সুলতানি আমলে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য

আমাদের সবার ইতিহাস জানা দরকার। তার মধ্যে “সুলতানি আমলে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য” এই বিষয়টি অবশ্যই জানতে হবে। এটি জানলে আপনার ইতিহাস সম্বন্ধে আরো ধারণা বেড়ে যাবে। আসেন যেনে নেয়।

সুলতানি আমলে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য

আদি-মধ্যযুগে বিজয়নগর-সহ দক্ষিণ ভারতের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের তিনটি ধারা লক্ষ্য করা যায়— উপকূল বাণিজ্য, নদীপথ বাণিজ ও স্থলপথ বাণিজ্য। ইতিপূর্বে সমুদ্র বাণিজ্য প্রসঙ্গে উপকূল বণিজ্যের বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। ছোটো ছোটো জলযানে উপকূল বাণিজ্য পরিচালিত হত। ক্যাম্বে, ভাটকল, মাঙ্গালোর, মালাবার, কোচিন, কয়াল, পুলিকট, মসুলিপত্তনম্, মতুপল্লীর মধ্যে উপকূলরেখা ধরে পণ্য লেনদেন চলত। মালাবার থেকে ক্যাম্বে ও সুরাটে যেত চাল, নারকেল, নারকেল তেল, তালমিছরি ও অন্যান্য পণ্য। ক্যাম্বে ও সুরাট থেকে মালাবার উপকূলে আসত সুতি ও রেশমবস্ত্র। কয়াল থেকে আসত মুক্তা, পুলিকট থেকে বস্ত্রাদি, মতুপল্লী ও মসুলিপত্তনম্ থেকে হীরা ও দামি পাথর। এই সকল পণ্য মালাবার উপকূলসহ গোয়া, সুরাট, ক্যাম্বে এমনকি বাংলা পর্যন্ত ছড়িয়ে যেত।

উত্তর ভারতের মতো দক্ষিণ ভারতে নদীপথ বাণিজ্য সমৃদ্ধ ছিল না। গঙ্গা, যমুনা, সিন্ধু ইত্যাদি উত্তর ভারতে প্রবাহিত নদীগুলির নাব্যতা দক্ষিণী নদীগুলির ছিল না। দক্ষিণ ভারতের প্রধান নদীগুলি যেমন—কৃষ্ণা, কাবেরী ও গোদাবরী উপত্যকা ও পর্বতসংকুল দক্ষিণ ভারতে স্বাভাবিক গতিপথ বা নাব্যতা পায়নি। তাই বছরের কিছুটা সময় এগুলি নৌ-যান চলার উপযোগী হলেও, জলাভাবের কারণে বাকি সময়টা বাণিজ্য পরিবহণের সহায়ক ছিল না। বিদেশি পর্যটকরা দক্ষিণ ভারতের নদী-পরিবহণের কাজে এক ধরনের ঝুড়ি জাতীয় নৌকা (Basket-boat), ভেলা, শালতি ইত্যাদি ব্যবহৃত হত। স্বল্পাকারে হলেও দক্ষিণ ভারতে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে নদীপথগুলি ব্যবহার করা হত।

স্থলপথ বাণিজ্যের কেন্দ্রে ছিল বিজয়নগর রাজ্য। দক্ষিণ ভারতের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ স্থলপথগুলি বিজয়নগর থেকে বেরিয়ে দেশের নানা অঞ্চলে প্রসারিত ছিল। অধ্যাপক চিনিস (K. N. Chitis) বিদেশি পর্যটকদের বিবরণীর প্রেক্ষিতে সাতটি প্রশস্ত রাজপথের উল্লেখ করেছেন। এগুলি হল – (১) বাঁকাপুর হয়ে গোয়া, (২) শিবসমুদ্রম্ হয়ে শ্রীরঙ্গপত্তম্, (৩) কোচিন থেকে মালাবার পর্যন্ত, (৪) চন্দ্রগিরি, তিরুপতি, কাঞ্চি, তিরুভান্ন-মালাই, মাদুরাই ও রামেশ্বরম্ হয়ে ধনুস্কোদি পর্যন্ত, (৫) কোন্দাভিদু হয়ে উদয়গিরি পর্যন্ত, (৬) কাম্পিলি ও কোভিলকোন্ড হয়ে মসুলিপত্তম্ পর্যন্ত এবং (৭) রায়চুর ও তার দক্ষিণের অংশ পর্যন্ত প্রসারিত। বিদেশি পর্যটকরা এই সকল রাজপথের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ দেননি। তাঁদের দেওয়া বিক্ষিপ্ত বিবরণ এবং ধর্মীয় পদযাত্রা ও সামরিক বাহিনীর গতিপথের উল্লেখের ভিত্তিতে এ বিষয়ে একটা ধারণা গড়ে তোলা যায়। পথচারীদের নিরাপত্তা ও আনুষঙ্গিক ভ্রমণকালীন সুযোগ-সুবিধার দিকেও বিজয়নগরের শাসকদের লক্ষ্য ছিল। পিয়েত্রো-ডেলা-ভেল, জ্যাকব ভিচের প্রমুখ বিভিন্ন পথের উভয় পার্শ্বে রোপিত বৃক্ষরাজি, বিশ্রামাগার ও পাহারা-চৌকির অস্তিত্বের উল্লেখ করেছেন। আলেকজান্ডার হ্যামিল্‌টন বলেছেন যে, রাস্তার নানা স্থানে রাষ্ট্রীয় ব্যয়ে পথিকদের জল দানের ব্যবস্থা করা ছিল।

স্থলপথ পরিবহণের কাজে হাতি, ঘোড়া, খচ্চর, পালকি, গোরুর-গাড়ি, ষাঁড় এমনকি মহিষ ও গাধাকেও ব্যবহার করা হত। পালকি ও ঘোড়া সাধারণভাবে অভিজাতদের যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করা হত। সাধারণ মানুষের জন্য ছিল গো-যান, স্থলবাণিজ্যের পসরার মধ্যে প্রধান ছিল গোলমরিচ। এ ছাড়া ছিল এলাচ, নারকেল, তেঁতুল, খেজুর, বাঁশের ঝুড়ি, তালমিছরি, ঘি, তেল, লবণ, ধান, চাল, বস্ত্ৰ ইত্যাদি।

আশা করি আপনারা এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। যদি বুঝতে পারেন তাহলে আমাদের অন্যান্য পোস্ট ভিজিট করতে ভুলবেন না।

Leave a Comment