রাত যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটে আসে – ভাবসম্প্রসারণ

প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “রাত যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটে আসে ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।

রাত যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটে আসে - ভাবসম্প্রসারণ

রাত যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটে আসে ভাবসম্প্রসারণ

মূলভাব : মানব জীবন যতই দুঃখময় হােক না কেন একপর্যায়ে গভীর অমানিশা কেটে গিয়ে দেখা দেয় প্রভাত সূর্যের রশ্মি, সুন্দর-সুখী। ও বিপদমুক্ত বাঞ্ছিত মুহূর্ত।

সম্প্রসারিত ভাব : মানব জীবন কণ্টকমুক্ত নয়। জীবন চলার পথে সুখ-দুঃখ, বিপদ-আপদ পাশাপাশি অবস্থান করে। ফলে কখনাে সুখ, আবার কখনাে দুঃখ এসে জড়িয়ে যায় জীবনের সাথে। দুঃখ ছাড়া যেমন সুখ কল্পনা করা যায় না, তেমনি জীবনে শুধু দুঃখ থাকে তাও ভাবা নিরর্থক। বেদনার শেষ সীমায় অবস্থান করে স্বাচ্ছন্দ্যিক জীবনের খেয়া। অন্ধকার রাত্রির প্রহর কেটে দেখা দেয় সােনালি উষা। তাই দুঃখের আঁধারে জীবন ঢেকে গেলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ দুঃখের পর একসময় সুখ আসতে বাধ্য। রাত যত গভীর হয় ততই তা দিনের সান্নিধ্যে আসে- এটাই প্রকৃতির নিয়ম। তেমনি দুঃখ-বেদনা, বিপদ-আপদ যতই গভীর থেকে গভীরতর হয় বুঝতে হবে সুখের সােনালি প্রভাত ততই নিকটে। এ প্রসঙ্গে বার্নার্ড জোসেফ বলেছেন, “এমন কোনাে রাত নেই যার ভাের হবে না। এমন কোনাে দুঃখ নেই যা সময়ে ফিকে হয়ে আসবে না।

মন্তব্য : জীবনের পাশাপাশি মৃত্যুর আহ্বান যেমনি অমােঘ সত্য, তেমনি সুখ-দুঃখ একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িতএকটিকে বাদ দিয়ে অপরটির অস্তিত্ব কল্পনা করা মিথ্যা মরীচিকা ছাড়া আর কিছুই নয়।

বিকল্প ১

মূলভাব: সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা সবকিছু নিয়েই মানবজীবন। মানবজীবনে দুঃখ যেমন আছে তেমনি দুঃখের কালাে মেঘ ভেদ করে এক সময় দেখা দেয় সুখের সূর্য। কাজেই দুঃখ-দৈন্যে হতাশ না হয়ে, ধৈর্যের সাথে সাধনা করতে হবে সুখ সমৃদ্ধির জন্যে।

ভাবসম্প্রসারণ: পৃথিবীতে মানুষ নিরন্তর সংগ্রাম করে চলেছে কখনাে দুঃখকে অতিক্রম করার জন্যে, আবার কখনাে সুখের সন্ধানে। আমরা জানি, সুখ-দুঃখ পালাক্রমে আসে মানুষের জীবনে। একটানা দুঃখ যেমন মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে, তেমনি একটানা সুখও একঘেয়ে ও বৈচিত্র্যহীন। এ দুটো বিষয় আছে বলেই মানুষ জীবনকে যথার্থভাবে উপভােগ করতে পারছে। যেমন: রাতের পর দিন, আলাের পর অন্ধকার। রাতের ভয়ভীতি দিনের আলােয় দূর হয়, অন্ধকারের পর আলাে মনে প্রফুল্লতা সৃষ্টি করে। কাজে গতি আসে। কোনাে অন্ধকারই চিরস্থায়ী নয়, সাময়িক। তেমনি দুঃখও চিরস্থায়ী নয়। দুঃখ-যন্ত্রণায় পুড়ে যে সুখ পাওয়া যায় সেটা খাটি সুখ অর্থাৎ প্রকৃত সুখ। রাতের আঁধার শেষে একসময় প্রভাতের আলাে দেখা দেয়। এটি যেমন সত্য তেমনি জীবনে দুঃখকে দেখে হতাশ হওয়া উচিত নয়। প্রভাতের মতাে এক সময় সুখ এসে সেখানে উঁকি দেবে । এদের একটির অবস্থান অপরটির বিপরীতে। দুঃখের ভয় আছে বলেই মানুষ তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। সাধনা করে সুখের সােনালি প্রভাতের। দুঃখের উপস্থিতিই মানুষকে সুখের মূল্য বােঝায়। তবুও অবুঝ মানুষ চিরসুখের অযৌক্তিক কামনা নিয়ে ভাবে সুখ বুঝি তার দুয়ারে এলাে না। মানুষ ভুলে যায়। যে, ‘পতঙ্গ আনন্দ বিহারে যতই উর্ধ্বগগনে উড়তে থাকে, তার পতনের মুহূর্তও ততই নিকটবর্তী হয়। দিন আবর্তিত হয় রাতকে ঘিরে, রাত দিনকে ঘিরে তাই রাত যত গভীর হয় ততই প্রভাত এগিয়ে আসে । সুখ-দুঃখ তেমনি এক রহস্য।

জীবনে দুঃখ-যন্ত্রণা দেখে কাপুরুষের মতাে মুষড়ে পড়া মােটেই কাম্য নয়। প্রকৃতির নিয়মে রাত দিনের আলােকে গ্রাস করে চিরস্থায়ী হতে পারে না । তেমনি সুখ ও দুঃখও কখনাে চিরস্থায়ী নয়।

বিকল্প ২

মূলভাব: মানবজীবনে দুঃখের পরে সুখ আসে। একটির সময়কাল যত বেশি হয়, অন্যটি ততই এগিয়ে আসে। সুখ দুঃখ কারাে জীবনেই স্থায়ী হয় না।

সম্প্রসারিত ভাব: মানব জীবনে সুখ-দুঃখ পর্যায়ক্রমে আসে। এদের কোনাে একটি জগতের নিরঙ্কুশ সত্য নয়। আলাে-আঁধার, দিনরাত এটাই জীবনের বৈশিষ্ট্য। দিনের পর আসে রাত, রাতের পরে আসে দিন। আলাের পর আসে অন্ধকার, আর অন্ধকারের গভীরতা যতই বাড়তে থাকে প্রভাত ততই কাছে আসে। এমনিভাবে মানুষের জীবন পরিক্রমায় সুখ-দুঃখের অভিজ্ঞতাও পালাক্রমে আসে। একটানা দুঃখের ভােগান্তি যেমন কাউকে সহ্য করতে হয় না, তেমনই একটানা সুখও কেউ পায় না। সুখ-দুঃখ, সাফল্য-ব্যর্থতা ইত্যাদির পালাবদলের মধ্য দিয়েই মানুষের জীবনচক্র পূর্ণ হয়। পর্যায়ক্রমে সুখ-দুঃখের দোলা লাগে বলেই জীবন হয়ে ওঠে উপভােগ্য। তা না হলে একটানা দুঃখ মানুষের জীবনকে করতাে দুর্বিষহ, একটানা সুখ এনে দিত বৈচিত্র্যহীন একঘেয়েমি। আমরা অনেক সময় বিশ্বজগতের এই অমােঘ সত্যকে ভুলে যাই। ফলে দুঃখের আঁধার জীবনকে গ্রাস করলে হতাশায় ভেঙে পড়ি। কিন্তু মনে রাখা দরকার, দুঃখ কখনাে নিরন্তর নয়। একসময় না একসময় দুঃখের রাতের অবসান হয়েই আসে আশা ও আশ্বাসের সকাল। দুর্যোগ ও দুঃখের রাত যত গভীর হয়, ততই আসন্ন হয়ে ওঠে সৌভাগ্য এবং সুখের প্রসন্ন দিন। তাই আমাদেরকে বিপদাপদে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। প্রতিকূল মুহূর্তে হতাশায় ভেঙে না পড়ে প্রতিকূলতাকে ধৈর্যের সঙ্গে মােকাবিলা করতে হবে। আসলে এটি মানবজীবনের একটি পরীক্ষা। যারা এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে তাদের জীবন হয় সার্থক ও সুন্দর। অন্যদিকে, যারা এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে না তাদের জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, যারা জগতে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন তারা সকলেই বিপদে ধৈর্য ধারণ করেছেন। আর যারা বিপদে ধৈর্য ধারণ করতে পারেনি তারা বিখ্যাত হতেও পারেনি। বিপদ বা দুঃখ সবসময় থাকে না, একসময় কেটে যায়- এটিই প্রকৃতির নিয়ম। বিশেষ করে বিপদ বা দুঃখের দিন যত বাড়তে থাকে সুখ ততই এগিয়ে আসে।

মন্তব্য: জীবনের পাশাপাশি মৃত্যু যেমন সত্য, তেমনই সুখ-দুঃখও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই আমাদের উচিত দুঃখের সময় ভেঙে না পরে বরং ধৈর্য ধারন করা।

আরো পড়ুন: অর্থসম্পদের বিনাশ আছে, কিন্তু জ্ঞানসম্পদ কখনাে বিনষ্ট হয় না

আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।

Leave a Comment