মোট জাতীয় উৎপাদন ও জাতীয় আয় এর মধ্যে পার্থক্য কি?

মোট জাতীয় উৎপাদন ও জাতীয় আয় এর মধ্যে পার্থক্য: আসসালামু আলাইকুম বন্ধুরা, কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি। আপনারা নিশ্চয় মোট জাতীয় উৎপাদন ও জাতীয় আয় এর মধ্যে পার্থক্য খোজার চেষ্টা করছেন। তাহলে আপনার একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন।

মোট জাতীয় উৎপাদন ও জাতীয় আয় এর মধ্যে পার্থক্য কি?

মোট জাতীয় উৎপাদন ও জাতীয় আয় এর মধ্যে পার্থক্য কি?

মোট জাতীয় উৎপাদনজাতীয় আয়
একটি নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক অর্থবছরে কোন দেশের জনগণ দেশে ও বিদেশে অবস্থান করে যে পরিমাণ চূড়ান্ত দ্রব্য ও সেবা সমূহ উৎপাদন করে তার মোট আর্থিক মূল্যকে মোট জাতীয় উৎপাদন (GNP) বলে। অন্যদিকে মোট জাতীয় উৎপাদন হতে মূলধনী দ্রব্যের ক্ষয়-ক্ষতিজনিত ব্যয় বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাকে নীট জাতীয় উৎপাদন (NNP) বলে।এর পর নীট জাতীয় উৎপাদন থেকে পরোক্ষ কর,হস্তান্তর পাওনা, সরকারের উদ্বৃত্ত মুনাফা বিয়োগ করে ও সরকার প্রদত্ত ভর্তুকি যোগ করে জাতীয় আয় (NI) পাওয়া যায়।
জাতীয় আয় মোট জাতীয় উৎপাদনের একটি অংশ।অন্যদিকে মোট জাতীয় উৎপাদনের মধ্যে জাতীয় আয় অন্তর্ভূক্ত থাকে।
মোট জাতীয় উৎপাদন একটি বৃহত্তর ধারণা।অন্যদিকে মোট জাতীয় উৎপাদনের তুলনায় জাতীয় আয় একটি ক্ষুদ্রতর ধারণা
মোট জাতীয় উৎপাদন পরিমাপ করা তুলনামূলকভাবে সহজভাবে করা সম্ভব।অন্যদিকে জাতীয় আয় পরিমাপ করা বেশ কঠিন।
মোট জাতীয় উৎপাদন (GNP) সূত্রাকারে লিখলে পাওয়া যায় GNP = C+I+G+(X-M)
এখানে, C = ভোগ ব্যয়,
I = বিনিয়োগ ব্যয়,
G= সরকারি ব্যয়,
(X-M) = নীট রপ্তানি আয়।
অন্যদিকে জাতীয় আয় (NI) সূত্রাকারে লিখলে পাওয়া যায় NI= GNP-CCA-(Ti+Tr+Sg ) +Sb
বা NI=NNP- Ti-Tr-Sg +Sb
এখানে, CCA= মূলধনী দ্রব্যের ক্ষয়-ক্ষতিজনিত ব্যয়,
Ti = পরোক্ষ কর,
Tr = হস্তান্তরপাওনা,
Sg = সরকারের উদ্বৃত্ত মুনাফা,
Sb = সরকার প্রদত্ত ভর্তুকি।

মোট জাতীয় উৎপাদন (GNP)

একটি নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক বছরে একটি দেশের জনগণ যে পরিমাণ বস্তুগত ও অবস্তুগত চূড়ান্ত দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন করে তার সমষ্টিকে মোট জাতীয় উৎপাদন (GNP) বলে। একটি দেশের জনগণ দেশের ভেতরে ও দেশের বাহিরে অবস্থান করে উৎপাদন কাজ করতে পারে। তাই বিদেশে অবস্থানরত দেশীয় নাগরিকদের অর্জিত আয় GNP-তে অন্তর্ভূক্ত হয়। দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত পণ্য ও সেবা বিদেশে বিক্রয় তা হল রপ্তানী আর বিদেশে উৎপাদিত পণ্য ও সেবা দেশের অভ্যন্তরে বিক্রয় তা হল আমদানি।

এ রপ্তানি ও আমদানির ব্যবধানকে নীট রপ্তানি আয় বলে। অতএব একটি দেশের সব নাগরিকদের মোট ভোগ ব্যয়, মোট বিনিয়োগ ব্যয়, মোট সরকারি ব্যয় এবং নীট রপ্তানি আয়ের সমষ্টিকে মোট জাতীয় উৎপাদন (GNP) বলা হয়।

জাতীয় আয় (NI)

একটি নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক অর্থবছরে একটি দেশে মোট যে পরিমাণ চুড়ান্ত দ্রব্য ও সেবা উৎপাদিত হয় তার বাজার মূল্যকে এবং বিদেশ থেকে নীট আর্থিক অর্জনের সমষ্টিকে জাতীয় আয় (NI) বলে। আবার বলা যায় যে, একটি দেশের সকল জনগণ সম্পদ, শ্রম ও মূলধন ব্যবহার করে মোট যে পরিমাণ চুড়ান্ত দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন করে তার বাজার মূল্যকে জাতীয় আয় বলা (NI) হয়।

বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ জাতীয় আয়ের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম সংজ্ঞা প্রদান করেছেন অধ্যাপক মার্শাল।
অধ্যাপক মার্শাল বলেন, “কোন দেশের শ্রম ও মূলধন তার প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে প্রতি বছর মোট যে পরিমাণ বস্তুগত ও অ-বস্তুগত দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম সৃষ্টি করে তার বাজার মূল্যকে জাতীয় আয় (NI) বলে।”

আজকে আমরা দেখলাম কিছু পার্থক্য মোট জাতীয় উৎপাদন ও জাতীয় আয় এর মধ্যে। এইসব পার্থক্য আপনারা যেকোনো জায়গায় ব্যবহার করতে পারবেন। এই সব মোট জাতীয় উৎপাদন ও জাতীয় আয় এর মধ্যে পার্থক্য, বই থেকে সংগ্রহ করা। আশা করি এই পোস্টটি থেকে অনেক উপকারিত হয়েছেন। অনুগ্রহ করে আমাদের পোস্টগুলো আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আসসালামু আলাইকুম:)

Leave a Comment