প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “মানুষ যেদিন পরের জন্য কাঁদতে শেখে সেদিন সে দেবত্ব লাভ করে ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
মানুষ যেদিন পরের জন্য কাঁদতে শেখে সেদিন সে দেবত্ব লাভ করে ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব: স্বার্থময় এ পৃথিবীতে মানুষ যেদিন অন্যের জন্য কাঁদতে শিখবে সেদিন সে দেবতার আসনে আসীন হবে।
সম্প্রসারিত ভাব: মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া অত্যন্ত মহৎ কাজ। কিন্তু ব্যক্তিস্বার্থ ও লােভ-লালসার কারণে মানুষের পক্ষে তা কখনাে কখনাে সম্ভব হয় না। মানুষ সামাজিক প্রাণী। অন্য দশজনের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করাই তার ধর্ম। এই মিলেমিশে বসবাসের সূত্রে তারা পরস্পরের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ভাগাভাগি করে উপভােগ করে। তারা একে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসে, সুখে আত্মহারা হয়, আবার দুঃখে অশ্রু ঝরায়। এর সঙ্গে নিজের স্বার্থবিসর্জন কিংবা ক্ষতির প্রশ্ন জড়িত সেখানে মানুষ অন্যের জন্যে কাঁদে এমনকি অন্যের বিপদে এগিয়েও আসে না। কারণ রক্ত-মাংসে গড়া মানুষের রয়েছে স্বার্থপরতা ও ব্যক্তিস্বার্থের আকর্ষণ এবং নানারকম লােভ-লালসা। এজন্যে মানুষ নিজের ভালাে-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণের কথা বিবেচনা করেই অন্যের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ায় কিংবা অন্যের বিপদে এগিয়ে আসে। তবে এ ধরনের মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে (Earth) কম। পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ জন্মেছেন যারা নিজের বিপদের আশঙ্কাকে তুচ্ছ ভেবে অন্যের কল্যাণে ঝাপিয়ে পড়েন। এরা যেমন মহামানব তেমনই দেবতুল্য।
মন্তব্য:ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা থাকলেও মানুষকে অন্যের কথা ভাবতে হবে, অন্যের কল্যাণে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে একদিকে যেমন সব বিপদের আশঙ্কা দূর হয়ে যাবে, তেমনই মানুষ দেবতুল্য সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবে।
আরো পড়ুন: আলস্য এক ভয়ানক ব্যাধি
বিকল্প ১
মূলভাব: পরোপকারের মধ্যেই মানব জীবনের প্রকৃত সার্থকতা নিহিত। পরের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার মধ্যে দিয়েই প্রকৃত দেবত্ব লাভ করা সম্ভব। সম্প্রসারিত ভাব: কর্মময় এ পৃথিবী। এ পৃথিবী প্রতিটি অনুকণায় মিশে আছে কতই না হাসি – কান্না , মান অভমান, ও আনন্দ – বেদনা। কিন্তু এসব কিছু যদি নিজের জন্য না হয়ে পারের জন্য হয় তাহলে তা স্বীকৃতি পায় মহৎ কর্ম হিসেবে। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষ অন্য সকল প্রাণীর চেয়ে আলাদা। তবে ভোগাকাংক্ষা, ক্ষমতালিপ্সা ও স্বার্থরক্ষার ব্যাপারে মানুষ কখনও লোভী, আত্মকেন্দ্রিক, ক্ষুদ্রচেতা ও পশুর ন্যায় হিংস্র হয়ে উঠে। তখন তারা হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য যে কোনো ধরনের কাজ করতে পারে। জনকল্যাণ তথা মানবতার মুক্তির গান তাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে না। কিন্তু জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য তা নয়। মানবতাবোধে উদ্বদ্ধ হয়ে অপরের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করার মধ্যেই মনুষ্যত্বের প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশ পায়। পরহিত ব্রতে উৎসর্গক্রিত জীবনের সার্থক প্রতিনিধি ফুল, নদী, বৃক্ষ গাভী ইত্যাদি। এরা কখনো নিজেদের প্রয়োজনে আসেনা। মহানবি হযরত মুহাম্মদ (সা.) সহ সকল মহামানব যুগে যুগে নিজেদের জীবন সাধনা শক্তি ও সময় পরের কল্যাণে ব্যয় করেছেন। তাঁদের চিন্তা চেতনা শুভ কামনা আবিস্কার অনুসদ্ধিৎসু মনের উপলব্ধি সবই অপরের পন্য রেখে গেছেন। তাই নিজের জন্য ব্যাকুল না হয়ে বিশ্ব-মানবের কল্যাণের জন্য হতে হবে নিবেদিত প্রাণ। আর যে দিন তা করা যাবে সিদিনই সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যে আসা যাবে এবং পাওয়া যাবে স্বর্গীয় ছোঁয়া। মন্তব্য: পরের দুঃখ কষ্ট যখন মানুষ হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে শেখে এবং সে দুঃখ কষ্ট নিজের বলে বোধ করে তখনই সে দেবেমানবের মর্যাদা লাভ করে।
বিকল্প ২
মূলভাব: মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া অত্যন্ত মহৎ কাজ। কিন্তু ব্যক্তিস্বার্থের আকর্ষণ ও লােভ-লালসার কারণে মানুষের পক্ষে তা সচরাচর সম্ভব হয় না। স্বার্থময় এ পৃথিবীতে মানুষ যেদিন অন্যের জন্যে কাঁদতে শিখবে সেদিন সে দেবতার আসনে আসীন হবে।
সম্প্রসারিত ভাব: মানুষ সামাজিক জীব। অন্য দশজনের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করাই তার ধর্ম। এই মিলেমিশে বসবাসের সূত্রে তারা পরস্পরের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ভাগাভাগি করে উপভােগ করে। তারা একে অন্যের বিপদে এগিয়ে আসে, সুখে আত্মহারা হয়; আবার দুঃখে অশ্রু ঝরায়। এর সঙ্গে নিজের স্বার্থ-বিসর্জন কিংবা ক্ষতির প্রশ্ন জড়িত নয়। কিন্তু যেখানে নিজের স্বার্থ বিসর্জন কিংবা ক্ষতির প্রশ্ন জড়িত সেখানে মানুষ অন্যের জন্যে কাঁদে না; এমনকী অন্যের বিপদে এগিয়েও আসে না। কারণ রক্ত আর মাংসের সংমিশ্রণে গড়া মানুষের রয়েছে ব্যক্তিস্বার্থের আকর্ষণ এবং নানারকম লােভ-লালসা। মানুষ নিজের ভালাে-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণের কথা বিবেচনা করেই অন্যের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ায় কিংবা অন্যের বিপদে এগিয়ে আসে। তবে সাধারণ মানুষদের বেলায় এ মন্তব্য সর্বাংশে সত্য হলেও পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ জন্মেছেন যারা নিজের বিপদের আশঙ্কাকে তুচ্ছ ভেবে অন্যের কল্যাণে ঝাপিয়ে পড়েছেন। এরা যেমন মহামানব তেমনই দেবতুল্য।
মন্তব্য: ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা থাকলেও মানুষকে অন্যের কথা ভাবতে হবে; অন্যের কল্যাণে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে একদিকে যেমন সব বিপদের আশঙ্কা দূর হয়ে যাবে, তেমনই মানুষ দেবতুল্য সম্মান ও, মর্যাদার অধিকারী হবে।
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।