প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়, কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়, কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়, কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না - ভাবসম্প্রসারণ

প্রাণ থাকলেই প্রাণী হয়, কিন্তু মন না থাকলে মানুষ হয় না ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব: মানুষকে বলা হয় সৃষ্টির সেরা জীব। কেননা তারা নিজগুণে অন্যান্য প্রাণী হতে অনেক আলাদা। মানুষের সাথে অন্য প্রাণীর পার্থক্য এখানে যে মানুষের একটি সুন্দর মন আছে। এ মনই মানুষকে মনুষ্যত্বে বলীয়ান করেছে। দিয়েছে পৃথিবীজুড়ে শ্রেষ্ঠত্ব। সেই কারণে বলা হয় পৃথিবীতে যাদের প্রাণ আছে তারা সকলেই প্রাণী, কিন্তু মানুষের মতাে সুন্দর মন আর কারাে নেই বলে কেউ মানুষের মতাে নয়।

ভাবসম্প্রসারণঃ মানুষকে বলা হয় দ্বিজ অর্থাৎ দুবার জন্মগ্রহণকারী। এ দ্বিতীয় জন্ম বলতে মানবিক গুণাবলি অর্জন করে প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠাকে বােঝায়। একটি শিশু যখন জন্ম নেয়, তখন সে অন্যান্য প্রাণীর মতােই অসহায় থাকে। অন্যান্য প্রাণীর সাথে তার তখন খুব একটা পার্থক্য থাকে না। পরবর্তীকালে শিক্ষাদীক্ষার মাধ্যমে মানুষ অর্জন করে মানবিক গুণাবলি। তখন তার আত্মশক্তির বিকাশ ঘটে। সে প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠে এবং নিজেকে নতুন করে উপলব্ধি করতে শেখে। অপরদিকে, মনুষ্যত্ব বিবর্জিত মানুষ বাহ্যিকভাবে মানুষের মতাে হলেও অন্যান্য প্রাণী ও তার মধ্যে কোনাে পার্থক্য থাকে না। আমরা জানি, সকল প্রাণীরই জীবনধারণের বৃত্তি আছে। কিন্তু মানুষের এ বৃত্তির পাশাপাশি আছে মনুষ্যত্ব, বিবেক ও মানবিক গুণাবলি ! এসব গুণই মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে পৃথক করেছে। মানুষের মন আছে বলেই সে হৃদয়বৃত্তির বিকাশের সুযােগ পেয়েছে। যে ব্যক্তি ভালাে-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় বিবেচনা করতে পারে সেই যথার্থ মানুষ । আর যে কখনাে মন্দ কাজ করতে দ্বিধা বােধ করে না, নিজের জন্যে সে যা শ্রেয় মনে করে, অন্যের ক্ষতি হলেও সে তা-ই করে, সে কখনাে প্রকৃত ও পূর্ণাঙ্গ মানুষ বলে গণ্য হতে পারে না। প্রাণ কখনাে মানুষকে মানুষ হিসেবে পরিচিত করে না। একমাত্র বিবেকতাড়িত মনই মানুষকে মানুষ হিসেবে পরিচিত করে । মন আছে বলেই মানুষ পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী । প্রাণ নয়, মনই মানুষকে স্বমহিমায় পরিচিত করে তােলে।

বিকল্প ১

মূলভাব : মনই মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করেছে। মনই মানুষকে পশুত্ব থেকে মনুষ্যত্বে গৌরব দান করেছে।

সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। এই শ্রেষ্ঠত্বের কারণ হলো মানুষের একটা সুন্দর, অনুভূতিপ্রবণ মন আছে, যা আর কোনো প্রাণীর নেই। পৃথিবীরতে যত প্রকার জীব আছে, তাদের প্রত্যেকেরই প্রাণ রয়েছে। এদিক থেকে বিবেচনা করলে মানুষ আর দশটা প্রাণীর মতোই একটা প্রাণী। তবে মনোজগতের বৈশিষ্ট্যের কারণেই মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে একেবারেই আলাদা। মন আছে বলেই মানুষের মধ্যে প্রেম আছে, কল্পনা আছে, সৌন্দর্যবোধ আছে, ধর্ম আছে। পৃথিবীর সকল পাপ-পুণ্য, ভালো-মন্দ, ধর্ম-অধর্মের পার্থক্য নির্ধারণে মানুষকে পরিচালিত করে তার মন। এ মন বা হৃদয় দ্বারা পরিচালিত হয়ে মানুষ সৎ কাজ করে এবং শিক্ষা, সাধনা ও অনুশীলনের মাধ্যমে মানবিক গুণাবলি আয়ত্ত করে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। তখন অন্যান্য প্রাণী থেকে সে আলাদা হয়ে যায় এবং দৈনন্দিন জীবনের দ্বন্দ্ব-সংঘাত, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, স্বার্থচিন্তা, কুমন্ত্রণা প্রভৃতির সংস্পর্শ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে। মনের শক্তির কারণেই মানুষ আজ সভ্যতার চরম শিখরে পৌঁছতে পেরেছে। মানুষ তার মন দিয়ে সাধনা করে জীবনের বিচিত্র বিকাশ ঘটায়, যা অন্য কোনো প্রাণী পারে না। আবার কোনো প্রাণীই নিজেকে জানে না, কিন্তু মানুষ নিজেকে জানে। আর এটা সম্ভব হয় তার মনের মাধ্যমেই। মনই তার রহস্যময় আয়না, মনই তাকে বৈশিষ্ট্যমÊিত করেছে। তাই সকল প্রাণীর ওপরে মানুষের স্থান। যে মানুষের আকৃতি নিয়ে পশুসুলভ আচরণ করে, যার মধ্যে মানবতাবোধ, সত্যনিষ্ঠা, ঔদার্য, সৎবিবেচনাবোধ, বিবেক-বুদ্ধি ইত্যাদি নেই তাকে সত্যিকারের মানুষ বলা চলে না। তাই মানুষ হতে হলে শুধু প্রাণ থাকলেই চলবে না, প্রাণ ও মনের যুগপৎ বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে।

মন্তব্য : জীবজন্তুর সারা জীবন কেটে যায় কেবল আত্মরক্ষা, বংশরক্ষা ও খাদ্য সংগ্রহে। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে মানুষকেও একই কাজ করতে হয়। তা সত্ত্বেও মানুষ বিশিষ্ট, কারণ সে জ্ঞান, বুদ্ধি, বিদ্যা, হৃদয় ও সুকোমল বৃত্তির অধিকারী বলে।

বিকল্প ২

মূলভাব: সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। এই শ্রেষ্ঠত্বের কারণ হলো মানুষের একটা সুন্দর মন আছে, যা অন্য কোন প্রাণীর মধ্যে নেই। মনের বৈশিষ্ট্যের জন্য মানুষ প্রাণীদের থেকে আলাদা।

সম্প্রসারিত ভাব: পৃথিবীতে যাদের প্রাণ আছে তারা সবাই প্রাণী। যেমন গাছপালা পশুপাখি সবারই প্রাণ প্রাণ আছে তাই সবাই প্রাণী। এই দিক থেকে বিবেচনা করলে মানুষ আর দশটা প্রাণীর মতই একটা প্রাণী। কিন্তু অন্য প্রাণীর থেকে মানুষের পার্থক্য আছে। মানুষ তার মহৎ গুণাবলী জন্য সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে বিবেচিত। মানুষের মনের যে বিশেষ সত্তাটি আছে তা এই পার্থক্যের কারণ। মানুষের যে মন আছে অন্য প্রাণীর মধ্যে এই মনের পরিচয় স্পষ্ট নয়। মন আছে বলেই মানুষের মধ্যে প্রেম আছে, কল্পনা আছে, ধর্ম আছে।

মানুষের মন আছে বলেই তার থেকে সে চিন্তা ভাবনা, বুদ্ধি, জ্ঞান , আবেগ-অনুভূতি ইত্যাদি প্রকাশ করতে পারে কিন্তু অন্য প্রাণীর ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। মানুষের যা কিছু গুণাবলী আছে তার ভিত্তি তার মন। এই মন থেকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের বৈশিষ্ট্যের বিকাশ ঘটেছে। তাই সকল প্রাণীর উপরে মানুষের স্থান ও মর্যাদা। যে কেবল মানুষের আকৃতি নিয়ে পশুর মত কাজ করে পশুসুলভ আচরণ করে যার মধ্যে মানবতাবোধ, সত্যনিষ্ঠা ,বিবেক-বুদ্ধি ইত্যাদি নেই তাকে সত্যিকারের মানুষ বলা চলে না । তাই মানুষ হতে হলে শুধু প্রাণ থাকলে চলবে না, তার সাথে একটা সুন্দর মন থাকতে হবে।

মানুষ হিসেবে অর্জন করতে হবে সমস্ত মানবীয় গুণাবলী। মানুষ আজ পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত। একটা পশুর প্রাণ আছে, কিন্তু সে মানুষের থেকে আলাদা। মানুষ যেমন তার নিজস্ব ভালো-মন্দ, বুদ্ধি-বিবেক, সত্যনিষ্ঠা মানবতাবোধ ইত্যাদি বুঝতে পারে কিন্তু একজন পুশুর পক্ষে তা সম্ভব না । প্রাণের দিক দিয়ে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে কোনো রকম পার্থক্য নেই। কিন্তু মানুষের মধ্যে কতগুলো নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে, যা অন্য কোনো প্রাণীর মধ্যে লক্ষণীয় নয়।

এখানেই মানুষের সঙ্গে অন্যান্য প্রাণীর পার্থক্য। মনের বিকাশ সাধনের মাধ্যমে যথার্থ মানুষের মর্যাদা লাভ করা যায়; কিন্তু প্রাণীদের পক্ষে তা সম্ভব নয়। মন বা বিবেক এমন এক অমূল্য সম্পদ, যার প্রভাবে মানুষ প্রাণী হয়েও মানুষ নামে পরিচিত এবং প্রাণীর শুধু প্রাণ আছে বলেই তারা প্রাণী। পক্ষান্তরে মানুষ যখন তার বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে তখন সে যতই মানুষ হোক না কেন নেমে আসে পশুদের কাতারে।

মন্তব্য: উপরের আলোচনায় আমরা বলতে পারি যে, প্রাণ থাকলে প্রাণী হওয়া যায় কিন্তু মন না থাকলে সত্যিকার অর্থে মানুষ হওয়া যায়না। তা না হলে মানুষ এবং পশু পাখির মধ্যে কোন পার্থক্যই থাকতো না। মানুষ ও প্রাণী পশু-পাখিও প্রাণী কিন্তু মানুষের সুন্দর একটা মন আছে যা পশুপাখির থেকে আলাদা।মনের বিকাশ সাধনের মাধ্যমে যথার্থ মানুষের মর্যাদা লাভ করা যায়; কিন্তু প্রাণীদের পক্ষে তা সম্ভব নয়।

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment