আমাদের সবার ইতিহাস জানা দরকার। তার মধ্যে “সুলতানি আমলে দাক্ষিণাত্যের মুসলিম স্থাপত্য,সুলতানি যুগে দাক্ষিণাত্যের মুসলিম স্থাপত্য” এই বিষয়টি অবশ্যই জানতে হবে। এটি জানলে আপনার ইতিহাস সম্বন্ধে আরো ধারণা বেড়ে যাবে। আসেন যেনে নেয়।
সুলতানি যুগে দাক্ষিণাত্যের মুসলিম স্থাপত্য
দক্ষিণ ভারতে সুলতানি আমলে যে ইসলামিক স্থাপত্য গড়ে উঠেছিল, তা অন্যান্য প্রাদেশিক স্থাপত্যশৈলী থেকে কিছুটা স্বতন্ত্র ছিল। উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিম ভারতে স্থাপত্যসৃষ্টির কাছে স্থানীয় প্রতিভাবান স্থপতি ও কারিগরদের নিয়োজিত করা হয়েছিল। কিন্তু দক্ষিণ ভারতের মুসলমান শাসকরা যে স্থাপত্য সৃষ্টি করেন, তা অপরাপর প্রাদেশিক মুসলিম স্থাপত্যের অনুরূপ যেমন ছিল না, তেমনি সেগুলি মৌলিক ইসলামি স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্যসম্পন্নও ছিল না। ড. সুলতান আহমেদ লিখেছেন যে, এগুলি মূলগতভাবে দুটি ইসলামি স্থাপত্যধারার পরিপক্ক অবস্থার সংমিশ্রণ মাত্র। এগুলির একটি হচ্ছে দিল্লি-সুলতানির স্থাপত্যশৈলীর দ্বারা প্রভাবিত প্রাদেশিক ধারা এবং অন্যটি সম্পূর্ণ বহিরাগত উৎস, যা পারস্য থেকে এসেছিল। এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য উন্নয়নধারার সংস্পর্শে একটা স্থাপত্যধারা দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে নতুন ইসলামি স্থাপত্যধারার অবকাশ সৃষ্টি করেছিল। দাক্ষিণাত্যে বহু গুরুত্বপূর্ণ ইমারতে ইরানি নকশার প্রয়োগ দেখা যায়। বাহমনী রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা আলাউদ্দিন হাসান বাহমন শাহ ছিলেন একজন পারস্যবাসী সেনানায়ক। আবার তিনি তুঘলক শাসনকালে দিল্লিতে কর্মরত ছিলেন। ১৩৪৭ খ্রিস্টাব্দে গুলবর্গায় তিনি বাহমনী রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। দিল্লির ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্য ও পারসিক স্থাপত্যের সাথে বাহমন শাহের পরিচয়কে দক্ষিণ ভারতে মিশ্র স্থাপত্যধারার আবির্ভাবের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা যায়। গুলবর্গায় রাজধানী স্থাপনের সূত্রে সেখানেই দক্ষিণী মুসলিম স্থাপত্যের প্রথম অনুশীলন শুরু হয়। ১৪২৮ খ্রিস্টাব্দে বাহমনী রাজ্যের প্রশাসনিক কেন্দ্র গুলবর্গা থেকে বিদরে স্থানান্তরিত হলে সেখানে দক্ষিণী স্থাপত্যের দ্বিতীয় পর্বের সূত্রপাত ঘটে। আবার বাহমনী রাজ্য ভেঙে যাওয়ার পর গোলকুণ্ডায় কুতুবশাহি বংশ তাদের রাজধানী স্থাপন করে এবং স্থাপত্যচর্চায় বিশেষ উদ্যোগ নেয়। এটিকেই দক্ষিণী মুসলিম স্থাপত্যবিকাশের তৃতীয় বা শেষ পর্যায় বলা যায়।
প্রথম পর্বের স্থাপত্যসৃষ্টির মধ্যে গুলবর্গা দুর্গ ও জামি মসজিদ গুরুত্বপূর্ণ। গুলবর্গা দুর্গের চতুর্দিকের পরিবেষ্টন মাত্র ২ কিলোমিটার। তবে নির্মাণে কোনো সুসামঞ্জস্যতার ছাপ স্পষ্ট নয়। তবে ‘জামি মসজিদ টি দাক্ষিণাত্যের স্বতন্ত্র মিশ্র-স্থাপত্যের একটি আকর্ষণীয় নিদর্শন। ১৩৬৭ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত এই মসজিদের সমস্ত কাঠামোটাই ছাদযুক্ত। ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যের অনুরূপ উন্মুক্ত প্রাঙ্গণের অভাব এই মসজিদকে স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে। অধ্যাপক সুলতান আহমেদ এই মসজিদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা প্রসঙ্গে লিখেছেন যে, এর চেহারার প্রধান আকর্ষণীয় বস্তু হিসেবে গম্বুজের অবস্থান দেখা যায়। সুউচ্চ শক্তিশালী বর্গাকার ক্লেরেস্টরির (Clerestory) ওপর গম্বুজ স্থাপনের মধ্য দিয়ে একে অতিশয় জাঁকালো ও মর্যাদাময় করা হয়েছে। বিদরে রাজধানী স্থানান্তরের (১৪২২ খ্রিঃ) মাধ্যমে দাক্ষিণাত্যে দ্বিতীয় পর্বের স্থাপত্য অনুশীলন শুরু হয়। এই কাজে অগ্রণী ভূমিকা নেন সুলতান আহমদ শাহ (১৪২২ ৩৬ খ্রিঃ)। এখানকার রাজপ্রাসাদ, মসজিদ, মাদ্রাসা ও রাজকীয় মাকবারাগুলি স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। এখানকার ইমারতের দেওয়াল চিত্রণ ও রঙিন টালি ব্যবহারের প্রবণতা লক্ষণীয়। মসজিদ স্থাপত্যের অংশ হিসেবে চাঁদমিনার-এর পরিকল্পনা এখানেই প্রথম দেখা যায়। ইতিপূর্বে নির্মিত মিনারগুলি মূলত বিজয়স্মারক হিসেবে পরিকল্পিত হয়েছিল। চাঁদমিনারের উচ্চতা প্রায় ১০০ ফুট। চারতলাবিশিষ্ট এই নির্মাণের প্রথম তিনটি তলা গোলাকার। একটি তলার বেড় খাঁজকাটা। এই নির্মাণে সৌন্দর্য ও সুঠামতার সমন্বয় দেখা যায়। কুতুবশাহি বংশের আমলে গোলকুণ্ডা রাজ্যে (১৫১২-১৬৮৭ খ্রিঃ) দাক্ষিণাত্য-স্থাপত্যের তৃতীয় পর্যায়ের বিকাশ ঘটে। এখানেও যথারীতি দুর্গযুক্ত রাজপ্রসাদ, মসজিদ, মাকবারা ইত্যাদি নির্মিত হয়। কুতুবশাহি যুগের স্থাপত্যকর্মগুলি মূলত হায়দ্রাবাদ শহরকে কেন্দ্র করে রূপায়িত হয়েছিল। স্থাপত্যিক মূল্যবিশিষ্ট নির্মাণ হিসেবে চারমিনার-এর নাম উল্লেখের দাবি রাখে। জি. মিচেল-এর মতে, ১৫৯১ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ কুলী বিজয়স্মারক হিসেবে এটি নির্মাণ করেছিলেন। বর্গাকার এই মিনারের প্রতিপার্শ্বের পরিধি ১০০ ফুট। চারকোণায় ১৮৬ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট চারটি মিনার একে অনিন্দ্যসুন্দর করেছে। নিম্নভাবে চারটি প্রশস্ত খিলান পথ আছে। ওপরের অংশ ক্রমহ্রাসমান রূপে ওপরের দিকে উঠে গিয়েছে। পার্সি ব্রাউন-এর মতে, “চারমিনারের অবস্থান ও বাহ্যিক অবয়ব দেখে মনে হয় যে, বহু পূর্বে গুজরাটের আমেদাবাদের তিন দরজা নির্মাণের উদ্দেশ্য ও হায়দ্রাবাদের চারমিনারের নির্মাণ উদ্দেশ্য একই ছিল।” (“In position and appearance it seems to have served the same purpose as the Tin Darwaza built at a much earlier date in the city of Ahmedabad, Gujrat.”)]
বিজাপুরের আদিল শাহি রাজবংশ এবং খান্দেশের ফারুকি রাজবংশের উদ্যোগে ওই দুটি আঞ্চলিক রাজ্যে মুসলিম স্থাপত্যের বিকাশ ঘটে। রাজপ্রসাদ, মসজিদ ও মাকবারা ছিল এদের স্থাপত্যের প্রধান প্রধান ক্ষেত্র। বিজাপুরের আদিল শাহি রাজবংশ মূলত তুর্কি জাতিগোষ্ঠির মানুষ ছিল। ব্রাউনের (P. Brown) মতে, বিজাপুরের স্থপতিবৃন্দ সম্ভবত অটোমান তুর্কিদের স্থাপত্যশৈলী ও প্রযুক্তিজ্ঞান দ্বারা উদ্বুদ্ধ ছিলেন। এরা অট্টালিকার প্রতীক হিসেবে পতাকাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন, যা ইসলামীয় রীতির অন্যতম বিশেষত্ব। গম্বুজ নির্মাণেও কিছু নতুনত্বের সংযোজন দেখা যায়। গম্বুজগুলি অর্ধ-গোলাকার হয়ে প্রচলিত পাপড়িবিশিষ্ট বন্ধনীসহ ওপরের দিকে উঠে গিয়েছে। বিজাপুর জামি মসজিদ, ইব্রাহিম রওজা (দ্বিতীয় ইব্রাহিম আদিল শাহের সমাধি), মোগল গম্বুজ (মহম্মদ আদিল শাহ’র সমাধি), মিহতার মহল প্রভৃতির নাম উল্লেখ্য। খান্দেশ রাজ্যের সালনার ও বুরহানপুরে স্থাপত্য অনুশীলনের নিদর্শন দেখা যায়। এখানকার স্থপতিরা মূলত পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির স্থাপত্যধারা দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিলেন। খান্দেশ রাজ্যের মসজিদ, মাকবারাগুলিতে মালোয়া, মাণ্ডু প্রভৃতি রাজ্যের স্থাপত্যশৈলীর প্রভাব স্পষ্ট।
কাশ্মীর স্থাপত্য : ভারতের উত্তরাংশে উঁচু পর্বতবেষ্টিত উপত্যকা রাজ্য কাশ্মীর। পঞ্চদশ শতকে কাশ্মীরে মুসলিম স্থাপত্যের বিকাশ ঘটে। এখানে প্রচলিত স্থাপত্যধারার সাথে মুসলিম স্থাপত্যের প্রধান প্রভেদ উপকরণগত। আদি শিল্পে পাথর দ্বারা ইমারত নির্মাণের প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু মুসলিম শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর নির্মাণের উপাদান হিসেবে কাঠ গুরুত্ব পায়। কাঠ সরবরাহের প্রাচুর্য থেকেই সম্ভবত কাঠের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছিল। এখানে আবাসগৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে কাঠকে কেটে নানারূপ আকৃতি দেওয়া হত না। ছোটো ছোটো কাঠের দণ্ড সরাসরি উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হত। গৃহনির্মাণের কাজে কাঠের ওপর কাঠের গুঁড়িকে শোয়ানো অবস্থায় গেঁথে গেঁথে দেওয়ালের আকৃতি দেওয়া হত। সেতু নির্মাণেও কাঠ ছিল মূল উপকরণ। কাশ্মীরের কাষ্ঠনির্মিত মসজিদগুলির অন্যতম হল হামদানা মসজিদ। শ্রীনগরের ঝিলাম নদীর তীরে এই মসজিদের ভিত ইট দ্বারা নির্মিত। সম্ভবত পুরোনো মন্দিরের ভিতের ওপরেই এটি নির্মিত হয়েছে। কাশ্মীরের কাষ্ঠ-স্থাপত্যের অতি আকর্ষণীয় নির্মাণটি হল শ্রীনগর জামি মসজিদ। সিকন্দার বুতসিকান (১৩৯০-১৪১৪ খ্রিঃ) এটি নির্মাণ করেন। তাঁর পুত্র জয়নাল আবেদিনের সময় এটি সম্প্রসারিত হয়। জন মার্শালের মতে, এটি তিনবার আগুনে ভস্মীভূত হয়েছিল (“It was thrice burnt down and thrice rebuilt, once on 1479, a second time in 1620 and third time in 1674. “)। এ ছাড়াও বহু মসজিদ ও মাকবারা কাশ্মীর-স্থাপত্যের সাথে যুক্ত ছিল।
সূর-স্থাপত্য : বাবর ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতে মোগল শাসনের সূচনা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর স্বল্পকালীন রাজত্ব এবং তাঁর পুত্র হুমায়ুনের অদক্ষতার কারণে ১৫৪০ খ্রিস্টাব্দে ভারতে মোগল শাসনধারায় একটা ছেদ ঘটে। আফগান জাতির সুরবংশীয় শের খাঁ সুর হুমায়ুনকে পরাজিত ও বিতাড়িত করে দিল্লিতে আফগান শাসনের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঘটান। সুশাসক ও সাম্রাজ্যের সংগঠক শের শাহের স্থাপত্যপ্রীতিও ছিল যথেষ্ট। শের শাহের স্থাপত্য-কর্মসুচির দুটি স্বতন্ত্র ক্ষেত্র ছিল। প্রাথমিক পর্বে বিহারের একজন আফগান শাসনকর্তা হিসেবে রাজধানী সাসারামে তিনি কয়েকটি সমাধিসৌধ নির্মাণ করেন। লোদীবংশের আমলে দিল্লিতে যে স্থাপত্যশৈলীর প্রয়োগ ঘটেছিল, সুরবংশের আমলে সাসারামে তা চরম উৎকর্ষতা লাভ করে। শের শাহের স্থাপত্যকর্মের দ্বিতীয় পর্যায়ের কেন্দ্র ছিল দিল্লি। হুমায়ুনকে পরাজিত করার পর দিল্লি দখল করে তিনি এখানে নতুনভাবে স্থাপত্যনির্মাণের উদ্যোগ নেন। অধ্যাপক সুলতান আহমেদ লিখেছেন, “শের শাহ কেবলমাত্র চলমান স্থাপত্য আন্দোলন গঠনের মধ্য দিয়ে স্থাপত্যের নতুন অর্থবহ বিকাশ ঘটানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন, যা পরবর্তী মোগল স্থাপত্যের একটা গুরুত্বপূর্ণ পটভূমিরূপে গৃহীত হয়েছিল।”
শের শাহ তাঁর স্থাপত্য পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য আলি ওয়ালি খান নামে একজন দক্ষ প্রশিক্ষিত স্থপতি নিয়োগ করেন। ওয়ালি খানের তত্ত্বাবধানে শের শাহ তাঁর পিতা হাসান খান সুরের কবরের ওপর একটি সমাধিসৌধ নির্মাণ করেন (১৫৩৫ খ্রিঃ)। কানিংহামের মতে, এর নির্মাণকাল ছিল ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দ। এর গড়ন লোদী আমলের অষ্টভুজ কাঠামোর অনুরূপ। তবে এই সৌধের নির্মাণশৈলী ও উপস্থাপনা খুবই সাদামাটা। পার্সি ব্রাউন মনে করেন যে, হাসান খানের সমাধিসৌধে সূর-স্থাপত্যের প্রকৃত প্রকাশ ঘটেনি। এই প্রাথমিক নির্মাণ কাজটি পরীক্ষানিরীক্ষার স্তরেই ছিল। সুর-স্থাপত্যের প্রকৃত বিকাশ ঘটে সাসারামে নির্মিত শের শাহের সমাধিসৌধের নির্মাণ পরিকল্পনায়। আলি ওয়ালি খান শের শাহের সমাধিসৌধের উপস্থাপনায় তাঁর কল্পনাশক্তি ও সৌন্দর্যবোধের পরিচয় দেন। শের শাহের সমাধিসৌধের প্রস্থ ও উচ্চতা ছিল যথাক্রমে ২৫০ ফুট ও ১৫০ ফুট। পিরামিডাকৃতি এই সৌধটি সুবিন্যস্ত পাঁচটি ধাপে এক পূর্ণাঙ্গ ইমারত রূপে গড়ে উঠেছে। সমগ্র কাঠামোটি বর্গাকার সমচতুষ্কোণ অবস্থায় একটি কৃত্রিম জলাশয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। এর নীচের দুটি তল জলের সাথে যুক্ত। জলের মধ্য থেকেই সিঁড়ির ধাপ উঠে এসেছে তৃতীয় তলে। এই সমাধিসৌধের কাঠামোর প্রধান প্রধান অংশগুলি অতি দক্ষতার সাথে স্থাপন করা হয়েছে। অধ্যাপক সুলতান আহমেদ এই সমাধিসৌধের প্রশংসা করে লিখেছেন, “যদি একে স্থাপত্যিক বহিঃপ্রকাশের দৃষ্টান্তের দৃষ্টিভঙ্গিতে অবলোকন করা যায়, তাহলে অবশ্যই মনে হবে যে এটি একটি উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত কার্যক্রম একটা প্রশান্ত, পরিমিত ও প্রকাণ্ড উজ্জ্বল দীপ্তশীল ও অত্যুৎকৃষ্ট সৃষ্টি যার জন্য যে-কোনো দেশ গর্ববোধ করতে পারে।”
দিল্লির সিংহাসন দখলের পর শের শাহ দিল্লির ষষ্ঠ নগরী পুরোনো কেল্লা নির্মাণ করেন। এর প্রায় সবটাই মাটিতে মিশে গেছে। এখনো কোনোক্রমে দাঁড়িয়ে আছে দুটি তোরণদ্বার আর মসজিদটি। শ্বেতমর্মর ও বেলেপাথরে নির্মিত এই প্রসাদনগরী যে উন্নত স্থাপত্যের নিদর্শন ছিল, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। পার্সি ব্রাউন মন্তব্য করেছেন যে, দুর্গ বা তৎসংলগ্ন ইমারতগুলি ধ্বংসের ফলে ভারতীয় স্থাপত্যশিল্পের বিকাশের ধারায় যে একটি দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়েছিল, সেই তথ্য থেকে মানসভ্যতা বঞ্চিত হয়েছে। শের শাহের এক অনবদ্য সৃষ্টি ‘কিপা-ই-কুহনা’ মসজিদ। পরবর্তীকালের মোগল স্থাপত্যের ওপরেও এই নির্মাণশৈলীর প্রভাব দেখা যায়। ১৫৪১ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত কিলা-ই-কুনহাকে পার্সি ব্রাউন ‘রাজকীয় প্রার্থনাঘর’ (Royal chapel) বলে উল্লেখ করেছেন। আয়তাকার এই মসজিদের দৈর্ঘ্য প্রস্থ-উচ্চতা যথাক্রমে ১৫৮ × ৪৫ × ৬৬ ফুট। মসজিদের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন উপকরণ যেমন— ঝুলন্ত বারান্দা, জোড়া সোপান চূড়া, রাজপরিবারের রাজকীয় প্রবেশপথ ইত্যাদি মসজিদের সৌন্দর্যময়তা বৃদ্ধি করেছে।
আশা করি আপনারা এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। যদি বুঝতে পারেন তাহলে আমাদের অন্যান্য পোস্ট ভিজিট করতে ভুলবেন না।