প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “পেঁচা রাষ্ট্র করে দেয় পেলে কোনাে ছুতা জান না সূর্যের সঙ্গে আমার শক্রতা ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
পেঁচা রাষ্ট্র করে দেয় পেলে কোনাে ছুতা জান না সূর্যের সঙ্গে আমার শক্রতা ভাবসম্প্রসারণ
পেঁচা অন্ধকারের জীব, অন্ধকারেই তার বিচরণ। দিবসের সূর্যালোকের প্রখরতা তার অসহ্য। তাই সে দিনের বেলায় গাছের কোটরে নিজেকে আত্মগোপন করে রাখে। অথচ সবার কাছে সে তার দুর্বলতা গোপন করে প্রচার করে বেড়ায় যে, সূর্যের সাথে তার জন্মগত শত্রুতা। সেজন্যে সূর্যকে ঘৃণা করেই দিনের আলোতে সে গাছের কোটর থেকে বের হয় না। পৃথিবীতে রয়েছে ছোট ও বড়, মহৎ ও হীনপ্রবণ ব্যক্তির পাশাপাশি বসবাস। যারা হীনম্মন্য প্রকৃতির লোক, তারা মহৎ ব্যক্তিদের প্রতি কখনো কখনো ঈর্ষাপ্ৰৰণ হয়ে থাকে। তাদেরও মহৎ ব্যক্তিদের মতো গৌরব ও সম্মানের অধিকারী হতে অভিলাষ হয়। অথচ তারা খুব ভালো করেই জানে যে, তাদের সে যোগ্যতা নেই। তাই তারা মহৎ ব্যক্তিদের সঙ্গে কাল্পনিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কাহিনি প্রচার করে এবং নিজের অযোগ্যতা গোপন রাখার চেষ্টা করে। পৃথিবীতে এ পেঁচক স্বভাবসম্পন্ন মানুষের অভাব নেই। যে পেঁচা সূর্যের মতো বিপুল শক্তির অধিকারী হওয়া তোদূরের কথা, তার সামান্যতম কিরণকে সহ্য করতে পারে না, সেই পেঁচা সূর্যের কাল্পনিক প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চায়। আকাশচুম্বী মহান ব্যক্তির কাছে মাথা তুলে দাঁড়াবার মতো ক্ষীণ শক্তিটুকুও যার নেই, সে কি না তাঁর নিন্দা করে নিজেকে বড় প্রতিপন্ন করতে চায়। কিন্তু এতে করে সে পৃথিবীর কাছে হয়ে ওঠে নীচ, হীনম্মন্য, হাসির পাত্র।
সহজ ভাবে বিকল্প
দিবসের প্রখর সূর্যালোক কোটরবাসী পেঁচার কাছে অসহ্য। তাই সে দিবালোকে কোটরের অ›ধকার গুনহায় আত্মগোপন করার জন্য সোচ্চার কন্ঠে প্রচার করে সে, সূর্যের সঙ্গে তার চিরশত্রুতা। বিশ্বের জ্ঞানী-গুনী ব্যাক্তিরা তাঁদের প্রতিভা ও মহত্ত্বের দীপ্তি দিয়ে বিশ্বকে আলোকিত করে। যাঁরা প্রতিভাবান শিল্পী এবং মানবতার মহান পূজারী, বিশ্বপ্রীতির ঊর্ধ্বলোকেই তাঁদের প্রতিষ্ঠা। তবু জ্ঞান-বিজ্ঞানের, শিল্প-সাহিত্যে, রাজনীতি বা বিশ্বপ্রেমে যাঁরা পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করে; পৃথিবীর হীন ও নীচ, দুর্বল ও অক্ষম ব্যক্তিরা তাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব সহ্য করতে না পেরে, তাদের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠে। পৃথিবীতে এই পেঁচুক স্বভাবের লোকের অভাব নেই। ঈর্ষাতুর সেই হীনম্মন্যের দল নিজেদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন। তারা কোনো দিনই শ্রেষ্ঠত্বের সেই সুদূরলোক স্পর্শ করতে পারে না। তাই তারা শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্ন করতে চায়। অবশ্য এতে তারা নিজেরাই কলঙ্কিত হয়। তাদের হীনতা -নীচতা খলতা এবং ব্যর্থ অহংকার দিয়ে শ্রেষ্ঠ ও মহৎ ব্যক্তিদের দিবা জ্যেতিকে ম্লান করতে পারে না। এসব নিন্দুকের কালিমালিপ্ত পেঁচুকবৃত্তি চিরকাল অন্ধকারেই থাকে আবৃত, চিরকাল বিশ্বমানবের কাছে তা হয় নিন্দত এবং ধিক্কৃত। মহতের কাছে অক্ষম নীচাশয়ের এই পেঁচুক স্বভাবের পরাজয় অতি স্বাভাবিক।
বিকল্প ১
ভাব-সম্প্রসারণ : পেঁচা নিজের অক্ষমতা গোপন রাখার জন্যে সূর্যের সাথে তার কাল্পনিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা প্রচার করে। তদ্রুপ আমাদের সমাজেও এরকম অনেক হীনমন্য প্রকৃতির লোক রয়েছে, যারা মহৎ-ব্যক্তিদের প্রতি কখনো কখনো ঈর্ষাপ্রবণ হয়ে ওঠে। মূলত, তাদেরও মহৎ ব্যক্তিদের মতো গৌরব ও সম্মানের অধিকারী হওয়ার অভিলাষ জাগে। অথচ তারা খুব ভাল করেই জানে যে, তাদের সে যোগ্যতা নেই। তাই তারা মহৎ ব্যক্তিদের সাথে কাল্পনিক-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত হয় এবং নিজেদের অযোগ্যতা গোপন রাখার চেষ্টা করে।
পেঁচা অন্ধকারের জীব, অন্ধকারেই তার বিচরণ। দিবসের সূর্যলোকের প্রখরতা সে সহ্য করতে পারে না। তাই সে দিনের বেলায় গাছের কোটরে নিজেকে আত্মগোপন করে রাখে। অথচ সবার কাছে সে দুর্বলতা গোপন করে প্রচার করে বেড়ায় যে, সূর্যের সাথে তার জন্মগত শত্রুতা, সূর্যকে ঘৃণা করে বলেই দিনে আলোতে গাছের কোটর থেকে সে বের হয় না। পৃথিবীর জ্ঞানী, গুণী, বরেণ্য মহাপুরুষেরা তাঁদের প্রতিভা ও মহত্বের দীপ্তিতে পৃথিবীকে আলোকিত করেন। যাঁরা প্রতিভাবান শিল্পী, তাঁদের বিচরণ ভাবের ঊর্ধ্বলোকে। বিশ্বের যাঁরা মহাজ্ঞানী, জ্ঞানের আলোকিত জগৎই তাঁদের বিচরণভূমি। আর, যাঁরা মানবতার মহান পূজারী, বিশ্বপ্রীতির ঊর্ধ্বলোকেই তাঁদের প্রতিষ্ঠা। জ্ঞানে, শিল্পে, সাহিত্যে, রাজনীতি বা বিশ্বপ্রেমে যিনি পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠরূপে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন, পৃথিবীর স্বল্প শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরা তাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব সহ্য করতে না পেরে তাঁদের সমালোচনায় হয়ে ওঠে মুখর। ঈর্ষাতুর, শত্রুমনোভাবাপন্ন সেই হীনমন্যের দল নিজেদের শক্তির সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন। তারা কোনদিনই শ্রেষ্ঠত্বের সেই সুদূরলোক স্পর্শ করতে পারে না। তাই তারা নিন্দা ও কুটূক্তিবর্ষণে মহাশিল্পী কিংবা মহাপুরুষগণের শ্রেষ্ঠত্বকে কলঙ্কিত করবার জন্যে করে অপচেষ্টা। কিন্তু সেই অপপ্রয়াস কোনদিনই সফল হয় না। তাতে তারা নিজেরাই কলঙ্কিত হয় এবং বৃদ্ধি করে পৃথিবীর অপকীর্তির তালিকা। তাদের স্বাভাবিক খলতা এবং নিষ্ফল অহংকার দিয়ে মহাপুরুষদের দিব্য জ্যোতিকে তারা পারে না স্পর্শ করতে। সেই নিন্দুকদের কালিমালিপ্ত পেচক-বৃত্তি চিরকাল অন্ধকারেই থাকে আবৃত, চিরকাল বিশ্বমানবের কাছে তা হয় নিন্দিত এবং ধিক্কৃত।
বিকল্প ২
মূলভাব : যারা অন্ধকারের লোক তারা দিনের আলোতে আসতে ভয় পায়। তাই নানা চল, ছুতোর কথা বলে।
সম্প্রসারিত ভাব : বিশ্বের সমগ্র মানুষকে প্রধানত দুভাগে ভাগ করা যায়। এক ক্ষুদ্র নীচ, দুই মহৎ। নিজ স্বার্থচিন্তা ত্যাগ করে মহৎ ব্যক্তিগণ যুগে যুগে পৃথিবীর মানব সমাজের কল্যাণ করে চলেছেন। আজ মানব সমাজের অগ্রগতির জন্য এ মহৎ ব্যক্তিগণ দায়ী।
অন্যদিকে নীচ ব্যক্তিরা যুগে যুগে মহৎ ব্যক্তিদের কার্যকলাপের নিন্দা করে এসেছে। এর ফলে শুধু-তারাই আত্মপ্রসাদ লাভ করেনি পরন্তু মর্হূতের কাজে পদে পদে বিঘ্ন ঘটানোর জন্য পৃথিবীর সমগ্র মানব সমাজের অগ্রগতিও ব্যাহত হয়েছে।
নীচমনা ব্যক্তির মহত্বের প্রতি ঈর্ষার শেষ নেই। শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে নিন্দা করে সে নিজের নিকৃষ্টতাকে লুকিয়ে রাখতে চায়। যার কাছে সাহস ভরে দাঁড়াবার সাহস নেই, শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিকে নিজের শত্রু বলে রটনা করে আত্মপ্রসাদ লাভ করে। ক্ষুদ্র ব্যক্তিরা এ বলে নিজ সম্মান বৃদ্ধির চেষ্টা করে যে শক্তিমান মহৎ ব্যক্তির তুলনায় সে শক্তির দিক দিয়ে হীন হয়। বৈরিতাবশত শক্তিমান মহৎ ব্যক্তিকে সে এড়িয়ে চলে, তাকে আদৌ ভয় পায় না; অনেকটা সেই নিশাচর পেঁচার মতো, যে সূর্যের সঙ্গে কল্পিত প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা উল্লেখ করে নিজ সম্মান বৃদ্ধি করতে চায়। শুধু পেঁচার গৌরভ বিন্দুমাত্র বৃদ্ধি পায় না অথবা সূর্যের গৌরবও সামান্যতম হ্রাস পায় না। শুধু পেঁচাই সকলের কাছে হাস্যাম্পদ হয়ে ওঠে।
দুষ্ট কপট লোক তার নিজের খারাপ দিকগুলো রাখার জন্য ভাল মানুষের নামে মিথ্যা অপবাদ দেয়ার জন্য সর্বদা ব্যস্ত থাকে।
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।