আমাদের সবার ইতিহাস জানা দরকার। তার মধ্যে “সুলতানি আমলে মামেলুক বংশের আমল” এই বিষয়টি অবশ্যই জানতে হবে। এটি জানলে আপনার ইতিহাস সম্বন্ধে আরো ধারণা বেড়ে যাবে। আসেন যেনে নেয়।
সুলতানি আমলে মামেলুক বংশের আমল
বাংলাদেশে মামেলুক শাসনের সূচনা করেন নাসিরউদ্দিন মামুদ (১২২৭ খ্রিঃ)। এই বংশের গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য প্রতিনিধি ষাট বছর (১২২৭-৮৭) বাংলাদেশে শাসন পরিচালনা করেছিলেন। এঁদের মধ্যে অন্তত দশজন ছিলেন দিল্লি দরবারের প্রভাবশালী অভিজাত। বাল্যজীবনে এঁরা ছিলেন ক্রীতদাস। অবশ্য বাংলার শাসনভার গ্রহণের আগে প্রত্যেকেই দিল্লিতে উচ্চপদে আসীন ছিলেন। স্বভাবতই এঁদের শাসনাধীনে লক্ষ্মণাবতী দিল্লির প্রতিচ্ছবিতে পরিণত হয়েছিল। এই পর্বে বাংলার রাজনৈতিক জীবন ছিল খুবই তপ্ত ও অস্থির। লক্ষ্মণাবতী তখন পরিণত হয়েছিল রাজনৈতিক ঝটিকাকেন্দ্রে। কারণ লক্ষ্মণাবতীর কর্তৃত্ব লাভ করা তখন বিশেষ মর্যাদার বিষয় বলে গণ্য হত। বাংলাদেশ দখল করতে পারলেই ‘মালিক-উস্-শাক’ বা ‘পূর্বদেশের প্রভু মর্যাদা লাভ করা যেত। তাই অযোধ্যা, উড়িষ্যা, কনৌজ প্রভৃতি অঞ্চলের শাসকরা লক্ষ্মণাবতী দখলের জন্য সর্বদা উন্মুখ হয়ে থাকতেন। পরিণতিতে ঘন ঘন সংঘর্ষ ঘটত।
যুবরাজ নাসিরউদ্দিন মামুদ মাত্র আঠারো মাস বাংলা শাসন করেছিলেন। তিনি পিতার কাছ থেকে ‘মালিক-উস্-শান’ উপাধি পান। এই সময়ে বাংলা পুরোপুরি দিল্লির নিয়ন্ত্রণে আসে। নাসিরউদ্দিন অযোধ্যা ও বাংলাকে একশাসনাধীনে আনেন। অসুস্থ অবস্থায় নাসিরুদ্দিন আকস্মিক মারা গেলে ইখতিয়ারউদ্দিন মালিক ‘বল্কা’ নামক জনৈক আমির বিদ্রোহী হন এবং বাংলার সিংহাসন দখল করেন। ইলতুৎমিস বন্ধাকে হত্যা করে বিহারের প্রদেশপাল আলাউদ্দিন ‘জানি’ নামক তুর্কিস্থানের রাজবংশোদ্ভূত এক ব্যক্তিকে লক্ষ্মণাবতীর শাসক নিযুক্ত করেন। অবশ্য এক বছর পরেই তাঁকে অপসারিত করে ইলতুৎমিস সৈফুদ্দিন আইবককে বাংলার শাসক নিযুক্ত করেন। তাতারবংশোদ্ভূত সৈফুদ্দিন তিন বছর অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বাংলাদেশ শাসন করেছিলেন। ইলতুৎমিস তাঁকে ‘ইউগানতৎ’ উপাধি দ্বারা সম্মানিত করেছিলেন।
ইলতুৎমিসের মৃত্যুর অব্যবহিত পরে দিল্লিতে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে। এই সুযোগে আওর খাঁ ইবাক নাম্মী জনৈক তুর্কি লক্ষ্মণাবতী দখল করে নেন। বিহারের প্রদেশপাল তুগরল তুগান খাঁ আওর খাঁ’কে হত্যা করে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্মণাবতী দখল করতে সক্ষম হন। ভুগরল তুগান দিল্লির সুলতান রাজিয়ার প্রতি বশ্যতা জ্ঞাপন করে বাংলা শাসন করেন। জাজনগরের সাথে সংঘর্ষে তুগান খাঁ’র সাহায্যে এসে অযোধ্যার শাসক তমুর খাঁ দিল্লির সুলতানের কর্তৃত্ব অস্বীকার করেই দু-বছর লখনৌতি শাসন করেন (১২৪৫-৪৭ খ্রিঃ)। পরবর্তী শাসক আলাউদ্দিন জানি চার বছর বাংলা শাসন করেন (১২৪৭-৫১ খ্রিঃ)। তিনি দিল্লির প্রতি আনুগত্য বজায় রাখেন। অবশ্য দিল্লির দুর্বলতার সুযোগে আনুগত্য জ্ঞাপনের পাশাপাশি তিনি ‘শাহ’ উপাধিও গ্রহণ করেন।
পরবর্তী শাসক ইখতিয়ারউদ্দিন ইউজবাক দিল্লির প্রতি বিদ্রোহীভাবাপন্ন ছিলেন। তবে দিল্লির উজির বলবনের স্নেহভাজন হওয়ার ফলে দিল্লির বিরোধিতা তাকে বিব্রত করেনি। তিনি বাংলায় মুসলমান শাসনের সীমানা দক্ষিণদিকে লক্ষ্মণাবতী থেকে মান্দারণ পর্যন্ত প্রসারিত করেন। মান্দারণ বিজয় সম্পন্ন করার অব্যবহিত পরে তিনি আবার প্রকাশ্যে দিল্লির আনুগত্য অস্বীকার করেন এবং ‘মুঘিসউদ্দিন’ উপাধি নিয়ে নিজ নামে ‘মুদ্রা’ চালু করেন। বিহার ও অযোধ্যার ওপরেও তিনি নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। কামরূপ অভিযান পরিচালনার সময় তাঁর মৃত্যু ঘটে। মুঘিসউদ্দিনের মৃত্যুর পর যথাক্রমে মাসুদ জানী, ইয়াজউদ্দিন বলবন ও তাজউদ্দিন আসরাল খাঁ রাজত্ব করেন। এঁরা মোটামুটি দিল্লির প্রতি আনুগত্য বজায় রাখেন।
আশা করি আপনারা এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। যদি বুঝতে পারেন তাহলে আমাদের অন্যান্য পোস্ট ভিজিট করতে ভুলবেন না।