্তিত্ব জীবনে কখনো পরাজয়ের কাছে নতি স্বীকার করেননি। ধৈর্য সহকারে সকল প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই সামনে এগিয়ে গেছেন এবং শেষ পর্যন্ত বিজয়মাল্য পরেছেন। তাঁরা যুগ যুগ ধরে মানুষের মনে বেঁচে আছেন ও বেঁচে থাকবেন। কাজেই ধৈর্যসহকারে স্থির মস্তিষ্কে জীবনের সকল কঠিন কাজের সমাধান করতে হবে। মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে এসেও সুন্দর জীবনের স্বপ্নে বুক বাঁধতে হবে। তবেই মানুষ সকল কঠিন কাজে সফল হবে। জগতসংসারে সম্মান ও খ্যাতি নিয়ে বেঁচে থাকবে।

আরো পড়ুন: ধনী হয়ে গরিবের স্বপ্ন দেখা এক নতুন বিলাসিতা

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment