পুষ্প আপনার জন্যে ফোটে না, পরের জন্যে তােমার হৃদয় কুসুমকে, প্রস্ফুটিত করিও – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “পুষ্প আপনার জন্যে ফোটে না, পরের জন্যে তােমার হৃদয় কুসুমকে, প্রস্ফুটিত করিও ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

পুষ্প আপনার জন্যে ফোটে না, পরের জন্যে তােমার হৃদয় কুসুমকে, প্রস্ফুটিত করিও - ভাবসম্প্রসারণ

পুষ্প আপনার জন্যে ফোটে না, পরের জন্যে তােমার হৃদয় কুসুমকে, প্রস্ফুটিত করিও ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্যই মানুষ জন্মেনি। পরস্পরের উপকার সাধনের মধ্যেই মানব জীবনের
চরম সার্থকতা নিহিত।

সম্প্রসারিত ভাব : ফুল পরহিত ব্রতে উৎসর্গীকৃত জীবনের সার্থক প্রতিনিধি। সে কখনাে তার নিজের প্রয়ােজনে আসে। সে তার সৌরভ সৌন্দর্যে সকলকে মােহিত করে। সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে সে শশাভা পায় সকলের মনােরাজ্যে। নিজের সৌন্দর্য ও সৌরভ অন্যের মাঝে বিলিয়ে দেয়াতেই তার সার্থকতা। স্বীয় গুণ ও বৈশিষ্ট্যের জন্য পবিত্রতার প্রতীক ফুল দেবতার চরণে নিবেদিত হয় নৈবেদ্য হিসেবে। এভাবে ফুটন্ত ফুল তার অপার সৌন্দর্য ও পবিত্র সৌরভ বিলিয়ে এক সময় নিঃস্ব হয়ে যায়, বৃন্তচ্যুত হয়ে যায়। মানব জীবনকেও ফুলের সাথে তুলনা করা যায়। মানুষ শুধু ভােগ-বিলাস ও নিজ স্বার্থোদ্ধারের জন্যই জন্মগ্রহণ করেনি। পরের কল্যাণে জীবনকে উৎসর্গ করার মাঝেই তার জীবনের চরম ও পরম সার্থকতা। পরের কল্যাণ সাধনই মহত্ত্বের লক্ষণ। জগতের সাধু ও মহৎ ব্যক্তিরা তাই করেন। তারা সর্বদা পরের হিত সাধনে
ব্যাপৃত থাকেন এবং পরের তরে জীবন বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠাবােধ করেন না। কেননা প্রেম-প্রীতি, ভালােবাসা ও ব্যক্তিস্বার্থ পরিহারের মাধ্যমেই সমাজ সুন্দর ও সার্থক হয়ে ওঠে। মহৎ ব্যক্তিগণ বিশ্ব মানবের আদর্শ। তারা সকলের প্রিয় এবং সকলের আপনজন। তাদের জীবন পুষ্পের ন্যায় পরার্থে উৎসর্গীকৃত। পক্ষান্তরে, স্বার্থপর ব্যক্তি মনে করে সমস্ত জগৎটা তার একার উপভােগ্য। সকলকে বঞ্চিত করে সে বড় হতে চায়। ফলে বিদ্বেষ, অমিল, কলহ, হিংসা মনুষ্য সমাজকে কলুষিত করে তােলে।

মন্তব্য : আত্মসুখ অন্বেষণের মাঝে প্রকৃত সুখ খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই আমাদের সকলের উচিত পরের হিতার্থে নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দেওয়া।

বিকল্প ১

ভাবসম্প্রসারণ: পরের উপকারে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়াতেই জীবনের সার্থকতা। নিজের স্বার্থকে বড় বলে বিবেচনা না করে অপরের কল্যাণে নিজেকে নিয়ােজিত করতে পারলে জীবনের উদ্দেশ্য সফল হয়। এর মাধ্যমে জীবনের প্রকৃত অর্থ ও সুখ খুঁজে পাওয়া যায় ।

ফুল গাছে ফুটে চারদিকে সৌন্দর্য বিলিয়ে ঝরে পড়ে। সে কখনাে নিজের জন্যে ফোটে না, অন্যকে আকৃষ্ট করতে, মুগ্ধ করতেই ফোটে। এতেই ফুলের সার্থকতা মানবজাতির উচিত ফুলের এ কল্যাণকর ব্রতকে নিজের জীবনের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করা। মানুষ যদি তার ক্ষণস্থায়ী জীবন ভােগবিলাস ও স্বার্থের কাজে ব্যয় করে তবে তাতে মানুষের সংকীর্ণতা ও স্বার্থপরতাই প্রকাশ পায়। নিজের সুখ বা স্বার্থ নয়, বরং পরের জন্যে জীবনকে কাজে লাগাতে পারলে তাতে মানুষের মহত্ত্বের প্রকাশ ঘটে। নিজের সুখের কথা বিসর্জন দিয়ে, অপরের কল্যাণের জন্যে প্রয়ােজনে জীবন ও মন উৎসর্গ করলে যে সুখ পাওয়া যায় তা-ই প্রকৃত সুখ। মানুষ যদি ফুলের মতাে মনােভাব নিয়ে কাজ করে তবে অবশ্যই সুখ খুঁজে পাবে। মহাজ্ঞানী, উদার ও মহৎ ব্যক্তিরা কখনাে নিজ স্বার্থকে বড় করে দেখেন না। তাঁদের ধ্যানে ও কর্মে দেশ ও দশের ভাবনাই প্রধান। মহৎ মানুষ ফুলের মতাে তার সুন্দর গুণাবলি দিয়ে দেশ ও দশের কল্যাণে, পৃথিবীকে সুন্দর, নির্মল ও আনন্দমুখর করে গড়ে তুলতে প্রাণপণে প্রচেষ্টা চালান। এ ধরনের স্বার্থত্যাগী মানুষের জন্যে আজও পৃথিবী টিকে আছে। ধর্মপ্রবর্তকরা নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন মানুষকে সৎ, সুন্দর ও সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্যে। তাঁরা মনে করেন, তাঁদের আগমনই ঘটেছে মানুষের কল্যাণের জন্যে।

পুষ্প যেমন অপরের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করে, তেমনি জ্ঞানী, উদার ও মহৎ ব্যক্তিরা অপরের কল্যাণ সাধনে ব্রতী হয়ে নিরলস সাধনা করেন। আমাদের সকলেরই উচিত দেশ ও জাতির কথা চিন্তা করে ফুলের মতাে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা।

বিকল্প ২

মূলভাব : মানুষ শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্যই পথিবীতে জন্মগ্রহণ করে না। পরস্পরের কল্যাণে ব্যাপৃত থাকার মধ্য দিয়েই মানুষ তার জীবনকে অর্থবহ করে।

সম্প্রসারিত-ভাব : ফুল পরহিত ব্রতে উৎসর্গীকৃত জীবনের সার্থক প্রতিনিধি। সে কখনাে তার নিজের প্রয়ােজনে ফোটে না। সে তার সৌরভ ও সৌন্দর্যে সকলকে বিমােহিত করে। সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে সে শােভা পায় সকলের মনােরাজ্যে। নিজের সৌন্দর্য ও সৌরভ অন্যের মাঝে বিলিয়ে দেওয়াতেই তার সার্থকতা। স্বীয় গুণ ও বৈশিষ্ট্যের জন্য পবিত্রতার প্রতীক ফুল দেবতার চরণে নিবেদিত হয়। নৈবেদ্য হিসেবে ফুল তার অপার সৌন্দর্য ও আমােদিত সৌরভ দিয়ে মানব মনের মণিকোঠায় বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মাধ্যমে হয়েছে প্রেমিকের আরাধ্য, হয়েছে। দেবতার পূজার উপকরণ ফলে সে নিজেকে করেছে ধন্য। তেমনি মানবজীবনকে সার্থক করার জন্য চাই ফুলের মতােই নিঃস্বার্থ মনােবৃত্তি। অপরের জন্য নিবেদিত প্রাণ ও মহত্ত্বের প্রতীক হয়ে পৃথিবীতে তাকে একটি আসনে অধিষ্ঠিত হতে হবে। জগতের সাধু ও মহৎ ব্যক্তিরা তাই করেন। তারা সর্বদা পরের হিত সাধনে ব্যাপৃত থাকেন এবং পরের তরে জীবন বিসর্জন দিতেও কুণ্ঠাবােধ করেন না। কেননা, প্রেম-প্রীতি, ভালােবাসা ও ব্যক্তি স্বার্থ পরিহারের মাধ্যমেই সমাজ সুন্দর ও সার্থক হয়ে ওঠে। মহৎ ব্যক্তিগণ কোনাে নির্দিষ্ট গােষ্ঠী কিংবা দেশের নয়, তারা বিশ্বমানবের। তারা সকলের প্রিয় এবং সকলের আপনজন। তাদের জীবন পুষ্পের মতাে পরার্থে উৎসর্গীকৃত। পক্ষান্তরে, স্বার্থপরেরা মনে করে সমস্ত জগৎটা তার একার উপভােগ্য। সকলকে বঞ্চিত করে সে বড় হতে চায়। ফলে বিদ্বেষ, অমিল, কলহ, হিংসা মনুষ্য সমাজকে করে কলুষিত।

মন্তব্য : আত্মসুখ অন্বেষণের মাধ্যমে প্রকৃত সুখ খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই আমাদের সকলের উচিত পরার্থে জীবন উৎসর্গ করার মাধ্যমে জীবনকে সার্থক করা।

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment