যে জাতি জীবন হারা অচল অসার পদে পদে বাঁধে তারে জীর্ণ লোকাচার – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “যে জাতি জীবন হারা অচল অসার পদে পদে বাঁধে তারে জীর্ণ লোকাচার ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

যে জাতি জীবন হারা অচল অসার পদে পদে বাঁধে তারে জীর্ণ লোকাচার ভাবসম্প্রসারণ

যে জাতি জীবন হারা অচল অসার পদে পদে বাঁধে তারে জীর্ণ লোকাচার ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : পুরাতন ধ্যানধাররণা জাতীয় জীবনে উন্নতির পথে বিরাট বাঁধা সৃষ্টি করে। জাতিকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত বা সমৃদ্ধিশালী করে গড়ে তুলতে হলে গতিশীল চেতনা ও আদর্শ দরকার।

সম্প্রসারিত ভাব : স্থবিরতা মৃত্যুর সামিল, আর চলমানতাই জীবন। প্রাগ্রসর চিন্তা-চেতনা দ্বারা জীবন সহজ ও স্বাছন্দ গতিতে প্রবাহিত হয়। আধুনিক এবং বিজ্ঞান মনস্ক জাতি দ্রুত উন্নয়নের দিকে ছুটে চলে। কিন্তু কোনো কারণে যদি কোনো জাতির চলার ছন্দ ব্যহত হয়, তাহলে সে জাতি তার স্বাভাবিক বিকাশ হারিয়ে বিকৃত রূপ পরিগ্রহ করে। স্রোতহীন নদীতে শৈবাল জমে যেমন পানিকে দূষিত করে তেমনি জাতির গতিবেগ যদি থেমে যায় তাহলে জীর্ণ লোকাচার এবং নানা ধরনের কদর্যতা দ্বারা জাতি বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে। প্রত্যেক জাতিরই থাকে একটি স্বাভাবিক গতি। কোনো জাতি যদি সেই গতিশীলতা হারিয়ে ফেলে, তাহলে জাতীয় জীবনে দেখা দেয় অবাঞ্ছিত জড়তা। এ জড়তা জাতীয় জীবনের প্রধান অন্তরায়। কালক্রমে এখান থেকেই নানা ধরনের বিকৃতি ও পতনের জন্ম নেয়। সঙ্গে সঙ্গে নানা দেশাচার ও লোকচারের আবর্জনা স্তূপ সে জাতির জীবন ধারাকে পঙ্গু ও নিশ্চল করে দেয়। তখনই জাতির ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা দেখা দেয়। তখনই জাতির হাতে-পায়ে পড়ে বিধি-নিষেধের বেড়ি, নিষ্ঠুরভাবে বাজতে থাকে পরাধীনতার শিকল।

জাতীয় জীবনকে প্রাণবন্ত ও উজ্জ্বল করে গতিশীল জীবন প্রবাহ। যে জাতির জীবনধারা অচল সে জাতির পতন অবশ্যম্ভাবী।

বিকল্প ১ সহজ ভাবে

মূলভাব: যেকোনো জাতির উন্নতির মূল সোপান হচ্ছে তার চেতনা ও আদর্শ। আদর্শচ্যুত জাতি কখনো তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনা, বরং নানা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে পড়ে।

সম্প্রসারিত ভাব: আমরা জানি গতিই জীবন, আর জীবনহীনতা বা স্থিতিই মৃত্যু। এই বিশ্বজগতে যতদিন গতি আছে, ততদিন জীবন আছে। যেদিন এই গতি স্তব্ধ হয়ে যাবে সেদিনই আসবে ধ্বংস। নদী তার আপন ধারায় প্রতিনিয়ত বয়ে চলেছে। সে কোনো বাধা মানে না, কোনো বিপত্তি এসে তার পথ রোধ করতে পারে না। কিন্তু যদি প্রাকৃতিক কোনো কারণে ঐ নদীর অবিরাম জলধারা বন্ধ হয়ে যায় তবে নদীর বুকে জমে উঠে সহস্র শৈবাল স্তূপ। এতে তার গতি রুদ্ধ হয়, ফলে তার শ্রী সৌন্দর্যও নষ্ট হয়ে যায়। মানবসমাজ ও তন্ত্রপ চলে নদীর মতো আপন গতিবেগে উৎস থেকে মোহনার দিকে অতীত থেকে ভবিষ্যতের দিকে। কোথাও তার বিরাম নেই, বিশ্রাম নেই। তার গতি চিরচণ্ডল। যে জাতি গভির সাধনা করে সে জাতির যাত্রা হয় পূর্ণতার দিকে, সে জাতি বিরামহীন বিকাশের পথেই যাত্রা করে। কিন্তু কোনো জাতি যদি তাদের আদর্শের পথ হারিয়ে ফেলে, অজ্ঞানের অন্ধকারে আবদ্ধ থেকে অন্য অনুকরণ বা পুরাতন সংস্কারকে আকড়ে ধরে থাকে, সে জাতি প্রগতির ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। চারদিকের নানা বিপদ ও বিপর্যয় এসে তাদের আঘাত হানে। বন্ধ হয়ে যায়। তার উন্নতির সকল পথ। তখন এ জাতি প্রকৃত উন্নতির পথ ত্যাগ করে শুষ্ক ও জীর্ণ লোকাচারের প্রতি আসক্ত হয়। জাতির চলার পথ শেষ পর্যন্ত একেবারে অবরুদ্ধ হয়ে উঠে কুসংস্কারের প্রকোপে, লোকাচারের প্রাচুর্যে এবং দেশাচারের যুক্তিহীন প্রয়োগে । অর্থহীন গোঁড়ামি প্রতি। পদে তার উন্নতির অন্তরায় হয়ে উঠে এবং জাতির অগ্রগতি চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়, জাতি তখন বিকৃত ও শাস্ত্রবাণী-সর্বর্ষ এক জড় পদার্থে পরিণত হয়।

মন্তব্য: কোনো দেশের প্রতিটি নাগরিক প্রকৃত দেশপ্রেমী হলে কোনোরূপ জড়তা বা কুসংস্কার তাদের গ্রাস করতে পারে না। ফলে প্রাণপণ প্রচেষ্টা ও মকীয়তার অনুশীলনের মাধ্যমে জাতি অনায়াসে পৌঁছে যেতে পারে উন্নতির চরম শীর্ষে।

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment