প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে মানুষের মাঝে আমি বাঁচিতে চাই ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে মানুষের মাঝে আমি বাঁচিতে চাই ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব : এ ধূলি ধরার প্রতি মানুষের ভালােবাসা অকৃত্রিম। তাই মৃত্যু অবধারিত জেনেও মানুষ এ পৃথিবী থেকে বিদায়নিতে চায় না।
সম্প্রসারিত ভাব : মৃত্যু অমােঘ সত্য জেনেও মানুষ পৃথিবীর রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ-স্পর্শ ছেড়ে যেতে চায় না। এ অমরত্বেরপ্রার্থনা মানুষের চিরন্তন। পৃথিবীর ধূলিকণা মধুময়। মধুময় পৃথিবীর ধূলিকণা গায়ে মেখে সবাই অমৃতের স্বাদ লাভ করতে চায়।সকলের কাছেই পৃথিবী সুন্দর। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কেউ পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিতে চায় না। পৃথিবী মানবের এক অপূর্বলীলাক্ষেত্র। এখানে সকল মানুষ মিলে মিশে পৃথিবীকে নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরিয়ে রেখেছে। সে সৌন্দর্যে অবগাহনের মাধ্যমে সমস্তমানবের মাঝে বিলীন হওয়ার অদম্য বাসনা সর্বজনীন। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষের চেয়ে বড় কিছু নেই, নেই কিছুমহীয়ান। এ মানুষের মাঝে থেকে মানুষের সুখে দুঃখে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে অমরত্ব লাভের বাসনা অনেকের থাকে। সেলক্ষ্যে মানুষ নিরন্তর কাজ করে যায়। স্রষ্টার সৃষ্টি সব কিছুর হিতার্থে নিয়ােজিত থাকে এ কর্ম প্রচেষ্টা। সমাজের কল্যাণে,দেশের কল্যাণে নিয়ােজিত ব্যক্তিরা অনায়াসে মৃত্যুকে জয় করতে পারে। অর্থাৎ মরেও তারা অমর হয়ে থাকে কর্মের মধ্য দিয়ে।কারণ বহমান কালের নৌকায় মহৎ কর্ম সম্পাদনকারী নয়, কর্মই যাত্রী হতে পারে। কবির ভাষায়-ঠাই নাই, ঠাঁই নাই, ছােটো সে তরীআমারি সােনার ধানে গিয়েছে ভরি।ব্যক্তিসত্তা মহাকালের নিষ্ঠুর কালগ্রাসের শিকার হলেও কর্মের বদৌলতে মানুষ অমরত্ব লাভ করতে পারে। মানুষেরমনের মন্দিরে দীপ হয়ে জ্বলতে পারে অনন্তকাল।
মন্তব্য : মহাকালের চিরন্তন স্রোতে মানুষ অনিবার্য বিষয়কে এড়াতে পারে না, কেবল টিকে থাকে তার সৃষ্টিকর্ম। আরএ মহৎ সৃষ্টিকর্মের জন্যই মানুষ মরেও সকলের মধ্যে বেঁচে থাকে চিরকাল।
বিকল্প ১
ভাবসম্প্রসারণ: মানুষ মরণশীল। মানবজীবনে মৃত্যুই সবচেয়ে বড় ও চিরন্তন সত্য। কিন্তু মানুষ এ চিরন্তন সত্য মেনে নিতে রাজি নয়। বরং এ সুন্দর ধরণীতে সে বেঁচে থাকতে চায় মৃত্যুহীনভাবে।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। পৃথিবীর ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করে মানুষ নিজেদের কল্যাণে ও ভােগের জন্যেই পৃথিবীর প্রতিটি উপাদানকে ইচ্ছেমতাে কাজে লাগায়। পৃথিবীর নদ-নদী, প্রকৃতির প্রতি রয়েছে মানুষের দুর্বার আকর্ষণ। সত্যিই পৃথিবী হচ্ছে। মায়া ও মােহের স্থান। এ বিশ্বচরাচরের নৈসর্গিক শােভা দেখে মানুষ আত্মহারা হয়, গভীরভাবে ভালােবেসে ফেলে এ ধরণীকে। এ ধরণী তার সৌন্দর্য দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে মানুষকে। তাই মানুষ এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে চায় না, অনন্তকাল এর সৌন্দর্য উপভােগ করে বেঁচে থাকতে চায় । মানুষ জানে এ পৃথিবীতে সে চিরস্থায়ী নয় বরং ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু তবুও মানুষ এ ক্ষণস্থায়ী জীবনে পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে গড়ে তােলে প্রাসাদ, অট্টালিকা ও ঐশ্বর্য। সৌন্দর্যের ফাঁদ এ পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। এ ফাঁদে ধরা দেয় সৌন্দর্যপিপাসু মানুষ। চাঁদের জ্যোৎস্না রাত, গগনে লক্ষ লক্ষ মিটিমিটি তারা, বর্ষার বারিধারা, মেঘের খেলা, হেমন্তের অপূর্ব সৌন্দর্য, বসন্তের রূপলাবণ্য, শীতের শিহরণ ও আনন্দ, এমনই অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মানুষ হয়ে পড়ে আত্মহারা । জীবনসংগ্রামের মধ্যে দারিদ্র্য ও দুঃখ তাকে বিচলিত করে তবুও পৃথিবীর মায়া ছাড়তে চায় না কোনাে মানুষ। পৃথিবীতে আপনজনের মায়াবন্ধন কেউই ছাড়তে চায় না, সকলকে নিয়ে সবার মাঝে বেঁচে থাকতে চায়।
এ সুন্দর পৃথিবী সকলের কাছে পরম আপন। তাই মানুষ এ পৃথিবীর মায়ার আঁচল ভেদ করে যেতে চায় না। সে বেঁচে থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে এ পৃথিবীর সৌন্দর্য ও আনন্দ উপভােগ করতে চায়।
বিকল্প ২
এ ধুলার ধরণীর প্রতি মানুষের ভালোবাসা অকৃত্রিম। তাই মৃত্যু অবধারিত জেনেও মানুষ এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চায় না। বরং এর আনন্দের মধ্যে জীবনের সার্থকতার সন্ধান করে মানুষ।
মায়াবিনী কুহকিনী পৃথিবী মানুষকে তার মায়াজালে এমনভাবে আবদ্ধ রাখে যে, এই পৃথিবীর রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ-স্পর্শ ছেড়ে সে যেতে চায় না- চিরজীবন তার কোলে মাথা রেখে বেঁচে থাকার মিনতি জানায়। এ অমরত্বের প্রার্থনা মানুষের চিরন্তন। মধুময় পৃথিবীর ধুলিকণা গায়ে মেখে মানুষ অমৃতের স্বাদ লাভ করে বলেই, তার কাছে পৃথিবী এত সুন্দর । পৃথিবী মানবের এ অপূর্ব লীলাক্ষেত্র। মানুষ পৃথিবীতে এসে চারদিকে জীবনের যে আনন্দময় প্রকাশ দেখে এবং প্রকৃতির মধ্যে যে অনাবিল সৌন্দর্য উপভোগ করে তা ছেড়ে মানুষ স্বর্গেও যেতে চায় না। স্নেহ-প্রেম ভালোবাসাপূর্ণ এই জগৎসংসারের মায়াময় পরিবেশ ছেড়ে চিরদিনের জন্যে চলে যেতে হবে বলেই এর প্রতি মানুষের ভালবাসাও প্রবলতর। বিধাতার আনন্দের ফল এই পৃথিবী। এর সৌন্দর্য ও মায়া জীবনকে এত বেশি আকর্ষণ করে এবং হৃদয়কে এত বেশি অভিভূত করে যে, সবসময়ই মানুষের কণ্ঠে শোনা যায় এর প্রতি মমত্ববোধের অকৃত্রিম উচ্চারণ।
মানুষ মরণশীল বলে একসময় এই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করতে হয়। জীবনের এই পরিণতিকে অগ্রাহ্য করা কারও পক্ষে সম্বব নয়। অবশ্যম্ভাবী এই পরিণাম জেনেও মানষ এই পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে, তার রূপে মুগ্ধ হয়ে মৃত্যুর কথা ভুলে গিয়ে আমৃত্যু বেঁচে থাকতে চায়।
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।