বিত্ত হতে চিত্ত বড় – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “বিত্ত হতে চিত্ত বড় ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

বিত্ত হতে চিত্ত বড় ভাবসম্প্রসারণ

বিত্ত হতে চিত্ত বড় ভাবসম্প্রসারণ

বিত্ত অর্থ ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা, আর চিত্ত অর্থ মন বা অন্তর। ধন-সম্পদ মানুষকে বাহ্যিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দেয়। কিন্তু মনের প্রশান্তির জন্য বিত্তের প্রয়োজন হয় না। এক শ্রেণির মানুষ অর্থের মোহে উদারতা, সহানুভূতি, মানবতাকে হারিয়ে ফেলেছে। তারা নিজেদের ভোগ, বিলাসিতা নিয়ে ব্যস্ত। অথচ প্রচুর অর্থ উর্পাজন করেও তারা মানসিক ভাবে সুখী নয়। আবার পৃথিবীতে এমন মানুষও আছে যারা নিজেদের সম্পদ মানবতার খাতিরে ব্যয় করেন। তারা ধনকে নয় মনকে গুরুত্ব দেন। সম্পদের মোহ না থাকায় তারা কোনো সংকটের মুখোমুখী হন না। মানুষের কল্যাণই এসব ব্যক্তির মূল লক্ষ্য। কৃপণ ধনী ব্যক্তির সম্পদের পাহাড় থাকলেও পৃথিবীর মানুষ তাদের মনে রাখে না। কারণ তাদের সম্পদ কারো উপকারে আসে না। তাই কৃপণ ধনী ব্যক্তি মারা যাবার সাথে সাথে মানুষ তাকে ভুলে যায়।

অথচ অনেক রাজা বাদশা আভিজাত্য ও ঐশ্বর্যের পথ ত্যাগ করে মানবতার তরে কাজ করে গেছেন। একারণে তাদের কথা মানুষ মনে রাখে। উদাহরণ হিসেবে রয়েছে গৌতম বুদ্ধ, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন, শ্রীচৈতন্যসহ অনেক মহান ব্যক্তি। এসব মানুষই প্রকৃত মানুষ। কারণ তারা বিত্তকে তুচ্ছ করে হৃদয়ের ডাকে সারা দিয়েছেন। আর তাই সভ্যতার ইতিহাসে তারাই স্মরণীয় হয়ে আছেন। পৃথিবীতে অনেক দেশে সম্পদের অভাব নেই কিন্তু সেখানে মানুষের মনের শান্তি নেই। উন্নত দেশগুলোর মানুষের মাঝে পারিবারিক বন্ধন অনেক দুর্বল। তাই আজ তাদের মাঝেও দেখা যায় পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ় করার নানা উদ্যোগ। কারণ তারা বুঝতে পেরেছে অর্থ নয় মানসিক প্রশান্তিই প্রকৃত শান্তি। শিক্ষা: বাহিরের চাকচিক্যতে বড় না হয়ে, মনকে বড় করতে হবে। মনের প্রশান্তি না থাকলে জীবন অর্থহীন। মনের সম্পদে ধনবান মানুষই প্রকৃত মানুষ।

বিকল্প ১

মূলভাব: ধন থাকলেই প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। ঐ ব্যক্তিই প্রকৃত মানুষ যার মন উদার।

সম্প্রসারিত ভাব : মানব জীবনে অর্থ-সম্পদের আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। কিন্তু এ অর্থ-সম্পদ যদি মানব কল্যাণে ব্যয়িত না হয়, তবে এর কোনাে মূল্য নেই। এ জন্য সংকীর্ণমনা ব্যক্তিরা মহা সম্পদশালী হলেও স্মরণীয় বা বরণীয় হতে পারে না। আর্তের সেবা, দুঃখীর দুঃখ মােচন তথা মানব কল্যাণে তাদের অর্থ ব্যয় হয় না বলে সমাজে তাদের সমাদর ক্ষণস্থায়ী। বিত্তের বৈভবে তারা সমাজে সাময়িকভাবে সমাদৃত হলেও মানুষের মনে স্থায়ী আসন করে নিতে পারে না। তাদের সংকীর্ণতা ও অনুদারতা নিয়ে সবাই হাসি-তামাশা করে। মৃত্যুর কিছুদিনের মধ্যেই এ পৃথিবী থেকে তাদের নাম চিরতরে বিলীন হয়ে যায়। নিজের লােকেরাও তাদের নাম স্মরণ করে না। পক্ষান্তরে, মানুষের মন এমন এক বস্তু যা মানুষকে অতি উচ্চাসনে নিয়ে যেতে পারে। যে হৃদয় মানব দরদি ও মানব হিতৈষী সেই হৃদয়াধিকারীকে দেখলে মানুষের মাথা আপনিই নত হয়ে আসে এবং তাদের অন্তর অপূর্ব ভক্তিরসে সিক্ত হয়। মানব কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ হযরত মুহাম্মদ (স), বেগম রােকেয়া, মাদার তেরেসার মতাে আরও অনেকে মৃত্যুর পরও এই পৃথিবীতে অমর ও অনুকরণীয় হয়ে আছেন। তাদের উদার মনমানসিকতার কারণেই।

মন্তব্য: ধনাঢ্য ব্যক্তির চেয়ে মহৎ হৃদয়ের অধিকারীই প্রকৃত মানুষ।

বিকল্প ২

সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষের মূল্যায়ন— তার চিত্ত অর্থাৎ হৃদয়ে। শুভ বিবেক, মূল্যবােধ, মনুষ্যত্ব আর কল্যাণ চেতনার মধ্য দিয়েই যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এসব গুণ মানুষকে মহিমান্বিত করে। জীবনের জন্যে ধনসম্পদ বা বিত্তের প্রয়ােজন আছে। কিন্তু বিত্ত মনুষ্যত্বের মাপকাঠি নয়। মহৎ চিত্তের অধিকারী মানুষ নিজের বিবেক দিয়ে ভালাে-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় উপলব্ধি করে। তারা বিত্তশালী হয়ে থাকলেও প্রাচুর্যের গর্ব করেন না। মনুষ্যত্বের আভিজাত্যের কাছে ধনের আভিজাত্য ম্রিয়মাণ হয়ে যায়। কিন্তু জগতে এমন লােকও আছে, বিত্তের অন্ধ মােহ যাদের আপন খেয়ালের তরীতে ভাসায়। নিজেকে নিয়ে মগ্ন থাকতে শেখায়। কিন্তু চিত্ত এর ব্যতিক্রম। চিত্তের বলেই মানুষ মানুষকে ভালােবাসে। বিপুল সম্পদের আভিজাত্যের গর্বে তারা গর্বিত। ভােগসর্বস্ব এসব মানুষ কেবল আত্মসুখে মগ্ন থাকে।

কিন্তু এ সুখ প্রকৃত সুখ নয়। কোনাে মানুষের যদি চিত্তের ঔদার্য না থাকে তার যত ধনসম্পদই থাকুক প্রকৃত বিচারে সে কোনাে মানুষই নয়। বিত্ত তাকে বিলাস ও ভােগের অধিকার দিলেও মনুষ্যত্বের মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে পারে না । সমাজ, দেশ ও জাতি তার দ্বারা উপকৃত হয় না। বরং চিত্তহীন বিত্তশালীরা নানাভাবে সমাজকে কলুষিতই করে থাকে। অপরদিকে বিত্তশালী না হয়েও যার সুন্দর ও উদার হৃদয় রয়েছে সে সবার কাছে আদৃত। চিত্তের ঔদার্যে সে মানুষের কল্যাণে ব্রতী হয়। তার পবিত্র হৃদয়ের কল্যাণ স্পর্শের আলােয় আলােকিত হয় অন্য মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্র। মনুষ্যত্বের মহিমায় তারা মহিমান্বিত। তাই তাদের সম্মান ও মর্যাদা চিরস্থায়ী— তারা সবার হৃদয়ে শ্রদ্ধার আসনে আসীন। ধনসম্পদ ক্ষণস্থায়ী আর শুভ্র বিবেক ও মনুষ্যত্ব চিরস্থায়ী। তাই বলা হয় বিত্তের চেয়ে চিত্ত বড়।

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment