নহে আশরাফ যার আছে শুধু বংশ পরিচয়, সেই আশরাফ জীবন যাহার পুণ্য কর্মময়। বা, জন্ম হােক যথা তথা, কর্ম হােক ভালো – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “নহে আশরাফ যার আছে শুধু বংশ পরিচয়, সেই আশরাফ জীবন যাহার পুণ্য কর্মময়। বা, জন্ম হােক যথা তথা, কর্ম হােক ভালো ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

নহে আশরাফ যার আছে শুধু বংশ পরিচয়, সেই আশরাফ জীবন যাহার পুণ্য কর্মময়। বা, জন্ম হােক যথা তথা, কর্ম হােক ভালো - ভাবসম্প্রসারণ

নহে আশরাফ যার আছে শুধু বংশ পরিচয়, সেই আশরাফ জীবন যাহার পুণ্য কর্মময়। বা, জন্ম হােক যথা তথা, কর্ম হােক ভালো ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব: পৃথিবীতে যার জীবন পুণ্য-কর্মময়, তার জন্ম যে বংশেই হোক না কেন, প্রকৃতপক্ষে তিনিই মর্যাদাবান । অপরপক্ষে, জীবন যার গ্লানিময়, জন্ম তার যে বংশেই হোক না কেন সে মর্যাদাহীন হিসেবে গণ্য ।

সম্প্রসারিত ভাব: সুন্দর ও উচ্চবংশ মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠত্ব বহন করে না। চলমান সমাজব্যবস্থায় বংশপরিচয়ের একটি মূল্য আছে বটে, তবে এ বংশমর্যাদা মানুষকে প্রকৃত মর্যাদাবান করে গড়ে তুলতে পারে না । গোঁড়া সামন্তবাদী সমাজব্যবস্থায় আশরাফ-আতরাফ— এ দুই শ্রেণির পরিচয় পাওয়া যেত এবং তাদের মধ্যে সামাজিক বৈষম্য প্রকট ছিল। কিন্তু সভ্যতার এ যৌবন সন্ধিকালে সামাজিক এ বিশ্বাস আর বৈষম্য মুখ থুবড়ে পড়েছে। এখন সমাজে মানুষের বংশ-পরিচয় তেমন কোনো কৃতিত্ব বহন করছে না। মানুষ এখন স্বীয় মহৎ কর্মবলে বংশগত গ্লানি দূর করতে সক্ষম। উপরন্তু সমাজের উচ্চাসন তারা করছে অলংকৃত। উচ্চবংশে জন্মগ্রহণকারী যেকোনো ব্যক্তি যদি পাপাচারে লিপ্ত হয়, অপকর্মের দোষে দুষ্ট হয় তবে সে নিশ্চিতভাবে সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা হারাবে। মানুষ তাকে সমাজের উচ্চাসন থেকে ছুড়ে ফেলবে নোংরা আবর্জনায়। এক্ষেত্রে বংশগৌরবের পরিচয় তার সম্মানকে রক্ষা করতে পারবে না। অপরপক্ষে, কেউ যদি নীচু বংশে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও তার মহৎ কর্ম ও চারিত্রিক আদর্শের হিরণ্ময় দীপ্তিতে হয়ে ওঠেন অনন্য, উজ্জ্বল তবে নিঃসন্দেহে তিনি অর্জন করবেন সমাজের মানুষের অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা। বর্তমান সমাজে মানুষের কাছে বংশপরিচয় নয় বরং কর্মই মূল বিবেচ্য বিষয়।

বিকল্প ১

ভাব-সম্প্রসারণ : জন্ম মানুষের প্রকৃত পরিচয় বহন করে না; বরং কর্মই মুখ্য। উঁচু ঘরে কিংবা সম্রান্ত বংশে জন্ম নিয়েও মানুষ হীন কাজ করতে পারে; অন্যদিকে অতিশয় দরিদ্র পরিবারের সন্তানও তার কর্মে পৃথিবীতে বৃহৎ অবদান রাখতে পারে। সুতরাং কর্মই মানুষের পরিচয়ের একমাত্র মাপকাঠি। পৃথিবীতে একসময় নানা বৈষম্যে বংশগৌরবকে খুবই মর্যাদার বলে চিহ্নিত করা হতাে। কে কোন বংশে জন্মেছে- এ নিয়েও সম্মানের পার্থক্য করা হতাে। বরং নিচু তথা দরিদ্র বংশে যারা জন্মেছে তাদের অপমান-অপদস্তের সীমা ছিল না। কিন্তু বর্তমান সমাজব্যবস্থায় বংশ পরিচয় প্রায় অচল। বংশ পরিচয় কিংবা বংশ মর্যাদা এখনাে মানুষকে প্রকৃত মর্যাদা দিতে সক্ষম নয়; বরং কর্মময় জীবনের কাছে জন্মগৌরব বা বংশ মর্যাদার কোনাে মূল্যই নেই। কেননা জন্ম বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে স্রষ্টার ওপর; তাই মানুষের করার কিছু নেই। অন্যদিকে, কর্ম মানুষের নিয়ন্ত্রণে। কর্মের মধ্য দিয়ে মানুষ নিজেকে বিকশিত করার যথেষ্ট সুযােগ পায়। আর কর্মেই প্রকাশিত হয় মানুষের মনুষ্যত্ব। সুতরাং মানুষের প্রকৃত পরিচয়ে জন্ম গৌণ, কর্মই সেখানে মুখ্য। তাই বলা যায় কর্মই জীবন’। সামন্ততান্ত্রিক সমাজ-ব্যবস্থার কারণে মানুষের মধ্যে নানা শ্রেণির উদ্ভব ঘটেছে। পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় মানুষে মানুষে প্রভেদ থেকে গেলেও কোথাও কর্মকে অবমূল্যায়ন করা হয় না। সুতরাং একনিষ্ঠ শ্রম আর একান্ত কর্ম-সাধনা সর্বত্রই সমাদৃত হয়। আর তাই জন্মের পরিচয় আজ হাস্যকর ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষের দৃষ্টান্ত রয়েছে, যাদের জীবনে জন্ম বড়াে নয়, কর্মই তাদের অবিস্মরণীয় করেছে। জর্জ ওয়াশিংটন সামান্য একজন কৃষকের সন্তান হয়েও আপন যােগ্যতা ও কর্ম-সাধনায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। এক্ষেত্রে আরও উল্লেখযােগ্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের প্রেসিডেন্ট, প্রখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী এপিজে আবদুল কালামের জন্ম হয়েছিল একজন পাটনির গৃহে। দরিদ্র পরিবারে জন্মেও কাজী নজরুল ইসলাম হয়েছেন গণমানুষের প্রিয় কবিবিদ্রোহী কবি । আমাদের চারদিকে তাকালে কর্মগুণের প্রাধান্য দেখতে পাওয়া যায়। গােবরে যে পদ্মফুল জন্মে, অথচ এর সৌন্দর্য সকলকে বিমােহিত করে। সুতরাং কর্মই প্রধান। আর মানুষের উচিত জনের জন্য যে গ্লানি কিংবা গৌরব সব পরিহার করে আপন কর্মে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। মানবজীবনে যে যশ, সম্মান, ভালােবাসা, শ্রদ্ধা, ভক্তি, প্রতিপত্তি এসবই কর্মের ফসল, জন্মের কোনাে ভূমিকা নেই।

পৃথিবীতে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব তার কর্মে; মানুষের মর্যাদা নির্ভর করে তার কর্মের ওপর, জন্মের ওপর নয়। যারা আজ মহান মানুষ হিসেবে স্মরণীয় তাঁদের পুণ্যকর্মই ছিল একমাত্র ব্রত। সুতরাং মানুষের মহকর্মেই তার প্রকৃত পরিচয়।

বিকল্প ২

মূলভাব : বংশে নয় কর্মেই মানুষের বড় পরিচয়।

সম্প্রসারিত-ভাব : অতীত গৌরব, বংশ মর্যাদা আর আভিজ্যাত্যের অহংকার মানুষকে বড় করে না। মানুষ তার নিজের পরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে হয়। অতীতকে নিয়ে গৌরব করার প্রবণতা মানুষকে স্বাপ্নিক করে। বাস্তবকে অস্বীকার করে কল্পচারী হয় মানুষ। বংশ মর্যাদা আর আভিজাত্য মানুষের ভিতরকার মানবিক গুণাবলিকে হ্রাস করে। মনের মধ্যে উঁচু নিচু ভেদাভেদ ও শ্রেণী বৈষ্যম্য সৃষ্টি করে এবং মানুষকে মানুষ হিসাবে সম্মানিত না বা স্বীকৃতি দেয়, দরিদ্রকে ঘৃণা, নীচুকে অবহেলা করার প্রবণতা সৃষ্টি করে। কিন্তু সব মানুষই এক সৃষ্টিকর্তার হাতে গড়া। জীবনের চাহিদা, অধিকার সকলের সমান। সমাজে সাধারণ বলে, অর্থহীন বলে যে অপাংক্তেয় হয়ে রইবে -এ বিশ্বাস যার মধ্যে আছে তিনি সত্যিকার মানুষ নন। মানুষের সত্যিকার প্রতিষ্ঠা তার কর্মে। অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে যারা পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলেছেন, মানব কল্যাণে যারা জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই বংশ মর্যাদায় ছোট হতে পারে কিন্তু স্বীয় কর্মই তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি মানব পূজারী, তিনি কীর্তিমান। কীর্তিমানের মৃত্যু নেই।

বংশ থেকে কর্ম বড়। কর্মে যে বড় তার বংশও তখন মানুষের নিকট বড় মনে হয়। কর্মে ছোট হলে, বড় বংশীও বড় হয় না।

আরো পড়ুন: দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি সত্য বলে, আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment