বন থেকে জানোয়ার তুলে আনা যায়, কিন্তু জানোয়ারের মন থেকে বন তুলে ফেলা যায় না – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “বন থেকে জানোয়ার তুলে আনা যায়, কিন্তু জানোয়ারের মন থেকে বন তুলে ফেলা যায় না ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

বন থেকে জানোয়ার তুলে আনা যায়, কিন্তু জানোয়ারের মন থেকে বন তুলে ফেলা যায় না

বন থেকে জানোয়ার তুলে আনা যায়, কিন্তু জানোয়ারের মন থেকে বন তুলে ফেলা যায় না

ভাব-সম্প্রসারণ : মানুষ প্রাণী হলেও সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে তার মধ্যে মানবীয় গুণাবলি বিদ্যমান। প্রাণীর স্বভাব-বৈশিষ্ট্য গড়ে ওঠে পরিবেশ ও শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে।

জন্তু ও মানুষের মধ্যে স্বভাব ও প্রকৃতিগত পার্থক্য বিদ্যমান। জন্তুর সকল স্বভাব মানুষের মধ্যে বিরাজমান- হিংসা, বিদ্বেষ, পাশবিকতা, হিংস্রতা, লোলুপতা ইত্যাদি মানুষের মধ্যেও রয়েছে। কিন্তু এসব অতিক্রম করে প্রীতি, মমত্ব, সুস্বভাব, সুচরিত্র অর্জন করাই মনুষ্যজীবনের সার্থকতা। এসব গুণাবলির জন্যে মানুষ জন্তু থেকে পৃথক। বন্যপ্রাণীকে বন্য জীবন থেকে সুসভ্য জগতে নিয়ে এলেও জন্তুর জান্তব আচরণের পরিবর্তন হয় না। কেননা তার মনোজগতের অধিবাস বনের মধ্যে। এর মূল কারণ হল মানুষের মধ্যে মানব-স্বভাবের যে উত্তরণ আছে জন্তুর মধ্যে তা নেই। তাই বন থেকে তুলে এনে তাকে যতই সুসভ্য করার চেষ্টা করা হোক না কেন তারা বন্য স্বভাবেরই থেকে যাবে। একইভাবে বৃহত্তর অর্থে মানুষের ক্ষেত্রেও একথা সত্যি। নীচ প্রকৃতি, প্রবৃত্তি বা স্বভাবের মানুষদের আমরা যতই ভালো করার চেষ্টা করি না কেন, তা ব্যর্থ হবে। কারণ স্বভাব কখনো বদলায় না। পরিবেশের পরিবর্তন সহজ হলেও মানুষের স্বভাব সহজে বদলানো যায় না।

বিকল্প ১

মানুষ ও বন্য জানোয়ারের মাঝে মূল পার্থক্য হলো স্বভাব ও প্রকৃতিগত। অবস্থানের পরিবেশ এখানে মুখ্য নয়। অবস্থানগত দিক থেকে বন্য প্রাণীর আবাসস্থল হচ্ছে বন-জঙ্গল। অন্যদিকে মানুষ বাস করে লোকালয়ে। স্রষ্টা যেমন মানুষ ও জানোয়ারের মাঝে পরিবেশগত ভিন্নতা দিয়েছেন, তেমনি তাদের মনোজগতে দিয়েছেন স্বভাব ও প্রকৃতিগত ভিন্নতা। বন্য প্রাণী কিংবা মানুষ- উভয়কেই নিজ পরিবেশ থেকে তুলে এনে অন্য পরিবেশ ভুক্ত করা যায়। কিন্তু তাতে শুধু দৈহিকভাবে অবস্থানের পরিবর্তন ঘটে। আচরণের কোনো পরিবর্তন ঘটে না। হিংস্র বন্য জন্তুকে লোকালয়ে এনে সভ্য করার চেষ্টা করা হলেও তার জান্তব আচরণ দূর করা সম্ভব নয়। কেননা সে প্রাকৃতিকভাবেই হিংস্র ও বন্য। তার দেহ লোকালয়ে অবস্থান করলেও মনোজাগতিকভাবে সে বনে বাস করে। মানুষ সুষ্টির শ্রেষ্ঠ হলেও কিছু মানুষ আছে যারা প্রকৃতগতভাবে অসৎ। এইসব মানুষদের পরিবেশের পরিবর্তন ঘটিয়ে সুন্দর ও আলোকিত পরিবেশে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। সৎ ও ভালো মানুষের সাহচর্যে রেখে সৎ মানুষে পরিণত চেষ্টা করাও অসম্ভব নয়। কিন্তু তাদের সহজাত প্রবৃত্তির কোনও ইতিবাচক উন্নয়ন ঘটে না। কেননা মনোজগতে প্রকৃতিগত কোনোও পরিবর্তন হয় না। যারা স্বভাবগতভাবে অসৎ নয়, বরং সঙ্গদোষে কিংবা কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় অসৎ হয় তারা সুস্থ্য-সুন্দর পরিবেশের প্রভাবে সৎ মানুষে পরিণত হতে পারে। শিক্ষা: মানুষ কিংবা অন্যান্য প্রাণীর মনোজাগতিক প্রকৃতি, স্বভাব, স্বধর্ম অপরিবর্তনশীল। জীবনের নিরাপত্তার জন্য মানুষ হিংস্র-বন্য প্রাণী থেকে নিজেদের নিরাপদ দূরত্বে রাখে। তেমনি সুস্থ্য-সুন্দর জীবনের জন্য অসৎ মানুষদের ব্যাপারে সব সময় সচেতন থাকা জরুরী।

আরো পড়ুন: ক্ষুদ্রত্বের মধ্যেও মহত্ব আছে

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment