বড় যদি হতে চাও ছােট হও তবে – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “বড় যদি হতে চাও ছােট হও তবে ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

বড় যদি হতে চাও ছােট হও তবে ভাবসম্প্রসারণ

বড় যদি হতে চাও ছােট হও তবে ভাবসম্প্রসারণ

মুলভাব : বিনয় বা নম্রতা মানব জীবনকে মহিমান্বিত করে তোলে। গর্ব ও অহঙ্কার বিসর্জিত বিনয়াবনত যে জীবন তা সকলের কাছে বিশেষভাবে সমাদর গাভ করে। এই সমাদরের ফলে মানুষ শ্রদ্ধার সাথে বড় বলে বিবেচিত হয়।

ভাব-সম্প্রসারণ : মানুষের জীবনকে বিভিন্ন গুণে গুণান্বিত করে বিকশিত করতে হয়। মানবিক গুণাবলি সহযোগেই মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। সেজন্য মানুষকে সাধনা করতে হয় এবং সাধনার ফলে জীবনে মহত্ত্বের যথার্থ বিকাশ ঘটে। মানুষের মহৎ গুণাবলির মধ্যে বিনয় অন্যতম। বিনয় মানব জীবনকে মাধুর্যমণ্ডিত করে তোলে। বিনয় মানুষকে অপরের কাছে শ্রদ্ধান্বিত করে বড় করে। জীবনে অহঙ্কার থাকা মোটেই উচিত নয়। অহঙ্কারকে পতনের মূল বলে বিবেচনা করা হয়। অহঙ্কারী লোক মানুষের কাছে শ্রদ্ধা পায় না। গর্বিত মন উগ্র হয়ে নিজের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে না। গর্ব ও অহঙ্কার মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে। ফলে সমাজ জীবনে অশান্তির সৃষ্টি হয়। সেজন্য জীবন থেকে সচেতনভাবে অংকার দূর করে বিনয়ী হয়ে উঠতে হবে। বিনয়ী হলে সকলের মন জয় করা যায়। সকলের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করা চলে। এভাবে বিনয়ী মানুষ বড় বা মর্যাদাশীল বলে বিবেচিত হয়। লোকের কাছে বড় বলে বিবেচিত হওয়ার জন্য গুণবান মানুষকে ছোট বা নম্র হতে হয়। ছোট হয়ে তথা বিনয়ী হয়ে থাকলে মানুষ সকগের শ্রদ্ধা পায় এবং স্মরণীয় হয়ে থাকে। তাই বড় না হয়ে তথা অহঙ্কারী না হয়ে বিনয়ী জীবন যাপন করা আবশ্যক। মানুষের হূদরে মর্যাদাপূর্ণ আসন লাভ করতে পারলেই জীবন সার্থক হয়। এই বড় হওয়ার গৌরবের পেছনে আছে বিনয়ের অবদান। তাই মানুষকে বড় হিসেবে মর্যাদা লাভের জন্য ছোট বা বিনয়ী হওয়া দরকার।

বিকল্প ১

মূলভাব : বিনয় এবং নম্রতা দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা যায়। যারা অহঙ্কারকে বর্জন করতে পারে এবং বিনয়ী হতে পারে তারাই অপরের নিকট থেকে যথার্থ মর্যাদা লাভ করে এবং সুনাম ও সুযশ অর্জন করে।

সম্প্রসারিত ভাব : মানব চরিত্রের বিভিন্ন গুণাবরীর মধ্যে বিনয় একটি বিশেষ গুণ। বিনয় দ্বারাই মানুষ মানুষের মন জয় করে থাকে। বিনয় স্বর্গীয় সুষমা ছড়ায়। আর এর সাহায্যেই মানুষ সম্মানের আসনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। অহঙ্কার মানুষের চরিত্রকে ধ্বংস করে। অহঙ্কারী মানুষ করো কাছে সমাদৃত হয় না। সমাজে অনেক ব্যক্তিকেই ধন, মান কিংবা বংশ গৌরব জাহির করতে দেখা যায়। এটা উচিত না। কারণ এ ধরনের ব্যক্তিরা কারো নিকট হতে সম্মান পায় না, বরং ঘৃণার পাত্র হয়। চরিত্রগুণে যেসব মহান ব্যক্তি পৃথিবীতে অমরতা লাভ করেছেন, তাঁদের জীবনী পর্যালোচনা করলে জানা যায়, তাঁরা সকলেই বিনয়ী ছিলেন। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (স.) বিনয় দ্বারাই মানুষের মন জয় করেছিলেন। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, হাজী মহম্মদ মুহসীন প্রমুখ মনীষী বিনয়ের এক একটি শ্রেষ্ঠ মূর্ত প্রতীক। বিনয় দ্বারাই তাঁরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অকৃত্রিম ভালোবাসা লাভ করেছিলেন। জগতের মানুষ তাইতো এখনো তাঁদেরকে পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে থাকে। একথা সত্য যে সাধারণ মানুষের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে কেউ বড় হতে পারেনি। পরম প্রতাপশালী অহঙ্কারী রাজা-বাদশারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। পৃথিবীর মানুষ ঘৃণাভরে তাঁদের নাম উচ্চারণ করে থাকে।

সম্মান পেতে হলে অপরকে সম্মান করতে হবে। অপরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের সাথে বিবেচনা করা অর্থ নিজের বড় হওয়ার পথকে রুদ্ধ করা।

বিকল্প ২

ভাব-সম্প্রসারণঃ সংস্কৃতে একটি কথা আছে, ‘শ্রদ্ধাবান লভতে জ্ঞানম্’ । অর্থাৎ যারা বিনীত, নম্র, ভদ্র এবং গুরুজনদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তারাই বিদ্বান ও জ্ঞানী হয়, মানুষের মত মানুষ হয়। পৃথিবী কর্মক্ষেত্র। এখানে যারাই তাদের উন্নত চরিত্রবল ও বিনম্র ব্যবহার মাধ্যমে মানুষের ভালবাসা লাভ করেছেন তারাই আদর্শ স্থাপন করতে সমর্থ হয়েছেন। অর্থাৎ সমাজে ও সংসারে বড় হতে গেলে ছোট হতে হবে। এখানে ‘ছোট’ মানে নম্র, বিনীত, ভদ্র হওয়া, বড়দের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।

জীবনে বড় হওয়ার প্রথম ধাপ হল সুশিক্ষা লাভ। সুতরাং সুশিক্ষা লাভ করার পেছনে আছে সেই মনোভাব যা বড় হবার পূর্বতন শর্ত। সুশিক্ষিত ব্যক্তি কখনো অহংকারী ও উদ্ধৃত হতে পান না, সুশিক্ষা মানুষকে নম্র ও বিনয়ী হতে প্রণোদিত করে। যে গাছ ফলভারে আনত সে কেবল অন্যকে দান করে তৃপ্ত, তেমনি শিক্ষার মহান আদর্শ দ্বারা যিনি বিনম্র হয়ে সকলের ভালবাসা ও প্রীতি আকর্ষণ করতে পারেন তিনি মহৎরূপে কীর্তি রাখে যান। সুশিক্ষিতের ও ভদ্রজনের কর্মকাণ্ডে সমাজ ধন্য এবং পবিত্র হয়।

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment