প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “পথের প্রান্তে আমার তীর্থ নয়, পথের দুধারে আছে মাের দেবালয় ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
পথের প্রান্তে আমার তীর্থ নয়, পথের দুধারে আছে মাের দেবালয় ভাবসম্প্রসারণ
ভাব-সম্প্রসারণ : সমগ্র জীবনের সাধনার শেষে মানুষ সিদ্ধিলাভ করতে চায়। জীবন-পথের শেষ প্রান্তে এসে মানুষ জীবনের পরম বাঞ্ছিতকে পেতে চায়। সে জন্যে দূর-দূরান্তের দুর্গম যাত্রাপথ অতিক্রম করে পরিণত বয়সে মানুষ পবিত্র তীর্থস্থানে এসে উপস্থিত হয়। সেখানে স্রষ্টা কিংবা দেবতার আরাধনা করে তারা তৃপ্তিলাভ করে। আবহমান কাল ধরে মানুষ এভাবেই ধর্মসাধনা করে আসছে।
কিন্তু ধর্মসাধনা কেবল পবিত্র তীর্থস্থান দর্শনের মধ্যেই সীমিত হতে পারে না। প্রকৃত ধর্মসাধক জানেন, স্রষ্টার অধিষ্ঠান কেবল উপাসনালয়ে নয়, দেবতার অধিষ্ঠান কেবল তীর্থস্থানে বা প্রতিষ্ঠিত পাষাণের মূর্তির মধ্যে নয়। স্রষ্টা ও দেবতার আসন রয়েছে সাধারণ জনগণের মধ্যে। দুঃখী, নিরন্ন মানুষের জীবনের সধ্যে তাঁর মহিমাময় আসন পাতা। মানুষের প্রেম, প্রীতি, মমতা ও ভালোবাসার মধ্যে স্রষ্টার স্বরূপের বিচিত্র প্রকাশ। সুতরাং ধর্মসাধনা করতে হলে কিংবা স্রষ্টার লীলা উপলব্ধি করতে হলে কেবল তীর্থক্ষেত্রে গেলে চলে না, জীবনের চলার পথে পদে পদে তাঁকে পাওয়ার সাধনা করা যায়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নানা কাজকর্মের মধ্যেই আমরা স্রষ্টার অস্তিত্ব অনুভব করতে পারি। জীবনের চলার পথে প্রতিটি লগ্নে দুঃখী ও বিপন্ন মানুষের কল্যাণে ছোট ছোট অবদান রেখেও আমরা স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করতে পারি। এ জন্যে জীবনের শেষ প্রান্তে উপনীত হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করতে হয় না। প্রাত্যহিক জীবনের চলার পথে সৎকাজ, মহৎ চিন্তা ও মঙ্গল সাধনার মাধ্যমেই আমরা ধর্মসাধনায় অংশ নিতে পারি।
বস্তুত মানুষের সমগ্র জীবনই এক অর্থে তীর্থস্থান। কারণ, পরম স্রষ্টা বিরাজ করেন সব মানুষের মধ্যেই।
বিকল্প ১
মূলভাব : এ পৃথিবীতে মানুষ স্রষ্টার প্রতি ভক্তির জন্য উপাসনালয় গড়ে তুলেছেন। নিবৃতে স্রষ্টার ধ্যান করলে তাঁকে পাওয়া যাবে; এটাই মানুষের বিশ্বাস।
ভাবসম্প্রসারণ : মানুষ জগৎ সংসারে লক্ষ লক্ষ বছর আগে থেকে বাস করে আসছে। পৃথিবীতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের বসবাস। ধর্মীয় অনুভূতি, স্রষ্টাকে অনুসন্ধান ও স্রষ্টার প্রতি ভক্তির কারণে মানুষ উপাসনালয়, মন্দির-মসজিদ ইত্যাদি গড়ে তুলেছে। মানুষ মনে করে উপাসনাগৃহে নিভৃতে স্রষ্টার ধ্যান করলে তাঁকে পাওয়া যায়। মানুষের ধারণা স্রষ্টা শুধু এখানেই বিরাজ করেন, অন্য জায়গায় স্রষ্টা নেই। কিন্তু নির্দিষ্ট উপাসনাগৃহে গিয়ে মুক্তি পেতে চাইলে এবং পুণ্য অর্জনের আশা করলে কি হবে, সেখানে মুক্তি নেই এবং স্রষ্টাকেও পাওয়া যায় না। কারণ স্রষ্টা বিরাজ করেন সৃষ্টির মধ্যে, মানুষের মধ্যে। দেবালয়ের বা উপাসনাগৃহের চারপাশে রয়েছে সৃষ্টি জগৎ, দেবালয়ের পথ জুড়ে আছে অসংখ্য মানুষের দল। তাদের সেবা করতে পারলে এবং তাদের আপন করে নিতে পারলে প্রকৃত কাজ হবে। মানুষের সেবাই হলো প্রকৃত উপাসনা। মানুষই শ্রেষ্ঠ দেবালয়।
সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভ কেবল উপাসনালয়ের মধ্যে নয়; উপাসনালয়ের বাইরেও অনেক দেবালয় আছে। আসলে, শ্রেষ্ঠ দেবলয় হলো মানুষ।
বিকল্প ২
দেবতাকে পাওয়ার জন্য দূরের পথে না গিয়ে বরং জীবনের চারপাশে সন্ধান করলেই দেবতার সন্ধান পাওয়া সম্ভব । কেননা তিনি জীবের চারপাশের পরিমণ্ডলেই অবস্থান করে থাকেন । দেবতাকে পাওয়ার আশায় অনেকেই অসীমের পানে ধ্যানমান থাকেন । সংসারের সকল মায়া – মমতা ছিন্ন করে তীর্থে তীর্থে ঘুরে বেড়ান দেবতার সন্তুষ্টির জন্য ।
তারা ভুলে যান সৃষ্টির মাঝেই বাস করেন জগৎস্বামী । এ সহজ সত্য উপলব্ধি করতে না পেরে তারা মূলত জীবনের মূল্যবান সময়ই শুধু ব্যয় করেন । স্রষ্টার প্রিয় হলাে মানুষ । তাঁর করুণা , প্রেরণা , ভালােবাসা সবই মানুষকে কেন্দ্র করে । জগতের প্রতিটি মানুষের প্রতি তার প্রেম ও সহানুভূতি সমান । মানুষের তরেই তিনি অসীম ও প্রেমময় ।
সুতরাং স্রষ্টাকে পেতে হলে ভালােবাসতে হবে মানুষকে । কালে কালে মহামানবেরা এ সত্য প্রচার করে গেছেন । তাদের সবকিছু দিয়ে তারা ভালােবেসেছেন । মানুষকে , সেবা ও সংগ্রাম দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মানুষের অধিকার ও মর্যাদাকে । অতএব ইট – পাথরের দেবালয়ে কিংবা অসীমের পানে দেবতার সন্ধান না করে সৃষ্টির মাঝেই দেবতার অস্তিত্ব উপলব্ধির চেষ্টা করা উচিত । নিরালোেক নয় , দিব্যলােকেই তাঁর অবস্থান ।
মানুষের কর্মে , সুখে – দুঃখে , হাসি – কান্নায় তিনি একাকার হয়ে আছেন । সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা থাকলে অসহায় মানুষের মধ্যেই তাকে খুঁজে পাওয়া যায় । সুতরাং মানুষকে ভালােবাসলেই স্রষ্টাকে খুশি করা যায় । দেবতার পরমপ্রিয় সৃষ্টি মানুষ । মানুষের মধ্যেই দেবতার বাস । তাই দেবতাকে পাওয়ার জন্য মানুষকে ভালােবাসাই যথেষ্ট , তার জন্য পথে পথে ঘুরে তীর্থের প্রয়ােজন নেই ।
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।