প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “বুদ্ধি যার বল তার ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
বুদ্ধি যার বল তার ভাবসম্প্রসারণ
বুদ্ধিই মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। বুদ্ধি থাকলে নানা বিপদ আপদ থেকে যেমন রেহাই পাওয়া যায়, তেমনি বুদ্ধির জোরে জীবনকে সুন্দর ও সফল করে তোলা সম্ভব। মানব জীবনের অপরাপর গুণের চেয়ে বুদ্ধির গুরুত্ব ও অবদান অনেক বেশি এতে কোনো সন্দেহ নেই। মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার জন্য শক্তির বিশেষ প্রয়োজনীয়তা আছে। দৈহিক শক্তি না থাকলে জীবন ব্যর্থ হয়ে যায়। দুর্বল লোক কাজের অযোগ্য। আর শক্তিহীন লোক মরণের প্রতীক্ষা করা ছাড়া আর কিছু করতে পারে না। শক্তি দিয়ে অপরের ওপর প্রাধান্য লাভ করা চলে। শক্তিশালী লোককে সবাই ভয় পায়। জীব জগতে শক্তিরই প্রাধান্য। তাই বিশ্বের সবখানেই শক্তির অত্যাচার লক্ষ্য করা যায়। তবে এ প্রসঙ্গে আরেকটি বিবেচনার বিষয় রয়েছে। শুধু শক্তি থাকলেই চলে না, সেই সঙ্গে বুদ্ধি থাকার দরকার। বুদ্ধি না থাকলে জীবনের কোনো দাম নেই। শক্তি আছে অথচ বুদ্ধি নেই এমন হলে সে শক্তি কোনো কাজে আসে না। তেমন শক্তি নেই, অথচ ভালো বুদ্ধি আছে এমন লোক বুদ্ধির জোরে জীবনে অনেক কিছু করতে পারে। তার পক্ষে জীবনের উদ্দেশ্য সফল করা সম্ভব। বুদ্ধির কৌশলে প্রবল শক্তিমানকেও বশ করা যায়। বুদ্ধিকে কৌশলে কাজে লাগাতে পারলে জীবনের উদ্দেশ্য সফল করা চলে। বুদ্ধির কুশলতার সামনে শক্তি পরাজিত হয়। যে যত বেশি বুদ্ধি রাখে তত বেশি সফল। তাই বুদ্ধিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বিকল্প ১
মূলভাব : বুদ্ধি হলো মানুষের একটি গতিশীল শক্তি। বুদ্ধি না হলে মানুষ কোনো কাজ সহজে সমাপ্ত করতে পারে না এবং সহজে কার্যসিদ্ধি হয় না। তাই বুদ্ধিই হলো সবচেয়ে বড় শক্তি।
সম্প্রসারিত ভাব : কথায় বলে “যে কাজ জোরে করা যায় না, বুদ্ধি বা কৌশলে তা সহজেই করা যায়।” মূলত বুদ্ধি দিয়ে অনেক কিছু করা যায় বুদ্ধির জোরে অতি সহজে কার্যসিদ্ধি করা যায়। বুদ্ধিহীন মানুষ অকর্মণ্য। সমাজে তাদের মূল্যায়ন করা হয় না। সমাজ ও জাতির কাছে যার সত্যিকারের বুদ্ধি আছে, তার মূল্যায়নও অনেক বেশি। বুদ্ধিমানেরা যে কোনো কাজ করতে পারে। কারণ বুদ্ধি যার, শক্তি তার। বুদ্ধি এক ধরনের কৌশলের নাম। যা দিয়ে মানুষ সহজে জীবনে চলার পথের সকল প্রতিকূলতাকে সামাল দিয়ে থাকে। অসাধ্য কাজ সাধন করে থাকে। পৃথিবীতে অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানুষ অতি ক্ষুদ্র। কিন্তু বুদ্ধিমত্তার কারণে আল্লাহ্ মানুষকে সৃষ্টির শেষ্ঠ জীব হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। বুদ্ধি থাকার কারণে সত্য-মিথ্যা, সাদা-কালো, উঁচু-নিচুকে নির্ণয় করে চলতে পারে। এক কথায়, বুদ্ধি আছে বলেই মানুষ স্রষ্টার কাছে অতি প্রিয় এবং তার সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম। বুদ্ধি হলো মহান প্রভুর এক বিশেষ নেয়ামত। যা পৃথিবীর সব সৃষ্টির মাঝে দেননি। আল্লাহ্ মানুষকে তাঁর প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে এ গুণ দান করেছেন।
বুদ্ধি হলো এক অনুপম শক্তির নাম যা মহান আল্লাহ্ প্রদত্ত এক আশীর্বাদ স্বরূপ। যার উপর ভরসা করে সবকিছু যথার্থভাবে লাভ করা যায়।
বিকল্প ২
মানুষই একমাত্র প্রাণী যে কেবলমাত্র প্রাণেরই অধিকারী নয়, একই সঙ্গে মেধা, মনন ও বুদ্ধিমত্তারও অধিকারী। গোটা প্রাণীকূলে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের প্রধান কারণ তার বুদ্ধিমত্তা। সৃষ্টির সূচনা লগ্নে মানুষ প্রতিকূল প্রকৃতি ও বন্য জীবজন্তুর আক্রমণের কাছে অসহায় ছিল। আদিম অসহায় মানুষ জ্ঞান ও বুদ্ধির চর্চার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সভ্যতার নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে যাচ্ছে। কেননা সে জানে, জ্ঞান ও বুদ্ধির চর্চার জোরেই মানুষ আজ সভ্যতার শীর্ষে অবস্থান করছে। এটিই মানুষের সব থেকে বড় শক্তি। আপাতদৃষ্টিতে, শারীরিক শক্তির ক্ষমতা বেশী মনে হলেও বস্তুত, কৌসলি ও বুদ্ধিমান মানুষই অধিক শক্তিশালী। শারীরিক শক্তি দ্বারা যা অর্জন করা যায় তা অত্যন্ত স্বল্প সময়ের জন্য স্থায়ী হয়। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, হিটলারের মতো শাসকের শারীরিক ও অস্ত্র শক্তির বলে ক্ষমতা লাভ করলেও পৃথিবীর ইতিহাসে তারা বরণীয় হয়ে থাকতে পারেনি বরং ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়ে তাদের নাম লেখা হয়েছে। স্বল্প সময়ের জন্য তারা গোটা পৃথিবীর শাসন ক্ষমতা নিজ হাতে নিলেও, পরবর্তীতে তারা নিন্দিত হয়েছে। তাদের অপশাসন বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। অন্যদিকে, যুগে যুগে যারা লড়াইয়ের পথ পরিহার করে, জ্ঞান ও বুদ্ধির চর্চা দ্বারা মানবকল্যাণে অবদান রেখেছেন, ইতিহাসে তাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা হয়েছে। শারীরিক শক্তি প্রয়োগে সমাজে, দেশে সর্বোপরি গোটা পৃথিবীতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, বিশৃঙ্খলা-অশান্তি লেগেই থাকে। কিন্তু বুদ্ধিমান ব্যক্তি বিশৃঙ্খলতার পথ পরিহার করে বুদ্ধির জোরে সকল সমস্যার সহজ ও শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে পারে। জগতের সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে মানুষের সব থেকে বড় অস্ত্র জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা।
শিক্ষা: পরম স্রষ্টা একমাত্র মানুষকেই জ্ঞান ও বুদ্ধির সমন্বয়ে সৃষ্টি করেছেন। নিজ নিজ বুদ্ধিমত্তা দ্বারা পৃথিবীর কল্যাণ সাধনের জন্য স্রষ্টা মানুষকে জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়েছেন। প্রত্যেকের উচিত নিজ বুদ্ধিমত্তাকে সৎপথে ব্যবহার করে মানবকল্যাণ সাধনে সচেষ্ট হওয়া।
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।