যাহারা এ পৃথিবীতে হয়েছেন ধন্য নিজের জন্য ভাবেনিকো ভেবেছেন পরের জন্য – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “যাহারা এ পৃথিবীতে হয়েছেন ধন্য নিজের জন্য ভাবেনিকো ভেবেছেন পরের জন্য ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

যাহারা এ পৃথিবীতে হয়েছেন ধন্য নিজের জন্য ভাবেনিকো ভেবেছেন পরের জন্য

যাহারা এ পৃথিবীতে হয়েছেন ধন্য নিজের জন্য ভাবেনিকো ভেবেছেন পরের জন্য ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব :মানব জন্ম শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্য নয়। কারণ, মানুষ মানুষের জন্য। যারা এ পৃথিবীতে মহৎ বলে চির স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন তারা সব সময় পরের মঙ্গলের জন্য ব্যতিব্যস্ত ছিলেন। 

সম্প্রসারিত ভাব : আত্মস্বার্থ চিন্তা মানুষের সহজাত প্রভৃত্তি। কিন্তু যারা, প্রবৃত্তির দাস তারা কখনও মহৎ কর্ম করতে পারে না। আর যারা, মহৎ কর্ম করে না। মৃত্যুর সাথে সাথে তাদের সকল কর্মের যবনিকাপাত ঘটে। তাদের কথা কেউ ঘূর্ণাক্ষরেও স্মরণ করে না। কিন্তু যারা মহৎ তারা কখনও নিজের জন্য ভাবে না। রোগ-শোক-মৃত্যুকেও মানুষ জয় করতে শিখেছে মহৎ চিন্তা ও মহৎ কর্মের বলে। যারা মহৎ তারা নিজের জীবন দিয়ে হলেও পরের উপকার করেন। তাদের জীবনাদর্শ ফুলের মত সুস্নিগ্ধ ও পবিত্র। সবাই তাতে বিমুগ্ধ হয়। তারা ফুলের মত নিজের সুগন্ধে অন্যের হৃদয়ের সুখ-স্নিগ্ধতাকে বাড়িয়ে দেয়। মৃত্যুর শতশত বছর পরেও মানুষ তাদেরকে ভুলতে পারে না। ক্ষণজন্মা এসব মনীষীদের অবদানের কারণে সভ্যতার অগ্রগতি দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে। ক্রমেই হাতের মুঠোয় চলে আসছে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড। যে মুহাম্মদ (স.) মানুষকে মুক্তির পথ দেখিয়েছেন, তাকে মানুষ ভুলবে কি করে? যে নিউটনের গতিসূত্র থেকে বিমান রকেট আবিষ্কার করে মহাকাশ জয় করছে তাকে মানুষ ভুলবে কি করে? যে রবীন্দ্রনাথ-শেক্সপিয়ার মানবতার জয়গান গেয়ে মানুষের হৃদয় জয় করেছে তাকে কি মানুষ ভুলতে পারে? যে মাদার তেরেসা নিজের জীবনের সর্ব সুখ জলাঞ্জলি দিয়ে অনাথ, দরিদ্র, বঞ্চিতদের জন্য সদা ব্যস্ত থেকেছে তাকে কি মানুষ ভুলতে পারে? পারে না। অর্থাৎ এরা মানুষ হিসেবে সার্থক ও ধন্য। কারণ একটাই তারা কখনও কখনও নিজের স্বার্থচিন্তায় ব্যতিব্যস্ত থাকেনি। সারা জীবন তারা অন্যের মঙ্গল চিন্তায়, পৃথিবী ও পৃথিবীর জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের কল্যাণের চিন্তায় নিয়োজিত থেকেছেন। তাই তারা ধন্য। আর যারা আত্মস্বার্থ নিয়ে বিভোর হয়ে থেকেছে, তারা কি পেয়েছে? মৃত্যু পর্যন্তই তাদের সবকিছু সীমাবদ্ধ। কত মানুষই তো কালের স্রোতে হারিয়ে গেছে। কিন্তু টিকে আছে লুব্ধকের মত ভাস্বর কজন তারকামানব শুধুই তাদের পরহিতৈষিতার কারণে। তাই কবির কণ্ঠে শোনা যায়- 

‘পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি 

এ জীবন মন সকলি দাও। 

তার মত সুখ কোথাও কি আছে? 

আপনার কথা ভুলিয়া যাও।’

পরার্থপরতাই মানবজীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য। যারা এ সত্যটি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছে, তারাই স্বার্থচিন্তায় বিভোর থেকেছে। ফলে তাদের মানব প্রজন্ম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। আর যারা সত্যটি অনুধাবন করে পরের কল্যাণের চিন্তা করেছে তারাই ধন্য হয়েছে।

আরো পড়ুন: বিড়ালের পিক

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment