পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন, নিজের অনিষ্ট বীজ করে সে বপন – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন, নিজের অনিষ্ট বীজ করে সে বপন ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন, নিজের অনিষ্ট বীজ করে সে বপন

পরের অনিষ্ট চিন্তা করে যেই জন, নিজের অনিষ্ট বীজ করে সে বপন ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব: যে অপরের ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করে পরিণামে তাকেই ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয় প্রকৃতি সর্বদা সমতা নিয়ন্ত্রণ করে বলেই মানুষ এ বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। পরের অনিষ্ট সাধন এর পরিণাম ভাল হয় না এতে মূলত নিজের ক্ষতি করা হয়।

সম্প্রসারিত ভাব: জগতের অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষের পার্থক্য এখানেই যে, সে শুধু নিজের কথা চিন্তা করে পৃথিবীতে বেঁচে থাকে না তাকে তার চারপাশের জগৎ নিয়েও ভাবতে হয়। প্রকৃতপক্ষে মানুষের নৈতিক গুণাবলীর অন্যতম হলো পরোপকার। অপরের মঙ্গল সাধনের মধ্য দিয়ে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জিত হয়। অপরদিকে, চিত্রশুদ্ধির অভাবে একশ্রেণীর ব্যক্তি অকারণে পরের অনিষ্ট চিন্তা করে।

সংকীর্ণ স্বার্থবোধ তাদের অন্ধ করে দেয়। ‘সত্যম- শিবম- সুন্দরম’ এর আদর্শ তাদের স্পর্শ করে না। বরং কুপ্রবৃত্তির অবিরত চর্চা দ্বারা পশুত্বের চূড়ান্ত পর্যায়ে তারা নিজেদের নামিয়ে আনে। এ শ্রেণীর লোক সর্বতোভাবে সমাজচ্যুত হয়ে পড়ে। কেউ তাদের শ্রদ্ধা করে না।

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজকে কল্যাণকামী ও সর্বাঙ্গ সুন্দর করার জন্য প্রত্যেকটি মানুষের উচিত অন্যের মঙ্গল কামনা করা। অন্যের ক্ষতি করার প্রবণতা থাকা উচিত নয়। অন্যের অনিষ্ট সাধন শুধু সমাজগর্হিত কাজই নয় ধর্মীয় ও নৈতিক বিচারেও বড় অন্যায়। মানুষ হিসেবে পরের জন্য নিজ স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেওয়াও মূল আদর্শ হওয়া উচিত। যে অন্যের অনিষ্ট চিন্তা করে সে নিজের অজ্ঞাতেই আপন অনিষ্টেরই বীজ বপন করে। কারণ অশুভ চিন্তার পরিনাম অশুভ হয়ে থাকে।

আর কেউ যদি অন্যের ক্ষতি করে তাহলে সে নিজের শত্রু ও প্রতিপক্ষ তৈরি করে। আপন কর্মের প্রতিদান স্বরূপ একদিন তাকে মারাত্মক পরিণামের মুখোমুখি হতে হয়। অন্যায় আর অকল্যাণ দুর্ভোগেরই জন্ম দেয়। ব্যক্তিগত সততা আর কল্যাণ চিন্তা মানুষের জন্য বয়ে আনে নিরাপত্তা ও স্বস্তি। এটা সামাজিক অগ্রগতি ও শান্তির পূর্বশর্ত।

মন্তব্য: পরের অনিষ্ট সাধন থেকে বিরত থাকা সবারই কর্তব্য। পরের অনিষ্ট চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হলে নিজের অনিষ্টও হবে না। সর্বদা অন্যের উপকারের কথা ভাবা উচিত। এতেই মানব জীবনের প্রকৃত সার্থকতা নিহিত। কারণ অন্যের ভালো চিন্তা করলে মানুষের মনও ভালো থাকে।

বিকল্প ১

মূলভাব: যে অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টা করে, পরিণামে তাকেই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। প্রকৃতি সবসময় ভারসাম্য রক্ষা করে বলেই মানুষকে এ বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়।

সম্প্রসারিত ভাব: বিশ্বের সব ধর্মশাস্ত্রে অন্যের মঙ্গল কামনাকারীর প্রশস্তি-কীর্তন করা হয়েছে। যারা অন্যের ক্ষতি করে, তারা দুষ্কৃতিকারী। নিজেদের অপকর্মের ফল নিজেদেরকেই ভােগ করতে হয়। যে অন্যায় করে, সে তার নিজের বিবেকের কাছে অপরাধী হয়ে ওঠে। অতএব, তার অন্তরে আত্মগ্লানিরূপ নরকানল সর্বদা প্রজ্বলিত থাকে। মুহুর্তের জন্যও তার জীবনে স্বস্তি আসে না। বাস্তবেও আমরা এর প্রতিফলন দেখতে পাই। অনিষ্টকারীকেও এর পরিণাম ভােগ করতে হয়। মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। পরের ক্ষতি সাধনের মতাে কোনাে গর্হিত কাজ করার চিন্তা থেকে মানুষের দূরে থাকা উচিত। প্রতিটি মুহূর্তেই মানুষকে স্মরণ রাখতে হবে, অপরের ক্ষতির চিন্তা করা মহাপাপ। যে কাজে অন্যের ক্ষতি হবে, সেই কাজ করা কোনাে সুবিবেচকের কাজ নয়।
সুতরাং ভালো কর্মসম্পাদনে আমরা আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করব। অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া মানুষের মহৎ গুণাবলির একটি। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানাের চেষ্টা করা সবার কর্তব্য। সমাজকে শান্তিময় করে তুলতে হলে অন্যের অভান-অনটন, দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে হবে। কিন্তু আমাদের সমাজে এক শ্রেণির মানুষ আছে, যারা অন্যের কল্যাণ তাে করেই না, বরং ক্ষতি সাধনে সর্বদা উদগ্রীব থাকে। কিন্তু তাদের বিপদ যে তারা নিজেরাই ডেকে আনছে, তা তারা জানে না। সুতরাং নিজের এবং অপরের স্বার্থে তথা সার্বিক স্বার্থে প্রতিটি মানুষের উচিত পরের অনিষ্টের কথা চিন্তা না করে বরং পরের কল্যাণে কাজ করা।

মন্তব্য: সবসময় অন্যের উপকারের কথাই ভাবা উচিত। এর মধ্যেই মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতা ও সুখ নিহিত।

বিকল্প ২

মূলভাব : যে ব্যক্তি অপরের অনিষ্ট চিন্তা করে সে দু’দিন আগে হোক আর পরে হোক নিজের অনিষ্টও ভোগ করে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।

সম্প্রসারিত ভাব : বিশ্বের সমস্ত ধর্মশাস্ত্রে অপরের মঙ্গল কামনাকারীর প্রশস্তি কীর্তন করা হয়েছে। যারা পরের অনিষ্ট করে তারা দুষ্কৃতিকারী। নিজের অপকর্মের ফল তাদেরকে ভোগ করতেই হবে। যে অন্যায় করে সে নিজের বিবেকের কাছে অপরাধী। অতএব তার অন্তরে আত্মগ্লানিরূপ নরকানল সব সময় প্রজ্জ্বলি থাকে। মুহূর্তের জন্যেও তার জীবনে স্বস্তি নেই। বাস্তবেও আমরা এর প্রতিফল দেখতে পাই। অনিষ্টকারীকেই পর্যাপ্ত শাস্তি ভোগ করতে হয়। মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। অতএব পরের অনিষ্ট সাধনের মত কোন গর্হিত কাজ করার চিন্তা থেকে আমাদের প্রত্যেকের প্রত্যেককে রক্ষা করা উচিত। আমাদের প্রতি মুহূর্তে স্মরণ রাখতে হবে যে, অপরের অনিষ্ট চিন্তা করা মহাপাপ। যে কাজে অন্যের অনিষ্ট ঘটবে সে কাজ করা কোন সুবিবেচক লোকের উচিত নয়। সুতরাং লোকহিতকর কর্ম সম্পাদনে আমরা আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করবো। এ মর্মে উল্লেখ্য যে, দেখ ভাই চরাচরে, যে যেমন কর্ম করে তেমনি ফল সে তার পায়। মানব জীবনের মহৎ গুণাবলীর মধ্যে পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। পরোপকারের মত মহৎ গুণের তুলনা নেই। অধিকাংশ মানুষের জীবন দুঃখ-দারিদ্র্যে পরিপূর্ণ। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা সবার থাকা উচিত। পৃথিবীর জীবন সুখকর করে তোলার জন্য মানুষের জীবন থেকে অভাব-অনটন, দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে হবে।

তাই আমাদের সমাজে এক শ্রেণীর লোক আছে যারা অপরের কল্যাণ তো করেই না, বরং অপরের ক্ষতিসাধনে নিয়োজিত থাকে। কিন্তু তাদের বিপদ যে তারা নিজেরাই ডেকে আনছে তা তারা জানে না। ফলে তারা অজ্ঞাতসারে নিজেদেরই অনিষ্ট ডেকে আনে।

বিকল্প ৩

মূলভাব : আপনার উপকার হবে ভেবে যেজন অপরের অপকারে আত্মনিয়ােগ করে, পরিণামে সে নিজেই কষ্ট ভােগ করে।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে মানুষ পরস্পর পরস্পরের সহযােগী হয়ে বসবাস করে। একে অপরের কল্যাণ সাধন করাই মানুষের মানবিক ও নৈতিক ধর্ম। পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষের পার্থক্য হলাে-মানুষ শুধু নিজের কথা
চিন্তা করে পৃথিবীতে বেঁচে থাকে না। মানুষকে তার চারপাশের জগৎ নিয়েও ভাবতে হয়। যে মানুষ সর্বদা অন্যের উপকার করার
কথা ভাবে এবং নিজেকে সর্বদা অন্যের হিতার্থে ব্যাপৃত রাখে সে সমাজে সম্মানিত হয়। অন্যদিকে, মানুষ যখন নিজের স্বার্থকে
প্রাধান্য দেয় তখন সে অপরের ক্ষতিসাধনে তৎপর হয়। যে মানুষ সর্বদা অন্যের ক্ষতির চিন্তায় মগ্ন থাকে, সে সর্বদা হীনম্মন্য অবস্থায় থাকে। এতে তার চিত্তে শুদ্ধি আসে না বলে সে তার স্বীয় কর্মক্ষেত্রেও উন্নতি করতে পারে না। কেননা, মানুষের স্বার্থবুদ্ধি প্রাধান্য পেলে তার পরিণতি শুভ হয় না। অপরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নিজে লাভবান হওয়ার চেষ্টা অন্যায় কর্ম বলে বিবেচিত হয়। আর এ অন্যায় যারা করে অর্থাৎ নিজের স্বার্থকে যারা বড় করে দেখে তারা মহৎ ব্যক্তি নয়, তাদের কাছ থেকে মহৎ কিছু প্রত্যাশা করা যায় না। তারা সংকীর্ণমনা, অনুদার। তাদের কাজকর্মে শুধু অন্যের একার ক্ষতি হয় না বরং সমাজ ও জাতির পাশাপাশি তার নিজেরও বিরাট ক্ষতি হয়। পার্থিব কর্মের ফল মানুষ কোনাে না কোনােভাবে পৃথিবীতেই পেয়ে যায়। তাই এহেন ব্যক্তিরা নিজেই বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকে। রবি ঠাকুরের ভাষায়-

“যারে তুমি নিচে ফেল, সে তােমারে বাধিছে যে নিচে,
পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তােমারে পশ্চাতে টানিছে।”

মন্তব্য : “To every action there is an equal and opposite reaction.” অর্থাৎ প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান বা বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অর্থাৎ অন্যের যেটুকু ক্ষতি করা হয় তার সমপরিমাণ ক্ষতি নিজেরও হয়ে যায়। তাই অন্যের ক্ষতি করার চিন্তার পরিবর্তে পরােপকারে আত্মনিয়ােগ করাই উত্তম।

আরো পড়ুন: নানান দেশের নানান ভাষা, বিনা স্বদেশী ভাষা মিটে কি আশা?

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment