প্রিয় শিক্ষার্থীরা কেমন আছো আশা করি ভালো আছো, আজকে তোমাদের জন্য আমরা নিয়ে এসেছি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভাবসম্প্রসারণ “রাতে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা, সূর্য নাহি ফিরে, শুধু ব্যর্থ হয় তারা ”। চলো এই ভাবসম্প্রসারণটি পড়ে নেয়।
রাতে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা, সূর্য নাহি ফিরে, শুধু ব্যর্থ হয় তারা ভাবসম্প্রসারণ
মূলভাব: সূর্য দিবাভাগেই উদিত হয়। তাই যারা রাতের বেলায় সূর্যের জন্য লালায়িত হয়, তাদের রাত হয় দীর্ঘস্থায়ী। অনুরূপভাবে যারা দুঃখ-কষ্ট কিংবা বিপদ-আপদের সময় সুখের প্রত্যাশায় কাতর হয়, সুখ তাদের কাছ থেকে অনেক দূরে সরে যায়।
সম্প্রসারিত ভাব: প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম অনুসারে পৃথিবীতে রাত-দিন পালাক্রমে আসে। কালপরিক্রমায় দিনের পরে রাত আসে, আর রাতের পরে দিন আসে– এটাই সৃষ্টির স্বাভাবিক নিয়ম। তাই রাতের বেলায় সূর্যের প্রত্যাশা যেমন বোকামি তেমনি নিরর্থক। আর যারা রাতের বেলায় সূর্য শোকে কাতর হয়, তাদের রাত হয় দুঃখের ও দীর্ঘস্থায়ী। তাদের বুঝতে হবে, রাত যত দীর্ঘ ও কষ্টের হোক না কেন একসময় স্বাভাবিক নিয়মে প্রভাতের সোনালী সূর্য উদিত হবে।
অন্যদিকে মানুষের জীবনে সুখ দুঃখ পালাক্রমে আসে। পৃথিবীতে যেমন নিরবচ্ছিন্ন সুখ বলে কিছু নেই, তেমনি দুঃখও কারো জীবনে স্থায়ী আসন পেতে বসে না। মানব জীবনে দুঃখের পর স্বাভাবিক নিয়মেই সুখ আসে। তাই দুঃখ- কষ্টের অধিক কাতর হওয়া উচিত নয়। আবার দুঃখ বা বিপদের কালীন সুখের জন্য অতি মাত্রায় লালায়িত হওয়া ঠিক নয়। তাহলে সুখ জীবন থেকে অনেক দূরে সরে যাবে, আর দুঃখ জীবনে স্থায়ী আসন পেতে বসবে।
ইতিহাসবিদরা বলেন, “History repeats itself” অর্থাৎ ইতিহাস চক্রাকারে ঘোরে। আর ইতিহাস কিংবা চলমান সময়ের আবর্তনে ঘরে পৃথিবীতে একদিকে অনেক সভ্যতা বিলীন হয়ে গেছে, অন্যদিকে উত্থান ঘটেছে নতুন নতুন সভ্যতার। আবার অনেক রাজা- বাদশা বা ধনী ব্যক্তি পতিত হয়েছেন দুঃখ- কষ্টের মধ্যে। অন্যদিকে অনেক দুঃখী ব্যক্তির জীবনে এসেছে সুখের ছোঁয়া। তাই রাতের বেলায় সূর্যের জন্য শোকগ্রস্ত না হয়ে রাতকে যেমন স্বাভাবিকভাবে বরণ করে নেওয়া উচিত, তেমনি দুঃখের সময় বিচলিত না হয়ে দুঃখকে স্বাভাবিক নিয়মে অতিক্রান্ত হওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত।
মন্তব্য: দিন- রাতের মতো সুখ- দুঃখও মানুষের ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। তাই দুঃখের সময় সুখের জন্য লালায়িত না হয়ে সুখের আগমনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। আর তা না করে দুঃখের সময় তাৎক্ষণিক সুখের জন্য লালায়িত হলে সুখের আগমন অনেক বিলম্বিত হবে।
বিকল্প ১
মূলভাব: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ- অমোঘ বিশ্বনিয়মে মহাকাল এই তিন কালপরিক্রমায় বয়ে চলেছে নিরবধি। মানব জীবনেও লীলায়িত এই কালপ্রবাহে। এই কাল পরিক্রমায় ভবিষ্যৎ নিয়ে মানুষের অধীরতা সামান্যই। বর্তমানই মানুষের জীবনে সবচেয়ে ফলপ্রসূ বাস্তব। এই বর্তমানই একসময় পরিণত হয় স্মৃতিবাহী অতীতে। শত চেষ্টাতেও সে অতীতকে ফিরিয়ে আনা যায় না বর্তমানের চৌহদ্দিতে। তাই অতীতের জন্যে আক্ষেপ না করে যে বর্তমান হাতের মুঠোয়, তার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা লাভের চেষ্টা করাই শ্রেয়।
সম্প্রসারিত ভাব: প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে দিনের শেষে সূর্য অস্ত যায়। তারপর কালো আঁধারে ঢাকা পড়ে বিশ্বচরাচর। রাতের আকাশে অন্ধকারের বুক চিরে মুক্তোর মতো জ্বলজ্বল করে অসংখ্য নক্ষত্র। অনুপম সে সৌন্দর্য। সেই সৌন্দর্যকে উপেক্ষা করে রাতের বেলায় কেউ যদি সূর্যের আলোয় উদ্ভাসিত আকাশের জন্যে হা-হুতাশ করে, তার জন্যে ব্যাকুল হয়ে ওঠে তবে সে কেবল ব্যর্থই হয় না, রাতের সৌন্দর্য উপলব্ধি থেকেও সে বঞ্চিত হয়। অথচ এ জগতে কেউ কেউ এই সত্যটুকু বুঝতে পারেন না। তাঁরা কঠিন বাস্তবে প্রত্যাশিত মাধুর্য না দেখলে বর্তমানকে মেনে নিতে পারেন না। বিগত দিনের স্মৃতিকে বুকে আঁকড়ে থাকতে চান। অতীত স্মৃতির জাবর কেটে ভুলে থাকতে চান বর্তমানকে। তাঁদের কাছে বর্তমানের চেয়ে অধিকতর সুখস্বপ্নময় মনে হয় ফেলে আসা অতীতকে। আর বর্তমান সম্পর্কে গভীর হতাশা তাঁদের আচ্ছন্ন করে। কিন্তু বাস্তবে এঁরা বুঝতে পারেন না যে, অতীতের জন্যে হা-হুতাশ করে বর্তমানকে উপেক্ষা করায় লাভ তো হয়ই না, বরং বর্তমান ও ভবিষ্যতের সাফল্য ও সম্ভাবনার সুযোগটুকুও নষ্ট হয়। এ ধরনের অতীত-আচ্ছন্নতা জীবনে বর্তমানকে কাজে লাগাতে কেবল ব্যর্থ হয় না, ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকেও নিঃশেষে বিলীন করে ফেলে। ফলে শেষ পর্যন্ত জীবন আচ্ছন্ন হয় ব্যর্থতা ও হতাশায়। তাই বিগতের জন্যে শোক না করে বর্তমানকে গুরুত্ব দেওয়াই শ্রেয়। প্রকৃতির অমোষ নিয়ম মেনে নিয়েই জীবনের পূর্ণতার পথে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টাতেই সার্থকতা আসে।
বিকল্প ২
মূলভাব: প্রবাদে আছে, সময় ও নদীর সােত কারাে জন্যে অপেক্ষা করে না। এটাই জীবনের নিয়ম। জীবন গতিশীল। গতিশীল জীবনে আজ যা বর্তমান কাল তা অতীত। শত চেষ্টাতেও অতীতকে কখনাে ফিরিয়ে আনা যায় না। তাই অতীতের জন্যে আক্ষেপ না করে বর্তমান যা হাতের মুঠোয়, তার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা লাভের চেষ্টা করা উত্তম।
সম্প্রসারিত ভাব: জীবনে সুখ-দুঃখ আসে পালাক্রমে। গতজীবনের সুখের কথা ভেবে ভেবে বর্তমানের দুঃখ-কষ্টকে মেনে না নেয়া বােকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা এই দুঃখ-কষ্ট এক সময় আবার অতীতে পরিণত হবে, বর্তমান হয়ে আসবে সােনালি ভবিষ্যৎ। তাই এই পরিবর্তনশীল-জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে উপভােগ ও আনন্দের উৎস হিসেবে বিবেচনা করলে জীবন কখনাে বেদনায় ভরে উঠবে না, ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে না। প্রকৃতির চিরায়ত নিয়মে প্রতিদিন সূর্য অস্ত যায়, ঘটে রাত্রির আগমন। অগণিত নক্ষত্র রাতের আকাশে অনির্বচনীয় রূপ ধারণ করে। আবার শুক্লপক্ষের রাত্রি জ্যোৎস্নায় আলাের বন্যায় অন্ধকার দূর করে জগৎকে স্নিগ্ধ আলােয় ভরে তােলে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু কেউ যদি রাতের রূপকে উপভােগ না করে, রাতের বেলায় অস্ত যাওয়া সূর্যের অভাব অনুভব করে তবে সে রাতের যে অনুপম সৌন্দর্য তা থেকেই বঞ্চিত হয়, হারানাে সূর্যকে কখনােই সে ফিরে পায় না। তদ্রুপ, অতীতের সােনালি ও সুখময় দিনগুলাের কথা স্মরণ করে কেউ যদি কেবল বেদনায় ডুবে থাকে, তাহলে অতীত তাে ফিরে আসেই না, বরং বর্তমানের সব সুখ-দুঃখ থেকে সে বঞ্চিত হয়। তাই অতীতের সুখস্বপ্নে বিভাের না থেকে বর্তমানকে সহজভাবে মেনে নিয়ে তাকে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হবে এবং উপভােগ করতে হবে। অতীতের অভিজ্ঞতার আলােকে বর্তমানকে নির্মাণ করে জীবনকে সমৃদ্ধ করে তােলা যায়। তাই, যা চলে গেছে, যা কিছু অতীত তাকে নিয়ে আফসােস না করে বর্তমানকে মেনে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
মন্তব্য: অতীতের জন্যে যারা হা-হুতাশ করে তাদের জীবন ব্যর্থতা ও হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কেননা অতীত স্মৃতির রােমন্থনে বর্তমান ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সুযােগ থেকে সে বঞ্চিত হয়।
আশা করি তোমরা এই ভাবসম্প্রসারণটি বুঝতে পেরেছো। আমাদের সাথেই থাকো।