যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না - ভাবসম্প্রসারণ

যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : চাওয়া-পাওয়া মানুষের জীবনে একটি মৌলিক ঘটনা। মানুষের এ চাওয়া পাওয়ার মধ্যে, আমরা যখন যা চাই তা পাই না; আবার, যা পাই তা চাই না।

সম্প্রসারিত ভাব : এ পৃথিবীতে মানুষের জীবনে চাওয়া ও পাওয়ার কোন শেষ নেই। তার মন নিত্য নতুন প্রাপ্তির দিকে ধেয়ে চলে। মন, রুচি সবসময়ই গতিময়-পরিবর্তনশীল। যা পাওয়া গেল তার প্রতি মোহ সাময়িক -যা পাওয়া যায় নি তার জন্য আকাঙক্ষা তীব্র হয়ে ওঠে। এটাই মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। কবি বলেছেন, যা চাওয়া হয়েছিল তা পাওয়ার পর মনে হয় এটা বোধ হয় সঠিক হয় নি। যেটা পাওয়া গেছে তা বোধ হয় ভুল করে চাওয়া হয়েছে। মানুষ কখনও পুরাতনকে নিয়ে বসে থাকে না। সে চায় নতুনতর কিছু আবার কিছুদিন পর তাও পুরাতন হয়ে আসে। অন্যকিছুর জন্য মানুষ উদ্বেল হয়ে ওঠে। এটাই মানবজীবনের সার্বজনীন নিয়ম। অর্থ-সম্পদ-বিলাসের মধ্যে কিছুদিন কাটাবার পর বৈরাগ্যের জন্য মন আকুলি-বিকুলি করে ওঠে। আবার বৈরাগ্যের বিলাসিতা থেকে মন ছুটে যেতে চায় ভোগের জীবনে, মানুষের মনে এ অস্থিরতা, চাঞ্চল্য কখনও তাকে একই জীবনে স্থির থাকতে দেয় না- সে ছুটে বেড়ায় নতুনত্বের খুঁজে। কোন বন্ধুর দ্বারা প্রতারিত হয়ে কেউ খুঁজে বেড়ায় প্রকৃত বন্ধুকে। এভাবে মানুষ আপন আপন সুখ শান্তির আশায় ছুটে বেড়াচ্ছে এদিক থেকে ওদিকে। যা পাওয়া গেল তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে অন্য কিছুর অন্বেষণে হন্যে হয়ে ওঠে মন। এটাই মনে হয় মানবজীবনের সাধারণ নিয়ম। সৃষ্টির প্রথম থেকেই মানুষ তাই অতৃপ্ত। শান্তি নেই, তৃপ্তি নেই, সন্তুষ্টি নেই কোন কিছুতেই।

পৃথিবীতে মানুষের জীবনে চাওয়ার যেমন শেষ নেই, তেমনি পাওয়ার মধ্যেও কোনো শেষ নেই। চাওয়া-পাওয়ার আনন্দের মধ্যেই আমাদের জীবন সীমাবদ্ধ।

সহজ ভাবে

মানব-জীবনে চাওয়া-পাওয়ার অন্ত নেই। তেমনি নেই কোনো সামঞ্জস্য। পার্থিব এই জগতে মানুষের চাওয়া-পাওয়া অসীম। তাই মানুষের চাহিদা বা আশা-আকাঙ্ক্ষার সমাপ্তি ঘটে না। একটি চাহিদা পূরণ হওয়ার সাথে সাথেই অন্য আরো নতুন চাহিদার সৃষ্টি হয়। এটি মানুষের চিরন্তন বৈশিষ্ট্য। সভ্যতার সূচনালগ্ন খেকেই মানুষের মধ্যে এই বৈশিষ্টটি বিদ্যমান। তাই জীবনে চাওয়া আছে, পাওয়া আছে; কিন্তু এই চাওয়া-পাওয়া অসীম। সে যে কী চায়, মাঝে মাঝে সে নিজেও জানে না। তাই মানুষ কাম্য বস্তুর প্রাপ্তি দ্বারা কখনো আত্মতৃপ্তি লাভ করতে পারে না। কারণ একবার মানুষ যা চায় তা পেয়ে গেলে নতুন করে আরো কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জাগে। জীবনের এই অফুরন্ত চাওয়ার পরে সে না পাওয়ার হতাশায় ভোগে। কেননা এই অসীম চাওয়াকে পূরণ করা একেবারে অকল্পনীয়। তাই চাওয়া পাওয়ার এই জগতে মানুষ যা চায় তা পাওয়ার পর তার কাছে মনে হয় ভুল করে চেয়েছিল। তাই মানুষের কাছে এই অসীম চাওয়া-পাওয়া ভুল মনে হলেও আসলে তা ভুল নয়। এটাই বাস্তব আর এটাই মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। তাই এ ক্ষেত্রে ক্যালভিন ওরেন এর উক্তিটি যথার্থ সার্থকতা লাভ করে- “মানবজীবন চিরদিনই সুখ-শান্তিতে কাটে না। আকাশের দিকে হাত বাড়ালে শূন্যতা ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। চাওয়া-পাওয়ার গন্ডি তাই মাটির কাছাকাছি হওয়া ভালো।” তাই মানুষ যদি সীমিত চাওয়া-পাওয়ার অভ্যস্ত হয় তাহলে সহজেই না পাওয়ার দুঃখগুলো দূর করা সম্ভব। এতে অপ্রাপ্তির বেদনা যেমন দূর হবে, পাওয়ার আনন্দগুলো আরো বেশি বিকশিত হবে। শিক্ষা: চাওয়া-পাওয়ার চিরন্তন দ্বন্দ্বের মধ্যে মানব হৃদয়ের বসবাস। এই পাওয়া না পাওয়ার অর্ন্তদ্বন্দ্বই মানুষকে ভুল পথে নিয়ে গেলেও বিবর্তনশীল দ্বন্দ্বের অবসানে বিকশিত হয় মানুষের জীবন। অর্থ্যাৎ মানুষের চাওয়া-পাওয়া সীমিত হওয়াই শ্রেয়।

বিকল্প ১

মূলভাব : এ পৃথিবীতে মানুষের চাওয়া পাওয়ার শেষ নেই। অনেক কিছু পাওয়ার পর আরও পাওয়ার জন্য মন ব্যাকুল

সম্প্রসারিত ভাব: মানব জীবন অবিমিশ্র সুখের আকর নয়। তাতে দুঃখ আছে, বেদনা আছে, আছে নিপীড়িত আত্মার মর্মান্তিক হাহাকার। চাওয়া ও পাওয়ার দ্বন্দ্বে মানব জীবন ভরপুর। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত মানুষের চাওয়ার বিরাম নেই।পাওয়ার পরও মানুষের আকাঙক্ষার তৃপ্তি নেই। প্রাপ্ত বস্তুকে তুচ্ছজ্ঞান করে সে আরও পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়। মানুষের এ বৈশিষ্ট্য চিরন্তন। অনাদিকাল থেকে এ প্রবৃত্তি চলে আসছে। মানুষ জানে না তার পাওয়ার শেষ কোথায়। সীমাহীন পাওয়াকে বেশি করে চাইলেই যে পাওয়া যায় না, মানুষ বুঝেও তা বােঝে না। সােনার হরিণ ধরা যে মানুষের সাধ্যাতীত এ সত্য মানুষের বুদ্ধির অগােচর। তাই দিকে দিকে অশান্তি ও মনুষ্যত্বের তীব্র লাঞ্ছনা। চাওয়া ও পাওয়ার দ্বন্দ্বে মানব জাতি আজ দিশেহারা। মানুষ যেদিন তার সীমিত পাওয়াকে হৃদয় দিয়ে বরণ করতে সক্ষম হবে, সেদিন ঘটবে সমস্ত যন্ত্রণার অবসান। দূর হবে হৃদয়িক অবসাদ এবং স্তন্ধ হবে কবির ভাব সিন্ধু মন্থর করা বাণীগুচ্ছ-

“যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই
যাহা পাই তাহা চাই না।”

মন্তব্য : এ পৃথিবীতে নিরন্তর চলছে মানুষের চাওয়া-পাওয়ায় দ্বন্দ্ব। সীমিত সম্পদে তুষ্ট থেকে মানুষ যখন চাওয়া থেকে মুক্ত হতে পারবে, সেদিনই সে প্রবেশ করতে পারবে প্রকৃত সুখ ও শান্তির রাজ্যে।

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment