প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “মুকুট পরা শক্ত কিন্তু মুকুট ত্যাগ করা আরও কঠিন ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
মুকুট পরা শক্ত কিন্তু মুকুট ত্যাগ করা আরও কঠিন ভাবসম্প্রসারণ
ক্ষমতার মুকুট পরার ইচ্ছা প্রত্যেক মানুষের মধ্যে আছে। কেউ প্রকাশ করে, কেউ করে না। এই ইচ্ছা পূরণ করার জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার। এর পাশাপাশি দরকার মেধা ও মননের। এরপরই কেবল ক্ষমতার মুকুট নাগালে আসে। ক্ষমতার আসন লাভের পর ক্ষমতাশালী ব্যক্তি অনেক কিছুই করতে পারে। অনেক সুখ ভোগ করতে পারে। বিলাস বহুল জীবন যাপন করতে পারে। আলাদিনের চেরাগ পেলে একজন মানুষ যেমন অসীম ক্ষমতাধর হয়। তেমনই ক্ষমতার আসনধারী মানুষও ঠিক তেমনই। ফলে ক্ষমতার প্রতি মানুষের লোভ ও দুর্বলতা আসে এবং তা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। তখন তারা ক্ষমতাপূর্ণ জীবন থেকে বাইরে আসার কথা কল্পনাও করতে পারে না।
তখনই জাতির জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। ক্ষমতাবানরা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য অন্যায়ের পথ অবলম্বন করতেও পিছপা হয় না। যেকোনো ধরণের নিকৃষ্ট কাজ করেও তারা ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। তখন ক্ষমতাবানরা দুর্নীতি, নিপীড়ন, নির্যাতন, জাতির সাথে প্রতারণা ইত্যাদি পথ অবলম্বন করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে। ফলে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের শত্রু-মিত্র দুই-ই সৃষ্টি হয়। আর ক্ষমতা ছাড়ার সাথে সাথে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। তাছাড়া সুখ ও বিলাসবহুল জীবন থেকেও তারা বঞ্চিত হয়। তাই তারা ক্ষমতার মোহে পড়ে মুকুট ত্যাগ করতে চায় না। শিক্ষা: দেশ পরিচালকরাই মুকুটধারী। মুকুট পরার সাথে তাদের দায়িত্ব বেড়ে যায়। পাশাপাশি ক্ষমতা বা মুকুটের স্বাদ তারা গ্রহণ করতে করতে বিভোর হয়ে দেশ ও জাতীয় কল্যাণের কথা ভুলে যায়। ফলে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পরে।
বিকল্প ১
মূলভাব : ক্ষমতা অর্জন করা কঠিন। কিন্তু ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানাে আরও কঠিন। রাজমুকুট ক্ষমতা ও দায়িত্বের প্রতীক। কিন্তু লােভী, ক্ষমতালিপ্সু, উচ্চাকাঙ্ক্ষী মানুষ রাজকীয় ক্ষমতা দখলের জন্য উন্মাদ হয়ে উঠে। ফলে তার পক্ষে রাজমুকুট ত্যাগ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
সম্প্রসারিত-ভাব : মুকুট পরা অর্থাৎ, কোন জাতি বা সমাজের কর্ণধার হওয়া সহজ ব্যাপার নয়। বিশেষ গুণের অধিকারী না হলে সে দায়িত্ব কেউ পালন করতে পারে না। কঠোর সাধনা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে সর্বসাধারণের আস্থাভাজন হতে পারলেই জাতি ও সমাজের নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব হতে পারে। পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা যারা ক্ষমতায় এসেছিলেন, তাদের বহু সাধনা, শক্তি ও সামর্থ্যের প্রয়ােজন হয়েছে। আর ক্ষমতায় আসার পর তার দায়িত্ব ও কর্তব্য আরাে কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সেসব কর্তব্য শেষ না করা পর্যন্ত ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়া মােটেই বাঞ্ছনীয় নয়। প্রকৃত রাজার কাছে রাজমুকুট এক বিশাল দায়িত্ব। কেননা অজস্র ঐশ্বর্যের মধ্যেও তাকে বিলাসবিমুখ জীবনযাপন করতে হয়। প্রজাদের সুখ-দুঃখ নিয়েই তার সার্বক্ষণিক চিন্তা। এ দৃষ্টিকোণ থেকে রাজমুকুট পরা এক কঠিন দায়িত্ব। অপরপক্ষে লােভী মানুষ একবার ক্ষমতায় আসতে পারলে তার নেশায় সে মত্ত হয়ে উঠে। এ ক্ষমতার গৌরব থেকে সে কিছুতেই সরে যেতে চায় না। তখন সে অন্যায়ভাবেও ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেষ্টা করে। ক্ষমতা ও ভােগের মায়া ত্যাগ করতে পারে না। কাজেই মুকুট পরা যেমন শক্ত তেমনি মুকুট পরিত্যাগ আরাে কঠিন। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া নিঃসন্দেহে কঠিন ব্যাপার, কিন্তু তার চেয়েও কঠিন ক্ষমতা ত্যাগ করা। কারণ, ক্ষমতায় গেলে মানুষের দায়িত্ব-কর্তব্য বেড়ে যায়, তাছাড়া ক্ষমতার মােহও ক্ষমতা ছাড়তে বাধা দেয়।
বিকল্প ২
মূলভাব: ক্ষমতা অর্জন করা কঠিন। কিন্তু ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানো আরো কঠিন। সম্প্রসারিত ভাব: রাজমুকুট ক্ষমতা ও দায়িত্বের প্রতীক। মুকুট পরা অর্থাৎ কোনো জাতি বা সমাজের কর্ণধার হওয়া সহজ ব্যাপার নয়। বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী না হলে কেউ ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করতে পারে না। কঠোর সাধনা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে সর্বসাধারণের আস্থাভাজন হতে পারলেই জাতি ও সমাজের নেতৃত্ব দেওয়া স¤ভব হতে পারে। পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা যায়, যারা ক্ষমতায় এসেছিলেন, তার জন্য তাদের বহু সাধনা শক্তি ও সামর্থ্যওে প্রয়োজন হয়েছে। তারপর দেখা যায়, ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রত্যেকে কতগুলো দায়িত্ব ও কর্তব্যে জড়েয়ে পড়ে। সেসব কর্তব্য শেষ না করা পর্যন্ত ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়া অগৌরবের । প্রকৃত রাজার কাছে রাজমুকুট এক বিশাল দায়িত্ব।
অজস্র ঐশ্বর্যের মাঝেও তাকে বিলাসবিমুখ জীবনযাপন করতে হয়। প্রজা সাধারণের সুখ দুঃখ নিয়েই তাকে সদা সর্বদা ব্যস্ত থাকতে হয়। বহিঃশক্রুর আক্রমণ প্রতিরোধ, রাজ্যের অভ্যন্তরীণ আইন শৃঙ্খলা রক্ষা, স্থিতিশীরতা রক্ষা, প্রজাপালন ইত্যাদি দায়িত্ব থেকে অব্যহতি পাওয়া তার জন্য কঠিন হয়ে দাড়াঁয়। যেমনটি ইংরেজিতে বল হয়ে থাকে-To earn money is hard, to save money is harder and to utilize money is hardest. এ দৃষ্টিকোণ থেকে রাজমুকুট পরা কঠিন দায়িত্ব। আবার মানুষ একবার ক্ষমতায় আসলে পারলে তার নেশায় সে মত্ত হয়ে উঠে। এ ক্ষমতার গৌরব থেকে সে কিছুতেই সরে যেতে চায় না। তখন সে জীবনকে উৎসর্গ করে এমনকি অন্যায়ভাবে হলেও ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেষ্টা করে। কাজেই মুকুট পরা যেমন শক্ত তেমনি মুকুট পরিত্যাগ করা আরও কঠিন। মন্তব্য: ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া নিঃসন্দেহে কঠিন ব্যাপার, কিন্তু তার চেয়েও কঠিন ক্ষমতা ত্যাগ করা। কারণ ক্ষমতার গেলে মানুষের দায়িত্ব-কর্তব্য বেড়ে যায়, তা ছাড়া ক্ষমাতার মোহর ক্ষমতা ছাড়তে বাধা দেয়।
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।