ধ্বনিটিরে প্রতিধ্বনি সদা ব্যঙ্গ করে, ধ্বনির কাছে ঋণী সে যে পাছে ধরা পড়ে – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “ধ্বনিটিরে প্রতিধ্বনি সদা ব্যঙ্গ করে, ধ্বনির কাছে ঋণী সে যে পাছে ধরা পড়ে ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

ধ্বনিটিরে প্রতিধ্বনি সদা ব্যঙ্গ করে, ধ্বনির কাছে ঋণী সে যে পাছে ধরা পড়ে - ভাবসম্প্রসারণ

ধ্বনিটিরে প্রতিধ্বনি সদা ব্যঙ্গ করে, ধ্বনির কাছে ঋণী সে যে পাছে ধরা পড়ে ভাবসম্প্রসারণ

প্রতিধ্বনির নিজস্ব কোন অস্তিত্ব নেই। ধ্বনি থেকেই প্রতিধ্বনির উৎপত্তি। অথচ প্রতিধ্বনি ধ্বনির এ ঋণ অস্বীকার করে। বিচিত্র মানবচরিত্রে এরকম অকৃতজ্ঞতার প্রতিকৃতি কখনো কখনো সুস্পষ্টভাবে বিধৃত হয়। অকৃতজ্ঞ লোকেরা উপকারীর উপকার স্বীকার করে না, বরং পরিহাসের মাধ্যমে নিজের হীনতা প্রকাশ করে থাকে।

ধ্বনি থেকেই প্রতিধ্বনির জন্ম, ধ্বনি না থাকলে প্রতিধ্বনির অস্তিত্ব সম্ভব নয়। কোনো নির্জন পাহাড়ের গুহায় বা বড় বাড়ির নির্জন বিশাল প্রকোষ্ঠে যদি কোনো ধ্বনি উচ্চারিত হয়, সে-ধ্বনি সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ে পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হয়, প্রতিধ্বনিত হয় প্রকোষ্ঠে প্রকোষ্ঠে। এ জন্য প্রতিধ্বনির সবসময় ধ্বনির কাছে কৃতজ্ঞ থাকার কথা। কিন্তু প্রতিধ্বনি নিজের অস্তিত্বের উৎস ধ্বনিটির কথা স্বীকার করতে চায় না। কারণ, এতে তার নিজের ঋণ প্রকাশ হয়ে পড়বে। প্রতিধ্বনি অনুদার ও সংকীর্ণমনা। সে তার আসল পরিচয় গোপন করে উপকারীর উপকার অস্বীকার করে। প্রতিধ্বনি নিজের বাহাদুরি প্রকাশ করার জন্যে ধ্বনিকে সর্বদা ব্যঙ্গ করে। তার এই পরিহাসের পেছনে আছে সত্য গোপন করার প্রয়াস। প্রকৃতপক্ষে, প্রতিধ্বনি যে ধ্বনির কাছে ঋণী এ- বিষয়টি যাতে ধরা না পড়ে সে জন্যে ধ্বনিকে সে উপহাস করে। উপকারীর উপকারকে অস্বীকার করার প্রবণতা আমাদের বাস্তবজীবনে প্রায়ই দেখা যায়। আত্মসুখপরায়ণ, সুযোগসন্ধানী অকৃতজ্ঞরা উপকারীর কাছ থেকে প্রভূত উপকার পেয়েও তা স্বীকার করতে চায় না। প্রকৃত অবস্থা গোপন রেখে অপরের কাছে বাহাদুারি লাভ করতে চায়। অন্যের কাছে ঋণ স্বীকার করাকে তারা দুর্বলতা মনে করে। যে উৎস থেকে সে উপকৃত হয়েছে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে তাদের নিন্দাতে শতমুখ হয়ে ওঠে। এতে তার নিজের মানমর্যাদা বাড়াবে বলে সে মনে করে। আসলে মন এমন অনুদান থাকলে কোনো- না কোনোভাবে তার আসল পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়ে এবং সে যে নীচ তা সহজেই প্রমাণিত হয়।

যে- উৎস থেকে নিজের অস্তিত্ব গড়ে ওঠেছে তার স্বীকৃতি প্রদান করা উচিত- তা যতই ক্ষুদ্র হোক। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে কোনোভাবেই হীনমন্যতাকে প্রশ্রয় দেয়া উচিত নয়।

বিকল্প ২

ভাবসম্প্রসারণঃ আত্মসুখপরায়ণ, সুযােগসন্ধানী অকৃতজ্ঞরা উপকারীর কাছ থেকে প্রভূত উপকার পেয়ে তা স্বীকার করতে চায় না। তারা মনে করে অন্যের ঋণ স্বীকার করলে বুঝি বা নিজেদের দুর্বলতার কথা প্রকাশ হয়ে যাবে। তাই তারা উপকারীর ঋণ স্বীকারের চেয়ে তাদের নিন্দায় মুখর হয়ে ওঠে। এ ধরনের আচরণ হীনতার পরিচায়ক ও নিন্দনীয়।

ধ্বনি থেকেই প্রতিধ্বনির জন্ম, ধ্বনি না থাকলে প্রতিধ্বনির অস্তিত্ব সম্ভব নয়। কোনাে নির্জন পাহাড়ের গুহায় বা বড় বাড়ির নির্জন বিশাল প্রকোষ্ঠে যদি কোনাে ধ্বনি উচ্চারিত হয়, সে-ধ্বনি সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ে পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হয়, প্রতিধ্বনিত হয় প্রকোষ্ঠে প্রকোষ্ঠে। এ জন্য প্রতিধ্বনির সবসময় ধ্বনির কাছে কৃতজ্ঞ থাকার কথা। কিন্তু প্রতিধ্বনি নিজের অস্তিত্বের উৎস ধ্বনিটির কথা স্বীকার করতে চায় না। প্রতিধ্বনি অনুদার ও সংকীর্ণমনা। সে তার আসল পরিচয় গােপন করে উপকারীর উপকার অস্বীকার করে। প্রতিধ্বনি নিজের বাহাদুরি প্রকাশ করার জন্যে ধ্বনিকে সর্বদা ব্যঙ্গ করে। তার এই পরিহাসের পেছনে আছে সত্য গােপন করার প্রয়াস। প্রকৃতপক্ষে, প্রতিধ্বনি যে ধ্বনির কাছে ঋণী এ বিষয়টি যাতে ধরা না পড়ে সে জন্যে ধ্বনিকে সে উপহাস করে। উপকারীর উপকারকে অস্বীকার করার প্রবণতা আমাদের বাস্তবজীবনে প্রায়ই দেখা যায়। হীনমনারা উপকারীর উপকার তাে স্বীকার করেই না, উপরন্তু তাকে বিদ্রপ করে তার স্বাভাবিক মহত্ত্বকে করে উপহাস। উপকারীর উপকার স্বীকৃতিতে যে অমূলক আত্মগ্লানি তার অন্তরে জেগে ওঠে, তার হাত থেকে তার নিষ্কৃতি লাভের সহজতম উপায়ই হল উপকারী ব্যক্তিকে উপহাস করা, বিদ্রপ করা এবং সম্ভব হলে তার ক্ষতি করা। বস্তুত কৃতঘ্ন এই ব্যক্তিরা তাদের প্রকৃত অবস্থা গােপন রেখে অপরের কাছে বাহাদুরি করতে চায়। অন্যের কাছে ঋণ স্বীকার করাকে তারা দুর্বলতা মনে করে। যে উৎস থেকে সে উপকৃত হয়েছে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে তার নিন্দাতে শতমুখ হয়ে ওঠে। এতে তার নিজের মানমর্যাদা বাড়বে বলে সে মনে করে। আসলে মন এমন অনুদার থাকলে কোনােনা কোনােভাবে তার আসল পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়ে এবং সে যে নীচ তা সহজেই প্রমাণিত হয়।

যে উৎস থেকে নিজের অস্তিত্ব গড়ে উঠেছে তার স্বীকৃতি প্রদান করা উচিত তা যতই ক্ষুদ্র হােক। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে কোনােভাবেই হীনম্মন্যতাকে প্রশ্রয় দেয়া উচিত নয়।

বিকল্প ৩

আত্মসুখপরায়ণ, সুযোগসন্ধানী অকৃতজ্ঞরা উপকারীর কাছ থেকে প্রভূত উপকার পেয়েও তা স্বীকার করতে চায় না। তারা মনে করে অন্যের ঋণ স্বীকার করলে বুঝি বা নিজেদের দুর্বলতার কথা প্রকাশ হয়ে যাবে। তাই তারা উপকারীর ঋণ স্বীকারের চেয়ে তাদের নিন্দাতে শতমুখ হয়ে ওঠে। এ ধরনের আচরণ হীনতার পরিচায়ক ও নিন্দনীয়।

সবাই জানে, ধ্বনি থেকেই প্রতিধ্বনির সৃষ্টি। ধ্বনির অস্তিত্ব ছাড়া প্রতিধ্বনির অস্তিত্বের প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু প্রতিধ্বনি তা বিস্মৃত হয়ে উপহাস-বিদ্রুপে ধ্বনিকে জর্জরিত করে। ধ্বনির প্রতি প্রতিধ্বনির এই বিদ্রুপ থেকে বুঝতে দেরি হয় না যে, প্রতিধ্বনি ধ্বনির কাছে তার অপরিশোধ্য ঋণকে কেবল অস্বীকার করে না, নিজের শূণ্য-গর্ভতাকেও চাপা দিতে প্রয়াসী হয়। সমাজ-সংসারে এ ধরনের অকৃতজ্ঞতার উদাহরণ বিরল নয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, উপকারী অপকারীর নিন্দায় মুখর। এমনিভাবে নিবেদিতপ্রাণ দেশব্রতী, মহান ধর্মসাধক, আত্মত্যাগী সমাজসেবী, মহান হৃদয় পরহিতব্রতী, নিঃস্বার্থ জননায়ক দেশ-জাতি-সমাজ ও মানুষের স্বার্থে মহান অবদান রেখেও প্রতিদানে পেয়েছেন অপমান ও লাঞ্ছনা। পরোপকারই তাঁদের জীবন ব্রত। তাঁরা উপকারের বিনিময়ে কখনো কোনো প্রতিদান প্রত্যাশা করে না। বরং উপকৃত ব্যক্তি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে তাঁরা উপকারের বিনিময়ে কখনো কোনো প্রতিদান প্রত্যাশা করেন না। বরং উপকৃত ব্যক্তি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে তাঁরা কুণ্ঠিত বিব্রত হন। তেমনি উপকৃতের অপমান ও লাঞ্ছনার শিকার হলেও পরহিতব্রত থেকে বিচ্যুত হন না। বস্তুত, ঋণ স্বীকারের পরিবর্তে উপকৃতরা যে নিজেদের দুর্বলতা ও অক্ষমতাকে ঢাকার জন্যে উপকারীকে অপদস্থ করার চেষ্টায় মেতে ওঠেন তাতে উপকারীর মর্যাদার কোনো হানি হয় না বরং অকৃতজ্ঞদের অকৃতজ্ঞতার স্বরূপই আরও প্রকট হয়ে ওঠে। তার চেয়ে অকুণ্ঠচিত্তে উপকারীর ঋণ স্বীকার করাই মানবোচিত পন্থা। তাতে উপকৃত ব্যক্তি হীনম্মন্যতাবোধ থেকে মুক্তি পায়। তার মর্যাদাও বাড়ে।

বিকল্প ৪

অকৃতজ্ঞ উপকারীর ঋণ স্বীকার করে না, বরং তার ক্ষতি সাধনে সর্বদা তৎপর থাকে। 

সম্প্রসারিত ভাব: প্রতিধ্বনির নিজস্ব কোনো অস্তিত্ব নেই। ধ্বনি থেকেই প্রতিধ্বনির সুষ্টি। তাই প্রতিধ্বনি ধ্বনির নিকট ঋণী। কিন্তু প্রতিধ্বনি ধ্বনির এই ঋণকে স্বীকার করতে চায় না। সে যে ধ্বনি থেকে জন্মলাভ করেছে এবং ধ্বনির নিকট ঋণী এ সত্য পাছে অপরের কাছে ধরা পড়ে এ বয়ে সে একে ঢেকে দেওয়ার জন্য দূর থেকে ধ্বনিকে ব্যঙ্গ করে জানাতে চায় যে, সে কারও নিকট ঋণী নয়: কেউই তাকে জন্ম দেয়নি সে স্বয়ম্বব উপকারীর উপকারকে অস্বীকার করার এ এক হাস্যকর পন্থা। আমাদের সমাজেও এমনি একশ্রেণীর লোক দেখা যায়- যারা সব সময় উপকারীর উপকারকে অস্বীকার করে আত্মক্ষমতাকে সাড়ম্বরে প্রচার করতে চায়।তাদের উন্নতি ও প্রতিপত্তির মূলে যে চিহ্নটিকে নিশ্চিহ্ন করতে অকৃতজ্ঞতার আশ্রয় গ্রহন করে। যে উৎস মানমর্যাদা বড়বে বলে তারা মনে করে। কিন্তু তাতে উপকারীর মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় না বরং অকৃতজ্ঞদের অকৃতজ্ঞতার স্বরূপই আরও প্রফট হয়ে উঠে। তার চেয়ে অকুন্ঠচিত্তে উপকারীর ঋণ স্বীকার করাই মানবোচত পন্থা। তাতে উপকৃত ব্যক্তি হীনম্মন্যতা বোধ থেকে মুক্তি পায়, তার মর্যাদার বৃদ্ধি পায়। মন্তব্য: ঋণ স্বীকারে অগৌরবের কিছুই নেই। জীবনে উন্নতির মূলে স্বীয় প্রচেষ্টা, স্বকীয়তা ও সুদৃঢ আত্মবিশ্বাসের পাশাপাশি অপরের যে দয়া দাক্ষিন্য রয়েছে তা মেনে নেওয়ার মধ্যেই মহানুভবতার পরিচয় মেলে।

বিকল্প ৫

প্রতিধ্বনি নিজেকে ঋণমুক্ত করে লোক সমক্ষে প্রকাশ করতে সর্বদা ধ্বনিকে বিদ্রুপ করতে ব্যস্ত থাকে। অথচ ধ্বনি যখন উৎসের দিকেই ফিরে এসে বাজতে থাকে, তখন সেটা হয় প্রতিধ্বনি। প্রতিধ্বনির কোন আলাদা অস্তিত্ব নেই।

সম্প্রসারিত-ভাব : ধ্বনিই প্রতিধ্বনির জন্মদাতা এবং ধ্বনির কাছে প্রতিধ্বনি তাই মহাঋণী। অথচ প্রতিধ্বনি তার দীনতা ঝণ স্বীকার করে না বরং উল্টে ধ্বনিকে ব্যঙ্গ করার প্রচেষ্টা চালায়, যাতে তার ঋণ অপ্রকাশ থাকে। অর্থাৎ ব্যাপারখানা এ রকম যে প্রতিধ্বনি আছে বলেই ধ্বনি বেঁচে আছে। আর এ অকৃতজ্ঞ প্রতিধ্বনির ন্যায় অনেক মানুষের আনাগােনা দেঁখতে পাই আমাদের চারপাশে, যারা অপরের অনুগ্রহ সিক্ত হয়ে চরম দুরবস্থায় কোন রকম স্থিতিশীল হওয়ার সুযােগ পায় এবং পরবর্তীতে ভাগ্যক্রমে অনুগ্রহকারী অপেক্ষা উচ্চাসনে সমাসীন হয়ে বা সমমানের হয়ে এরা অনুগ্রহকারীর প্রদেয় অনুগ্রহ স্বীকার তাে করেই না বরং তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে বা ছােট করে দেখতে সদা সচেষ্ট থাকে। দুনিয়ার বহু জাতি আল্লাহর যাবতীয় নেয়ামত প্রতিনিয়ত ভােগ করে চলেছে এবং একইভাবে আল্লাহকে অস্বীকার করছে। এমনকি তার অস্তিত্বহীনতা প্রমাণ করার চেষ্টায় সর্বদা তাদের সময়, শ্রম, মেধা নিয়ােজিত এবং তার নেয়ামতকে প্রাকৃতিক বলে মানব জাতির নিকট উপস্থাপন করছে। অথচ আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত তাদের নিকট নিঃশ্বাস পর্যন্ত চলতে পারে না। এরা দুনিয়ার ঘূণ্যতম, আল্লাহর অকৃতজ্ঞ সৃষ্টি। স্বতঃসিদ্ধ কথা হলাে যা সত্য তা স্বীকার করে নেওয়ার মধ্যে অগৌরবের কিছু নেই বরং অস্বীকার করার মধ্যে রয়েছে সংকীর্ণ মনের মানসিক অস্থিরতা। যার নিকট ঋণি তার ঋণের কথা স্বীকার না করে উল্টো তাকে ব্যঙ্গ করার মধ্যে কোন সফলতা নেই বরং তা বড় রকমের পাপ ।

আরো পড়ুন: ধনের মানুষ অপেক্ষা মনের মানুষই বড়

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment