প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব: প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসারে যেহেতু প্রতিটি জিনিসই স্ব-স্ব স্থানে সুন্দর ও মানানসই,তাই তাদের নিজ স্থান থেকে সরিয়ে তার স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে ব্যাহত করা উচিত নয়। কেননা তাকে সরিয়ে যতই আনন্দ-সুখ-শান্তি দেওয়া হােক না কেন তাতে তার আসল প্রাণচাঞ্চল্য, সৌন্দর্য ও স্বাভাবিকতা ফুটে ওঠে না।
সম্প্রসারিত ভাব : পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীই আপন পরিবেশের সৃষ্টি। আর তাই আপন পরিবেশ থেকে বিচ্যুত হলে তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য বিনষ্ট হয়। কেননা সব কিছুরই সৌন্দর্য ও বিকাশ প্রকাশ পায় সেগুলাের নিজ নিজ পরিবেশে। আমরা জানি, স্ব-স্ব পরিবেশে সব জিনিসই সুন্দর দেখায়।
এ কারণে কোনাে জিনিসের সৌন্দর্য অবলােকন করতে হলে তাকে অবশ্যই তার নিজস্ব পরিবেশে রেখে দেখতে হবে । সমগ্র পৃথিবীতে বিভিন্ন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে অসংখ্য জাতি-গােষ্ঠীর মানুষ বসবাস করছে। এসব মানুষ নিজস্ব পরিবেশে আনন্দ ও প্রাণচাঞ্চল্য নিয়ে বসবাস করছে। কখনােই নিজ পরিবেশ ছেড়ে অন্যত্র বসবাসে তারা স্বাচ্ছন্দ্যবােধ করে না। তেমনি বন্যপ্রাণীদের জন্য বন হচ্ছে সবচাইতে উৎকৃষ্ট স্থান। বনজঙ্গলের মধ্যেই তারা স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত। সেই বন্যপ্রাণীকে যদি বন থেকে অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে তার আসল সৌন্দর্য ও বিকাশ নষ্ট হয়ে যায়। পাখির জন্মগত স্বভাব মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়ানাে। অসীম নীল আকাশে যখন পাখি পাখা মেলে উড়ে বেড়ায় তখন তার আসল সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। আর সেই পাখিকে যখন শখ করে খাচায় বন্দি করা হয় তখন তার মধ্যে কোনাে প্রাণচাঞ্চল্য থাকে না। সে খাঁচার প্রাচীরে পাখা ঝাপটায় ওড়ার জন্য, ছটফট করে মুক্তির জন্য। ঠিক তেমনি হিংস্র প্রাণী বাঘ চিড়িয়াখানায় বন্দি অবস্থায় যতই গর্জন করুক না কেন তাতে বনের মুক্ত বাঘের স্বভাবের প্রকাশ ঘটে না।
মন্তব্য: মায়ের কোল শিশুর নিরাপদ আশ্রয়। মায়ের কোল ছাড়া শিশুর সৌন্দর্য বিকশিত হয় না। তাই বলা হয়, যে যেখানে উপযুক্ত তাকে সেখানেই থাকতে দেওয়া যথার্থ।
সহজ ভাবে
মূলভাব : স্ব-স্ব পরিবেশ পরিমণ্ডলে সকল জিনিসই সুন্দর দেখায়।
সম্প্রসারিত ভাব : সর্ব শক্তিমান আল্লাহ পরিবেশ অনুযায়ী জীব সৃষ্টি করেছেন। বনে প্রাণী থাকে; সমুদ্রের তলদেশেও প্রাণী থাকে; থাকে মরুভূমিতে এবং হিমশীতল তুষার অঞ্চলেও। যার যেখানে সৃষ্টি-তাকে সেখানেই সুন্দর দেখায়। বনের পাখীতে খাঁচায় পুষলে তার জীবনে বিঘ্ন ঘটে। মরুভূমির উট কাদায় চলতে পারেনা।
সেরূপ শিশুর নিরাপদ আশ্রয় মায়ের কোল। ফূলকে বৃন্তচ্যুত করে নানাভাবে সাজালেও যেমন ফুল তার পূর্ব সুষমা ফিরে পায়না তেমনি শিশুকেও মায়ের কোল থেকে সরিয়ে নিলে তাকে অনেকটা বেমানান দেখায় এবং তার সুখের হাসি মলিন হয়ে যায়। মায়ের কোলে শিশুর সৌন্দর্যের যেমন তুলনা হয না, তেমনি বনে বন্যপ্রাণীর সৌন্দর্যেরও বর্ণনা করা যায় না। অতএব, যে পরিবেশে যার আবির্ভাব সে পরিবেশেই সে সুন্দর।
পৃথিবীর প্রতিটি বস্তু এবং প্রতিটি প্রাণীর জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে। সে যে পরিবেশে প্রতিপালিত হয়, তাকে সেখানেই সুন্দর দেখায়।
বিকল্প ১
ভাবসম্প্রসারণ: রহস্যময় প্রকৃতির প্রতিটি বিষয় সুনির্ধারিত। প্রকৃতি প্রদত্ত যে বিধান তাই সুন্দর, তাই মনােরম, তাই সত্য, তাই শাশ্বত । এর ব্যতিক্রম কিছু ঘটলেই সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যায়। যার পরিণাম সত্যিই ভয়াবহ। সৃষ্টিকর্তা জগৎ সৃষ্টি করে পরিবেশ অনুযায়ী জীব সৃষ্টি করেছেন এবং যাকে যেখানে শােভা পায় সেখানেই স্থাপন করেছেন। পশুপাখি বনে বাস করে। বনের বুকে তারা মুক্ত জীবনযাপন করে, স্বচ্ছন্দে বিহার করে। তাদের সে স্বাভাবিকতা লােকালয়ে আসলে আর থাকে না। স্বাভাবিকতা হারালে সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যায় । যে সকল মানুষ বনজঙ্গলে বসবাস করে তারা বর্বর; শিক্ষার আলাে থেকে ব
ত বলে চালচলনে তারা অনেকটা হিংস্র প্রকৃতির হয়। তাদের মার্জিত রুচিবােধ নেই। তারা প্রায় নগ্ন অবস্থায় থাকে। সভ্য সমাজের রুচিবােধের সাথে তাদের রুচিবােধের রয়েছে দুস্তর ব্যবধান। তারা যদি হঠাৎ করে শহরে চলে আসে তাহলে তা শহুরে মানুষের নিকট বেমানান ঠেকবে তেমনি বন্য মানুষের নিকটও এটি অস্বস্তির কারণ হবে। বনের পশুপাখির বেলায় লােকালয়ে রেখে যতই আদর যত্ন করে পােষা হউক না কেন, এতে সে তৃপ্ত নয়। সে চায় যথেচ্ছ ঘুরে বেড়াতে। লােকালয় এদের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতেও প্রতিবন্ধকস্বরূপ। বন্য জীবজন্তুর বন্য রূপের সাথে পরিচিত হতে পারা যায় শুধু বনেই । বনেই এদের যথার্থ স্থান এবং সেখানেই তাদের সকল সৌন্দর্য মূর্ত হয়ে ওঠে। স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করলে প্রতিটি প্রাণী সংকুচিত, ভীত ও বেদনায় নুয়ে পড়ে। পরিবেশ অনুযায়ী প্রতিটি প্রাণীই দেখতে সুন্দর। বন্যেরা বনেই সুন্দর আর শিশুরা মায়ের কোলে।
জীবজগতের প্রতিটি প্রাণীরই একটি নিজস্ব জগৎ আছে। সে জগতেই সে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে। অন্যথা হলে জীবনের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়।
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।